মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন নতুন শুল্ক আরোপের পর বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, তাতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা।

রবিবার (৬ এপ্রিল) অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে এই স্বস্তির কথা তুলে ধরেন বৈঠকে উপস্থিত ব্যবসায়ী নেতারা।

বৈঠক শেষে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা আসলে যতোটা চিন্তিত ছিলাম, আজকের আলোচনা থেকে সেটার একটা পথনির্দেশনা পেয়েছি। যেটা আমার কাছে মনে হয়, ব্যবসায়ীদের কাছে সুখবর। আমি ব্যক্তিগতভাবে এটা বিশ্বাস করি।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘আমাদের সুযোগ সামনে রয়েছে। সব সময় বাংলাদেশ থেকে মনে করা হয়, তৈরি পোশাক একমাত্র পণ্য যেটা আমাদের রপ্তানির ঝুড়িতে রয়েছে। বিষয়টি কিন্তু তা না, অনেক পণ্য রয়েছে যেটা সম্পর্কে আপনারা অনেকেই জানেন না। আমি একটু আগে টুইটে দেখলাম ইতোমধ্যে ভারতে থেকে ৩০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রের মেডিসিন রপ্তানি হতো। সেগুলোর ট্যারিফ তারা দিয়ে দিয়েছে।’’

‘‘চারদিক থেকে সুযোগ আসছে। এখন আমাদের যে নীতি নির্ধারক রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার যে সুসম্পর্ক রয়েছে, আমি মনে করি এসব ব্যক্তির মাধ্যমে আমরা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারব।’’ বলেন তপন চৌধুরী। 

লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফেকচারার্স  অ্যান্ড এক্সপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘‘আজকে আমাদের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের স্বস্তির জায়গা তৈরি হয়েছে। সরকারের সুনির্দিষ্ট যে একটা পরিকল্পনা আছে, সেটা টাইম বাউন্ড পরিকল্পনা। আমরা বারবার বলেছি, এটার একটা সেলফ লাইফ আছে যদি আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে না করি তাহলে পিছিয়ে পড়ব। আজকে মনে করছি সেটা আমরা করতে পারব।’’

তিনি বলেন, ‘‘দেশের স্বার্থ আগে, সেখানে বাংলাদেশের স্বার্থটা মাথায় রেখে সুযোগগুলো খুঁজে বের করতে হবে। আমরা আজকে খুবই উৎসাহিত হয়েছি। আর একটা বিষয়ে আমরা সবাই একমত যে, বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা যেন না হারায়। একইসঙ্গে কোনো রকমের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের সাথে যেন আমাদের প্রতিযোগিতা না কমে। সেই আশ্বাস আমরা পেয়েছি সরকারের কাছ থেকে।’’

‘‘বেসরকারি খাত থেকে আমরা আত্মবিশ্বাসী যে লেবেল প্লেইং ফিল্ড থাকলে আমরা পেরেছি এবং পারব। সেই ফিল্ডটা তৈরি করার দায়িত্ব হচ্ছে সরকারের। বাকিটা আমাদের সেখানে একটা সম্মিলিত প্রচেষ্টা লাগবে। আমরা এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা আরো কী জিনিস কিনতে পারি, যা আমাদের দেশের স্বার্থে আমাদের কাজে লাগবে, একই সময়ে এই সুযোগটা কীভাবে কাজে লাগাব আর ভবিষ্যতে আমাদের রপ্তানি বৃদ্ধি করে সেখানকার মানুষের মানোন্নয়ন করতে পারি ভাবতে হবে।’’

‘‘আমাদের উইন-উইন প্রোপজ দেওয়ার জন্যই আমরা আজকে এখানে সম্মেলিত হয়েছি। আমি মনে করছি আগামী ২৪ ঘণ্টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভালো একটা খবর আমাদের বায়ারদের দিতে পারব।’’ 

‘‘আমাদের রপ্তানি খাতে তৈরি পোশাকের বাইরে আরো কিছু নতুন পণ্য রয়েছে। সেটার সবচেয়ে বড় বাজার হতে পারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেই বাজারটাকে ইগনোর করা যায় না, করতে চাইও না এবং আমরা করবোও না।’’ বলেন সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। 

নারী উদ্যোক্তা ও বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি ( বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি এবং মোহাম্মাদি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবানা হক বলেন, ‘‘আমি এক লাইনেই শেষ করছি- প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প টুইট করবেন, এরকম একটি চিঠি এখান থেকে যাবে সেটার প্রতিক্ষায় থাকলাম।’’

ঢাকা/হাসনাত//

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সরক র র আম দ র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

প্রযুক্তি কি ডিমেনশিয়া বাড়িয়ে দিচ্ছে? ৫৭টি ভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে বিস্ময়কর তথ্য

প্রযুক্তির কল্যাণে হুটহাট বড় পরিবর্তন আসা নতুন কিছু নয়। করোনা মহামারির আগে বাসা থেকেও যে অফিস করা সম্ভব, সেটা মানতে চাইতেন না অনেকে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হোম অফিস হয়েছে স্বাভাবিক। একই ঘটনা ঘটেছে ডিজিটাল দুনিয়ায়। একসময় যেকোনো তথ্য খুঁজে বের করার জন্য শরণাপন্ন হতে হতো সার্চ ইঞ্জিনের; এআই সেই উত্তর সবিস্তারে দিয়ে দিচ্ছে মুহূর্তেই। ফলে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন শুধু জীবনকে সহজতর করছে না, বাঁচিয়ে দিচ্ছে সময় ও পরিশ্রমও। কিন্তু এই বেঁচে যাওয়া সময় ও পরিশ্রম মস্তিষ্কের ওপর ঠিক কীভাবে প্রভাব ফেলছে?

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস ও বেলোর ইউনিভার্সিটির এক যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, এত দিন প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে মানব মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমার যে গুঞ্জন ভেসে বেড়িয়েছে, তার কোনো সত্যতা নেই। ‘নেচার হিউম্যান বিহেভিয়ার’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ নামে যে হাইপোথিসিস আছে, তার কোনো প্রমাণ নেই গবেষকদের কাছে। বরং পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষদের স্মার্টফোন, কম্পিউটার কিংবা ইন্টারনেট ব্যবহার তাঁদের স্বাভাবিক স্মৃতিভ্রম অনেকটা স্তিমিত করে।

ডিজিটাল ডিমেনশিয়া কী

২০১২ সালে প্রথম ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ তত্ত্ব নিয়ে হাজির হন জার্মান স্নায়ুবিজ্ঞানী ও মনোবিদ ম্যানফ্রেড স্পিৎজার। মূলত যে হারে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে এবং মানুষ যান্ত্রিক পর্দার সামনে প্রতিদিনের বেশির ভাগ সময় কাটাচ্ছে, তাতে প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে অনেকটাই। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় তথ্যগুলোও মনে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে অনেকে। যেমন ফোন নম্বর। একসময় প্রিয়জনের ফোন নম্বর আমাদের মুখস্থ থাকত। এখন ফোন নম্বর ঠাঁই পায় মুঠোফোনের কনটাক্ট লিস্টে। ফোন নম্বর মনে রাখার চেষ্টাই করে না কেউ। আবার অনেকক্ষণ যান্ত্রিক পর্দার সামনে থাকলেও সেখান থেকে শেখার ইচ্ছা থাকে না অনেকের। চোখের সামনে যা আসছে, স্ক্রল করে চলে যাচ্ছে পরের কোনো কনটেন্টে। এতে মনোযোগ হারিয়ে যায় দ্রুত। আর প্রযুক্তির এমন অতিব্যবহার যে স্মৃতিশক্তি কমিয়ে দিচ্ছে, একেই ধরা হয় ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ হিসেবে।

আরও পড়ুনডিজিটাল স্ক্রিন ব্যবহারের সময় ২০-২০-২০ নিয়ম মানাটা কেন জরুরি২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩গবেষণা যা বলছে

প্রায় ৪ লাখ ১১ হাজার পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষের ওপর চালানো ৫৭টি ভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে যে স্মৃতিভ্রম দেখা দেয়, তার অনেকটাই হ্রাস করে প্রযুক্তির ব্যবহার। প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের ফলে স্মৃতিশক্তি কমে আসার আশঙ্কা প্রায় ৫৮ শতাংশে নেমে আসে।

স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া বরং আরও কিছু সূচকের (যেমন সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পারিবারিক অবস্থা) ওপর নির্ভর করে। মজার ব্যাপার হলো, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার থেকেও বেশি কার্যকর প্রযুক্তির ব্যবহার।

তবে এর সবকিছুই নির্ভর করছে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের ওপর। পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিরা বেশির ভাগ সময়ই অনলাইনে কাটান ইউটিউব ভিডিও অথবা ফেসবুক স্ক্রল করে। এতে তাঁদের মস্তিষ্কের ব্যবহার হয় না বললেই চলে। মস্তিষ্ক সচল রাখতে পারে এমন কনটেন্টে তাঁদের মনোযোগ সরিয়ে নিতে পারলে আনন্দ যেমন পাবেন, তেমনই ডিজিটাল দুনিয়া সম্পর্কে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গিও পালটে যাবে। এ ছাড়া অনলাইনের হাজারো গুজব ও উসকানি থেকে মুক্ত থাকবেন তাঁরা।

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট

আরও পড়ুনমাত্রাতিরিক্ত স্ক্রিনটাইম যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সম্পর্কিত নিবন্ধ