কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহ্যবাহী পাগলা মসজিদের ১১টি দানবাক্সে এবার পাওয়া গেছে ২৮ বস্তা টাকা। এর মধ্যে আছে বিদেশি মুদ্রাসহ বেশ কিছু অলংকার এবং প্রচুর চিরকুট।

আজ শনিবার সকাল ৭টায় মসজিদ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান, পুলিশ সুপার মো. হাছান চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজাবে রহমত, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেসমিন আক্তার ও রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো.

রফিকুল ইসলামের উপস্থিতিতে বাক্সগুলো খোলা হয়।

এরপর বাক্সে পাওয়া টাকাসহ সবকিছু সিনথেটিক বস্তায় ভরে মসজিদের দোতলার মেঝেতে ঢেলে সেগুলো আলাদা করে শুরু করা হয় গণনা। এর আগে সর্বশেষ গত বছর ৩০ নভেম্বর ১১টি দানবাক্স পাওয়া ২৯ বস্তা টাকা গণনা করে পাওয়া গিয়েছিল গিয়েছিল মোট ৮ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৪ টাকা। এরপর সমুদয় টাকা রূপালী ব্যাংকে মসজিদের হিসাবে জমা করা হয়।

পাগলা মসজিদ কমপ্লেক্সের নূরুল কোরআন হাফিজিয়া মাদ্রাসার ৭৫ জন ছাত্র, ৪৫ জন শিক্ষক ও স্টাফ, আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়ার ১৯৪ জন ছাত্র, রূপালী ব্যাংকের ৮০ জন স্টাফ টাকা গণনার কাজে অংশ নিয়েছেন। পুরো কার্যক্রমে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য প্রশাসন ক্যাডারের ২৪ জন কর্মকর্তা, ১৪ জন সেনা সদস্য, ৩০ জন পুলিশ সদস্য ও ৯ জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন।

প্রতি তিন মাস অন্তর দানবাক্স খোলার নিয়ম থাকলেও এবার রমজানের কারণে খোলা হয়েছে চার মাস ১২ দিন পর। দানবাক্সের বাইরেও মানতকারীরা বিভিন্ন জাতের গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি, কবুতর, দুধ এবং সবজিও দান করে থাকেন। এগুলো উন্মুক্ত নিলামে বিক্রি করে মসজিদের ব্যাংক হিসাবে জমা রাখা হয়।

দানবাক্স খোলার পর জেলা প্রশাসক ও মসজিদ কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান বলেন, এসব টাকার থেকে দরিদ্র মানুষের বিভিন্ন বিপদে সহায়তা করা হয়। স্টাফদের বেতনসহ এতিম ছাত্রদের সমুদয় খরচ বহন করা হয়। রক্ষণাবেক্ষণসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচ এখান থেকেই মেটানো হয়। মসজিদের কিছু উন্নয়ন কাজও হাতে নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, টাকা গণনার সময় সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এখানে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। দানবাক্স খোলা থেকে সমুদয় টাকা ব্যাংকে জমা করা পর্যন্ত পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন। কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পশ্চিম প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে মনোরম পরিবেশে প্রায় পৌনে দুশ বছর আগে গড়ে ওঠা এই মসজিদে দেশ-বিদেশের নানা ধর্মের মানুষ অনুদান পাঠান। প্রতি জুমার দিন দেশের নানা জেলার প্রচুর মানুষ এখানে নামাজ আদায় করে অনুদান দিয়ে যান। অনেকে মানি অর্ডারের মাধ্যমেও অনুদান পাঠান। এখানে দান করলে মনোবাঞ্ছা পূরণ হয় বলে মানুষের বিশ্বাস। ব্যাংকে জমা রাখা দানের টাকার লভ্যাংশ থেকে মসজিদ কমপ্লেক্সের নানা রকম খরচ মিটিয়ে হতদরিদ্র মানুষদের নানা আপদ বিপদে সহায্যও করা হয়ে থাকে।

জেলা প্রশাসক ও মসজিদ কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান বলেছেন, দানবাক্সে পাওয়া টাকা থেকে অসহায় জটিল রোগীদের অনুদান দেওয়া হয়। মসজিদ কমপ্লেক্স মাদ্রাসার ১৩০ জন এতিম ছাত্রের খরচসহ মসজিদ পরিচালনার খরচও মেটানো হয়। জমানো টাকা থেকে পুরুষ ও মহিলাদের নামাজের আরও দুটি শেড নির্মাণ করা হবে। এছাড়া মসজিদ কমপ্লেক্সের সম্প্রসারণের কাজও করা হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: মসজ দ কমপ ল ক স মসজ দ র অন দ ন সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন

অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।

এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।

আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।

অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’

ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।

অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’

অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’

এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।

আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফের রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলার 
  • আমার স্বামীর উপরে কু-নজর পড়েছে: অঙ্কিতা
  • সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প
  • ‘আমি থানার ওসি, আপনার মোবাইল হ্যাকড হয়েছে’
  • অস্ট্রেলীয় সাংবাদিকের প্রশ্নে কেন চটে গেলেন ট্রাম্প, আলবানিজের কাছে নালিশেরও হুমকি দিলেন
  • কালিয়াকৈরে এক মাসে ২০ ডাকাত গ্রেপ্তার 
  • বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলতে চান রিকশাচালক শফিকুল
  • রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
  • ট্রেন থেকে পড়ে ৮ দিন ধরে হাসপাতালে ছেলে, ফেসবুকে ছবি দেখে ছুটে এলেন মা
  • ভাড়া বাসায় একা থাকতেন বৃদ্ধা, তার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার