ধরা পড়ছে না ইলিশ, জেলেদের দিন কাটছে অর্থকষ্টে
Published: 13th, April 2025 GMT
সাগরে মাছ ধরা পড়ছে কম। বিশেষ করে দেখা মিলছে না ইলিশের। এমন পরিস্থিতিতে অর্থকষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে কক্সবাজারের প্রায় এক লাখ জেলে পরিবারকে। আয় না থাকায় ট্রলারমালিকেরাও পড়েছেন বিপাকে।
গত মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজার শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের নাজিরারটেক সৈকতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বসে মাছ ধরার ট্রলারের ছেঁড়াজাল মেরামতে ব্যস্ত অর্ধ শতাধিক জেলে। তাঁদের সঙ্গে কথা হয়। জেলেরা জানান, ইলিশ ধরা না পড়ায় ঘাটে ফেলে রাখা হয়েছে ট্রলার। ফলে দুঃখে-কষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে তাঁদের। এর মধ্যেই ১৫ এপ্রিল থেকে সাগরে মাছ ধরায় ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা। এ সময় তাঁদের কষ্ট আরও বাড়বে।
জাল মেরামতে ব্যস্ত জেলেদের একজন কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, মাছ ধরা না পড়ায় অলস সময় কাটছে। এর মধ্যে জাল মেরামতের কাজ করছেন। প্রতিদিন ৬০০ টাকা করে পান। এ টাকায় সংসার চালানো কষ্টের। জাল মেরামতের কাজ বন্ধ হয়ে গেলে না খেয়ে থাকতে হবে।
আরেক জেলে আমিন উদ্দিন (৪৫) বলেন, অর্থাভাবে এবারের ঈদও মাটি হয়েছে। সন্তানদের ঈদের নতুন জামা কাপড় কিনে দেওয়া দূরে থাক, খাবার জোগাতেই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সাগরে মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞা শুরুর পর দুর্দশা আরও বাড়বে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজারের নাজিরারটেক, নুনিয়াছটার পাশাপাশি সদর উপজেলার খুরুশকুল; টেকনাফের জালিয়াপাড়া, শাহপরীর দ্বীপ, সেন্ট মার্টিন এবং কুতুবদিয়া, মহেশখালী ও পেকুয়া উপজেলার অন্তত ৩২টি গ্রামে জেলে পরিবার রয়েছে প্রায় এক লাখের বেশি। মাছ ধরা কমে যাওয়ায় প্রায় সবারই অর্থসংকটে দিন কাটছে।
কক্সবাজার ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো.
নুনিয়াছটার ট্রলারমালিক গিয়াস উদ্দিন জানান, তাঁর ট্রলারে জেলে আছেন ২১ জন। আড়াই মাস ধরে ট্রলারটি ঘাটে পড়ে থাকায় জেলেরা বেকার হয়ে পড়েছেন। গত ঈদে জেলেদের মাথাপিছু ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হয়। এখন সংসার চালানোর মতো জেলেদের অর্থসহায়তা দেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। কারণ তিনিও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।
নুনিয়াছটা ফিশারিঘাটের ট্রলারমালিক ওসমান গণির (৪৭) ট্রলার আছে তিনটি। তিনি জানান, তাঁর দুটি ট্রলার আড়াই মাস ধরে ঘাটে পড়ে আছে। অপর একটি ট্রলার সাগরে নেমে আড়াই মাসে ১০ লাখ টাকার মাছ পেয়েছে। একই সময় ট্রলারটিতে জ্বালানি-খাবারসহ আনুষঙ্গিক খরচ হয়েছে ২১ লাখ টাকা। লোকসান হয়েছে ১১ লাখ টাকার মতো। ওসমান গণি বলেন, ‘লোকসান গুনতে গুনতে পথে বসার উপক্রম। এখন একটি ট্রলার বিক্রির চেষ্টা চালাচ্ছি, কিন্তু লোক পাওয়া যাচ্ছে না।’
উত্তর নুনিয়াছটার আরেকটি ট্রলারের মালিক নুরুল আলম বলেন, তাঁর দুটি ট্রলারও দুই মাস ধরে ঘাটে ফেলে রেখেছেন। ২ ট্রলারের ৪১ জন জেলে ২ মাস ধরে বেকার। দেনা শোধ করতে সম্প্রতি তিনি দেড় কোটি টাকা দামের একটি ট্রলার বিক্রি করে দিয়েছেন ৫৫ লাখ টাকায়। অপর ট্রলারটিও বিক্রির চেষ্টা চালাচ্ছেন।
টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ ও জালিয়াপাড়ার দুই হাজারের বেশি জেলে পরিবার এবার ঠিকমতো ঈদ উদ্যাপন করতে পারেনি বলে জানান শাহপরীর দ্বীপ ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবদুস সালাম। তিনি বলেন, ‘জেলেদের এমন দুর্দশা আগে দেখিনি। বেকার জেলেরা সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের সাহায্য-সহায়তা থেকেও বঞ্চিত।’ টেকনাফ ডিঙি নৌকামালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুলতান আহমদ বলেন, দুই মাস ধরে সাগরে মাছ ধরা পড়ছে না। তাতে ডিঙি নৌকার ১০ হাজার জেলে বেকার হয়ে পড়েছেন।
কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর ফিশারিঘাটের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র থেকে গত বছর ঈদের আগ মুহূর্তের কয়েক দিনে দৈনিক ১৫০ থেকে ২০০ মেট্রিক টন ইলিশ ট্রাকবোঝাই করে ঢাকায় সরবরাহ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গত ২ মাসে ১৫ টন ইলিশও সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। ফিশারিঘাটের ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছ সরবরাহ দেন কক্সবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী ঐক্য সমবায় সমিতির শতাধিক সদস্য। জানতে চাইলে সমিতির প্রধান উপদেষ্টা ও ইলিশ ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন বলেন, কক্সবাজার উপকূলে কয়েক মাস ধরে মাছের খরা চলছে। বঙ্গোপসাগর থেকে ইলিশ যেন কোথাও উধাও হয়ে গেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এমন পরিস্থিতি হচ্ছে কি না, তার গবেষণা দরকার।
কক্সবাজারের নাজিরারটেক ঘাটে নোঙর করা কয়েকটি নৌযান। সম্প্রতি তোলাউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ল ম র মত
এছাড়াও পড়ুন:
বাজারে সবজির সরবরাহ বেড়েছে, নিম্নমুখী চালের দাম
ঈদের বন্ধের আমেজ কাটতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে চট্টগ্রামের পাইকারি ও খুচরা বাজারগুলো। ক্রেতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারগুলোতে বেড়েছে সবজিসহ বিভিন্ন পণ্যের সরবরাহ। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কয়েক দিনের ব্যবধানে কিছুটা কমেছে সবজির দাম। পেঁয়াজ, রসুন ও চালের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও নিম্নমুখী।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার পর নগরের কাঁচাবাজারে সবজির সরবরাহ কমে যায়। ফলে দাম ছিল কিছুটা বাড়তি। গত রোববার ও সোমবারের দিকে নগরের আড়তগুলোতে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৬০ টাকা দরে। অধিকাংশ সবজির দামও ৪০ টাকার আশপাশে ছিল। তবে গত মঙ্গলবার থেকে আবারও বাজারে পুরোদমে সবজির সরবরাহ শুরু হয়েছে। যার কারণে দাম কমতে শুরু করেছে।
আজ শুক্রবার নগরের রিয়াজউদ্দিন বাজারের পাইকারি আড়তে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ২০ থেকে ৪০ টাকা দরে। বেশির ভাগ সবজির দাম প্রতি কেজি ১০ থেকে ৩৫ টাকা। তবে খুচরা বাজারগুলোতে প্রায় দ্বিগুণ দামে সবজি বিক্রি হতে দেখা যায়। নগরের বহদ্দারহাট, চকবাজার, সাব এরিয়া ও কাজির দেউড়ি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব বাজারে অধিকাংশ সবজির দাম ৬০ টাকার বেশি। লাউ, মিষ্টিকুমড়া ও ফুলকপির দাম কিছুটা কম। এসব সবজির দাম ৫০ টাকার আশপাশে। খুচরা বাজারগুলোতে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা কেজি দরে। পরিবহন খরচ ও আগে কেনার অজুহাতে বাড়তি দাম নিচ্ছেন বিক্রেতারা। রিয়াজউদ্দিন বাজারের আড়তদার নুরুল ইসলাম বলেন, বাজারে সব সবজির দাম কম। কিন্তু খুচরা ব্যবসায়ীদের কারণে ভোক্তাদের ভোগান্তি হচ্ছে। আড়তের দামের দ্বিগুণ দামে তাঁরা সবজি বিক্রি করছেন।
সবজির বাজারের পাশাপাশি পেঁয়াজ, রসুন ও চালের দামও নিম্নমুখী। খাতুনগঞ্জের পাইকারি আড়তে আজ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৪৫ থেকে ৫২ টাকা দরে। খুচরা পর্যায়ে দাম ছিল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি। অন্যদিকে রসুনের কেজি আড়তে ছিল ৮৫ থেকে ১১০ টাকা। খুচরায় সেটি ১০০ থেকে ১৩০ টাকা।
পাহাড়তলী চালের আড়তে মোটা চাল (গুটি, স্বর্ণা) কেজিপ্রতি ৪৮ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে জিরাশাইল ৭২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গত তিন দিন আগ থেকে চালের বাজার কিছুটা নিম্নমুখী বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) চালের দাম কমেছে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন বলেন, চালের সরবরাহ যথেষ্ট আছে। চালের দাম বাড়ার আশঙ্কা নেই এখন।