নির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই কুবির সাবেক রেজিস্ট্রারকে শাস্তি দেওয়ার অভিযোগ
Published: 6th, April 2025 GMT
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) সাবেক রেজিস্ট্রার মো. মজিবুর রহমান মজুমদারের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ ছাড়াই বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, গত ৩ মার্চ মো. মজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়মের অভিযোগ এনে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একইসঙ্গে গণিত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড.
সাবেক রেজিস্ট্রার মো. মজিবুর রহমান মজুমদার বলেন, “গত ৩ মার্চ ১১টা পর্যন্ত আমি উপাচার্য স্যারের সঙ্গে নথিপত্র নিয়ে কাজ করেছি। তখনও আমি উপাচার্য স্যারের মধ্যে তেমন কিছু দেখতে পাইনি। দুপুর পৌনে ২টার দিকে হঠাৎ উপাচার্য স্যার, উপ-উপাচার্য ম্যাম ও কোষাধ্যক্ষ স্যার এবং গনিত বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আনোয়ার (যাকে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে) কক্ষে প্রবেশ করেন। এরপর উপাচার্য স্যার নিজ হাতে আমাকে চিঠি হস্তান্তর করে বলেন এখন থেকে অধ্যাপক আনোয়ার রেজিস্ট্রার হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করবেন। আপনি কিছুদিন ছুটিতে থাকবেন। আমি ওই মুহূর্তে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেছিলাম।”
আরো পড়ুন:
কুবির ইনকিলাব মঞ্চের নেতৃত্বে হান্নান-ওসমান
২১ দিনের ছুটি চলাকলে কুবি প্রক্টরের ৫ নির্দেশনা
তিনি বলেন, “আমার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট কোনো অভিযোগ কিংবা কোনো অভিযোগকারী নেই। কোনো কারণ দর্শনোও হয়নি বা আমাকে কিছুই বুঝতে দেওয়া হয়নি। এ জাতীয় অফিস আদেশ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং পূর্ণ পরিকল্পিত। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে শুধু রাজনৈতিক কারণে আমি ২০০৯ সাল থেকে ওএসডি পরবর্তীতে প্রায় ১২-১৩ বছর নানা বঞ্ছনার শিকার হয়েছি।”
তিনি আরো বলেন, “বর্তমান প্রশাসন ৩-৪ মাস হলো এসেছে। আমি জুলাই-২৪ বিল্পবের পর ১১ আগস্ট যোগদান করেছি। এ স্বল্প সময়ের মধ্যে কি হলো, তা আমি বুঝতে পারছি না। আমাকে কেনো বাধ্যতামূলক ছুটিতে থাকতে হবে, আর কেনো আমি ক্যাম্পাসেও প্রবেশ করতে পারব না, তা জানি না। একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমার প্রতি ন্যূনতম সুবিচার করা হয়নি।”
একইদিন (৩ মার্চ) ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. দলিলুর রহমান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশের মাধ্যমে মো. মজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের তদন্ত করতে পাঁচ সদস্যের একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গঠিত করা হয়।
কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক এম এম শরীফুল করিমকে। এছাড়া সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. দলিলুর রহমান।
কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো. সোহরাব উদ্দিন, একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও সহকারী প্রক্টর মোহতাসিম বিল্লাহ এবং অর্থ ও হিসাব দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া।
ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির প্রধান অধ্যাপক এমএম শরীফুল করিম বলেন, “আমাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, উনার বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ রয়েছে সেগুলোর ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং করতে বলা হয়েছে। আমরা একটি মিটিং করে প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছি। তবে, এখনো আমরা ফিরতি চিঠি পাইনি। কোষাধ্যক্ষ অফিস থেকে চিঠি পেলে আমরা কাজ শুরু করবো।”
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. হায়দার আলী বলেন, “উনার বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করা হয়েছে মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে। আপাতত ওএসডি করা হয়েছে। ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি যদি প্রমাণ না পায়, তাহলে তিনি আবারো জয়েন করবেন।”
ঢাকা/রুবেল/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ য ক ট ফ ইন ড উপ চ র য স য র
এছাড়াও পড়ুন:
২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হচ্ছে সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে
জালিয়াতির মাধ্যমে এলসির বিপরীতে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে পাঁচটি মামলা করতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন, তাতে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানও আসামি হতে যাচ্ছেন।
আজ সোমবার দুদকের প্রধান কার্যালয় মামলাগুলোর অনুমোদন দেয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি, শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান রহমানের পাশাপাশি তাঁর ছেলে, ভাই, ভাতিজা, জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তাসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে এই মামলাগুলো হবে।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, অনুমোদিত পাঁচ মামলায় ৩৪ জন আসামির বিরুদ্ধে মোট ২১ কোটি ৫৫ লাখ ২৮ হাজার ৮০১ মার্কিন ডলার বা প্রায় ১ হাজার ৯৩৯ কোটি ৭৫ লাখ ৯২ হাজার টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলায় সালমান এফ রহমান ছাড়া আসামিদের মধ্যে রয়েছেন তাঁর ছেলে শায়ান এফ রহমান, ভাই বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান সোহেল এফ রহমান, সোহেল রহমানের ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার রহমান, বেক্সিমকো গ্রুপের পরিচালক ইকবাল আহমেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওসমান কায়সার চৌধুরী, পরিচালক এ বি সিদ্দিকুর রহমান, মাসুদ ইকরামুল্লাহ খান, শাহ মঞ্জুরুল হক ও রীম এইচ শামসুদ্দোহা।
এ ছাড়া স্কাইনেট অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ারুল বাশার ও পরিচালক নাসরিন আহমেদ, ক্রিসেন্ট অ্যাকসেসরিজের এমডি আবু নাঈম মাহমুদ সালেহিন ও পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তানভীর, প্লাটিনাম গার্মেন্টস লিমিটেডের এমডি মোহাম্মদ আলিফ ইবনে জুলফিকার ও পরিচালক নুসরাত হায়দার, পিয়ারলেস গার্মেন্টস লিমিটেডের এমডি ওয়াসীউর রহমান ও পরিচালক রিজিয়া আক্তার, নিউ ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের এমডি সালাউদ্দিন খান মজলিস ও পরিচালক আবদুর রউফ, কাঁচপুর অ্যাপারেলস লিমিটেডের এমডি মাহফুজুর রহমান খান ও পরিচালক সৈয়দ তানবির এলাহী আফেন্দী সম্ভাব্য আসামির তালিকায় রয়েছেন।
জনতা ব্যাংকের মধ্য থেকে আসামি করা হচ্ছে ব্যাংকটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুছ ছালাম আজাদ ও আবদুল জব্বার, সাবেক মহাব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত উপমহাব্যবস্থাপক আবদুর রহিম, সাবেক মহাব্যবস্থাপক শহিদুল হক, অবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম (রপ্তানি বিভাগ) মমতাজুল ইসলাম, সিনিয়র অফিসার রফিকুল ইসলাম, ব্যবস্থাপক সালেহ আহম্মেদ, অবসরপ্রাপ্ত এজিএম মোয়াজ্জেম হোসেন, সাবেক এজিএম (রপ্তানি) মোহাম্মদ শাজাহান, সাবেক এজিএম (রপ্তানি) হুমায়ুন কবির ঢালী ও প্রিন্সিপাল অফিসার শ ম মাহাতাব হোসাইন বাদশাকে।
দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসামিদের যোগসাজশে জনতা ব্যাংকের লোকাল অফিস থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচার করা হয়। এর মধ্যে পিয়ারলেস গার্মেন্টস লিমিটেডের নামে ৫ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার ৭৭২ দশমিক ২৫ ডলার, প্লাটিনাম গার্মেন্টস লিমিটেডের নামে ১ কোটি ৮৮ লাখ ৩ হাজার ৬৫৮ দশমিক ৯১ ডলার, কাঁচপুর অ্যাপারেলস লিমিটেডের নামে ৮ কোটি ৪০ লাখ ২৯ হাজার ৫৪৭ দশমিক ৪৫ ডলার, স্কাইনেট অ্যাপারেলস লিমিটেডের নামে ১ কোটি ৪৭ লাখ ২৯ হাজার ৩৪০ ডলার এবং ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নামে ৪ কোটি ৭৭ লাখ ১৫ হাজার ৪৮২ দশমিক ৪৬ ডলার আত্মসাৎ হয়।
সব মিলিয়ে আত্মসাৎ করা অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২১ কোটি ৫৫ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা।
সাবেক সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের কয়েক দিনের মধ্যে গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে রয়েছেন। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলা হয়।