পরীক্ষায় নকল সরবরাহের শর্তে টাকা আদায়
Published: 10th, April 2025 GMT
মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা আজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে। পরীক্ষা নিয়ে এবারও নকল সরবরাহসহ বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করছে মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীরা। শঙ্কায় আছেন অভিভাবকরাও। পরীক্ষায় নকল সরবরাহের শর্তে ১ হাজার ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা দিয়েছেন বলে জানিয়েছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী।
জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মমিন মণ্ডল বলেন, যেসব কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ বা আগে অনিয়ম হয়েছে, সেখানে নজরদারি বাড়ানো হবে। কোচিং সেন্টারের শিক্ষকদের পরিদর্শক হিসেবে রাখা যাবে না। নির্দেশনা উপেক্ষা করে কোচিং শিক্ষকদের পরিদর্শক হিসেবে রাখা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে এবার মোট ৯টি বিদ্যালয়ের এক হাজার ৬৫ জন পরীক্ষা দেবে। বিদ্যালয়গুলো হলো– চূহড় উচ্চ বিদ্যালয়, বেতগাড়া উচ্চ বিদ্যালয়, বিরাহীমপুর উচ্চ বিদ্যালয়, পাইকান উচ্চ বিদ্যালয়, আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, জায়গীর স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং শালমারা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়। কেন্দ্রের আশপাশে জায়গীরহাট গুগল কোচিং সেন্টার, পারফেক্ট স্টাডি কেয়ার, শাহিন কোচিং সেন্টার, টু-ইন-ওয়ান, ম্যাথ প্লাস কোচিং সেন্টার, শালমারা সংকল্প এবং তারাগঞ্জ শাহিন কোচিং সেন্টারের অবস্থান। অনেক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এসব কোচিং সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত। গত বছর তাদের অনেকে পরীক্ষা কেন্দ্রে পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করে টাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের অনৈতিক সুবিধা দিয়েছেন। এ নিয়ে সমকালে প্রতিবেদন প্রকাশের পর দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড তদন্ত করে। সত্যতা পেয়ে কেন্দ্রসচিব ও প্রতিষ্ঠান প্রধান মাহেদুল ইসলামকে ভর্ৎসনা করা হয়। তাঁকে ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড না করার জন্য নির্দেশ দেয়।
এবারও পরীক্ষা শুরুর আগেই জায়গীরহাট গুগল ও শাহীন কোচিং সেন্টারসহ কয়েকটি সেন্টারের পরিচালক শিক্ষার্থীদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হবে নিশ্চয়তা দিয়েছেন। এ কাজের জন্য তারা মোটা অঙ্কের টাকাও নিয়েছেন। বিশেষ করে ইংরেজি এবং গণিত পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ১ হাজার ৫০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।
জায়গীরহাট গুগল কোচিং সেন্টারের পরিচালক মওলা মিয়া বলেন, এ ধরনের অভিযোগ সঠিক নয়। তাদের সম্মান ক্ষুণ্ন করতে একটি মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে। একইভাবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শাহিন কোচিং সেন্টারের পরিচালক শাহিন মিয়াসহ অন্যরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র বর্মণ বলেন, পায়রাবন্দ কেন্দ্রের নিরাপত্তা এবং সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা নিশ্চিত করতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাড়তি নজরদারিতে থাকবে কেন্দ্রটি।’
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধে জয় হচ্ছে বোয়িংয়ের
বাণিজ্যযুদ্ধে সাধারণত কেউ জেতে না। তবে মার্কিন বিমান কোম্পানি বোয়িং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুরু করা বাণিজ্যযুদ্ধ থেকে কিছুটা লাভবান হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যেসব বাণিজ্য চুক্তিগুলো করছে, সেগুলোর অংশ হিসেবে বোয়িং ধারাবাহিকভাবে নতুন নতুন বিমান সরবরাহের কার্যাদেশ পাচ্ছে। এ ধরনের বিক্রি বোয়িংয়ের জন্য ইতিবাচক হতে পারে, কেননা, কোম্পানিটি কয়েক বছর ধরে নানা সংকটে আছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করতে পারেন, তাঁর ব্যতিক্রমী বাণিজ্যনীতি মার্কিন উৎপাদন খাতের পালে হাওয়া দিচ্ছে।
এই মাসেই ইন্দোনেশিয়া ও জাপান বোয়িংয়ের শত শত যাত্রীবাহী বিমান কেনার ঘোষণা দিয়েছে। এর আগে বছরের শুরুতে বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও কাতার বোয়িংয়ের বিমান কেনার ঘোষণা দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের লবিস্ট প্রতিষ্ঠান ক্যাপিটল কাউন্সিলের বাণিজ্যনীতি বিশ্লেষক ব্রুস হার্শ বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রথম মেয়াদ থেকেই এ ধরনের চুক্তি করে আসছেন; তাঁর এসব চুক্তির আওতায় দেশগুলোর সঙ্গে বড় অঙ্কের পণ্য কেনাবেচার চুক্তি হয়। আমাদের বাণিজ্য অংশীদারেরাও তা জানে। সে জন্য তারা বোয়িংয়ের মতো বড় জিনিস কেনার প্রস্তাব দেয়।’
বিমান বিশ্লেষকেরা বলছেন, এসব কার্যাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে খুব একটা চাপ দিতে হয়নি। এয়ারলাইনসগুলো বিমান কেনার মতো সিদ্ধান্ত সাধারণত মাসের পর মাস, এমনকি বছরের বেশি সময় ধরে সরবরাহের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এ ছাড়া বিশ্বে বড় যাত্রীবাহী বিমান সরবরাহ করে কেবল দুটি কোম্পানি—বোয়িং ও ফ্রান্সের এয়ারবাস।
এরপরও বোয়িংয়ের নতুন এসব কার্যাদেশ পাওয়ার ঘটনাকে ট্রাম্প প্রশাসন নিজেদের বাণিজ্য চুক্তির বড় সফলতা হিসেবে তুলে ধরছে। বোয়িং যুক্তরাষ্ট্রের লাখো মানুষের কর্মসংস্থানের উৎস এবং অন্যতম প্রধান রপ্তানিকারক। এপ্রিলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই বোয়িংয়ের শেয়ারের দাম বাড়তে থাকে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এসব চুক্তির ঘোষণা আরও নতুন কার্যাদেশের পথ সুগম করতে পারে। অন্য গ্রাহকেরা হয়তো ভাববে, প্রয়োজনের সময় বিমান না পেলে কী হবে—তাই এখনই কার্যাদেশ দেওয়া নিরাপদ। তবে এখন কার্যাদেশ দেওয়া বিমান হাতে পেতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে।
বোয়িং এ বিষয়ে মন্তব্য করেনি। তবে ট্রাম্পের আগ্রহে যে তারা সন্তুষ্ট, সেটা বোঝা যায়। মে মাসে কাতারের সঙ্গে বোয়িংয়ের বিমান চুক্তির সময় কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কেলি ওর্টবার্গ ট্রাম্পের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য সফরে যান।
অ্যাভিয়েশন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান অ্যাভিটাসের প্রেসিডেন্ট আডাম পিলারস্কি বলেন, ‘যদি প্রেসিডেন্ট নিজে বলেন আমার সঙ্গে চলুন, যুক্তরাষ্ট্রে অনেক কর্মসংস্থান হবে, এমন চুক্তি করা হবে—এ কথা বললে তখন কেউ না বলতে পারেন না।’
তবে পিলারস্কি ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এসব কার্যাদেশের আকার যতটা দেখানো হচ্ছে, বাস্তবে বিষয়টি তার চেয়ে ছোট হতে পারে। এসব চুক্তি নিয়ে এখনো তেমন কোনো তথ্য প্রকাশিত হয়নি। অনেক চুক্তি হয়তো এখনো বিমান কোম্পানি ও এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে আলোচনার পর্যায়ে আছে।
এই মাসেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ইন্দোনেশিয়া ৫০টি বোয়িং বিমান কিনতে রাজি হয়েছে। তবে পরে এক ইন্দোনেশীয় কর্মকর্তা জানান, এটি এখনো গারুদা নামের রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান সংস্থা ও বোয়িংয়ের মধ্যে আলোচনার পর্যায়ে আছে।
বিমান বিশ্লেষক রিচার্ড আবুলাফিয়া বলেন, ‘আমরা একসময় ঠাট্টা করে বলতাম, এই ধরনের চুক্তি হলো এমওইউটিএইচএল, অর্থাৎ মধ্যাহ্নভোজন করার জন্য সমঝোতা স্মারক। প্রেসিডেন্টের সফর শেষে প্রকৃত চুক্তি, অর্থায়নসহ বিস্তারিত আলোচনা শুরু হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চূড়ান্ত চুক্তি না হলেও এসব কার্যাদেশ অনেক সময় এমনিতেই হতো, ট্রাম্প থাকুন আর না থাকুন। যেমন মে মাসে কাতার এয়ারওয়েজ বোয়িংয়ের ১৫০টি দূরপাল্লার বিমান কেনার কার্যাদেশ দেয়। এই চুক্তি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন, করমর্দন—সবই ছিল। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই কার্যাদেশ এমনিতেই হতো, হয়তো ট্রাম্পের সফরের কারণে সময়টা একটু এগিয়ে আনা হয়েছে।
তবে কিছু চুক্তিতে রাজনৈতিক চাপ ছিল বলেই মনে করেন কেউ কেউ। যা–ই হোক, বিমান হাতে পেতে যে সময় লাগে, তত দিনে অনেক কিছু বদলে যেতে পারে। বোয়িং ও এয়ারবাসের কাছে এমনিতেই হাজার হাজার কার্যাদেশ জমা আছে। অনেক এয়ারলাইন অর্ডার বাতিল করতে পারে, ডেলিভারি পিছিয়ে দিতে পারে, এমনকি অর্ডার কমিয়ে ফেলতেও পারে। অনেক সময় নির্মাতা কোম্পানিগুলো এসব পরিবর্তন মেনে নেয়, যদি তারা অন্য কোনো ক্রেতার কাছে সেই বিমান বিক্রি করতে না পারে।
তবে বোয়িংয়ের মূল চ্যালেঞ্জ হলো এই কার্যাদেশগুলো থেকে বাস্তব মুনাফা আদায় করা। কোম্পানিটির ৭৩৭ ম্যাক্সের ছোট ও বড় সংস্করণ এবং ৭৭৭-৯ মডেল সরকারি অনুমোদন এখনো পায়নি। এসব বিমান যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফএএ) পরীক্ষা ও অনুমোদন প্রক্রিয়ায় আছে। আরও একটি বিষয় হলো, নতুন বিমানের চাহিদা অনেক দিন ধরেই বেশি। সমস্যা হচ্ছে, সরবরাহ সীমিত।
বোয়িং এই ঘাটতি পূরণে কাজ করছে। তাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় মডেল ৭৩৭ ম্যাক্স দুটি বড় দুর্ঘটনার কবলে পড়ার পর এই মডেলের বিমান উৎপাদন প্রায় দুই বছর বন্ধ ছিল। এরপর করোনা মহামারির কারণে সরবরাহব্যবস্থায় বিপর্যয় নামে। গত বছর একটি বিমানের অংশ মাঝ আকাশে খুলে যাওয়ার পর উৎপাদনের গতি আরও কমিয়ে দেওয়া হয়। গত বছর কয়েক সপ্তাহব্যাপী ধর্মঘটেও উৎপাদন পিছিয়ে যায়।
তবুও সমস্যাএমনকি ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণেও বোয়িং সমস্যায় পড়তে পারে। নতুন শুল্কের কারণে বোয়িংয়ের যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিক সংকটে পড়তে পারে। মার্কিন বাণিজ্য অংশীদারেরা পাল্টা শুল্ক আরোপ করলে বোয়িংয়ের বিক্রিতেও প্রভাব পড়তে পারে।
এই সপ্তাহে বাজেট এয়ারলাইনস রায়ানএয়ার বলেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন যদি মার্কিন বিমান আমদানিতে শুল্ক আরোপ করে, তাহলে তারা বোয়িংয়ের সরবরাহ পিছিয়ে দিতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বোয়িং যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য চুক্তিগুলো থেকে অতিরিক্ত সুবিধা পেলে ইউরোপ পাল্টা পদক্ষেপ নিতে পারে। তারা অন্যান্য দেশকে এয়ারবাস কেনায় উৎসাহ দিতে পারে।
বিশ্লেষক কোর্টনি মিলার বলেন, যদি এই খেলা খেলাই হয়, তাহলে প্রশ্ন হলো দীর্ঘ মেয়াদে কে বেশি কৌশলে খেলতে পারে। বিমান ব্যবসা, অর্থনীতি ও কূটনীতির পুরোনো যে টানাপোড়েন, সেটা আবার নতুন করে ফিরে এসেছে।