ফিলিস্তিনের গাজা যুদ্ধের নিন্দা জানিয়ে একটি খোলাচিঠিতে সই করা ইসরায়েলের বিমানবাহিনীর রিজার্ভ (অনিয়মিত বা খণ্ডকালীন) সেনাদের চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সামরিক বাহিনী। ওই চিঠিতে বলা হয়েছিল, রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য গাজায় যুদ্ধ করছে ইসরায়েল সরকার। একই সঙ্গে তারা হামাসের হাতে জিম্মি ব্যক্তিদের ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়েছে।

এপির কাছে পাঠানো এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের একজন সেনা কর্মকর্তা বলেছেন, রিজার্ভ সেনাসহ কোনো ব্যক্তি, যাঁরা সামরিক বাহিনীতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন, তাঁদের ‘লড়াইয়ে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি নিজেদের সামরিক পদমর্যাদাকে অন্য কোনো কাজে লাগাতে’ পারবেন না। ওই খোলাচিঠির কারণে সেনা কমান্ডার ও তাঁদের অধীনদের মধ্যে আস্থার ঘাটতি হয়েছে।

কতসংখ্যক রিজার্ভ সেনাকে চাকরিচ্যুত করা হবে, তা ইসরায়েলি বাহিনীর গতকাল শুক্রবারের ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়নি। তবে বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, দেশটির বিমানবাহিনীর প্রায় ১ হাজার রিজার্ভ ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা খোলাচিঠিতে সই করেছিলেন। তাঁদের দাবি, যুদ্ধ শেষ করে হলেও জিম্মিদের ইসরায়েলে ফেরত আনতে হবে।

গাজায় হামাসের কাছে এখনো ৫৯ জিম্মি বন্দী অবস্থায় রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই ইতিমধ্যে মারা গেছেন বলে ধারণা করা হয়। এই জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে গাজায় ব্যাপক হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। উপত্যকাটিতে ত্রাণসামগ্রী প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। একই সঙ্গে গাজার বড় অংশ দখলে নিয়েছে ইসরায়েল। সেখানে একটি নিরাপত্তা করিডর তৈরি করতে চাইছে তারা।

গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া দেশটির সেনাসদস্যদের সংখ্যা বাড়ছে। এমনই একজন বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত পাইলট গায় পোরান। ওই খোলাচিঠি লেখায় নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকা রেখেছেন তিনি। গায় পোরান বলেন, জিম্মিদের জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলা, আরও সেনাদের জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলা এবং অনেক অনেক নিরপরাধ ফিলিস্তিনির জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলাটা ইসরায়েলের নীতিনির্ধারকদের জন্য পুরোপুরি দায়িত্বজ্ঞানহীন একটি কাজ, যেখানে এই হামলার সুস্পষ্ট বিকল্প ছিল।

তবে গাজায় হামলার নিন্দা জানিয়ে লেখা ওই চিঠির তেমন গুরুত্ব দেননি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। শুক্রবার তিনি বলেছেন, চিঠিটি লিখেছেন ‘গুটিকয়েক আগাছা। বিদেশি তহবিলের মাধ্যমে তাঁদের পরিচালনা করা হচ্ছে। তাঁদের একমাত্র লক্ষ্য হলো ডানপন্থী সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা।’ এই ব্যক্তিদের চাকরিচ্যুত করা হবে বলে উল্লেখ করেছেন তিনিও।

এদিকে এএফপির খবরে বলা হয়েছে, মিসরের মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা গতকাল শনিবার কায়রোর উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতারা। সংগঠনটির এক নেতা বলেছেন, ‘যুদ্ধ ও আগ্রাসন বন্ধে এবং গাজা থেকে দখলদার বাহিনী পুরোপুরি প্রত্যাহারের জন্য একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে এই বৈঠকে সত্যিকারের অগ্রগতি হবে বলে আশা করছি আমরা।’

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। উপত্যকাটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, গত ১৮ মাসে সেখানে অন্তত ৫০ হাজার ৯১২ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ১৫ হাজার ৯৮১ জনের বেশি। হতাহত ব্যক্তিদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী ও শিশু।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ কর চ য ত কর ইসর য় ল র

এছাড়াও পড়ুন:

পেহেলগামে হামলার পর প্রতিশোধের আশঙ্কায় দিন কাটছে ভারতীয় মুসলিমদের


ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সম্প্রতি সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার পর মুসলিমদের ব্যাপকভাবে ধরপাকড় ও তাঁদের ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ছে। মানবাধিকারকর্মীদের আশঙ্কা, উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা পেহেলগামের হামলাকে ব্যবহার করে দেশের বৃহত্তম সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ওপর দমন–পীড়ন আরও বৃদ্ধি করছে।

কাশ্মীরের পেহেলগাম শহরের কাছে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় ২৬ জন নিহত হয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে একজন বাদে বাকি প্রায় সবাই হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। পর্যটক হিসেবে তাঁরা ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে পেহেলগামে গিয়েছিলেন। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে, যদিও পাকিস্তান এই অভিযোগ জোরালোভাবে নাকচ করে দিয়েছে।

পেহেলগামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার জবাবে ভারত সামরিকভাবে পাকিস্তানকে জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করে তাদের ঘাঁটি ধ্বংস করে দেওয়া হবে। পাকিস্তান সরকারের একজন মন্ত্রী জানিয়েছেন, তাঁরা বিশ্বাস করেন ভারত শিগগিরই সামরিক হামলা চালাতে পারে।

এই মুহূর্তে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার মূলত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে। যেমন আন্তসীমান্ত নদীগুলোর পানিপ্রবাহ বন্ধের হুমকি দিচ্ছে। একই সঙ্গে বিজেপি সরকার ও উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে মুসলিমদের হয়রানি করছে। তারা এটিকে ‘অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান’ বলে দাবি করছে।

মোদির বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোতে কর্তৃপক্ষ এই সুযোগে ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ এবং ‘রোহিঙ্গাদের’ বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। রোহিঙ্গারা মূলত মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছেন। ‘পাকিস্তানি’ বা ‘বাংলাদেশি’ তকমা অনেক সময়েই হিন্দুত্ববাদীরা ভারতের অভ্যন্তরীণ মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে থাকে।

উত্তর প্রদেশ ও কর্ণাটক—এই দুই রাজ্যে মুসলিমদের হত্যার খবর পাওয়া গেছে। গণমাধ্যমের খবরে সেগুলোকে বিদ্বেষমূলক অপরাধ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী কাশ্মীরে ইতিমধ্যেই শত শত মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে। সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে যাঁদের সন্দেহ করা হচ্ছে, তাঁদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এক সরকারি কর্মকর্তার মতে, প্রায় দুই হাজার মানুষকে আটক করা হয়েছে, যা অনেকটা সমষ্টিগত শাস্তির মতো।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • একজন চা শ্রমিকের দিনে আয় ১৭৮ টাকা
  • বড় বন্দরে ভারী কাজ করেও চলে না সংসার 
  • নাটোরে ছুরিকাঘাতে প্রাণ গেল একজনের
  • ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতির মেয়ে
  • ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতি মেয়ে
  • ৫০ পেরোনো নারীর খাদ্যাভ্যাস যেমন হতে হবে
  • যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ করছে চীন
  • সেলফি’র ধাক্কায় গণস্বাস্থ্যের কর্মীর মৃত্যু, ৬ বাস আটক
  • পেহেলগামে হামলার পর প্রতিশোধের আশঙ্কায় দিন কাটছে ভারতীয় মুসলিমদের
  • আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক হলেন আনসার উদ্দিন খান