‘দেড় দোন (৩৬ শতক) নমলা আলু নাগাছুনু। আলু ভালোই হইছে, কিন্তু বেচাইলে খরচের অর্ধেকও দাম ওঠে না। হিমাগারোত জায়গা না পায়া সউগ আলু ঘরোত থুচুন। এ্যালাও দাম নাই। ওই জন্যে আলু কাটি গরুক খাওয়াছি, তা ছাড়া আলু যে পচি যাওছে।’

আবাদের আলু বিক্রি না করে গবাদিপশুকে খাওয়ানোর কারণ জানতে চাইলে এভাবেই বলছিলেন রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার মেনানগর গ্রামের কৃষক আজারুল ইসলাম। তাঁর দাবি, ১০০ টাকা কেজিতে বীজ কিনে আলু লাগিয়েছিলেন। এবার ফলন ভালো হলেও বাজারে আলু বিক্রি করে উৎপাদন খরচের অর্ধেক দামও পাওয়া যাচ্ছে না।

একই গ্রামের কৃষক জিয়াউর রহমান হিমাগারে জায়গা না পেয়ে প্লাস্টিকের ৩০০টি জালি বস্তায় আলু ভরে বাড়িতেই সংরক্ষণ করেছেন। সেই আলু নিয়ে এখন তাঁর দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে। জিয়াউর রহমান বলেন, চাষ থেকে তোলা পর্যন্ত প্রতি কেজি আলুতে খরচ ২২ টাকা। এক কেজি আলু বাজারে এখন ১২ টাকা। সুতরাং কেজিতে ১০ টাকাই তাঁর লোকসান। আশঙ্কা প্রকাশ করে জিয়াউর বলেন, ‘সবারে ঘরে ঘরে এবার আলু, আল্লাহ জানে এইবার আলুর কি হইবে।’

শুধু আজাহারুল ও জিয়াউরই নয়, তাঁদের মতো শত শত কৃষক ঘরে, উঠানে, মাচানে আলু রেখে বিপাকে পড়েছেন। বছরজুড়ে সবটুকু শ্রম ঢেলে আলু ফলিয়ে এখন পড়েছেন বিপাকে। ক্রেতার প্রতীক্ষায় থাকতে থাকতে গরমে আলুতে পচন ধরছে। চালের খুদের চেয়ে আলুর দাম তিন গুন কম হওয়ায় চাষিরা এখন গরুকে আলু খাওয়াচ্ছেন।

উপজেলার অন্তত ৩০ জন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারাগঞ্জে তিনটি হিমাগার থাকলেও এগুলোর ধারণক্ষমতা সীমিত। এসব হিমাগারে আগেই বুকিং দিয়ে রেখেছেন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীরা। ফলে নিরুপায় হয়ে বিভিন্ন উপায়ে বাড়িতেই আলু সংগ্রহ করছেন তাঁরা। গরমের মাত্রা বাড়ায় সেগুলোতে পচনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শ্রমের মূল্য, সার, ওষুধের দাম তো দূরের কথা যে টাকায় তাঁরা আলুবীজ কিনেছিলেন, বর্তমান বাজারে আলু বিক্রি করলে ওই টাকাও উঠছে না।

উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত বছর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ৩ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছিল। উৎপাদন হয়েছিল ৮৫ হাজার ৭৩৭ টন। এবার চাষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৫৩০ হেক্টরে। আর আলুর উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৪২ হাজার ৯৫ মেট্রিক টন। কিন্তু তারাগঞ্জে তিনটি হিমাগারে আলুর ধারণক্ষমতা মাত্র ১৬ হাজার টন। বাকি ১ লাখ ২৮ হাজার ৯৫ টন আলু বাড়ি, উঠানসহ বিভিন্ন স্থানে সংরক্ষণ করছেন কৃষকেরা। কিন্তু ক্রেতার অভাবে এসব আলু এখন গরুকে খাওয়াচ্ছেন।

তারাগঞ্জের প্রামাণিকপাড়া গ্রামের কৃষক তারাজুল ইসলাম জানান, এক কেজি চালের খুদের দাম ৪৫ টাকা। আর এক কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকায়। এ জন্য গরুকে খুদের বদলে আলু খাওয়াচ্ছেন। তারাজুলের ভাষ্য, ‘শুধু আমি নই; যার বাড়িত গরু আছে, ঘরোত আলু আছে তারা সবাই এ কাজ করছে।’

সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ধীবা রানী রায় বলেন, গত বছর দাম পেয়ে এবারে রেকর্ড পরিমাণ আলু চাষ হয়েছে। চার ভাগের এক ভাগ আলু সংরক্ষণের জন্য হিমাগার নেই। ফলে অনেকেই দেশি পদ্ধতিতে বাড়িতে আলু সংরক্ষণ করেছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

কুমিল্লায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৩৫ কিলোমিটারজুটে যানজট

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার নিমশার থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটারজুড়ে যানজট দেখা দিয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রী ও চালকেরা। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি কাভার্ড ভ্যান উল্টে যাওয়ায় আজ বৃহস্পতিবার ভোর থেকে এ যানজট দেখা দেয়। 

হাইওয়ে পুলিশ  জানায়, বৃহস্পতিবার ভোরে মহাসড়কে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার নূরীতলা এলাকায় একটি কাভার্ড ভ্যান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। ফেনী থেকে রেকার এনে কাভার্ড ভ্যানটি উদ্ধারের কাজ শুরু করে পুলিশ। 

সকাল সাড়ে ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মহাসড়কে যানজট দেখা গেছে। 

ঢাকাগামী রয়েল পরিবহনের চালক রমিজ উদ্দিন বলেন, সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা করে বুড়িচংয়ের নিমশার বাজারে যানজটে এক ঘণ্টা বসে থাকতে হয়েছে। ৫ মিনিট গাড়ি চললে ২০ মিনিট বসে থাকতে হয়। এভাবে ১০টা ৪০ মিনিটে চান্দিনায় পৌঁছেছি। এ সময়ে ঢাকার কাছাকাছি থাকার কথা ছিল। 

নিমশার বাজারে আটকে থাকা প্রাইভেট কারের যাত্রী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ভোর থেকে যানজট অথচ সড়কে হাইওয়ে পুলিশ দেখছি না। 

ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রুহুল আমিন বলেন, মহাসড়কের নূরীতলা এলাকায় উল্টে কাভার্ড ভ্যানটি আড়াআড়িভাবে পড়ে ছিল। পরে ঢাকামুখী লেনের বেশ কিছু গাড়ি উল্টো পথে ঢোকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ফেনী থেকে ক্রেন এনে গাড়িটি উদ্ধার করা হয়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। 

হাইওয়ে কুমিল্লা রিজিওনের পুলিশ সুপার অতিরিক্ত ডিআইজি মো. খাইরুল আলম সমকালকে বলেন, দুর্ঘটনার কারণেই যানজট দেখা দিয়েছে। দুর্ঘটনা কবলিত কাভার্ড ভ্যানটি উদ্ধার করা হয়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ