আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের এমডি ও দুই ডিএমডিসহ চার কর্মকর্তা বাধ্যতামূলক ছুটিতে
Published: 13th, April 2025 GMT
ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং বিভাগের অর্থ তছরুপ করার অভিযোগে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফরমান আর চৌধুরী, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) ও প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) মোহাম্মদ নাদিমসহ চার কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। অপর দুই কর্মকর্তা হলেন ব্যাংকটির ডিএমডি ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের প্রধান আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া ও ট্রেজারি বিভাগের প্রধান মো.
আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান খাজা শাহরিয়ারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পর্ষদ সভায় উপস্থিত ছিলেন পরিচালক মো. শাহীন উল ইসলাম, মো. আব্দুল ওয়াদুদ, এম আবু ইউসুফ ও মোহাম্মদ আশরাফুল হাসান।
পর্ষদ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে ব্যাংকটির এজেন্ট ব্যাংকিং বিভাগের অর্থ তছরুপ করার ঘটনা ধরা পড়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে জড়িত ও সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি আরও অধিকতর তদন্তের জন্য জড়িত কর্মকর্তাদের ছুটিতে পাঠানোর জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী পর্ষদ সভায় এমডিসহ দুই ডিএমডি ও ট্রেজারি বিভাগের প্রধানকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়।
এ নিয়ে জানতে ব্যাংকটির এমডিসহ অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের ফোন করা হলেও তাঁরা কেউ সাড়া দেননি।
এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে উঠে আসে ব্যাংক থেকে প্রণোদনা বোনাসের নামে অতিরিক্ত টাকা নেন এমডি ফরমান আর চৌধুরী ও ডিএমডি মোহাম্মদ নাদিম। এরপর তাঁরা দুজন মিলে প্রায় ৫৪ লাখ টাকা অবশ্য ব্যাংককে ফেরত দেন।
গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে ব্যাংকটি বিতর্কিত ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সাইফুল আলমের (এস আলম) নিয়ন্ত্রণে ছিল। সরকার পরিবর্তনের পর ব্যাংকটিতে স্বতন্ত্র পরিচালকদের দায়িত্ব দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর তাঁদের ও বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে ব্যাংকটিতে নিরীক্ষা শুরু হয়। এরই মধ্যে ব্যাংকটির শীর্ষ দুই কর্মকর্তা টাকা ফেরত দেন।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে ব্যাংকটির নানা অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে। ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও এস আলমের ভাই আবদুস সামাদ লাবুর ব্যক্তিগত সচিব মোহাম্মদ পিয়ারুর হিসাবে দেড় কোটি টাকা পাওয়া গেছে। তাঁকে প্রতিবছর পদোন্নতি দেওয়ার পাশাপাশি এক বছরে ৯ বার বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে তাঁকে বরখাস্ত করেছে ব্যাংকটি।
এ ছাড়া ব্যাংকটির সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলের (সিএসআর) প্রায় ১০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ লাবু। গত বছরের জাতীয় নির্বাচনের ঠিক আগে এই অর্থ তুলে নেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে উঠে আসে, ব্যাংকটির গুলশান শাখায় আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের নামে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে একটি চলতি হিসাব খোলা হয়। ২০২৪ সালের ১৮ জানুয়ারি ১০ কোটি টাকা লেনদেন শেষে হিসাবটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফাউন্ডেশনের নামে হিসাব খোলার ক্ষেত্রে পর্ষদের কোনো ধরনের কোনো অনুমতি ছিল না।
পরিদর্শনে এসেছে, এই হিসাবে ২০২৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর ৫ কোটি টাকা ও ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি ৫ কোটি টাকা জমা করা হয়। এরপর ২৬ ডিসেম্বর তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ লাবুর গাড়িচালক মো. রিপন ৩টি চেকের মাধ্যমে ২ কোটি টাকা তুলে দেন। ২৭ ডিসেম্বর এক কোটি টাকা উত্তোলন করেন আবদুস সামাদ লাবুর ব্যক্তিগত সচিব মোহাম্মদ পিয়ারু। ২ কোটি টাকা খাতুনগঞ্জ শাখার কর্মকর্তারা তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ লাবুর অফিসে গিয়ে দিয়ে আসেন। বাকি টাকা বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকটির খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে উত্তোলন করেন চেয়ারম্যানের গাড়িচালক ও পিএস।
এ নিয়ে ব্যাংকটির বর্তমান চেয়ারম্যান খাজা শাহরিয়ারের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ব্যাংকটির পরিচালক এম আবু ইউসুফ প্রথম আলোকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে বিভিন্ন অনিয়ম ধরা পড়েছে। অধিকতর তদন্তের স্বার্থে এমডিসহ চার কর্মকর্তাকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন আবদ স স ম দ ল ব আবদ স স ম দ ল ব র র কর মকর ত ম হ ম মদ ড স ম বর ব যবস ড এমড ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
রাবিপ্রবির ১০ শিক্ষার্থীর সনদ-ছাত্রত্ব বাতিল
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে কোটাবিরোধী আন্দোলনকালে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার, র্যাগিংসহ নানা অভিযোগ এনে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল এমন ১০ শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কার, ছাত্রত্ব ও সনদপত্র বাতিল করেছে রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বহিষ্কৃতরা হলেন, বিশ্বজিৎ শীল, সাইদুজ্জামান পাপ্পু, জাহাঙ্গীর আলম অপু, মহিউদ্দিন মুন্না, হাসু দেওয়ান, আকিব মাহমুদ, আবির, অন্তু কান্তি দে, জাকির হোসেন ও রিয়াদ।
বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসি ড. আতিয়ার রহমান জানিয়েছেন, ১০ শিক্ষার্থীর মধ্যে যাদের শিক্ষাজীবন শেষ হয়েছে, তাদের সনদপত্র বাতিল করা হয়েছে। যারা এখনো অধ্যয়নরত তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
ছাত্রলীগের বিচারসহ ৯ দাবি জবি ছাত্রদলের
রাবিতে প্রভাষক হলেন জাসদ ছাত্রলীগ নেতা, ক্ষোভ
ভিসি আরো জানান, ২০২৪ সালের কোটাবিরোধী আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারসহ নানান অভিযোগে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়, যা সর্বশেষ রিজেন্ট বোর্ডের সভায় অনুমোদিত হয়েছে। গত পরশু তাদের ঠিকানায় চিঠি পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
বহিষ্কৃত ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী আকিব মাহমুদ বলেন, ‘‘জুলাই-আগস্ট মাসে এমন কোনো ঘটনা ক্যাম্পাসে ঘটেনি, যে কারণে আমাদের বহিষ্কার করা হতে পারে। ক্যাম্পাসে কোটা প্রত্যাহার দাবিতে একদিন বৈষম্যবিরোধী ব্যানারে প্রোগ্রাম হয়েছে, সেদিনও কিছু হয়নি। আমরা সম্পূর্ণভাবে ভিসি ও ছাত্রদল-শিবিরের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। একদিন নিশ্চয়ই এই অবিচারের বিচারও হবে।’’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘‘কিছু শিক্ষার্থীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে রিজেন্ট বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমাদের কিছু বলার নেই। শুধু জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের ঘটনাই নয়, অন্যান্য রাজনৈতিক ঘটনাও আছে অভিযোগে। তারই প্রেক্ষিতে তদন্ত শেষে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।’’
২০১৫ সালে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করা রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন পর্যন্ত কমিটি দেয়নি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। তবে বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের ব্যানারে নানান কর্মসূচি পালন করতে দেখা যেত। বহিষ্কৃত ও সনদ বাতিল হওয়া শিক্ষার্থীদের বেশ কয়েকজন ৫ আগস্টের আগে শিক্ষাজীবন শেষ করেন। গ্রেপ্তার হয়ে বেশ কিছু দিন কারাবরণ শেষে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে দেশ ছেড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি করা বহিষ্কৃত ১০ জনের একজন বিশ্বজিৎ শীল।
ঢাকা/শংকর/বকুল