কৃষকের ঘরে ঘরে আলুর স্তূপ, দাম না পাওয়ায় খাওয়ানো হচ্ছে গরুকে
Published: 8th, April 2025 GMT
‘দেড় দোন (৩৬ শতক) নমলা আলু নাগাছুনু। আলু ভালোই হইছে, কিন্তু বেচাইলে খরচের অর্ধেকও দাম ওঠে না। হিমাগারোত জায়গা না পায়া সউগ আলু ঘরোত থুচুন। এ্যালাও দাম নাই। ওই জন্যে আলু কাটি গরুক খাওয়াছি, তা ছাড়া আলু যে পচি যাওছে।’
আবাদের আলু বিক্রি না করে গবাদিপশুকে খাওয়ানোর কারণ জানতে চাইলে এভাবেই বলছিলেন রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার মেনানগর গ্রামের কৃষক আজারুল ইসলাম। তাঁর দাবি, ১০০ টাকা কেজিতে বীজ কিনে আলু লাগিয়েছিলেন। এবার ফলন ভালো হলেও বাজারে আলু বিক্রি করে উৎপাদন খরচের অর্ধেক দামও পাওয়া যাচ্ছে না।
একই গ্রামের কৃষক জিয়াউর রহমান হিমাগারে জায়গা না পেয়ে প্লাস্টিকের ৩০০টি জালি বস্তায় আলু ভরে বাড়িতেই সংরক্ষণ করেছেন। সেই আলু নিয়ে এখন তাঁর দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে। জিয়াউর রহমান বলেন, চাষ থেকে তোলা পর্যন্ত প্রতি কেজি আলুতে খরচ ২২ টাকা। এক কেজি আলু বাজারে এখন ১২ টাকা। সুতরাং কেজিতে ১০ টাকাই তাঁর লোকসান। আশঙ্কা প্রকাশ করে জিয়াউর বলেন, ‘সবারে ঘরে ঘরে এবার আলু, আল্লাহ জানে এইবার আলুর কি হইবে।’
শুধু আজাহারুল ও জিয়াউরই নয়, তাঁদের মতো শত শত কৃষক ঘরে, উঠানে, মাচানে আলু রেখে বিপাকে পড়েছেন। বছরজুড়ে সবটুকু শ্রম ঢেলে আলু ফলিয়ে এখন পড়েছেন বিপাকে। ক্রেতার প্রতীক্ষায় থাকতে থাকতে গরমে আলুতে পচন ধরছে। চালের খুদের চেয়ে আলুর দাম তিন গুন কম হওয়ায় চাষিরা এখন গরুকে আলু খাওয়াচ্ছেন।
উপজেলার অন্তত ৩০ জন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারাগঞ্জে তিনটি হিমাগার থাকলেও এগুলোর ধারণক্ষমতা সীমিত। এসব হিমাগারে আগেই বুকিং দিয়ে রেখেছেন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীরা। ফলে নিরুপায় হয়ে বিভিন্ন উপায়ে বাড়িতেই আলু সংগ্রহ করছেন তাঁরা। গরমের মাত্রা বাড়ায় সেগুলোতে পচনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শ্রমের মূল্য, সার, ওষুধের দাম তো দূরের কথা যে টাকায় তাঁরা আলুবীজ কিনেছিলেন, বর্তমান বাজারে আলু বিক্রি করলে ওই টাকাও উঠছে না।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত বছর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ৩ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছিল। উৎপাদন হয়েছিল ৮৫ হাজার ৭৩৭ টন। এবার চাষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৫৩০ হেক্টরে। আর আলুর উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৪২ হাজার ৯৫ মেট্রিক টন। কিন্তু তারাগঞ্জে তিনটি হিমাগারে আলুর ধারণক্ষমতা মাত্র ১৬ হাজার টন। বাকি ১ লাখ ২৮ হাজার ৯৫ টন আলু বাড়ি, উঠানসহ বিভিন্ন স্থানে সংরক্ষণ করছেন কৃষকেরা। কিন্তু ক্রেতার অভাবে এসব আলু এখন গরুকে খাওয়াচ্ছেন।
তারাগঞ্জের প্রামাণিকপাড়া গ্রামের কৃষক তারাজুল ইসলাম জানান, এক কেজি চালের খুদের দাম ৪৫ টাকা। আর এক কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকায়। এ জন্য গরুকে খুদের বদলে আলু খাওয়াচ্ছেন। তারাজুলের ভাষ্য, ‘শুধু আমি নই; যার বাড়িত গরু আছে, ঘরোত আলু আছে তারা সবাই এ কাজ করছে।’
সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ধীবা রানী রায় বলেন, গত বছর দাম পেয়ে এবারে রেকর্ড পরিমাণ আলু চাষ হয়েছে। চার ভাগের এক ভাগ আলু সংরক্ষণের জন্য হিমাগার নেই। ফলে অনেকেই দেশি পদ্ধতিতে বাড়িতে আলু সংরক্ষণ করেছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
নারায়ণগঞ্জে ৪টি আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন যারা
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনের মধ্যে চারটি আসনে বিএনপির দলীয় মনোনীত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করেছে বিএনপির হাইকমান্ড। শুধু নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি।
সোমবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এসময় বিএনপির জাতীয় স্থানীয় কমিটির একাধিক সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির ঘোষিত প্রার্থী তালিকায়, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভূঁইয়া, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে নজরুল ইসলাম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ-৩ আজহরুল ইসলাম মান্নান এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ মাসুদুজ্জামান মাসুদ ধানের শীষ প্রতীকের সম্ভাব্য প্রার্থী।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে (সদর-বন্দর) মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ছিলেন তিনবারের সংসদ সদস্য আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান, সাবেক সহসভাপতি আতাউর রহমান মুকুল, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আব্দুস সবুর খান সেন্টু, বর্তমান সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু এবং বিএনপিপন্থী ব্যবসায়ী আবু জাফর আহমেদ বাবুল।
নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা) আসনটি এখনো ফাঁকা রেখেছে দলটি। ধারণা করা হচ্ছে এ আসনটিতে গতবারের মতো জোটের প্রার্থী ছাড় পাবেন। তবে এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও ব্যবসায়ী শাহ্ আলম, জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মাশুকুল ইসলাম রাজিব, ফতুল্লা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারী ভূঁইয়া, সদ্য সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরীও রয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ-৩ (সিদ্ধিরগঞ্জ-সোনারগাঁ) আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ছিলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করিম ও যুব উন্নয়নের সাবেক মহাপরিচালক এসএম ওলিউর রহমান আপেল।
নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খাঁন আঙ্গুর ও তার ভাতিজা বিএনপির সহঅর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন।
নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জে) আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ছিলেন দলটির নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মনিরুজ্জামান মনির, মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন।
এদিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, “দীর্ঘ ১৬ বছর পর ২৩৮ আসনে আমাদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করছি। আমাদের সঙ্গে যারা আন্দোলন করেছেন, তারা যে সমস্ত আসনে আগ্রহী সে সমস্ত আসনে প্রার্থী দেই। আমরা আলোচনার মাধ্যমে প্রার্থী ঘোষণা করবো। এটা আমাদের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা, এর মধ্যেই পরিবর্তন হতে পারে।
বিশেষ করে, আমাদের শরিক দলগুলোর সাথে আলোচনা এবং স্থায়ী কমিটি যদি মনে করে কোনো আসনে পরিবর্তন আনবে, সেক্ষেত্রে নিয়ম মেনে পরিবর্তন আনবেন।”