বাজারে অহরহ পাওয়া যাচ্ছে ইলেকট্রোলাইট ড্রিংকস। বিদেশে অনেক আগে থেকে এর প্রচলন থাকলেও আমাদের দেশে সাম্প্রতিক কালে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেকেই গরমের সময় এসব পানীয় গ্রহণ করছেন, অনেকেই আবার শক্তি জোগানের উৎস হিসেবে এগুলো নিয়মিত পান করে যাচ্ছেন। বিভিন্ন চটকদার বিজ্ঞাপন খুব সহজেই আকর্ষণ করছে সাধারণ জনগণকে। কিন্তু আসলেই কি এসব ড্রিংকস বা পানীয় শরীরের জন্য নিরাপদ?

‘ইলেকট্রোলাইট’ কী

শরীরের বিভিন্ন দৈনন্দিন কাজ নিয়ন্ত্রণ ও সম্পন্ন করতে ‘ইলেকট্রোলাইট’ বা লবণ খুব জরুরি। যেমন শরীরে পানি ও অম্ল-ক্ষারের ভারসাম্য বজায় রাখা, বিভিন্ন কোষের মধ্যে পুষ্টি উপাদান পৌঁছে দেওয়া এবং সেখান থেকে বর্জ্য অপসারণে সহায়তা করা, স্নায়ু, পেশি, হৃদ্‌যন্ত্র ও মস্তিষ্কের কার্যক্রম অক্ষুণ্ন রাখা, বিভিন্ন কোষের ক্ষয়পূরণ করা ইত্যাদি।

‘ইলেকট্রোলাইট’ ড্রিংকস কী

সহজ ভাষায় যদি বলতে হয়, ‘ইলেকট্রোলাইট ড্রিংকস’ হলো খনিজ উপাদানের সমষ্টি, যা পানিতে দ্রবীভূত হয়ে খনিজ শক্তি বহন করে। যে খনিজ লবণগুলো সাধারণত পাওয়া যায়, সেগুলো হলো—সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম। ইলেকট্রোলাইট ড্রিংকসে পানি ও বিভিন্ন ইলেকট্রোলাইট, যেমন সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও চিনি থাকে। ইলেকট্রোলাইট পানীয়ের মূল উদ্দেশ্য হলো আপনাকে রিহাইড্রেট (পানিশূন্যতা পূরণ) করতে সাহায্য করা। তাই এ ধরনের পানীয়গুলোর বেশির ভাগেরই মূল উপাদান পানি। পানীয়র উদ্দেশ্যের ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন পরিমাণে চিনি ও ইলেকট্রোলাইট যোগ করা হয়।

ইলেকট্রোলাইট ড্রিংকস খাওয়া কি নিরাপদ

যাঁরা নিয়মিত শরীরচর্চা করেন ও শক্তি বাড়াতে চান, তাঁদের কাছে ‘ইলেকট্রোলাইট’যুক্ত পানীয় বেশ জনপ্রিয়। কারণ, শারীরিক পরিশ্রম ও ঘামের কারণে দেহ থেকে খনিজ লবণ বেরিয়ে যায়। অনেকে মনে করেন, এ ধরনের ঘাটতি পূরণে এনার্জি ড্রিংকসের বিকল্প নেই। বিজ্ঞাপনগুলোতেও এসব পানীয় কোম্পানিগুলো সে রকম ইঙ্গিত দিয়েই এর প্রচারণা করে।
আবার আমাশয় কিংবা ডায়রিয়া হলেও শরীর থেকে ইলেকট্রোলাইট বের হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রেও অনেকে নরমাল স্যালাইন না খেয়ে ইলেকট্রোলাইট ড্রিংকস খেতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। কারণ, এগুলো তুলনামূলকভাবে স্বাদের দিক থেকে মজাদার। এসব পরিস্থিতিতে দেহের খনিজ উপাদানের ঘাটতি পূরণের জন্য ইলেকট্রোলাইট ড্রিংকস খাওয়া যেতে পারে।
আপনি যদি পর্যাপ্ত পানি পান করেন এবং প্রস্রাব স্বাভাবিক থাকে, তবে নিয়মিত ইলেকট্রোলাইট পানীয় খাওয়ার প্রয়োজন নেই। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের যে পরিমাণ পানি গ্রহণ করা দরকার, এর চেয়ে বেশি তরল হারালে এবং ডিহাইড্রেটেড (পানিশূন্য) হয়ে গেলে এর সঙ্গে সঙ্গে শরীর থেকে ইলেক্ট্রোলাইটও কমে যায়। ডিহাইড্রেশনের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে গাঢ় হলুদ রঙের প্রস্রাব, চরম তৃষ্ণা, ক্লান্তি, মাথা ঘোরা ও বিভ্রান্তি। প্রচণ্ড গরমে ডিহাইড্রেটেড হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। এই সময়ে ইলেকট্রোলাইট ড্রিংকস খেতে পারেন।
প্রচণ্ড গরমে থাকা, ব্যায়াম করা, বমি বা ডায়রিয়া হলে সাধারণ পানির পাশাপাশি প্রয়োজন অনুসারে ইলেকট্রোলাইট পানীয় খাওয়া যেতে পারে।
তবে কোনো প্রকার ঘাটতি ছাড়া বা এমন কোনো পরিবেশ, যেখানে শরীর থেকে পানি বা লবণ যাওয়ার সুযোগ নেই, তাদের ক্ষেত্রে এ ধরনের ইলেকট্রোলাইট ড্রিংকস খাওয়ার দরকারই নেই। প্রয়োজনের বাড়তি ইলেকট্রোলাইট বরং শরীরের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
তা ছাড়া কিছু মানহীন কোম্পানির এসব ড্রিংকস তৈরি করার প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ। সাম্প্রতিক কালে এ রকম কিছু অনুমোদনহীন কোম্পানির পানীয় নিষিদ্ধ হয়েছে।
সুতরাং, এসব ড্রিংকস গ্রহণ করার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। অনুমোদিত ও মানসম্মত কি না, তা বাছাই করে নিতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।


লেখক: ডা.

সাইফ হোসেন খান, মেডিসিন কনসালট্যান্ট, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ধানমন্ডি

আরও পড়ুনচিয়া সিড কতক্ষণ ভিজিয়ে রাখলে সবচেয়ে বেশি উপকার?১৮ নভেম্বর ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপ দ ন

এছাড়াও পড়ুন:

পশ্চিমবঙ্গের চার শ্রমিককে বিদেশি বলে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর চেষ্টা ভারতের

আসাম রাজ্যের পর গোটা ভারত থেকেই বাংলাদেশি বলে ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো (পুশইন) হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তা–ই নয়, প্রমাণের অভাবে আবার তাঁদের অনেককে ফিরিয়েও আনতে হচ্ছে বলে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত অঞ্চল থেকে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গেরই সংবাদমাধ্যম।

দক্ষিণ ও মধ্য বাংলার দুই জেলা বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদের চার পরিযায়ী শ্রমিক মহারাষ্ট্রে কাজ করতে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে মহারাষ্ট্র পুলিশ তাঁদের ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে তুলে দেয়। এরপর বিএসএফ তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়। এ চারজনই আবার মুসলমান।

মুম্বাইয়ে কাজ করতে যাওয়া মুর্শিদাবাদ ও বর্ধমানের এই চার পরিযায়ী শ্রমিককে মহারাষ্ট্র পুলিশ বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দেয়। কোনো রকম যাচাই না করেই তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয় বিএসএফ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজ্য পুলিশের উদ্যোগে গতকাল রোববার বিকেলে তাঁদের উদ্ধার করা হয়। বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) কাছ থেকে ওই তিন নাগরিককে ফেরত নিয়ে বিএসএফ তাঁদের কোচবিহার জেলার পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে বলে জানা গেছে।

চারজনের মধ্যে তিনজনই মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, ভগবানগোলার মহিষাস্থলি গ্রামপঞ্চায়েতের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহবুব শেখ ও বেলডাঙার কাজিশাহার বাসিন্দা মিনারুল শেখ। অন্যজন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার কুলুট গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফা কামাল। তাঁরা প্রত্যেকেই পরিযায়ী শ্রমিক। মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে তাঁরা রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। হেফাজতে নেওয়ার পাঁচ দিন পর তাঁদের উদ্ধার করা হলো বলে জানানো হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্র ‘পুবের কলম’ আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তাঁদের কাছে বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে দুই প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।

পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্র ‘পুবের কলম’ আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তাঁদের কাছে বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে দুই প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। দুই দিন ধরে তাঁরা কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ থেকে কিছুটা দূরে জিরো পয়েন্টে ছিলেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় মুঠোফোন থেকে ভিডিও বার্তায় ওই চার শ্রমিক তাঁদের দুর্দশার কথা জানান। তারপরেই তাঁদের ফেরানোর তৎপরতা শুরু করেন পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পরিষদের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যসভার সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলামসহ অন্য জনপ্রতিনিধিরা। পুলিশও বিষয়টি বিএসএএফকে জানায়।

হরিহরপাড়ার বাসিন্দা শামীম রহমান গণমাধ্যমে বলেন, ‘স্থানীয় তৃণমূলের রাজনৈতিক নেতাদের বিষয়টি জানানো হয়। তারপর তাঁদের ফেরানোর তৎপরতা শুরু হয়। তাঁরা উদ্ধার হয়ে ঘরে ফিরছেন ভেবে ভালো লাগছে।’

সূত্রের খবর, বাংলাদেশি সন্দেহে চারজনকে আটক করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের হাতে তুলে না দিয়ে ১০ জুন বিএসএফের হাতে তুলে দেয় মহারাষ্ট্র পুলিশ। তাঁদের মুম্বাই থেকে আগরতলা ও পরে কোচবিহারের মেখলিগঞ্জে পাঠানো হয়। ওই শ্রমিকদের টাকা, মুঠোফোনও কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন দুই বছর ধরে মুম্বাইয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। গতকাল সকালে তাঁর স্ত্রী পিংকি বিবি হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখের সঙ্গে দেখা করেন। বিধায়কের মাধ্যমে বৈধ নথি সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলাম ও প্রশাসনের কর্তাদের কাছে পাঠানো হয়। তারপরই তাঁদের ঘরে ফেরানোর তৎপরতা শুরু হয়।

হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখ বলেন, নাজিমুদ্দিন এ দেশেরই নাগরিক। তাঁর বৈধ নথি ও নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র রয়েছে।

বিধায়ক নিয়ামত শেখ আরও বলেন, ‘তাঁর মতো আরও তিনজনকে বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেয় কেন্দ্রের বিএসএফ। গতকাল বিকেলে তাঁরা বিএসএফের হেফাজতে আসেন। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি তাঁরা ঘরে ফিরবেন।’

এ বিষয়ে মুর্শিদাবাদ পুলিশের তরফে গতকাল জানানো হয়, আটক ব্যক্তিদের কাগজপত্র রোববার বিএসএফের হাতে তুলে দেয় রাজ্য পুলিশ। এরপরে বিএসএফ যাবতীয় কাগজপত্র রাজ্য পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে যাচাইয়ের পরে তা বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) হাতে তুলে দেয়।

এরপর বিএসএফ সবাইকে ফেরানোর ব্যবস্থা করে এবং কোচবিহার পুলিশের হাতে তুলে দেয়। মুর্শিদাবাদ ও বর্তমানের জেলা পুলিশের একটি দল ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনতে ইতিমধ্যে কোচবিহারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। আজ সোমবার তাঁদের নিজে নিজে জেলায় ফেরানো হবে বলে জানা গেছে।

চারজনের মধ্যে তিনজনই মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, ভগবানগোলার মহিষাস্থলি গ্রামপঞ্চায়েতের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহবুব শেখ ও বেলডাঙার কাজিশাহার বাসিন্দা মিনারুল শেখ। অন্যজন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার কুলুট গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফা কামাল।

বাঙালি বলে হেনস্তা পশ্চিমবঙ্গে

তবে শুধু দরিদ্র পরিযায়ী শ্রমিকই নন, পশ্চিমবঙ্গে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত অনেকেই সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন, তাঁদের অন্যভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে।

দিল্লির এক অধ্যাপিকা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, গত কয়েক মাসে চারবার দক্ষিণ কলকাতার প্রধান পাসপোর্ট অফিসে গিয়েও তিনি তাঁর ২০০৭ সালের পুরোনো পাসপোর্ট নবায়ন করতে পারেননি।

এই অধ্যাপিকা বলেন, ‘আমাকে পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, এখানে প্রচুর বাংলাদেশি ঢুকেছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সে কারণে আমাদের যাঁদের প্রায় ২০ বছর ধরে বৈধ ভারতীয় পাসপোর্ট রয়েছে, তাঁদেরও সহজে পাসপোর্ট নবায়ন করা হচ্ছে না।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ