ফজর নামাজ শয়তানের বিরুদ্ধে বিশ্বাসীদের বিজয়
Published: 9th, April 2025 GMT
ফজর নামাজ আদায়ের মাধ্যমে শয়তানের বিরুদ্ধে প্রথম জয়লাভ করে বিশ্বাসীরা। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ নিদ্রা যায়, তখন তার ঘাড়ে শয়তান তিনটি করে গিঁট বেঁধে দেয়; প্রতিটি গিঁটে সে এই মন্ত্র পড়ে যে, ‘তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত, অতএব তুমি ঘুমাও।’ তথাপি যদি সে জেগে আল্লাহর জিকির করে, তা হলে একটা গিঁট খোলে। যদি অজু করে, তাহলে আরেকটা খোলে। যদি নামাজ পড়ে, তা হলে বাকিটা মানে সবগুলো খুলে যায়। তার প্রভাত হয় স্ফূর্তি ও ভালো মনে। অন্যথায় সে সকালে ওঠে কলুষিত মনে ও অলসতা নিয়ে।’ (বুখারি, হাদিস: ১,১৪২)
ফজর নামাজের জন্য জেগে ওঠা অনেকের পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তবে মুমিনরা সে-কষ্ট জয় করে নেয়, এবং মুনাফিকরা হেরে যায়। মহানবী (সা.                
      
				
তিনি আরও বলেছেন, ‘মানুষ যদি ফজর ও ইশার নামাজের গুরুত্ব বুঝতে পারত, তা হলে তারা হামা গুঁড়ি দিয়ে হলেও উভয় নামাজে উপস্থিত হতো।’ (বুখারি, হাদিস: ৬৫৭)
আরও পড়ুননামাজ: দাসের মহিমা০৪ মার্চ ২০২৫তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজর নামাজ আদায় করল, সে আল্লাহর দায়িত্বে চলে গেল। (তিরমিজি, হাদিস: ২,১৮৪)
আবু জুহাইর উমারা ইবনে রুয়াইবা (রা.) বলেন, ‘আমি মহানবীকে (সা.) বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে (ফজর ও আসরের ওয়াক্ত) নামাজ আদায় করবে, সে কখনো জাহান্নামে প্রবেশ করবে না।’’ (মুসলিম, হাদিস: ৬৩৪)
আল্লাহ ফজরের নামাজকে গুরুত্ব দিয়েছেন । ‘ফজর’ নামে কোরআনে পূর্ণাঙ্গ একটা সুরা নাজিল করেছেন । আল্লাহ সেখানে শপথ করে বলেন, ‘শপথ উষার!’ (সুরা ফজর, আয়াত: ১)
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আমাদের মর্যাদাবান বরকতপূর্ণ রব দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, ‘যে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দেব। যে আমার কাছে কিছু প্রার্থনা করবে আমি তাকে তা দান করব। যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। তারপর তিনি হাত বাড়িয়ে দেন এবং বলেন, কে আছে যে এমন সত্তাকে ঋণ দেবে, যিনি অভাবী নন; অত্যাচারীও নন। সকাল পর্যন্ত এ কথা বলতে থাকেন।’ (বুখারি, হাদিস: ১,১৪৫)
আরও পড়ুনঅর্থ বুঝে নামাজ পড়ার ফজিলত১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ফজর ন ম জ বল ছ ন আল ল হ
এছাড়াও পড়ুন:
ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন ঠেকাতে গ্রামবাসী বানালেন ‘প্রাকৃতিক বাঁধ’
উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টিতে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রবল স্রোতে ব্রহ্মপুত্র নদসহ অর্ধশতাধিক নদ-নদীর পানি বেড়ে দেখা দেয় ভাঙন। মাটির সঙ্গে ভেসে যায় বসতভিটা, ফসলি জমি, কখনো স্কুল বা মসজিদ। প্রতিবছর এই ভাঙনে নিঃস্ব হয় অসংখ্য পরিবার। সরকারি বাঁধ বা প্রকল্পের প্রতিশ্রুতি মিললেও বাস্তবে কাজের গতি নেই।
এমন অবস্থায় এবার নিজেরাই নিজেদের রক্ষার পথ খুঁজে নিয়েছেন চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের খেরুয়ার চরের বাসিন্দারা। সরকারি সহায়তার অপেক্ষা না করে নিজেদের টাকায় ও স্বেচ্ছাশ্রমে তাঁরা ব্রহ্মপুত্রের তীরে গড়ে তুলছেন এক ‘প্রাকৃতিক বাঁধ’।
প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নদীতীরে লাগানো হয়েছে কলাগাছ, কাশফুল, কলমিলতা ও স্থানীয় ঘাসজাতীয় গাছের চারা। এসব গাছের বিস্তৃত শিকড় নদীতীরের মাটি আঁকড়ে ধরে রাখবে, এমন ধারণা থেকেই এই উদ্যোগ।
খেরুয়ার চরের বাসিন্দা দুলাল জোয়াদ্দার বলেন, ‘প্রতিবছর ভাঙনে ঘরবাড়ি হারাই। কেউ সাহায্য করে না। তাই ভাবলাম, গাছ লাগালেই যদি কিছুটা মাটি টিকে থাকে তাতেই লাভ।’
সম্প্রতি সরেজমিনে নয়ারহাট ইউনিয়নের খেরুয়ারচর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে জেগে ওঠা বালুচরের দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে স্থানীয় বাসিন্দারা কাশফুলের চারা লাগাচ্ছেন। কিছু দূর পরপর কলাগাছ ও কলমিলতার চারাও লাগানো হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সবাই এ কাজে হাত লাগিয়েছেন। কেউ বালুচরে প্রাকৃতিক বাঁধ তৈরির কাজ করছেন, তো কেউ সেই বাঁধের জন্য কাশফুলের চারা ও কলমিলতার জোগান দিচ্ছেন। বসে নেই এলাকার নারীরাও, পুরুষের পাশাপাশি তাঁরা হাত লাগিয়েছেন পানি সরবরাহকাজে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সানোয়ার হোসেন বলেন, আগেও সীমিত পরিসরে গাছ লাগানো হয়েছিল, কিন্তু এবার মানুষ অনেক বেশি সংগঠিত হয়েছে। তাই ব্যাপক পরিসরে লাগানো হচ্ছে। ‘মানুষ নিজেরাই টাকাপয়সা দিয়েছে, দল বেঁধে গাছ লাগিয়েছে। আমরা পাশে আছি’, বলেন তিনি।
ভাঙনের তীব্রতা বাড়ছে
নয়ারহাট ইউনিয়ন পরিষদের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরেই বজরা দিয়ারখাতা, দক্ষিণ খাউরিয়ার চর ও ফেইচকা এলাকায় অন্তত ২০০ পরিবারের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। শতাধিক পরিবার বসতবাড়ি হারিয়ে অন্যের জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন। ভাঙনের ঝুঁকিতে ইউনিয়নের একমাত্র আশ্রয়ণ প্রকল্প, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় বাজার।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, এ বছর নদীভাঙনে জেলার ১ হাজার ৫০০ পরিবার তাদের বসতি হারিয়েছে। এ ছাড়া গত ছয় বছরে ১৬ হাজার পরিবার নদীভাঙনের শিকার হয়েছে এবং ১৫৩ হেক্টর কৃষিজমি বিলীন হয়েছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান বলেন, ব্রহ্মপুত্রের গভীরতা ও প্রবল স্রোতের কারণে এ ধরনের উদ্যোগ দীর্ঘ মেয়াদে কার্যকর না–ও হতে পারে। তবে স্থানীয়দের সচেতনতা ও অংশগ্রহণ ইতিবাচক। এভাবে প্রাকৃতিক বাঁধ তৈরি হলে ভাঙনের ঝুঁকি কমে আসবে। জেলার প্রতিটি চরে বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার পর এভাবে বাঁধ দিলে ভূমিক্ষয় ও ভাঙনের ঝুঁকি কমবে।
জলবায়ুর প্রভাব ও অভিযোজন
বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উত্তরাঞ্চলের নদীগুলোর চরাঞ্চলে নদীভাঙন বেড়েছে। শুষ্ক মৌসুমে পানি কমে গিয়ে নদীতীর দুর্বল হয়, আর বর্ষায় প্রবল স্রোতে দ্রুত ক্ষয় ঘটে।
জেলা জলবায়ুকর্মী মার্জিয়া মেধা বলেন, চরাঞ্চলের এই উদ্যোগকে ছোট করে দেখা ঠিক হবে না। কলা, কাশফুল ও কলমি—সবই এমন উদ্ভিদ, যেগুলোর শিকড় মাটি ধরে রাখে। এটি একধরনের সবুজ বর্ম, যা ভাঙন রোধে প্রাকৃতিক প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তিনি আরও বলেন, এটি আসলে কমিউনিটিভিত্তিক জলবায়ু অভিযোজনের উদাহরণ। সরকার যদি বৈজ্ঞানিক পরামর্শ, উপযুক্ত প্রজাতির গাছ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সহায়তা দেয়, তবে এটি ব্রহ্মপুত্র তীর রক্ষার একটি টেকসই মডেল হয়ে উঠবে।
নদীগবেষক ও রিভারাইন পিপলের পরিচালক তুহিন ওয়াদুদ প্রথম আলোকে বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন রোধে বৈজ্ঞানিক পরিকল্পনা করে মানুষের জমি ও বসতভিটা রক্ষার দায়িত্ব সরকারের গ্রহণ করা উচিত ছিল। কিন্তু রাষ্ট্র সেখানে ব্যর্থ হয়েছে। স্থানীয় মানুষ নিজেদের বাঁচানোর তাগিদে কখনো বাঁশ-কাঠ দিয়ে, আবার কখনো কাশফুলের চারা দিয়ে প্রতিরোধব্যবস্থা করেছে। তিনি আরও বলেন, নদীতে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ অনেক সময় জীব ও পরিবেশের ওপর প্রভাব ফেলে, জলবায়ু সংকট তৈরি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। সেদিক বিবেচনায় স্থানীয় মানুষের এই প্রাকৃতিক বাঁধ ব্রহ্মপুত্র নদের তীর রক্ষার একটি টেকসই মডেল হয়ে উঠতে পারে।
চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সবুজ কুমার বসাক বলেন, ‘স্থানীয়দের প্রাকৃতিক বাঁধ নির্মাণ একটি প্রশংসনীয় প্রচেষ্টা। এ বছর বন্যায় নদীভাঙনের পর সেখানে স্থায়ী বাঁধের জন্য আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে চিঠি দিয়েছি। এ ছাড়া স্থানীয়দের কাজকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য আমরা তাদের পাশে রয়েছি।’