সংবাদ প্রকাশের জেরে তাণ্ডব থেকে বাদ, নায়িকা বললেন অপেশাদার আচরণ
Published: 13th, April 2025 GMT
সম্প্রতি অপেশাদার আচরণের মুখে পড়েছেন অভিনেত্রী নিদ্রা দে নেহা। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়ে জানিয়েছেন তিনি। যে স্ট্যাটাসে অভিনেত্রী অভিনয় ছাড়ারও ইঙ্গিত দিয়েছেন। সে ইঙ্গিতের সূত্র ধরে তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে নেহা জানান, অভিনয় ছাড়ার ঘোষণা নয়। পুরোপুরি পেশাদার না হলে তাদের সঙ্গে কাজ না করার ইঙ্গিতই দিয়েছেন তিনি। কাউকে বিষয়টি ভুল ব্যাখ্যা না করতেও অনুরোধ জানিয়েছেন।
কিছুদিন আগে তান্ডব সিনেমায় শাকিব খানের সঙ্গে কাজ করার খবর আসে তার। সে খবরটি প্রকাশের পরই সিনেমায় থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে তাকে। সিনেমাটিতে একদিনের শুটিংয়েও অংশ নিয়েছিলেন তিনি। এভাবে বাদ দেওয়াটাকে অপেশাদার আচরণ বলেই মন্তব্য অভিনেত্রীর।
নেহা বললেন, ছবিটির নাম আমি আর বলতে চাইছি না। একদিন শুটিংও করেছি। আমার বাবা ক্যানসারের রোগী। চিকিৎসার জন্য তাকে মুম্বাই নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাজটির জন্য আমি সব বাদ দিই। ফ্লাইটের টিকিট বাতিল করে তাদের মে পর্যন্ত টানা দুই মাসের ডেট দিই। ঈদের আগে একদিন শুটিংও করি। এরমধ্যে এক পত্রিকার রিপোর্টার আমার কাছে নতুন কাজ সম্পর্কে জানতে চাইলে ছবিটির কথা বলি। এরপর নিউজ হলো। আমাকে নায়িকা বানিয়ে দেওয়া হলো। আমি তখনও নিউজটি দেখিনি। কিন্তু ছবি সংশ্লিষ্টরা মনে করলেন আমি নিউজ করিয়েছি। আমার সঙ্গে চেচামেচি করলেন। আমি বললাম, করাইনি। এরপর যা ঘটার ঘটল।
নেহা বলেন, আমার কাজের সংখ্যা কম কিন্তু যেকটা করেছি সবগুলো গুণগত মানসম্পন্ন। একজন অভিনয়শিল্পী কেমন অভিনয় করে তার কাজই বলে দেয়। উদাহরণস্বরুপ ওয়েব সিরিজ ‘আধুনিক বাংলা হোটেল’-এর ‘হাসের সালুন’-র কথা বলি। সেখানে আমার চরিত্রের দৈর্ঘ্য কম। কিন্তু ১০ মিনিটের ওই কাজের জন্য বিদেশি গণমাধ্যমে পর্যন্ত আমাকে নিয়ে লেখালেখি হয়েছে।কোয়ালিটি না থাকলে তো তারা ডাকতেন না।
নেহার মত সিনেমার খবরটি জানালেও তাকে বাদ দেওয়ার মত কাজ তারা করতে পারেন না। এটা পুরোপুরি অপেশাদারিত্ব। কারণ তারা অফিসিয়ালি কখনও বলেনি বিষয়টি গোপন রাখতে। অভিনেত্রীর ভাষ্য, যদি আমি নিউজ করিও তবুও তো তারা আমার সঙ্গে এরকম করতে পারেন না। কেননা আমাকে তো বলা হয়নি যে নিউজ করা যাবে না। সাধারণত কাজের ক্ষেত্রে টিম যদি কোনোকিছু গোপন রাখার প্রয়োজন বোধ করে তবে আর্টিস্টের সঙ্গে বসে আলোচনা করে। কিন্তু আমাকে এ ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। চুক্তিপত্রে সাইন করার কথা ছিল। হয়তো সেখানে লেখা থাকত। কিন্তু তাড়াহুড়া করে কাজটি শুরু করা হয়। সাইন করার সময়টা-ই ছিল না। ঈদের পর চুক্তিপত্রে স্বাক্ষরের কথা ছিল। এছাড়া তাদের পক্ষ থেকে কেউ আমাকে কাজটির কথা গোপন রাখতে বলেওনি।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: নত ন স ন ম
এছাড়াও পড়ুন:
গোবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি
খাতার পেজ ছিড়ে ফেলা, মার্ক টেম্পারিংসহ বিভিন্ন অভিযোগ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী পালন করেছেন গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) অ্যানিম্যাল সাইন্স অ্যান্ড ভেটেনারি মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যানের হুর-ই-জান্নাত জ্যোতির পদত্যাগ ও বিচারের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ওই বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা।
অপরদিকে, মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) রাতে ওই বিভাগের সভাপতি ড. মোছা. হুর-ই-জান্নাতকে হেনস্তা কারার প্রতিবাদে ও প্রক্টর ড. আরিফুজ্জামান রাজীবকে তদন্ত কমিটি থেকে বহিষ্কারের দাবিতে বিক্ষোভ করেন আরেকদল শিক্ষার্থী।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বুধবার বেলা ১টার দিকে অ্যানিম্যাল সায়েন্স অ্যান্ড ভ্যাটেরিনারি মেডিসিন বিভাগের সভাপতি ড. মোছা. হুর-ই-জান্নাতের বিরুদ্ধে খাতার পেজ ছিড়ে ফেলা, মার্ক টেম্পারিংসহ বিভিন্ন অভিযোগে প্রশাসন ভবনের সমানে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন ওই বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা।
এ সময় ড. মোছা. হুর-ই-জান্নাতের পদত্যাগ ও বিচারের দাবিতে ‘আমার খাতার পেজ গেল কই?’, ‘মার্ক টেম্পারিং এর বিচার চাই’, ‘প্রশ্ন ফাঁসের বিচার চাই, প্রশাসন জবাব চাই’ ইত্যাদি স্লোগান সম্বলিত প্লাকার্ড প্রদর্শন করেন তারা।
পরে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হোসেন উদ্দিন শেখর ন্যায়বিচারের আশ্বাস দিলে তারা অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করেন।
এর আগে, মঙ্গলবার রাতে অ্যনিম্যাল সায়েন্স অ্যান্ড ভ্যাটেরিনারি মেডিসিন বিভাগের সভাপতি ড. মোছা. হুর-ই-জান্নাতকে হেনস্তা কারার প্রতিবাদে ও প্রক্টর ড. আরিফুজ্জামান রাজীবকে তদন্ত কমিটি থেকে বহিষ্কারের দাবিতে বিক্ষোভ করেন আরেকদল শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা।
এ সময় প্রক্টর ড. আরিফুজ্জামান রাজীকে তদন্ত কমিটি থেকে বহিষ্কারের দাবিতে বিভিন্ন ধরনের শ্লোগান দেন তারা। খবর পেয়ে শিক্ষক নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থলে এসে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করেন।
গত ২১ মার্চ ওই বিভাগের ১৫ জন শিক্ষার্থী উপাচার্য বরাবর ওই বিভাগের সভাপতি ড. মোছা. হুর-ই-জান্নাতের বিরুদ্ধে অশোভন আচরণ, মানসিক হেনস্তা এবং পছন্দের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র দেওয়ার প্রমাণসহ লিখিত অভিযোগ করেন।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন আনিসুর রহমানকে সভাপতি ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এসএম গোলাম হায়দারকে সদস্য সচিব করে সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, কৃষি অনুসদের ডিম জুলহাস আহমেদ জুয়েল, প্রক্টর আরিফুজ্জামান রাজিব, ছাত্র উপদেষ্টা মো. বদরুল ইসলাম, আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মানসুরা খানম, কৃষি বিজ্ঞান বিভাগের সরকারি অধ্যাপক আরিফুল ইসলাম। এই কমিটি পাঁচটি বৈঠক সম্পন্ন করেছেন। এর মধ্যে সোমবার (২৮ এপ্রিল) সর্বশেষ বৈঠক করেছেন তারা।
সোমবার তদন্ত কমিটির সভায় অ্যানিম্যাল সায়েন্স অ্যান্ড ভ্যাটেরিনারি মেডিসিন বিভাগের সভাপতি ড. মোছা. হুর-ই-জান্নাতকে তদন্ত কমিটির সদস্য ও প্রক্টর ড. আরিফুজ্জামান রাজীব হেনস্তা করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় উপাচার্য বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন ড. মোছা. হুর-ই-জান্নাত।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অ্যানিম্যাল সাইন্স এন্ড ভেটেনারি মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান হুর-ই-জান্নাত জ্যোতি শিক্ষার্থীদের সাথে অশোভন আচরণ, পরীক্ষার উত্তরপত্রের ভেতর থেকে চার থেকে পাঁচটি পৃষ্ঠা ছিঁড়ে সাদা কাগজ ঢুকিয়ে দেওয়া, অন্য কোর্সের শিক্ষকদের থেকে মার্ক না নিয়ে নিজের ইচ্ছা মত ফলাফল প্রকাশ, পরীক্ষার আগে পছন্দের শিক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছেন। এসব অভিযোগের প্রমাণ তাদের কাছে রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, অ্যানিম্যাল সাইন্স অ্যান্ড ভেটেনারি মেডিসিন বিভাগের সহকারি অধ্যাপক মার্জিয়া আফরোজকে প্রোটোজ্যুলজি ও টক্সিকোলজি কোর্সের পরীক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি ওই কোর্স দুইটির কয়েকটি উত্তরপত্রের মধ্যে পেজ ছেড়া পান। দ্বিতীয় পরীক্ষা হিসেবে ওই শিক্ষক লার্জ অ্যানিম্যাল মেডিসিন ও ডেইরি কেমিস্ট্রিয়ান মাইক্রোবায়োলজি কোর্সের কয়েকটি উত্তরপত্র মধ্যে চারটি করে পেজ ছেড়া দেখতে পান। এ বিষয়ে আরজে আফরোজ উপাচার্য বরাবর লিখিতভাবে জানান।
অবস্থানরত চতুর্থ বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী মহিন হোসেন বলেন, “পরীক্ষার আগে হুর-ই-জান্নাতি ম্যাম বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে প্রশ্ন দেন। ওই শিক্ষার্থী একই বিভাগের তার এক বন্ধুকে মেসেঞ্জারে পাঠায়। পরে তার বন্ধুর সঙ্গে মনমালিন্য হলে সে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের কাছে সেটা প্রকাশ করে। যে প্রশ্নপত্র তাদের দিয়েছে, পরীক্ষার হলে দেখা সরবরাহ করা প্রশ্নপত্রের সঙ্গে হুবহু মিল। এছাড়া ম্যাম তার কাছের কয়েকজন শিক্ষার্থী ছাড়া অন্য সকলের সঙ্গে অশোভন আচরণ করে।”
তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ করলে তিনি আমাদের ডেকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেন। বিভাগের অভিযোগের মাধ্যমে জানতে পারলাম, আমাদের কয়েকজনের উত্তরপত্রের চারটি পেজ ছেড়া। এমনকি আমাদের এক শিক্ষার্থী শূন্য পেয়েও চূড়ান্ত পরীক্ষায় এ প্লাস পেয়েছে। এটা কি করে সম্ভব? আমরা চেয়ারম্যান ম্যামের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি এবং আমাদের বিরুদ্ধে যে অন্যায় করা হয়েছে, তার উপযুক্ত বিচার চাই।”
শিক্ষার্থী সাগর রায় বলেন, “আমাদের এক শিক্ষক ইনকোর্স, মিডটার্মসহ সব পরীক্ষা নিয়েছেন। ওই শিক্ষকের কোনো ফলাফল না নিয়েই চেয়ারম্যান ম্যাডাম তার স্বাক্ষর নকল করে পরীক্ষক নিয়ন্ত্রণ দপ্তরে ফলাফল জমা দিয়েছেন। আমরা ওই শিক্ষকের কাছেই জানতে পেরেছি, তিনি ফলাফল জমা দেননি।”
হেনস্তার অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কমিটির সদস্য প্রক্টর ড. আরিফুজ্জামান রাজীব বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হোসেন উদ্দিন শেখর বলেন, “একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। তবে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আমার কাছে আসেনি। রিপোর্ট আসার পরে আমরা দেখব এবং সিদ্ধান্ত নেব। অভিযোগ মিথ্যা না সত্য, এটা তদন্ত কমিটির মাধ্যমে জানতে হবে “
তিনি বলেন, “সাইন্স অ্যান্ড ভেটেনারি মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান বলেছেন, কমিটি পূর্ণ গঠন করার জন্য। সে বিষয়টিও আমরা দেখছি। আমরা আশা করছি, সত্য বের হয়ে আসবে।”
ঢাকা/বাদল/মেহেদী