ব্যাংক-সম্পর্কিত তিন অধ্যাদেশের অগ্রগতি জানতে চেয়েছে আইএমএফ
Published: 8th, April 2025 GMT
ব্যাংক খাত–সম্পর্কিত তিনটি অধ্যাদেশ প্রণয়নের অগ্রগতি জানতে চেয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সফররত মিশন। এগুলো হচ্ছে ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, আমানত সুরক্ষা অধ্যাদেশ ও বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট করপোরেশন অধ্যাদেশ।
সচিবালয়ে আজ মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করেছে সফররত আইএমএফ মিশনের চার সদস্য। বাংলাদেশের পক্ষে বৈঠকে নেতৃত্ব দেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক।
চলমান ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড়ের আগে দেশের আর্থিক খাতসহ বিভিন্ন সূচকের অগ্রগতি জানতে মিশনটি ঢাকায় এসেছে। পাপাজর্জিওর নেতৃত্বে আসা আইএমএফের এ দল গত রোববার থেকে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করে আসছে। ১৭ এপ্রিল তারা শেষ বৈঠক করবে।
জানা গেছে, ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশের খসড়া ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে। এ অধ্যাদেশ পাস হলে দুর্বল ব্যাংকের অবসায়ন সহজ হবে। আর আমানত সুরক্ষা অধ্যাদেশও পাস হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। এর আওতায় আমানতকারীদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে এক লাখ টাকার বদলে দুই লাখ টাকা করার কথা বলা হয়েছে। আর বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট করপোরেশন আইন প্রণয়নের খসড়া করা হয়েছিল ২০১৯ সালেই। এটি এখন নতুন করে করা হচ্ছে।
সূত্রগুলো জানায়, আর্থিক খাত সংস্কারে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কী করছে, শুরুতেই তা জানতে চেয়েছে আইএমএফ মিশন। তবে বৈঠকে বেশি আলোচনা হয়েছে ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ নিয়ে। সংকটে জর্জরিত ব্যাংকগুলোর একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণ এবং পুনঃ মূলধনীকরণে আইনগত প্রয়োগের জন্য ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ করা হচ্ছে। এর আওতায় ব্যাংক খাত সংকট ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল নামে একটি আন্তপ্রাতিষ্ঠানিক সংস্থা গঠনের কথা বলা হয়েছে।
আইএমএফ মিশন ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশের আলোচনা তুললে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের বাস্তবতায় এ সময়ে তা করার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। বলা হয় ব্যাংক খাত সংকট ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল যদি বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনেই থাকে, তাহলে লাভ কী হবে। কয়েক বছরে দেশের ব্যাংক খাতে যে সুশাসনের ব্যাপক ঘাটতি তৈরি হয়েছে, তাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ ছিল।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ না হয় করাই হবে। তবে তাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বাইরে নিয়ন্ত্রণমুক্ত ও স্বাধীন কোনো কাউন্সিল গঠন করাই ভালো হবে। আইএমএফ এ ব্যাপারে আরও আলোচনা করার পর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
সূত্রগুলো জানায়, রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের পর্ষদ সদস্য অর্থাৎ পরিচালক নিয়োগের নীতিমালার অগ্রগতি নিয়েও জানতে চেয়েছে আইএমএফের মিশন। তাদের জানানো হয়েছে, পটপরিবর্তন অর্থাৎ ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর প্রায় সব রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের পর্ষদেই বদল আনা হয়েছে। আর পর্ষদ সদস্যদের নিয়োগ ও মহাব্যবস্থাপক থেকে উপব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (ডিএমডি) পদোন্নতিবিষয়ক নীতিমালা প্রণয়নের কাজ চলছে।
আইএমএফ মিশনের পক্ষ থেকে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার পাশাপাশি ঋণ আদায়ে জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ মিশনের সদস্যদের জানিয়েছে, ব্যাংকগুলোকে এ ব্যাপারে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আর ব্যাংকগুলোর অবস্থার উন্নতি হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
লন্ডন বৈঠকে বিচার ও সংস্কারের বিষয়টি নির্বাচনের মতো গুরুত্ব না পাওয়া অত্যন্ত হতাশাজনক: এনসিপি
লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে নির্বাচনের তারিখ সংক্রান্ত আলোচনা যতটুকু গুরুত্ব পেয়েছে, বিচার ও সংস্কার ততটুকু গুরুত্ব পায়নি বলে মনে করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বিষয়টিকে ‘অত্যন্ত হতাশাজনক’ বলেছে দলটি।
আজ শুক্রবার রাতে এনসিপির এক বিবৃতিতে এই প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহউদ্দিন সিফাত বিবৃতিটি পাঠিয়েছেন।
এনসিপির বিবৃতিতে বলা হয়, রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা হিসেবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের আলোচনাকে ইতিবাচকভাবে দেখছে এনসিপি। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে লন্ডনে অনুষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার বৈঠকটি ‘সংসদ নির্বাচন’ বিষয়ে দলটিকে আস্থায় আনতে সফল হয়েছে সরকার। জাতীয় ঐক্য, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা জরুরি। কিন্তু বৈঠকে নির্বাচনের তারিখ সংক্রান্ত আলোচনা যতটুকু গুরুত্ব পেয়েছে, অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে নাগরিকদের প্রধান দাবি তথা বিচার ও সংস্কার ততটুকু গুরুত্ব পায়নি। এটা অত্যন্ত হতাশাজনক বলে মনে করে এনসিপি।
নির্বাচন প্রশ্নে সরকার কেবল একটি রাজনৈতিক দলের অবস্থান ও দাবিকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে বলে বারবার প্রতীয়মান হচ্ছে—এ কথা উল্লেখ করে এনসিপি আরও বলেছে, জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন, জুলাই সনদ কার্যকর করা এবং বিচারের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন গণ-অভ্যুত্থানকে স্রেফ একটি ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে পরিণত করবে এবং রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন–আকাঙ্ক্ষাকে অবদমিত করবে।
জনগণের দাবি তথা জুলাই সনদ রচনা ও কার্যকর করার আগে নির্বাচনের কোনো তারিখ ঘোষিত হলে তা জনগণ মেনে নেবে না বলে উল্লেখ করেছে এনসিপি। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কাজেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সংস্কারের বিষয়গুলোর ব্যাপারে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা ও জুলাই সনদ রচনা এবং কার্যকর করেই আসন্ন জুলাইকে যথাযথ মর্যাদায় স্মরণ করার উদ্যোগ নিতে সরকারকে জোর দাবি জানাচ্ছে এনসিপি।’
জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন, মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়নে জুলাই সনদ কার্যকর করা ও বিচারের রোডম্যাপ ঘোষণার পরই নির্বাচন সংক্রান্ত আলোচনা চূড়ান্ত হওয়া উচিত বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে এনসিপি।