তোমার শিশুটি আর গাজার শিশুটির জন্য
আলফ্রেড খোকন
পাখিদেরও বাসা আছে, অন্তত খাঁচার বাসাটি
ফিলিস্তিনে মানুষের কোনো বাসা নেই, খাঁচাটিও নেই
মাথার উপর নেই তিলঠাঁই আকাশ!
পাখিরা হয়তো উড়ে যেতে পারছে সীমান্ত পেরিয়ে
পায়ে হেঁটে ফিলিস্তিনের মানুষ আর
কতদূর যাবে!
আমরা কি এখনো দেখতে থাকব
মানুষ হত্যার নামে যুদ্ধের করুণ সার্কাস!
আমি জানি না মাহমুদ দারবিশের কবুতরটি
আজ আর বেঁচে আছে কিনা
এই মুহূর্তে যে কবি কলম খুলছিল মুক্তির
কবিতা লিখবে বলে, তার একটি আঙুলও
আর অক্ষত আছে কিনা
ঘাসকেই ক্ষুধার রুটি ভেবে যে করুণ শিশুটি
নাস্তা করছিল আর বনরুটির মত চিবুচ্ছিল রক্তাক্ত ঘাস
নিজের আঙুলের রক্তকেই সে জেলি ভেবে খেয়েছিল কিনা
জাতিসংঘ তাকে কিভাবে দিয়েছে আশ্বাস
আমি জানি না;
আজ এই নির্বাক নত সন্ধ্যায়
কথা বলো, রুখে দাঁড়াও,
তোমার শিশুটি আর গাজার শিশুটির জন্য
অস্ত্রহীন দু’হাত বাড়াও
তোমার কাঁধে রাইফেল নয়, প্রজাপতি বসতে চায়
ফিলিস্তিনের সর্বহারা শিশুটিও–
তার জন্য বাড়াও আপন কাঁধ
না হলে তুমিও একদিন ঘাস দিয়ে বনরুটি বানাবে
নিজের রক্তেই জ্যাম-জেলি খেয়ে হবে প্রচণ্ড উন্মাদ
শিশুকণ্ঠ, ধ্বংসস্তূপ থেকে
ওবায়েদ আকাশ
আমার হাত স্পর্শ করো না
হয়তো গুঁড়িয়ে দিতে পারো
পুঁতে ফেলা দেহ নিশ্চিহ্ন হবে না ক্রোধে
হয়তো মাড়িয়ে যেতে পারো
এই তো বেঁচে আছি
তোমাদের গ্রেনেডের মুখে
ধ্বংসস্তূপের ডগায়, রকেট-মিসাইলের ঠোঁটে
আমাকে দেখো
মাতৃস্তন ভুলে গেছি আমি
আহার, নিদ্রা, নিঃশ্বাস.
বুকে নিয়ে আছি পুরোটা স্বদেশ
তোমরা বেঁচে আছো অগণ্য মানুষের ঘৃণায়
এসব হত্যা ও ধ্বংস কখনো শেষ কথা নয়
অকুণ্ঠ বিশ্বাস করি–
ইতিহাসের একদিন পুনরাবৃত্তি হয়
ফলে বেঁচে আছি সেই সত্যের প্রতিটি কণায়
হতভাগা দেশটির প্রগাঢ় ভালবাসায়
হলোকাস্ট-টু
আফরোজা সোমা
তবু এই হিংসার শেষে
জীবন-মরণের সীমানা ঘেঁষে
দাঁড়ায়ে আছে শিশু এক
ঠোঁটে লয়ে কান্নার বাঁক
হাত সে রয়েছে বাড়িয়ে
তোমার দিকে
তুমি, কোন দিকে
রয়েছো চেয়ে বিভক্ত মানুষ?
এই কসমেটিক মানবতা লয়ে
মরণের পরে বিলি করে
সুলিখিত বিবৃতি সকল,
কফিনের ‘পরে শপে দিয়ে
শ্বেত-শুভ্র সাদা সাদা ফুল
মিছে তুমি কেন দাও
নিজেরে স্বান্ত্বনা?
তুমি তো জানো,
হলোকাস্টেরই একবিংশ সংস্করণ
গাজা ও ফিলিস্তিন।
বারুদ নয়, ফুলের সুবাস
শিমুল সালাহ্উদ্দিন
দ্যাখো,
মানুষের পৃথিবীতে মানুষ থাকবে মানুষেরই মতো
পৃথিবী আজ ফ্রি প্যালেস্টাইন আওয়াজে প্রকম্পিত
কারও পদানত নয় কারো করতলে নয়
নয় হয়ে কারো ক্ষত
মানুষ থাকবে মুক্ত স্বাধীন মানুষের মতো–
পৃথিবী আজ ফ্রি প্যালেস্টাইন আওয়াজে প্রকম্পিত
যখন প্রতিটি ইঞ্চি মাটি; মাটি নেই আর
কবরে কবরে গণকবরে হয়েছে গ্রন্থিত
যখন গাজার প্রতিটি ধূলিবালিকণা রক্তে রক্তে হয়েছে রঞ্জিত
পৃথিবী আজকে ফ্রি প্যালেস্টাইন আওয়াজে প্রকম্পিত
গাজার বসতি থেকে ওয়েস্ট ব্যাংকে– পাথুরে প্রান্তরে
যে আর্তনাদ প্রতিধ্বনিত শত বছর আর প্রজন্মান্তরে
যে আর্তনাদ মানুষের,
ভাই হারা বোন হারা স্বামী হারা সন্তান হারা মা’র
না শুনে সে চিৎকার, দেয় যারা দোষ রাজকীয় বধিরতার
তাদের বারবার অমানুষ বলে সাব্যস্ত করো, করো অবিরত
পৃথিবী আজকে ফ্রি প্যালেস্টাইন আওয়াজে প্রকম্পিত
বোমার আঘাতে উড়ন্ত লাশে শহরে শহরে ছড়ায় ক্ষত
বিবেকের দংশনে জীবিতের পাশে এসে দ্যাখো দাঁড়ায় বিগত
পৃথিবী আজকে ফ্রি প্যালেস্টাইন আওয়াজে প্রকম্পিত
মুক্ত করো ফিলিস্তিন, হে মানুষ, প্রতিটি হত্যার বিচার করো
নিজেদের যদি মানুষপদবাচ্য দাবি করো আর একবারও!
এভাবে মানুষ–মানুষ মারবে, শিশুদের লাশ–ছড়াবে ছিটাবে
কাক এসে খাবে টুকরো কলজে পথে পড়ে থাকা ছিন্ন ক্ষত
নিজেকে মানুষ বলে কিভাবে বা তুমি হবে
প্রেয়সীর সাথে সঙ্গমরত!
পৃথিবী রাস্তায় নামো, করো এ ভুবন ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন
আওয়াজে’ প্রকম্পিত
হে মানুষ, জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের দল
আমরা মানুষ, আমরা মানুষের পাশে আছি
বারুদ নয়, বোমা নয়, আর্তনাদ নয়,
আমরা ফুলের সুবাস ভালোবাসি
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
নাফ নদীতে বড়শিতে ধরা পড়ল ২০ কেজির কোরাল
কক্সবাজারের টেকনাফের নাফ নদীর ট্রানজিট জেটিতে বড়শিতে ধরা পড়েছে ২০ কেজি ওজনের একটি কোরাল মাছ। মাছটি স্থানীয় বাজার থেকে ২৪ হাজার টাকায় কিনে নিয়েছেন এক ব্যবসায়ী।
গতকাল রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মাছটি ধরা পড়ে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ বাসস্টেশন মাছ বাজারের সভাপতি মোহাম্মদ তাহের।
টেকনাফ পৌরসভার ট্রানজিট জেটিঘাটের ইজারাদার আবদুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, জালিয়াপাড়ার বাসিন্দা মনু মিয়া নামের এক ব্যক্তি বড়শিতে মাছটি ধরেন। সন্ধ্যায় বড়শি ফেলেও তিনি কোনো মাছ পাননি। ঘরে ফেরার আগমুহূর্তে আবার বড়শি ফেললে কোরালটি ধরা পড়ে। বড়শি টেনে মাছটি জেটিতে তোলা হলে আশপাশের লোকজন একনজর দেখার জন্য ভিড় করেন।
বড়শির মালিক মনু মিয়া বলেন, মাছটির দাম চেয়েছিলেন ২৬ হাজার টাকা। টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়ার বাসিন্দা ও মাছ ব্যবসায়ী আবু হানিফ ২৪ হাজার টাকায় মাছটি কিনে নেন।
আবু হানিফ বলেন, তাঁর কাছ থেকে অনেকে প্রতি কেজি ১ হাজার ৩০০ টাকা দামে কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তবে তিনি প্রতি কেজি ১ হাজার ৪০০ টাকা দামে মাছটি বড় বাজারে কেটে বিক্রি করবেন।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, ১১ জুন সাগরে ৫৮ দিনের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে। তবে নাফ নদী এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় ছিল না। মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির তৎপরতার কারণে অনেক বাংলাদেশি জেলে নদীতে জাল নিয়ে যেতে পারছেন না। তাই তাঁরা বড়শিতে মাছ ধরছেন। নাফ নদীতে প্রায়ই বড় কোরাল ধরা পড়ছে। এখানকার কোরালের স্বাদও ভালো।