সাধারণত ভাইরাস জ্বর বলতে আমরা বুঝি সর্দি-কাশি, ঠান্ডা, গলা বসাকে। কিন্তু ভাইরাস ভয়ানক প্রাণসংহারীও হয়ে উঠতে পারে। কখনো কখনো তা শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ আক্রমণ করে। যেমনটা হয় ভাইরাল মেনিনজাইটিসে। 

আমাদের মস্তিষ্কের চারদিকে যে পাতলা আবরণ রয়েছে, তাকে মেনিনজেস বলে। কোনো কারণে এই মেনিনজেসে প্রদাহ হলে তাকে বলে মেনিনজাইটিস। সাধারণত সংক্রমণের কারণেই এটি বেশি হয়। এ সংক্রমণ ভাইরাস ছাড়াও ব্যাকটেরিয়া ও যক্ষ্মার জীবাণু দিয়ে হতে পারে। বয়স ও পরিবেশ ভেদে সংক্রমণকারী জীবাণুর ভিন্নতা দেখা যায়। 

কীভাবে জীবাণু এই মেনিনজেসকে আক্রমণ করে

নাক, কান, গলা অর্থাৎ মাথার যেকোনো জায়গা বা মস্তিষ্কের কাছাকাছি কোনো অঙ্গে সংক্রমণ হলে তা খুলির ভেতরে ছড়িয়ে পড়ে মেনিনজাইটিস হতে পারে। 

দুর্ঘটনায় মাথায় আঘাত লেগে মস্তিষ্ক পর্যন্ত জীবাণুর প্রবাহ বাধাহীন হয়ে মেনিনজাইটিস হতে পারে।

শরীরের যেকোনো অঙ্গের সংক্রমণ রক্তে ছড়িয়ে পড়ে তীব্র জটিলতা হিসেবে মেনিনজাইটিস দেখা দিতে পারে। 

লক্ষণ

মেনিনজাইটিসের প্রধান লক্ষণ জ্বর ও মাথাব্যথা। 

ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, শরীরে লাল দাগ (র‍্যাশ) আসা।

অস্থিরতা বোধ করা, চেতনা কমে আসা ইত্যাদি। 

তবে সব ক্ষেত্রে মেনিনজাইটিসের একই লক্ষণ একইভাবে প্রকাশ পায় না। 

মেনিনজাইটিস একটি গুরুতর রোগ। মস্তিষ্ক যে আবরণ দিয়ে নিরাপত্তা পায়, সেটাই যেহেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাই মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়। তবে ভাইরাসের কারণে হলে তীব্র মাথাব্যথা ও জ্বরের পর একসময় নিজে থেকে সেরে যায়। ব্যাকটেরিয়া ও যক্ষ্মার জীবাণুর সংক্রমণে যে মেনিনজাইটিস হয়, সেটি গুরুতর জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে, এমনকি প্রাণঘাতীও হতে পারে। 

ভাইরাসজনিত মেনিনজাইটিস সচরাচর গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি না করলেও যদি মস্তিষ্কের প্রদাহ হয়ে যায়, তবে তা প্রাণঘাতী হতে পারে। ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে মস্তিষ্কের চারপাশে যে তরল (সিএসএফ) থাকে, তার স্বাভাবিক প্রবাহ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। মস্তিষ্কের রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে এবং মস্তিষ্ক ফুলে উঠতে পারে। ফলে রোগীর চেতনায় পরিবর্তন হয়, বিভিন্ন স্নায়বিক দুর্বলতা দেখা দেয়, রোগী কোমায় চলে যেতে পারে। যক্ষ্মার জীবাণুর ফলে যে মেনিনজাইটিস হয়, তা সচরাচর দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতার সৃষ্টি করে।

আরও পড়ুনগর্ভাবস্থায় ভাইরাল জ্বর হলে কী করবেন১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪চিকিৎসা 

মেনিনজাইটিস প্রতিরোধে যেকোনো সংক্রমণ, বিশেষ করে নাক, কান, গলা ও মুখের সংক্রমণ প্রতিরোধ করা জরুরি। 

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত। মাথায় কোনো আঘাত পেলে উপযুক্ত চিকিৎসা নিয়ে সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে হবে। 

মনে রাখবেন মাথাব্যথা হলেই তা মেনিনজাইটিস নয়। তবে তীব্র জ্বরের সঙ্গে মাথাব্যথা ও ঘাড় শক্ত হলে দ্রুত নিউরোলজি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। 

ডা.

জহিরুল হক চৌধুরী, অধ্যাপক, ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল, ঢাকা

আরও পড়ুনজিকা ভাইরাস কীভাবে ছড়ায়, লক্ষণ ও প্রতিকার কী০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র স ক রমণ

এছাড়াও পড়ুন:

কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তান সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের মন্তব্যে ভারতে ক্ষোভ, কী বলেছেন তিনি

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির সাধারণত আলোচনার কেন্দ্রে আসেন না। তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে খবরের শিরোনাম হয়ে উঠেছেন তিনি—শুধু পাকিস্তানে নয়, সীমানা পেরিয়ে ভারত ও বিশ্বের বিভিন্ন কূটনৈতিক কেন্দ্রেও।

ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন। এর কয়েক দিন আগে কাশ্মীর নিয়ে কিছু মন্তব্য করেন আসিম মুনির। তাঁর এসব মন্তব্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থান ও আঞ্চলিক উত্তেজনায় তাদের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই কাশ্মীরকে পুরোপুরি নিজেদের বলে দাবি করে। কিন্তু তারা এটির একেক অংশ শাসন করে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার কেন্দ্রে রয়েছে এ ভূখণ্ড।

জেনারেল মুনিরের বক্তব্য যদিও প্রত্যক্ষভাবে পেহেলগামের হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়, তবু তাঁর বক্তব্য বিশ্লেষণ করে এটিকে বেশি আগ্রাসী মনোভাবের হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সেনাপ্রধান হিসেবে জেনারেল আসিম মুনিরকে বর্তমানে পাকিস্তানের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে ধরা হয়। দেশটির রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ, সরকারকে ক্ষমতায় বসানো ও অপসারণে দীর্ঘদিন ধরে সেনাবাহিনী নানা ভূমিকা রাখছে বলে অভিযোগ করা হয়ে থাকে। এখন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী প্রতিবেশী এ দুই দেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছেন তিনি।

ইসলামাবাদে গত ১৭ এপ্রিল প্রবাসীদের সঙ্গে একটি বৈঠকে আসিম মুনির বলেন, ‘আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ থেকে আলাদা।’ কাশ্মীরকে পাকিস্তানের ‘জীবন সঞ্চারণী শিরা’ উল্লেখ করে তিনি অঙ্গীকার করেন, ‘ভারতের দখলদারত্বের বিরুদ্ধে কাশ্মীরিদের বিরোচিত লড়াইকে পাকিস্তান কখনো পরিত্যাগ করবে না।’

২০২২ সালের নভেম্বরে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নেন জেনারেল মুনির। দায়িত্ব গ্রহণের পর তাঁকে প্রকাশ্যে তেমন কথা বলতে শোনা যায়নি। তবে তাঁর একটি বক্তব্য ব্যাপকভাবে মনোযোগ কেড়েছে।

আরও পড়ুনভারতে অনলাইনে ছড়ানো হচ্ছে মুসলিমবিদ্বেষী গান, কনটেন্ট২৯ এপ্রিল ২০২৫

ইসলামাবাদে গত ১৭ এপ্রিল প্রবাসীদের সঙ্গে একটি বৈঠকে আসিম মুনির বলেন, ‘আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ থেকে আলাদা।’ কাশ্মীরকে পাকিস্তানের ‘জীবন সঞ্চারণী শিরা’ উল্লেখ করে তিনি অঙ্গীকার করেন, ‘ভারতের দখলদারত্বের বিরুদ্ধে কাশ্মীরিদের বিরোচিত লড়াইকে পাকিস্তান কখনো পরিত্যাগ করবে না।’

জেনারেল মুনিরের এ বক্তব্যের সঙ্গে পেহেলগামে হামলার কোনো সংশ্লিষ্টতা না থাকতে পারে। কেননা পাকিস্তানের নেতারা অনেক বছর ধরেই এমন ধরনের আদর্শিক বক্তব্য–বিবৃতি দিয়ে আসছেন।

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার স্থলে ছড়িয়ে আছে চেয়ার–টেবিল

সম্পর্কিত নিবন্ধ