জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর গাজার জনগণকে অন্য দেশে স্থানান্তরের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর এই পরিকল্পনাকে ‘আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করেছেন।

ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর ব্যাপক বিতর্কিত এই পরিকল্পনা সম্পর্কে মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) তুরস্কের সরকারি সংবাদ সংস্থা আনাদোলুর প্রশ্নের জবাবে গুতেরেস বলেন, “ফিলিস্তিনিদের অবশ্যই একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রে বসবাস করতে হবে, একটি ইসরায়েলি রাষ্ট্রের পাশাপাশি। এটাই একমাত্র সমাধান, যা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনতে পারে।”

তিনি আরো বলেন, “ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক স্থানান্তর করা ‘আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী’।”

আরো পড়ুন:

চীনা পণ্যে ১০৪ শতাংশ মার্কিন শুল্ক কার্যকর আজ থেকেই

অধ্যাপক ইউনূস-পিটার হাস সাক্ষাৎ 

নেতানিয়াহুর গাজার জনগণকে ছিটমহলে ‘অবরুদ্ধ’ রাখার দাবি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, গুতেরেস চিকিৎসা সেবার জরুরি প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “চিকিৎসা সেবার পরিধি বাড়ানোর জন্য সবকিছু করতে হবে।”

‘গণহত্যা’ শব্দটি ব্যবহার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, গুতেরেস বলেন, “পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে শব্দার্থ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার দরকার নেই।”

তিনি বলেন, “ গাজায় গণহত্যা সংঘটিত হচ্ছে কিনা তা নির্ধারণের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) উপযুক্ত সংস্থা। তিনি আরো বলেন, “আমি আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের সিদ্ধান্তকে সম্মান করি।”

জাতিসংঘ প্রধান জোর দিয়ে আরো বলেন, “ফিলিস্তিনিদের চলমান দুর্ভোগ ‘সম্মিলিত শাস্তি’ এবং কোনোভাবেই তা ন্যায্যতাপূর্ণ হতে পারে না।” তিনি অবিলম্বে এই ধরনের অনুশীলন বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়লি হামলায় এ পর্যন্ত ৫০ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ১৫ হাজারের বেশি। নিহত ও আহতদের অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু।

গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত নভেম্বরে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

গাজায় তাদের আচরণের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যা মামলাও চলছে।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

সুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে

সুদানের এল-ফাশের শহর ও এর আশপাশের বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা চলছে। কৃত্রিম ভূ–উপগ্রহের ছবি বিশ্লেষণ করে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এমন দাবি করেছেন। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানকার পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ বলে উল্লেখ করেছেন।

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে দেশটির আধা সামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সসের (আরএসএফ) লড়াই চলছে। গত রোববার তারা এল-ফাশের দখল করে। এর মাধ্যমে প্রায় দেড় বছরের দীর্ঘ অবরোধের পর পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে সেনাবাহিনীর সর্বশেষ শক্ত ঘাঁটিটিও ছিনিয়ে নেয় তারা।

শহরটি পতনের পর থেকে সেখানে বিচারবহির্ভূত হত্যা, যৌন সহিংসতা, ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলা, লুটপাট এবং অপহরণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। সেখানকার যোগাযোগব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।

এল-ফাশের থেকে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী তাওইলা শহরে জীবিত বেঁচে ফেরা কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে এএফপির সাংবাদিক কথা বলেছেন। সেখানে গণহত্যা হয়েছে জানিয়ে তাঁরা বলেন, শহরটিতে মা-বাবার সামনেই শিশুদের গুলি করা হয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে পালানোর সময় সাধারণ মানুষকে মারধর করে তাঁদের মূল্যবান সামগ্রী লুট করা হয়েছে।

পাঁচ সন্তানের মা হায়াত শহর থেকে পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের একজন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে থাকা তরুণদের আসার পথেই আধা সামরিক বাহিনী থামিয়ে দেয়। আমরা জানি না, তাদের কী হয়েছে।’

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব বলেছে, গত শুক্রবার পাওয়া কৃত্রিম উপগ্রহের ছবিতে ‘বড় ধরনের কোনো জমায়েত চোখে পড়েনি।’ এ কারণে মনে করা হচ্ছে, সেখানকার জনগণের বড় একটি অংশ হয় ‘মারা গেছে, বন্দী হয়েছে কিংবা লুকিয়ে আছে।’ সেখানে গণহত্যা অব্যাহত থাকার বিভিন্ন ইঙ্গিত স্পষ্টভাবে দেখা গেছে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, আল-ফাশের থেকে এখন পর্যন্ত ৬৫ হাজারের বেশি মানুষ পালিয়েছে। এখনো কয়েক হাজার মানুষ শহরটিতে আটকা পড়েছে। আরএসএফের সর্বশেষ হামলার আগে সেখানে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ বসবাস করত।

শনিবার বাহরাইনে এক সম্মেলনে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ভাডেফুল বলেন, সুদান একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। সেখানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। আরএসএফ নাগরিকদের সুরক্ষার অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু তাদের এই কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শাহরুখ খান: গণহত্যার সময় বিলিয়নিয়ার হওয়ার অর্থ কী
  • সুদানের এল-ফাশের শহরে ‘চরম বিপদে’ বাসিন্দারা: ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস
  • সুদানে গণহত্যার প্রতিবাদে জাবি ও জবিতে মানববন্ধন
  • জুলাইবিরোধী শক্তির শাস্তি দাবিতে ইবিতে বিক্ষোভ
  • সুদানে আরএসএফের গণহত্যায় আরব আমিরাত ইন্ধন দিচ্ছে কেন
  • সুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে
  • একাত্তরের গণহত্যার জন্য জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে: আলাল