ভাইরাল মেনিনজাইটিসও হয়ে উঠতে পারে প্রাণঘাতি, লক্ষণ ও প্রতিকার জেনে রাখুন
Published: 9th, April 2025 GMT
সাধারণত ভাইরাস জ্বর বলতে আমরা বুঝি সর্দি-কাশি, ঠান্ডা, গলা বসাকে। কিন্তু ভাইরাস ভয়ানক প্রাণসংহারীও হয়ে উঠতে পারে। কখনো কখনো তা শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ আক্রমণ করে। যেমনটা হয় ভাইরাল মেনিনজাইটিসে।
আমাদের মস্তিষ্কের চারদিকে যে পাতলা আবরণ রয়েছে, তাকে মেনিনজেস বলে। কোনো কারণে এই মেনিনজেসে প্রদাহ হলে তাকে বলে মেনিনজাইটিস। সাধারণত সংক্রমণের কারণেই এটি বেশি হয়। এ সংক্রমণ ভাইরাস ছাড়াও ব্যাকটেরিয়া ও যক্ষ্মার জীবাণু দিয়ে হতে পারে। বয়স ও পরিবেশ ভেদে সংক্রমণকারী জীবাণুর ভিন্নতা দেখা যায়।
কীভাবে জীবাণু এই মেনিনজেসকে আক্রমণ করেনাক, কান, গলা অর্থাৎ মাথার যেকোনো জায়গা বা মস্তিষ্কের কাছাকাছি কোনো অঙ্গে সংক্রমণ হলে তা খুলির ভেতরে ছড়িয়ে পড়ে মেনিনজাইটিস হতে পারে।
দুর্ঘটনায় মাথায় আঘাত লেগে মস্তিষ্ক পর্যন্ত জীবাণুর প্রবাহ বাধাহীন হয়ে মেনিনজাইটিস হতে পারে।
শরীরের যেকোনো অঙ্গের সংক্রমণ রক্তে ছড়িয়ে পড়ে তীব্র জটিলতা হিসেবে মেনিনজাইটিস দেখা দিতে পারে।
লক্ষণমেনিনজাইটিসের প্রধান লক্ষণ জ্বর ও মাথাব্যথা।
ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, শরীরে লাল দাগ (র্যাশ) আসা।
অস্থিরতা বোধ করা, চেতনা কমে আসা ইত্যাদি।
তবে সব ক্ষেত্রে মেনিনজাইটিসের একই লক্ষণ একইভাবে প্রকাশ পায় না।
মেনিনজাইটিস একটি গুরুতর রোগ। মস্তিষ্ক যে আবরণ দিয়ে নিরাপত্তা পায়, সেটাই যেহেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাই মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়। তবে ভাইরাসের কারণে হলে তীব্র মাথাব্যথা ও জ্বরের পর একসময় নিজে থেকে সেরে যায়। ব্যাকটেরিয়া ও যক্ষ্মার জীবাণুর সংক্রমণে যে মেনিনজাইটিস হয়, সেটি গুরুতর জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে, এমনকি প্রাণঘাতীও হতে পারে।
ভাইরাসজনিত মেনিনজাইটিস সচরাচর গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি না করলেও যদি মস্তিষ্কের প্রদাহ হয়ে যায়, তবে তা প্রাণঘাতী হতে পারে। ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে মস্তিষ্কের চারপাশে যে তরল (সিএসএফ) থাকে, তার স্বাভাবিক প্রবাহ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। মস্তিষ্কের রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে এবং মস্তিষ্ক ফুলে উঠতে পারে। ফলে রোগীর চেতনায় পরিবর্তন হয়, বিভিন্ন স্নায়বিক দুর্বলতা দেখা দেয়, রোগী কোমায় চলে যেতে পারে। যক্ষ্মার জীবাণুর ফলে যে মেনিনজাইটিস হয়, তা সচরাচর দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতার সৃষ্টি করে।
আরও পড়ুনগর্ভাবস্থায় ভাইরাল জ্বর হলে কী করবেন১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪চিকিৎসামেনিনজাইটিস প্রতিরোধে যেকোনো সংক্রমণ, বিশেষ করে নাক, কান, গলা ও মুখের সংক্রমণ প্রতিরোধ করা জরুরি।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত। মাথায় কোনো আঘাত পেলে উপযুক্ত চিকিৎসা নিয়ে সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে হবে।
মনে রাখবেন মাথাব্যথা হলেই তা মেনিনজাইটিস নয়। তবে তীব্র জ্বরের সঙ্গে মাথাব্যথা ও ঘাড় শক্ত হলে দ্রুত নিউরোলজি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
ডা.
জহিরুল হক চৌধুরী, অধ্যাপক, ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল, ঢাকা
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র স ক রমণ
এছাড়াও পড়ুন:
দুই নেতার উষ্ণ আলিঙ্গন
৮ মার্চ, ১৯৭৫। ২টা ৫৫ মিনিট। ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলের কাগমারী গিয়ে পৌঁছালেন বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রথমে তিনি গেলেন মাওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজ প্রাঙ্গণে। পুলিশ বাহিনী তাঁকে গার্ড অব অনার জানাল। গার্ড অব অনারের শেষ মুহূর্তে সেখানে এসে উপস্থিত হলেন জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। মাওলানা সাহেবকে দেখেই বঙ্গবন্ধু অভিবাদন মঞ্চ থেকে দ্রুত নেমে এলেন। ভাসানী ও বঙ্গবন্ধু একে অপরকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। দুজনের মুখে অনুপম হাসির দীপ্তি। এই দৃশ্য ধারণ করতে সংবাদপত্রের আলোকচিত্রীরা দৌড়ে এলেন। কেউ কেউ এই দৃশ্য ধরতে পারলেন। তবে বেশির ভাগই পারলেন না। একজন বঙ্গবন্ধুকে অনুরোধ করলেন, ভাসানীকে আবার জড়িয়ে ধরতে। বঙ্গবন্ধু এবার শিশুর মতো নবতিপর মাওলানার বুকে মাথা রাখলেন। মাওলানা সাহেবও পরম স্নেহে বঙ্গবন্ধুর মাথায়-পিঠে হাত বুলিয়ে প্রাণভরে দোয়া করতে লাগলেন। মাওলানার চোখে আনন্দের অশ্রু। এ যেন দীর্ঘকাল অদর্শনের পর পিতা-পুত্রের এক হৃদয়স্পর্শী মিলনদৃশ্য। আলোকচিত্রীরা এই দুর্লভ ও মনোহর মুহূর্তকে ক্যামেরায় ধারণ করে চলছেন। মাওলানার বুকে মাথা রেখে বঙ্গবন্ধু এবার আলোকচিত্রীদের বললেন, ‘তোমরা জানো না, আমি তো হুজুরের বুকেরই মানুষ।’ মাওলানাও বললেন, ‘মজিবুর আমার কত প্রিয়, তোমরা তা জানো না।’
মাওলানা সাহেবকে দেখেই বঙ্গবন্ধু অভিবাদন মঞ্চ থেকে দ্রুত নেমে এলেন। ভাসানী ও বঙ্গবন্ধু একে অপরকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। দুজনের মুখে অনুপম হাসির দীপ্তি। এই দৃশ্য ধারণ করতে সংবাদপত্রের আলোকচিত্রীরা দৌড়ে এলেন। কেউ কেউ এই দৃশ্য ধরতে পারলেন। তবে বেশির ভাগই পারলেন না।এরপর মাওলানা সাহেবকে জড়িয়ে বঙ্গবন্ধু কাগমারী মোহাম্মদ আলী কলেজের শ্বেতপ্রস্তর নির্মিত উদ্বোধনী ফলকের আবরণ উন্মোচনের জন্য অগ্রসর হন। দুজনে একত্রে এই আবরণ উন্মোচন করেন। এই পর্ব শেষ করে এই দুই জননেতা রাষ্ট্রপতির গাড়িতে করে গেলেন সন্তোষ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভাসানী ঘুরে ঘুরে রাষ্ট্রপতিকে দেখান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ। ছায়াঘেরা ক্যাম্পাসের চারদিকে লাল শিমুলের সমারোহ। দুজন পাশাপাশি হাঁটছেন। কথা বলছেন কখনো সহাস্যে; কখনো একান্তে। বঙ্গবন্ধু হঠাৎ ভাসানীকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘শহীদ সাহেব যে একটা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন, সেটা কোথায়?’ ভাসানী তাঁকে নিয়ে গেলেন সন্তোষ মাতৃসদন ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রের সামনে। বঙ্গবন্ধুকে দেখান একটা নবনির্মিত দোতলা দালান। নিচে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের ফলক। তাতে লেখা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নাম। মাওলানা ভাসানীকে বঙ্গবন্ধু অনুরোধ করলেন, ‘পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী’ কথাটি তুলে দিতে।
দুই নেতার উষ্ণ আলিঙ্গন [মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও শেখ মুজিবুর রহমান, টাঙ্গাইল, ৮ মার্চ, ১৯৭৫]। আলোকচিত্র: রশীদ তালুকদার