রাঙামাটি জেলার জুরাছড়ির দুর্গম পাহাড়ি গ্রামে তীব্র পানি সংকট দেখা দিয়েছে। সুপেয় পানি থেকে নিত্য ব্যবহার্য পানিও মিলছে না। গ্রীষ্মের তাপদাহে শুকিয়ে গেছে পাহাড়ি ছড়া ও ঝরনা। লোকজনের একমাত্র ভরসা ছিল কুয়ার পানি। সেখানেও স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পানি পাওয়া যাচ্ছে না। এখন ঝিরি থেকে ফোঁটা ফোঁটা পানি সংগ্রহের চেষ্টা করছেন পাহাড়ি মানুষ। 
সরেজমিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার জুরাছড়ি ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কুকিছড়া, ত্রিপুরাপাড়া, জনতাপাড়া, বারুদগলা, সোহেল পাড়ায় সবচেয়ে বেশি পানি সংকট চলছে। এসব গ্রামে ২৪৭ পরিবারের বাস। তাদের পেশা কৃষি (জুম চাষ)। এসব পাড়ায় নেই বিদ্যুৎ। চিকিৎসা সেবার জন্য নেই কমিউনিটি ক্লিনিক। এই ওয়ার্ডে নেই নিরাপদ পানির কোনো নলকূপ। 
এসব গ্রামের পাদদেশের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে পানছড়ি ছড়া। এই ছড়ার রয়েছে ছোট প্রশাখা ছড়া। কিন্তু বর্তমানে গ্রামের ছড়াগুলো শুকিয়ে মরা ছড়ায় পরিণত হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, পাড়াগুলো পাহাড়ের চূড়ায় হওয়ায় প্রায় ৫০০-৮০০ ফুট নিচে নামলে ছোট ঝিরি বা ঝরনার দেখা মেলে। ঝিরিগুলো থেকে ফোঁটা ফোঁটা পানি সংগ্রহের চেষ্টা করছেন পাহাড়ি মানুষ।
স্থানীয়রা বলছেন, আগের মতো বড় বড় গাছ না থাকায় শুষ্ক মৌসুমে ছোট ছোট ঝিরি-ঝরনাগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। ওয়ার্ড সদস্য অরুণ চাকমা বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমে পাহাড়ে মানুষের জীবনযাপন অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে পানি সংকট পাহাড়ের জীবনকে আরও খারাপ করেছে।’
কুকিছড়া, সোহেল পাড়া কার্বারি কিরণ জয় চাকমা বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুম এলেই আমাদের এলাকায় খাবারের চেয়ে বিশুদ্ধ পানির সংকট চরম অবস্থায় পৌঁছায়। পাড়ার নারীরা প্রতিদিন পাড়া থেকে কয়েকশ ফুট নিচে নেমে খাবার পানি, গৃহস্থালি কাজের ও রান্নার পানি সংগ্রহ করছেন।’
স্থানীয় মলকা বানু চাকমা, রঞ্জিতা চাকমা বলেন, ‘গ্রীষ্মকাল এলে আমাদের গোসলের কথা ভুলে যেতে হয়। দুই-তিন দিন পরও গোসল করতে পারি না। সপ্তাহে একবার গোসল করতে পারলেও এক-দুই লিটার পানি দিয়েই সারতে হয়।’
শুধু জুরাছড়ি ইউনিয়ন নয়, নিরাপদ পানির সংকট চলছে বনযোগীছড়া ইউনিয়নের বালিশ পাড়া, ছোট পানছড়ি, এরাইছড়ি। মৈদং ইউনিয়নের আমতলা বাদলহাটছড়া, জামুরাছড়ি, কাঁঠাল তুলি।  দুমদুম্যা ইউনিয়নে করল্যাছড়ি, দুলুছড়ি, শিমাইতুলি ও তেছড়িতেও। 
উন্নয়নকর্মী পলাশ খীসা বলেন, ‘গ্রামগুলোয় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নিরাপদ পানির সংকট তৈরি হয়েছে। পানি সংকট কৃষি খাদ্যের ওপরও ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করছে। তীব্র গরম ও পানির সংকটে গবাদি পশুর মৃত্যুও বাড়ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঝিরি ও ছড়াগুলো রক্ষায় সরকারের সহযোগিতার পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এসব ছড়া-ঝিরির চারপাশে সবুজ বনায়নে উদ্যোগ নিতে হবে। তাতে পানির উৎস বাড়বে।’
জুরাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমন চাকমা বলেন, ‘৫ নম্বর ওয়ার্ডে প্রতিবছরই গ্রীষ্মকালে পানির সংকট দেখা দেয়। মানুষ অনিরাপদ পানি ব্যবহার করায় দেখা দেয় পানিবাহিত রোগের প্রকোপ। চাহিদার তুলনায় মাত্রাতিরিক্ত গাছগাছালি কাটছেন মানুষ। বাণিজ্যিকভাবে সেগুন চাষ পানি সংকট বাড়াচ্ছে। কারণে সেগুন গাছের কারণে পাহাড় শুকিয়ে যায়।’
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগসহ বিভিন্ন উন্নয়ন 
দপ্তর গ্রেভিটি ফ্লো সিস্টেম (জিএফএস), সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে পাত কুয়া থেকে পানি সরবরাহে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিলেও তাতে চলছে দীর্ঘসূত্রতা। পানি সংকট নিরসনে সরকারি–বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর এগিয়ে জরুরি। 
উপজেলা উপসহকারী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী রকি দে পানি সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘দুর্গমতার কারণে এসব এলাকায় পরিবহনে পানি সরবরাহে অতিরিক্ত খরচ হয়। আমরা দুর্গম এসব এলাকার পানি সংকট নিরসনে আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে রিং ওয়েল ও গ্রেভিটি ফ্লো সিস্টেম (জিএফএস) প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব দিয়েছি।’ 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন র পদ প ন

এছাড়াও পড়ুন:

গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা

কারিগরি ক্ষতির (সিস্টেম লস) নামে গ্যাস অপচয় বাড়ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্যাস বিতরণ লাইনে অপচয় হয়েছে গড়ে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ গ্যাস। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। আর গত অর্থবছরের (২০২৪-২৫) মার্চ পর্যন্ত অপচয় হয়েছে ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এতে আর্থিক ক্ষতি ৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। এর বাইরে সঞ্চালন লাইনে অপচয় হয়েছে ২ শতাংশ।

‘দেশের জ্বালানিনিরাপত্তা: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়; গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এতে বলা হয়, ২ শতাংশ অপচয় গ্রহণযোগ্য, তাই ওইটুকু সমন্বয় করেই আর্থিক ক্ষতির হিসাব করা হয়েছে। গ্যাসের অপচয় রোধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে ছয়টি গ্যাস বিতরণ সংস্থা।

পেট্রোবাংলা বলছে, গ্যাস অপচয়ের জন্য দায়ী হচ্ছে পুরোনো, জরাজীর্ণ পাইপলাইন; গ্যাস সরবরাহ লাইনের গ্যাসস্টেশন রাইজারে লিকেজ (ছিদ্র); তৃতীয় পক্ষের উন্নয়নকাজে পাইপলাইন ছিদ্র হওয়া এবং আবাসিক খাতে প্রচুর অবৈধ সংযোগ। তবে এসব অপচয় রোধে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানায় পেট্রোবাংলা। এর মধ্যে রয়েছে গ্যাস সরবরাহব্যবস্থায় মিটারিং/ মনিটরিং ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা; লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কারিগরি ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখা; অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও উচ্ছেদ কার্যক্রম জোরদার করা এবং আবাসিক গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা।

দেশের গ্যাস খাতের চিত্র তুলে ধরে সেমিনারে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন। তিনি বলেন, দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমতে কমতে ১৫ বছর আগের জায়গায় চলে গেছে। গ্যাস অনুসন্ধান জোরদারের কোনো বিকল্প নেই। গ্যাস চুরি ও অপচয় কমাতে হবে। সঞ্চালন ও বিতরণ মিলে কারিগরি ক্ষতি প্রায় ১০ শতাংশ, যা অনেক বেশি। সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতি কোনোভাবেই ২ শতাংশ হওয়ার কথা নয়। এটা ভালো করে দেখা উচিত।

শিল্পে নতুন সংযোগে গ‍্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান বলেন, সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতির বিষয়টি গভীরভাবে দেখা হচ্ছে। অবৈধ সংযোগ বন্ধে পেট্রোবাংলা তৎপর আছে, খোঁজ পেলেই বিচ্ছিন্ন করা হবে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিল্পে নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে গ‍্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, যেহেতু তারা বেশি দাম দেবে। তাই অগ্রাধিকার বিবেচনা করে তিনটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। প্রথম ধাপের তালিকায় থাকছে, যেসব কারখানায় এখনই সংযোগ দেওয়া যাবে। এগুলো পরিদর্শন প্রায় শেষের দিকে, আগামী সপ্তাহে শেষ হয়ে যাবে।

সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহ করতে নতুন টার্মিনাল নির্মাণে অগ্রাধিকার পাচ্ছে স্থলভাগের টার্মিনাল। মহেশখালীর মাতারবাড়ী এলাকায় এটি করা হবে। এটি হলে কম দামের সময় বাড়তি এলএনজি কিনে মজুত করা যাবে। তবে এগুলো রাতারাতি করা যায় না, পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে।

জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে

তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তি (পিএসসি) নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি) মো. শোয়েব। তিনি বলেন, স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য তৈরি পিএসসির খসড়া জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ৫০টি কূপ সংস্কার, উন্নয়ন ও খননের প্রকল্পে ইতিমধ্যে ১৮টির কাজ শেষ হয়েছে। জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে। ৪টি কূপের কাজ চলমান। এ ছাড়া পেট্রোবাংলার বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যক্রম তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (পরিকল্পনা) মো. আবদুল মান্নান পাটওয়ারী।

সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে

পেট্রোবাংলার আর্থিক দিক তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (অর্থ) এ কে এম মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, গত অর্থবছরে পেট্রোবাংলার রাজস্ব আয় ৫৪ হাজার ১১৭ কোটি টাকা, এর মধ্যে অর্ধেক বকেয়া। গত মে পর্যন্ত গ্যাস বিল বকেয়া ২৭ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। এটি ধীরে ধীরে কমে আসছে। ১৩–১৫ হাজার কোটিতে বকেয়া নেমে এলে সন্তোষজনক। সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে ১৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। এরপর সার কারখানায় বকেয়া আছে ৯৬৪ কোটি টাকা। তবে বিদেশি কোনো কোম্পানির কাছে বিল বকেয়া নেই পেট্রোবাংলার। সব বিল শোধ করা হয়ে গেছে।

গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা

পেট্রোবাংলা বলছে, এলএনজি আমদানি শুরুর পর থেকে লোকসান শুরু হয় সংস্থাটির। প্রতিবছর সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নিচ্ছে পেট্রোবাংলা। ২০১৮-১৯ সালে এলএনজি আমদানি শুরু হয়, ওই বছর ভর্তুকি ছিল ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এরপর এলএনজি আমদানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভর্তুকিও বাড়তে থাকে। গত অর্থবছরে তারা ভর্তুকি নিয়েছে ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত পেট্রোবাংলা মোট ভর্তুকি নিয়েছে ৩৬ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। পেট্রোবাংলার হিসাবে গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিট গ্যাস সরবরাহে পেট্রোবাংলার খরচ হয়েছে ২৭ টাকা ৫৩ পয়সা। তারা বিক্রি করেছে ২২ টাকা ৯৩ পয়সায়। এর মানে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা ৬০ পয়সা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বেড়েছে মাছ, মুরগি ও ডিমের দাম
  • ইরানের ভুলে আজারবাইজান যেভাবে ইসরায়েলের দিকে ঝুঁকে পড়ল
  • গাজায় দুর্ভিক্ষের অংক
  • গ্যাস সংকট
  • ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতে যেসব খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে
  • ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ
  • কাফকো সার কারখানায় গ্যাস বিক্রির চুক্তি সই
  • গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা
  • পাবনায় আগাম পাটের বাজার চড়া, বেশি দাম পেয়ে কৃষক খুশি
  • নবায়নযোগ্য জ্বালানির যুগ কড়া নাড়ছে দরজায়