পানি নেই ঝিরি-ঝরনায় সংকটে দুর্গম গ্রামবাসী
Published: 12th, April 2025 GMT
রাঙামাটি জেলার জুরাছড়ির দুর্গম পাহাড়ি গ্রামে তীব্র পানি সংকট দেখা দিয়েছে। সুপেয় পানি থেকে নিত্য ব্যবহার্য পানিও মিলছে না। গ্রীষ্মের তাপদাহে শুকিয়ে গেছে পাহাড়ি ছড়া ও ঝরনা। লোকজনের একমাত্র ভরসা ছিল কুয়ার পানি। সেখানেও স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পানি পাওয়া যাচ্ছে না। এখন ঝিরি থেকে ফোঁটা ফোঁটা পানি সংগ্রহের চেষ্টা করছেন পাহাড়ি মানুষ।
সরেজমিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার জুরাছড়ি ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কুকিছড়া, ত্রিপুরাপাড়া, জনতাপাড়া, বারুদগলা, সোহেল পাড়ায় সবচেয়ে বেশি পানি সংকট চলছে। এসব গ্রামে ২৪৭ পরিবারের বাস। তাদের পেশা কৃষি (জুম চাষ)। এসব পাড়ায় নেই বিদ্যুৎ। চিকিৎসা সেবার জন্য নেই কমিউনিটি ক্লিনিক। এই ওয়ার্ডে নেই নিরাপদ পানির কোনো নলকূপ।
এসব গ্রামের পাদদেশের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে পানছড়ি ছড়া। এই ছড়ার রয়েছে ছোট প্রশাখা ছড়া। কিন্তু বর্তমানে গ্রামের ছড়াগুলো শুকিয়ে মরা ছড়ায় পরিণত হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, পাড়াগুলো পাহাড়ের চূড়ায় হওয়ায় প্রায় ৫০০-৮০০ ফুট নিচে নামলে ছোট ঝিরি বা ঝরনার দেখা মেলে। ঝিরিগুলো থেকে ফোঁটা ফোঁটা পানি সংগ্রহের চেষ্টা করছেন পাহাড়ি মানুষ।
স্থানীয়রা বলছেন, আগের মতো বড় বড় গাছ না থাকায় শুষ্ক মৌসুমে ছোট ছোট ঝিরি-ঝরনাগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। ওয়ার্ড সদস্য অরুণ চাকমা বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমে পাহাড়ে মানুষের জীবনযাপন অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে পানি সংকট পাহাড়ের জীবনকে আরও খারাপ করেছে।’
কুকিছড়া, সোহেল পাড়া কার্বারি কিরণ জয় চাকমা বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুম এলেই আমাদের এলাকায় খাবারের চেয়ে বিশুদ্ধ পানির সংকট চরম অবস্থায় পৌঁছায়। পাড়ার নারীরা প্রতিদিন পাড়া থেকে কয়েকশ ফুট নিচে নেমে খাবার পানি, গৃহস্থালি কাজের ও রান্নার পানি সংগ্রহ করছেন।’
স্থানীয় মলকা বানু চাকমা, রঞ্জিতা চাকমা বলেন, ‘গ্রীষ্মকাল এলে আমাদের গোসলের কথা ভুলে যেতে হয়। দুই-তিন দিন পরও গোসল করতে পারি না। সপ্তাহে একবার গোসল করতে পারলেও এক-দুই লিটার পানি দিয়েই সারতে হয়।’
শুধু জুরাছড়ি ইউনিয়ন নয়, নিরাপদ পানির সংকট চলছে বনযোগীছড়া ইউনিয়নের বালিশ পাড়া, ছোট পানছড়ি, এরাইছড়ি। মৈদং ইউনিয়নের আমতলা বাদলহাটছড়া, জামুরাছড়ি, কাঁঠাল তুলি। দুমদুম্যা ইউনিয়নে করল্যাছড়ি, দুলুছড়ি, শিমাইতুলি ও তেছড়িতেও।
উন্নয়নকর্মী পলাশ খীসা বলেন, ‘গ্রামগুলোয় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নিরাপদ পানির সংকট তৈরি হয়েছে। পানি সংকট কৃষি খাদ্যের ওপরও ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করছে। তীব্র গরম ও পানির সংকটে গবাদি পশুর মৃত্যুও বাড়ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঝিরি ও ছড়াগুলো রক্ষায় সরকারের সহযোগিতার পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এসব ছড়া-ঝিরির চারপাশে সবুজ বনায়নে উদ্যোগ নিতে হবে। তাতে পানির উৎস বাড়বে।’
জুরাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমন চাকমা বলেন, ‘৫ নম্বর ওয়ার্ডে প্রতিবছরই গ্রীষ্মকালে পানির সংকট দেখা দেয়। মানুষ অনিরাপদ পানি ব্যবহার করায় দেখা দেয় পানিবাহিত রোগের প্রকোপ। চাহিদার তুলনায় মাত্রাতিরিক্ত গাছগাছালি কাটছেন মানুষ। বাণিজ্যিকভাবে সেগুন চাষ পানি সংকট বাড়াচ্ছে। কারণে সেগুন গাছের কারণে পাহাড় শুকিয়ে যায়।’
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগসহ বিভিন্ন উন্নয়ন
দপ্তর গ্রেভিটি ফ্লো সিস্টেম (জিএফএস), সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে পাত কুয়া থেকে পানি সরবরাহে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিলেও তাতে চলছে দীর্ঘসূত্রতা। পানি সংকট নিরসনে সরকারি–বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর এগিয়ে জরুরি।
উপজেলা উপসহকারী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী রকি দে পানি সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘দুর্গমতার কারণে এসব এলাকায় পরিবহনে পানি সরবরাহে অতিরিক্ত খরচ হয়। আমরা দুর্গম এসব এলাকার পানি সংকট নিরসনে আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে রিং ওয়েল ও গ্রেভিটি ফ্লো সিস্টেম (জিএফএস) প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব দিয়েছি।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন র পদ প ন
এছাড়াও পড়ুন:
বিদ্যুৎ না থাকায় ডিইপিজেডে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ
ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ডিইপিজেড) আজ সোমবার দুপুর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এ কারণে দুপুরের পর ডিইপিজেডের সব কারখানায় শ্রমিকদের ছুটি দেওয়া হয়েছে। ডিইপিজেডের জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড পাওয়ারের বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় এ সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ডিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মো. শরীফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ ইউনাইটেড পাওয়ারের ডিইপিজেডে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রকল্পটিতে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এতে তারা উৎপাদন করতে না পারায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না। ফলে ডিইপিজেডে প্রায় ৯০টি কারখানার এক লাখের মতো শ্রমিককে ছুটি দেওয়া হয়।
বিদ্যুতের সংযোগ না থাকায় বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়েছে উল্লেখ করে মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার যদি এটি অব্যাহত থাকে, তবে সংকট আরও বাড়বে। শ্রমিকেরা কাজ না করতে পেরে বিক্ষুব্ধ হলে বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠবে। কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়া এ ধরনের ঘটনায় বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ডিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘তিতাস বলছে, ইউনাইটেড পাওয়ারের কাছে বিল বকেয়া রয়েছে। তারা বকেয়া পরিশোধ করেনি। এ ব্যাপারে আদালতে দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলছে। কিন্তু আমাদের কথা হচ্ছে, বেপজাকে কোনো ধরনের পূর্ব নোটিশ না দিয়ে হঠাৎ করে এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন। এ ধরনের পদক্ষেপের আগে ডিইপিজেডের গুরুত্ব বিবেচনা করে আলোচনার মধ্য দিয়ে বিষয়টির সমাধান করা উচিত ছিল।’
এ বিষয়ে ইউনাইটেড পাওয়ার প্ল্যান্টের ব্যবস্থাপক মো. মমতাজ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্যাসের কোনো প্রেশার নেই। প্রেশার শূন্য। কিন্তু কেন তিতাস কর্তৃপক্ষ এমনটি করল, সে ব্যাপারে এখানকার (আশুলিয়া অঞ্চলের) তিতাসের লোকজন কিছু বলতে পারেননি। আমরা নিজেরাও বিষয়টি নিয়ে জানি না। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে, বকেয়া নিয়ে কোনো ধরনের মামলা নেই। তিতাস কেন গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিল, সেটি জানা নেই।’
জানতে চাইলে তিতাসের আশুলিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবু ছালেহ মুহাম্মদ খাদেমুদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাসের বিল বকেয়া থাকায় গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এটি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের সিদ্ধান্ত। দুপুরের দিকে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।