মুনাফার লোভে টাকা দিয়ে মূলধন নিয়ে টানাটানি
Published: 10th, April 2025 GMT
রোকেয়া বেগম প্রতি লাখে মাসে ২ হাজার টাকা মুনাফার খবর শুনে তেলিয়াপাড়া নিশান পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটিতে ১০ লাখ টাকা জমা করেছিলেন। টাকা জমা রাখার প্রমাণ হিসেবে এনজিওটি তাঁকে ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে দলিল সম্পাদন করে দেয়। চুক্তিনামা অনুযায়ী মাসে মাসে মুনাফা পেতেন রোকেয়া।
ভালো মুনাফার খবর শুনে রোকেয়ার মতো ছোট-বড় তিন হাজার বিভিন্ন পেশার মানুষ ওই এনজিওতে প্রায় দেড়শ কোটি টাকার আমানত রাখেন। গত কয়েক মাস ধরে এনজিওটি আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে টালবাহানা করছে। এর মধ্যে কয়েকজন পরিচালক পালিয়ে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন।
কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এনজিওটির সব কার্যক্রম ঠিকমতোই চলছিল। গত ডিসেম্বর মাস থেকে হঠাৎ বিপত্তি দেখা দেয়। হঠাৎ করে এনজিওটিতে অর্থ সংকট দেখা দেয়। খবর চাউর হলে হাজারো গ্রাহক টাকা ফেরত পেতে নিশান পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটির প্রধান কার্যালয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। তখন উপজেলা প্রশাসনের উপস্থিতিতে বৈঠকে ওই এনজিওর পরিচালকরা আমানতকারীদের আশ্বাস দিয়েছিলেন, এপ্রিল মাস থেকে লভ্যাংশ ও জুলাই মাস থেকে গ্রাহকের আমানতের টাকা ফেরত দেবেন। কিন্তু এর মধ্যে ওই এনজিওর তিনজন পরিচালক এলাকা থেকে পালিয়ে গেছেন। বর্তমানে এনজিওটির চেয়ারম্যান বেলাল মিয়া অফিসে আছেন। তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ। তিনি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারছেন না। এতে টাকা ফেরত পাওয়ার বিষয়ে ভরসা পাচ্ছেন না আমানতকারীরা।
নিশান পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটির পরিচালক জালাল উদ্দিন বলেন, সারাদেশে তাদের ২৮ শাখা ছিল। প্রায় দেড় লাখ সদস্য ছিলেন। কয়েক কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু গত ডিসেম্বর মাস থেকে গোলযোগের কারণে সবগুলো শাখা সমিতি বন্ধ হয়ে গেছে। সমিতির সদস্যরা কয়েক কোটি টাকা ফেরত দিচ্ছেন না। এ ছাড়া বিভিন্ন জায়গায় নিশানের বাগান, জমি, বহুতলবিশিষ্ট ভবনসহ অনেক সম্পদ রয়েছে। ইচ্ছে ছিল সম্পদ বিক্রি করে ধীরে ধীরে মানুষের টাকা ফেরত দেব। কিন্তু আমানতকারীদের বিশৃঙ্খলার কারণে এখন সহায়-সম্পদ বিক্রি করা যাচ্ছে না। তবু আমরা চেষ্টা করছি সাধারণ মানুষের টাকা ফেরত দেওয়ার। টাকার পরিবর্তে নিশানের সম্পদ কেউ কেউ নিজেদের দখলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক ভুক্তভোগী জানান, প্রায় ২০ বছর ধরে এনজিওটি মানুষের কাছ থেকে টাকা জমা নিয়েছে। বিনিময়ে প্রতি মাসে মুনাফা দিয়ে আসছে। এই প্রলোভনে পড়ে ধনী-গরিব সবাই সেখানে টাকা বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু বেশি মুনাফার লোভে সেখানে টাকা জমা রেখে তারা নিজেদের বিপদ ডেকে এনেছেন।
নুরুল ইসলাম নামে এক আমানতকারী জানান, জমি বিক্রি করে মুনাফার আশায় নিশান এনজিওতে তিনি টাকা জমা করেছিলেন। এখন তাঁর মতো শত শত লোক নিজেদের অর্থ ফিরে পেতে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন। যতই দিন যাচ্ছে গ্রাহকরা টাকা জমা করে হতাশায় ভুগছেন। অনেক গরিব মানুষ জমি ও সহায়-সম্পদ বিক্রি টাকা জমা করেছিলেন। সবাই এখন দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়েছেন।
এ বিষয়ে মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদ বিন কাশেম বলেন, আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে নিশান পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটিকে নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। এর পরও তারা টাকা ফেরত না দিলে আমানতকারীরা ওই এনজিওর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেন।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বিতর্কিত তিন নির্বাচনে জড়িতদের ভূমিকা তদন্তে কমিটি গঠনের নির্দেশ
বিতর্কিত তিন জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে জড়িত সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনারগণ ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিবদের ভূমিকা তদন্তে অবিলম্বে একটি কমিটি গঠনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
সোমবার (১৬ জুন) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক বৈঠকে আলোচনা শেষে এ নির্দেশ দেন তিনি। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রধান।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন ও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
আরো পড়ুন:
প্রধান উপদেষ্টা অনেক বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন: ফখরুল
ইউনূস-তারেক বৈঠক
রমজান শুরুর আগের সপ্তাহেও নির্বাচন হতে পারে: যৌথ বিবৃতি
বৈঠকে কমিশন সদস্যগণ জুলাই সনদ তৈরির কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন।
কমিশনের সহ-সভাপতি প্রফেসর আলী রীয়াজ বলেন, “বেশকিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। খুব শিগগিরই সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সনদ চূড়ান্ত করে ফেলা সম্ভব হবে।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “সবাই জুলাই সনদের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। আমি আশা করি, আগামী জুলাই মাসের মধ্যে আমরা এটি জাতির সামনে উপস্থাপন করতে পারব।”
বৈঠকে লন্ডন সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি বলেন, “লন্ডনে বাংলাদেশি কমিউনিটির যাদের সঙ্গেই দেখা হয়েছে, তারা সংস্কার নিয়ে জানতে চেয়েছে। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা খুব আগ্রহী। তারা বিস্তারিতভাবে ঐকমত্য কমিশনের কাজ নিয়ে আমার সঙ্গে আলোচনা করেছে, মতামত দিয়েছে। যেখানেই গেছি, সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিরা আমাকে জিজ্ঞেস করছেন, ‘আমরা আগামী নির্বাচনে ভোট দিতে পারব তো?’ আমাদের প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। পোস্টাল ব্যালট এবং আর কী কী অপশন আছে সেগুলো নিয়ে ভাবতে হবে, সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে।”
বৈঠকে নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশন প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “সব রাজনৈতিক একমত হয়েছে যে, অতীতের তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন আয়োজনে কর্মকর্তাদের ভূমিকা তদন্ত ও জবাবদিহিতার আওতায় আনা প্রয়োজন।”
ঢাকা/হাসান/মাসুদ