Prothomalo:
2025-07-31@06:34:15 GMT

এমন ঈদ বারবার আসুক

Published: 8th, April 2025 GMT

একটা গণ–আন্দোলন সফল হওয়ার পর গত বছরের আগস্ট মাসে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যখন রাষ্ট্রের দায়িত্ব পায়; দেশের কোটি কোটি মানুষের প্রত্যাশার কোনো অন্ত ছিল না। দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর বিগত স্বৈরচারী শাসকের অধীনে থাকতে থাকতে মানুষ অনেকটা ভুলতেই বসেছিল রাষ্ট্রীয় কিংবা সামাজিক জীবনে চাওয়া-পাওয়া অথবা প্রত্যাশার জায়গা বলেও কিছু একটা আছে।

মানুষের ওপর যা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, এক অর্থে সাধারণ নাগরিকদের সেটা মেনে নিতে হয়েছে। হঠাৎ এক রাতের মধ্যে ডিমের দাম বেড়ে যাওয়া কিংবা বেগুনের ঊর্ধ্ব মূল্য এসব আমরা দেখেছি।

রোজার সময় তৎকালীন স্বৈরশাসক শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা গেছে, বেগুনের দাম বেড়ে যাওয়ায় যারা ইফতারে মুখরোচক খাবার তৈরি করতে পারছেন না, তাঁরা বিকল্প সবজি হিসেবে মিষ্টিকুমড়া দিয়ে বেগুনি বানাতে পারেন।

মাংসের দাম বেড়ে গেলে কাঁঠাল দিয়ে বার্গার বানানোর রেসিপি দেওয়ার গল্পও আমরা শুনেছি। সেই বার্গার খেতে নাকি মাংসের মতোই! জনগণকে নিয়ে এভাবেই ঠাট্টা করতে দেখা গেছে বিগত আমলের মন্ত্রী-এমপিদের।

কোথায় তাঁদের উচিত ছিল দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা কিংবা না পারলে অক্ষমতা প্রকাশ করে ক্ষমা চাওয়া। সেটা না করে এসব দাম্ভিক কথা বলে বেড়াতে দেখা গেছে নিয়মিত। এর একটা অন্যতম কারণ হয়তো ছিল ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট। তাঁরা যখন ইচ্ছা নিজেদের মতো করে দাম বাড়িয়ে দিতে পারতেন। সরকারের কারও হয়তো কিছু বলার ছিল না। কারণ, তাঁরা নিজেরাও হয়তো সেই সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের সব খাতের মানুষ একের পর এক নিজেদের দাবিদাওয়া নিয়ে হাজির হতে থাকেন। নানা রকম আন্দোলন আমরা দেখেছি। হয়তো দীর্ঘদিনের জমে থাক ক্ষোভ ও বলতে না পারার জায়গা থেকেই এসব আন্দোলনের জন্ম হয়েছে। কেউ হয়তো তাঁদের কথা শুনতে চায়নি। তাই এবার যখন সুযোগ পেয়েছে, সবাই নিজেদের দুঃখ-কষ্টের কথা হয়তো সরকারকে জানাতে চেয়েছে।

সব মিলিয়ে বলতেই হচ্ছে, এ বছর রোজার ঈদ বিগত আমলের চেয়ে অনেক স্বস্তিদায়ক ছিল নাগরিকদের জন্য। ভবিষ্যতে নির্বাচনের মাধ্যমে যে রাজনৈতিক সরকারই ক্ষমতায় আসুক, তাদের উচিত হবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে অন্তত এবারের ঈদ আয়জনের পুরো ব্যাপারটা সরকার কীভাবে সামলেছে, সে বিষয়ে ছবক নেওয়া। যাতে এমন ঈদ এই বাংলার মাটিতে বারবার ফিরে ফিরে আসে।

একের পর এক আন্দোলন হলেও সরকারকে খুব একটা হার্ডলাইনে যেতে দেখা যায়নি; বরং সরকার ধৈর্যের সঙ্গেই সব পক্ষের কথা শোনার চেষ্টা করেছে। অনেক ক্ষেত্রে হয়তো দাবিগুলো সরকার মেনে নিতে পারেনি। কারণ, সরকারেরও সীমাবদ্ধতা আছে। সে ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, সরকার নিজেদের অক্ষমতার কথা প্রকাশও করেছে।

অন্যদিকে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও বেশ খারাপ হয়ে গিয়েছিল। বিশেষ করে পুলিশ বাহিনীর অনুপস্থিতি এবং পরবর্তী সময় তাদের মনোবল ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সরকারকে অনেক বেগ পেতে হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। এর মধ্যে যখন এ বছর পবিত্র রমজান মাস এল। সবাই শঙ্কায় ছিল, আবার কি তাহলে দ্রব্যের দাম বাড়বে?

কারণ, বিগত এক দশকে এটা ছিল খুব স্বাভাবিক বিষয়। রোজা এলেই এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিতেন। মানুষকে এসব দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে যেতে হয়েছে।

এ বছর যখন সবাই শঙ্কায় ছিল, ঠিক তখনই আমরা আবিষ্কার করলাম, বেশির ভাগ পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে ছিল। খুব একটা দাম বাড়তে দেখা যায়নি।

ঈদের সময় প্রতিবছর বাড়ি ফেরার অপর নাম হয়ে দাঁড়িয়েছিল ভোগান্তি। সড়কপথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যাম। ট্রেনগুলো ঠিক সময়ে ছাড়ত না। নিরাপত্তা শঙ্কা তো ছিলই। এ বছর যখন পুলিশের মনোবল এখনো পুরোপুরি ফিরে আসেনি, তখন শঙ্কাটা আরও বেশি ছিল।

আরও পড়ুনইন্টেরিমের রোজা-ঈদ এবং ‘মধু মধু মধু.

..’৩১ মার্চ ২০২৫

অথচ আমরা দেখলাম এর ঠিক উল্টো চিত্র। তেমন কাউকে বাড়ি ফিরতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি। ট্রেনগুলো ঠিক সময়ে ছেড়ে গিয়েছে। সড়কপথে জ্যাম দেখা যায়নি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ছিল স্বাভাবিক।

উল্টো এ বছর দুটি চমৎকার আয়োজনও আমরা দেখতে পেয়েছি। ঈদের আগের দিন, চাঁদরাতে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে মেহেদি উৎসবের আয়োজন দেখেছি। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও ঢাকা সিটি করপোরেশন উত্তরের প্রশাসকের উদ্যোগের চমৎকার একটি ঈদ আয়োজন চোখে পড়েছে।

ঈদ–আনন্দ সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার এই উদ্যোগগুলো হয়তো ভবিষ্যতে আরও চমৎকারভাবে করা যাবে।

তবে এখানে একটা কথা বলতেই হচ্ছে, ঢাকা শহর ঈদের সময় প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়। সেই ফাঁকা শহরে ঈদের দিন ঢাকা উত্তরের প্রশাসক ও সিটি করপোরেশন মিলে এমন একটা আয়োজন যে সফলভাবে করতে পেরেছে, এটি বেশ লক্ষণীয়।

যেখানে হয়তো অনেকেই নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত ছিল, সেখানে দেখা গেল মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছে। আয়োজনও কোনো রকম বিশৃঙ্খলা ছাড়াই শেষ করা গিয়েছে।

সব মিলিয়ে বলতেই হচ্ছে, এ বছর রোজার ঈদ বিগত আমলের চেয়ে অনেক স্বস্তিদায়ক ছিল নাগরিকদের জন্য। ভবিষ্যতে নির্বাচনের মাধ্যমে যে রাজনৈতিক সরকারই ক্ষমতায় আসুক, তাদের উচিত হবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে অন্তত এবারের ঈদ আয়জনের পুরো ব্যাপারটা সরকার কীভাবে সামলেছে, সে বিষয়ে ছবক নেওয়া। যাতে এমন ঈদ এই বাংলার মাটিতে বারবার ফিরে ফিরে আসে।

আমিনুল ইসলাম জ্যেষ্ঠ প্রভাষক, এস্তোনিয়ান এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ইউনিভার্সিটি

[email protected]

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র র র যখন ক ষমত এ বছর

এছাড়াও পড়ুন:

৪৪তম বিসিএসের ৪০০ রিপিট ক্যাডার বাদ দিচ্ছে সরকার, নতুন সিদ্ধান্ত আসছে

৪৪তম বিসিএসে পুনরাবৃত্তি হওয়া ৪০০ ক্যাডারকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। তারা ৪৩তম বিসিএসে বা আগের বিসিএসে যে ক্যাডারে আছেন ৪৪তম বিসিএসেও একই ক্যাডার পেয়েছিলেন। এই ৪০০ ক্যাডারকে নিয়ে সিদ্ধান্ত দ্রুতই হবে বলে জানিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা।

প্রথম আলোকে ওই কর্মকর্তা আজ বৃহস্পতিবার বলেন, ৪০০ ক্যাডারকে নিয়ে পিএসসির কিছু সুপারিশ আমরা পেয়েছি। এগুলো বাদ দিতে সরকার কাজ করছে। বাদ দিলে কি করা হবে তা নিয়েও কাজ করছে সরকার। এখন পিএসসিকে এ বিষয় নিয়ে একটি মতামত দিতে বলা হয়েছে। পেলেই তা পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে প্রজ্জাপন দেওয়া হবে। এটি যাতে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয় সেজন্য আমরা কাজ করছি।

আরও পড়ুন৪৯তম বিসিএস: অনলাইন আবেদন ও ফি জমাদানে পিএসসির নতুন নির্দেশনা৩০ জুলাই ২০২৫

৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল ৩০ জুন প্রকাশিত হয়। এতে বিভিন্ন ক্যাডারে ১ হাজার ৬৯০ জনকে নিয়োগের জন্য সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) সাময়িকভাবে মনোনীত করেছে।

প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১ হাজার ৬৯০ জনের মধ্যে প্রায় ৪০০ জন প্রার্থী একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একই ক্যাডারে পুনরায় সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন (রিপিট ক্যাডার)। এই ৪০০ জনের তালিকা পেয়েছে পিএসসি। এই রিপিট ক্যাডার বন্ধে বিধি সংশোধন করা হচ্ছে। এ–সংক্রান্ত চিঠি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় পিএসসি।

পিএসসি জনপ্রশাসনের চিঠিতে বলছে, এই রিপিট ক্যাডারের ফলে নতুন ও অপেক্ষমাণ মেধাবীরা সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এটি প্রশাসনিক কাঠামো ও জনসম্পদের সদ্ব্যবহারে বাধা সৃষ্টি করছে। এখন এটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।

একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একই ক্যাডারে পুনরায় সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়া বন্ধ করার জন্য বিদ্যমান বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বয়স, যোগ্যতা ও সরাসরি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা ২০১৪–এর বিধি-১৭ এর শেষে নিম্নোক্ত শর্ত যুক্ত করার প্রস্তাব করেছে পিএসসি।

আরও পড়ুনসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের ৩৪০০০ শূন্য পদ পূরণে উদ্যোগ২৯ জুলাই ২০২৫শর্তে কী আছে—

পিএসসির চিঠিতে শর্ত হিসেবে বলা আছে, ‘তবে শর্ত থাকে যে এই বিধির আওতাধীন সরকারের নিকট সুপারিশ প্রেরণ করিবার প্রাক্কালে, কিংবা কোনো বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রস্তুতকালে, সংশ্লিষ্ট প্রার্থী কর্তৃক প্রদত্ত লিখিত তথ্যের ভিত্তিতে কিংবা কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত কোনো পদ্ধতির মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে যদি কমিশনের নিকট প্রতীয়মান হয় যে এই বিধির আওতাধীন মনোনয়নযোগ্য কিংবা মনোনীত কোনো প্রার্থী একই ক্যাডার পদ, সমপদ কিংবা প্রার্থীর আগ্রহ নেই এমন কোনো সার্ভিস বা ক্যাডার পদে পুনরায় মনোনীত হইবার কারণে মনোনীত সার্ভিসে বা ক্যাডার পদে যোগদান করিতে অনিচ্ছুক, এইরূপ ক্ষেত্রে কমিশন অনাগ্রহ প্রকাশকারী প্রার্থীকে এই বিধির আওতাধীন সরকারের নিকট সুপারিশ করা হইতে বিরত থাকিতে পারিবে; আরও শর্ত থাকে যে প্রথম শর্তাংশে বর্ণিত বিধান অনুযায়ী কোনো প্রার্থীকে সুপারিশ করা হইতে বিরত থাকিবার কারণে উদ্ধৃত শূন্য পদে নিয়োগের লক্ষ্যে সুপারিশ প্রেরণ করিবার জন্য উত্তীর্ণ প্রার্থিগণের মধ্য হইতে মেধাক্রম অনুযায়ী প্রার্থী নির্বাচনপূর্বক কমিশন সম্পূরক ফলাফল প্রকাশ এবং সার্ভিসে বা ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য সরকারের নিকট সুপারিশ প্রেরণ করিতে পারিবে;আরও অধিকতর শর্ত থাকে যে দ্বিতীয় শর্তাংশে উল্লিখিত সম্পূরক ফলাফল দ্বারা বা উহার পরিণতিতে প্রথম ঘোষিত ফলাফলে সার্ভিস বা ক্যাডার পদের জন্য মনোনীত কোনো প্রার্থীর প্রতিকূলে কোনো পরিবর্তন ঘটানো কিংবা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাইবে না।’

আরও পড়ুনবস্ত্র অধিদপ্তরে বড় নিয়োগ, চাকরির সুযোগ ১৯০ জনের২৯ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ