গাজাবাসীদের স্থানান্তরের প্রস্তাব প্রত্যাখান করলেন জাতিসংঘের মহাসচিব
Published: 9th, April 2025 GMT
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর গাজার জনগণকে অন্য দেশে স্থানান্তরের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর এই পরিকল্পনাকে ‘আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করেছেন।
ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর ব্যাপক বিতর্কিত এই পরিকল্পনা সম্পর্কে মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) তুরস্কের সরকারি সংবাদ সংস্থা আনাদোলুর প্রশ্নের জবাবে গুতেরেস বলেন, “ফিলিস্তিনিদের অবশ্যই একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রে বসবাস করতে হবে, একটি ইসরায়েলি রাষ্ট্রের পাশাপাশি। এটাই একমাত্র সমাধান, যা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনতে পারে।”
তিনি আরো বলেন, “ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক স্থানান্তর করা ‘আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী’।”
আরো পড়ুন:
চীনা পণ্যে ১০৪ শতাংশ মার্কিন শুল্ক কার্যকর আজ থেকেই
অধ্যাপক ইউনূস-পিটার হাস সাক্ষাৎ
নেতানিয়াহুর গাজার জনগণকে ছিটমহলে ‘অবরুদ্ধ’ রাখার দাবি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, গুতেরেস চিকিৎসা সেবার জরুরি প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “চিকিৎসা সেবার পরিধি বাড়ানোর জন্য সবকিছু করতে হবে।”
‘গণহত্যা’ শব্দটি ব্যবহার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, গুতেরেস বলেন, “পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে শব্দার্থ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার দরকার নেই।”
তিনি বলেন, “ গাজায় গণহত্যা সংঘটিত হচ্ছে কিনা তা নির্ধারণের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) উপযুক্ত সংস্থা। তিনি আরো বলেন, “আমি আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের সিদ্ধান্তকে সম্মান করি।”
জাতিসংঘ প্রধান জোর দিয়ে আরো বলেন, “ফিলিস্তিনিদের চলমান দুর্ভোগ ‘সম্মিলিত শাস্তি’ এবং কোনোভাবেই তা ন্যায্যতাপূর্ণ হতে পারে না।” তিনি অবিলম্বে এই ধরনের অনুশীলন বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়লি হামলায় এ পর্যন্ত ৫০ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ১৫ হাজারের বেশি। নিহত ও আহতদের অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু।
গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত নভেম্বরে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
গাজায় তাদের আচরণের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যা মামলাও চলছে।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের পাল্টা হামলায় নিরাপদ আশ্রয়ে ইসরায়েলের লাখ লাখ মানুষ
ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ইসরায়েলি হামলার জবাবে রাতে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। ভোর হওয়ার ঠিক আগে ইসরায়েলে বেজে ওঠে সাইরেন। এর ফলে ইসরায়েলের লাখ লাখ মানুষ নিরাপদ আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে দেশটির জনগণকে আশ্রয়স্থল থেকে বেরিয়ে আসতে বলেছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র একটি বিবৃতিতে জানিয়েছেন, পরিস্থিতি পর্যালোচনার পর জনগণকে দেশের সব অঞ্চলে সুরক্ষিত এলাকা (আশ্রয়স্থল) থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। তবে আশ্রয়স্থলের কাছাকাছি অবস্থান করতে হবে।
ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে কাজ করছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। ইসরায়েলিদের নিরাপদ এলাকায় চলে যেতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। খবর আল জাজিরার
এএফপির খবর বলছে, শনিবার ভোরে ইরান নতুন করে ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, ইরান থেকে ছোড়া বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র তাঁরা শনাক্ত করেছে।
ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে রক্ষা পেতে ইসরায়েলের অনেক অঞ্চলে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হয়। ইরান ইসরায়েলে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর ইসরায়েলের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়েছে। দেশটির সেনাবাহিনী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে এ কথা জানিয়েছে।
এক্সে দেওয়া পোস্টে তারা লিখেছে, ‘ইরানের ভূখণ্ড থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার বিষয়টি শনাক্ত হওয়ার পর-ই বিভিন্ন অঞ্চলের ওয়ার্নিং সিস্টেম চালু করা হয়েছে।’ সেখানে আরও বলা হয়, ইসরায়েলি বিমান বাহিনী হামলার উৎস শনাক্ত করছে। প্রয়োজন অনুযায়ী উৎসকে লক্ষ্য করে প্রতিরোধমূলক অভিযানে নামছে।
তবে, ইসরায়েলের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম তথা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘শতভাগ দুর্ভেদ্য না’ উল্লেখ করে দেশটির সাধারণ নাগরিকদের উদ্দেশ্যে বলা হয়, তারা যেন সমস্ত নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলে।
ইসরায়েলের ইংরেজি পত্রিকা দ্য জেরুজালেম পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরানের হামলায় ইসরায়েলে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৩ জন আহত হয়েছেন। তেল আবিব ও জেরুসালেমে সতর্কতামূলক সাইরেনের শব্দ শোনা গেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। সোশ্যাল মিডিয়ায় ইসরায়েলের একটি আবাসিক রাস্তার ছবি দেখা গেছে যা ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বিধ্বস্ত হয়েছে। রাস্তাজুড়ে ধ্বংসস্তূপ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ইরানের পাল্টা হামলায় একজন নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলের কেন্দ্রীয় উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চলে ইরানের রকেট হামলায় আহত একুশ জনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলের জরুরি সেবা বিভাগ ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম (এমডিএ)। এক্স-এ প্রকাশিত একটি পোস্টে, এমডিএ জানিয়েছে, আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর, অন্যদের অবস্থা হালকা থেকে মাঝারি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত সিএনএনকে জানিয়েছেন, ইসরায়েলে একজন নারী নিহত এবং ‘প্রায় ৪০ জন’ আহত হয়েছেন। নিউইয়র্ক টাইমসও ইসরায়েলি পুলিশের একজন মুখপাত্রের বরাত দিয়ে এই খবর জানিয়েছে। ওই পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শুক্রবার রাতে তেল আবিবের কাছে একটি শহরে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ঘটনাস্থলেই ওই নারীকে মৃত ঘোষণা করা হয়।