কানাডায় আগামী ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৪৫তম ফেডারেল নির্বাচন। এতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ডা. এ এস এম নুরুল্লাহ তরুন। টরোন্টোর স্কারবোরো সাউথ ওয়েস্টে কনজারভেটিভ পার্টির মনোনয়নে নির্বাচনে লড়বেন তিনি। 

এবারের নির্বাচনে ডা. তরুনই একমাত্র বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী। কানাডার ইতিহাসে এই প্রথম কোনো বাঙালি চিকিৎসক ফেডারেল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

ডা.

তরুন জন্মগ্রহণ করেন বাংলাদেশের খুলনা জেলায়। কর্মজীবনের শুরু থেকেই তিনি বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বরিশালের শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করে তিনি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ক্যাম্পে কর্মরত ছিলেন। কানাডায় আসার আগ পর্যন্ত রাজধানীর ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন ডা. তরুন। কানাডায় তিনি ইউনিভার্সিটি অফ ম্যানিটোবা থেকে চিকিৎসা শাস্ত্রে ডিগ্রি অর্জন করেন।

ডা. তরুন কানাডার টরেন্টোতে ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান হিসেবে কাজ করছেন। ডা. তরুনের লক্ষ্য একটি শক্তিশালী, ঐক্যবদ্ধ কমিউনিটি যেখানে সবাই সমৃদ্ধি লাভ করবে। উন্নত স্বাস্থ্যসেবা, ক্ষুদ্র ব্যবসার সমর্থন এবং পরিশ্রমী পরিবারগুলোর কল্যাণে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন ডা. তরুন। চিকিৎসা সেবায় ইতোমধ্যে তিনি টরোন্টোর কমিউনিটিতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তরে যেতে হবে

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর, কাঠামোগত পরিবর্তনের বিশাল আকাঙ্ক্ষা ও সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই পরিবর্তনের সম্ভাবনা ক্রমে কমে আসছে। তবু এখন প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পথে এগিয়ে যেতে হবে।

গতকাল সোমবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে এক গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকদের বক্তব্যে এমন মত উঠে আসে। ‘রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর যেভাবে হতে পারে’ শিরোনামে যৌথভাবে এ বৈঠকের আয়োজন করে ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) ও প্রথম আলো।

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তাদের কেউ কেউ বলেন, গণতন্ত্র মানেই নির্বাচনী গণতন্ত্র নয়। নাগরিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত না হলে গণতন্ত্রের টেকসই রূপান্তর হবে না। তাই প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র ও নির্বাচনী গণতন্ত্রের সম্মিলন ঘটাতে হবে।

গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি আলোচনার শুরুতে বলেন, এখানে তাঁর বক্তব্য ব্যক্তিগত। এ বক্তব্য জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বা সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে নয়।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ এ মুহূর্তে গণতান্ত্রিক উত্তরণে দুটি করণীয় দেখছেন। তাঁর ভাষায়, ‘আসল কাজ হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলোকে দাঁড় করানো, কার্যকর করা। দ্বিতীয় হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য সম্মিলিত শক্তির একটা সমাবেশ ঘটানোর চেষ্টা করা। এটা এখনকার যেসব রাজনৈতিক শক্তি আছে, তাদের মাধ্যমে করার সম্ভাবনা আমি প্রায় দেখি না।’

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক আলী রীয়াজ মনে করেন, এখন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঠিক করা না হলে ভবিষ্যতে একধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে। তাঁর মতে, প্রতিষ্ঠানগুলো নির্মাণ করা হলে তা অকস্মাৎ সমাধান দেবে না, কিন্তু একটা সম্ভাবনা তৈরি করবে।

আলী রীয়াজ বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলো যে জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে, তাতে ঠেকা কাজ চলছে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে খানিকটা হলেও ঠিকঠাক করতে হবে। রাজনীতিবিদদের যদি একমত করানো যায়, তাহলে সেটা কিছুটা হবে। বাকিটা দীর্ঘ মেয়াদে একটা রাজনৈতিক শক্তির উত্থান প্রয়োজন। যে শক্তির মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের একটা দীর্ঘমেয়াদি লড়াইয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। সেটা না হলে ঘুরেফিরে আবার ৭ থেকে ১০ বছর পর এ সংকট দেখা দেবে।

সত্যিকার গণতান্ত্রিক রূপান্তর ঘটানোর জন্য আইনি, প্রাতিষ্ঠানিক ও কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধানের দায়িত্ব পালন করা বদিউল আলম মজুমদার বলেন, দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা চরমভাবে দুর্বৃত্তদের কবলে পড়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গন চরমভাবে দুর্বৃত্তায়িত। এ ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রেখেছে টাকার খেলা। তিনি মনে করেন, ‘এক দিনের গণতন্ত্রের’ জন্যও নির্বাচনী ব্যবস্থাকে দুর্বৃত্তমুক্ত করতে হবে। এ জন্য কতগুলো সুদূরপ্রসারী সংস্কার করতে হবে।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, গণতান্ত্রিক উত্তরণের একটি পথ নাগরিক সমাজ। নাগরিক সমাজকে সোচ্চার ও সংগঠিত করতে হবে।

আসল কাজ হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলোকে দাঁড় করানো, কার্যকর করা। দ্বিতীয় হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য সম্মিলিত শক্তির একটা সমাবেশ ঘটানোর চেষ্টা করা। অধ্যাপক আলী রীয়াজদুই পক্ষের ঐক্য কীভাবে সম্ভব

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ‘থ্রি জিরো’ (তিন শূন্য) তত্ত্ব সমর্থন করেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। কিন্তু অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনামলে তার উল্টো যাত্রা হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে তিনি থাকা অবস্থায় তাঁর থ্রি জিরো তত্ত্বের যে উল্টো যাত্রাটা ঘটল, এটা তাঁর খেয়াল করা দরকার। আমরা চাই, থ্রি জিরো তত্ত্বটাই অগ্রসর হোক।’

আনু মুহাম্মদ বলেন, এখন কীভাবে কার্বন নিঃসরণ আরও বাড়ে, সেটার একটা চেষ্টা চলছে। গত ১০ মাসে লক্ষাধিক বেকারত্ব বেড়েছে শুধু কারখানা বন্ধ করার কারণে। আর দারিদ্র্য বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ লাখ।

আনু মুহাম্মদ বলেন, দেশে শ্রেণি, লিঙ্গ, ধর্মীয়, জাতিগত বৈষম্য আছে। গণতন্ত্রের পথে এগোতে হলে এ বৈষম্যের বিষয়গুলো সামনে আনতে হবে। তিনি বলেন, কোন পথে গণতন্ত্র আসতে পারে, সেটা নিয়ে এখন যে আলোচনা-বিতর্ক হচ্ছে, সেখানে মাঝেমধ্যে ডান, বাম, মধ্যপন্থী, ইসলামপন্থী, সেক্যুলার—এ কথাগুলো শোনা যায়। একজন বৈষম্যের ওপর দাঁড়িয়ে রাজনীতি করছে, আরেকজন বৈষম্য কমাতে চাইছে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, এ দুই পক্ষের মধ্যে ঐক্য কীভাবে সম্ভব।

গণতান্ত্রিক শক্তির সম্প্রসারণ করতে হবে উল্লেখ করে আনু মুহাম্মদ বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের মধ্যে বৈষম্যহীন বাংলাদেশের একটা স্বপ্ন বা প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। বৈষম্যহীন পথে যাওয়ার পথ ও পদ্ধতির সঙ্গে একমত হয়ে যারা কাজ করতে চেষ্টা করবে, তারাই হচ্ছে গণতান্ত্রিক শক্তি।

‘রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর যেভাবে হতে পারে’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকেরা। গতকাল কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে

সম্পর্কিত নিবন্ধ