মোফাজ্জল করিম
তোমাকেই পেতে চাই
আমি তোমাকেই পেতে চাই, পেতে চাই তোমাকে, যে তুমি
বৃষ্টিস্নাত নীপবন থেকে ভেসে আসা সুরভির গান
প্রাণিত পায়রার চোখে প্রভাতের ভৈরোঁ আলাপ
যে তুমি মধ্যরাতে দূরাগত বাঁশিটির বিরহ বিলাপ,
আমি তোমাকেই পেতে চাই, যেমন নবীন মেঘ
পেতে চায় সবুজ ঘাসের স্পর্শজড়ানো আবেগ।
আমার রক্তের মাঝে কেবলি তোমার পদধ্বনি শুনি
যেমন খরার মাস দীর্ঘশ্বাস ফেলে শোনে প্লাবনের ডাক,
আমার চেতনাজুড়ে উড়ে উড়ে পাখিদের ঝাঁক
আগমনী গায় আর আমি শুধু বসে বসে কাল গুনি
কখন আসবে তুমি, প্রতীক্ষায় কাটে না প্রহর—
সেতারের তার হয়ে জেগে থাকে নিদাঘ-অন্তর।
তোমাকেই পেতে চাই, বেঁচে থাকা এই অজুহাতে,
তা না হলে বৃথা কাব্য লেখালেখি এ বিনিদ্র রাতে।
ফারুক মাহমুদ
ভিড়
থোকা থোকা ভিড় ফুটে আছে
কোনো ভিড় হয়ে ওঠা যথেষ্ট রঙিন
কোনো ভিড় মানুষের ছোট ছোট ঢেউ
কোনো ভিড় যেতে যেতে অন্য ভিড়ে মেশে
কোনো ভিড় নিজে নিজে সামান্য বাঁকানো
কোনো ভিড় ঝরে যায়, পুনর্বার নতুন পোশাক
কোনো ভিড় অহেতুক ভিড় ধরে রাখে
কোনো ভিড় স্মৃতিপণ্য, স্মৃতিদৃশ্য, কাঁচামিঠে সুর
কোনো ভিড় যেতে যেতে গভীর তাকায়
ভিড়ের সমষ্টি হলো আমাদের চিরায়ত লোকজ হৃদয়।
টোকন ঠাকুর
কবি না কবর
কবিতা নয়, কবর রচিত হয়
ভালোবাসা মরে গেলে সেই মরা রাখব কোথায়?
কবিতায় কি তাকে আদ্যোপান্ত সৎকার সম্ভব?
নাকি শেষ পর্যন্ত কবিতাই কবর হয়ে ওঠে
ভালোবাসার? কবরখানার নীরবতাকে আমি
কিসের সঙ্গে তুলনা করতে পারি—যেখানে
সারা রাত পাহারা করে বোধিপ্রাপ্ত চাঁদ ও নক্ষত্র!
চৈত্রসংক্রান্তির হাওয়া এসে লাগে। বুকের
মধ্যে ঘূর্ণি, স্বপ্ন ভেঙে কম্পমান, ইনভিজিবল
ঝড়! পুড়তে পুড়তে, উড়তে উড়তে আমি
তুচ্ছাতিতুচ্ছ, খড়—
এই পর্যন্ত লিখে, দেখি—
হরিণীর নাভি থেকে শীতকাল উড়ে যায় গ্রীষ্মের দিকে—
কী তোমার বেশি পছন্দ, কবিতা না কবরটিকে?
ফেরদৌস মাহমুদ
মেঘের ভেতর সিনেমা
মেঘে এক সিনেমা লোড হচ্ছে, আমি তাকিয়ে আছি—
বাফারিং চলে—থেমে যায়—আবার শুরু হয়।
স্ক্রিনে ভেসে ওঠে কিছু অসম্পূর্ণ পিক্সেল:
একটা পাখি উড়ে যায় ড্রোন হয়ে,
একটা নদী থেমে থাকে ভার্চ্যুয়াল ল্যান্ডস্কেপে,
একটা মানুষ হাসে এআই জেনারেটেড ইমোজি দিয়ে,
আর একটা শিশু কাঁদে মেটাভার্সের কোণে।
আমি অপেক্ষা করি, কখন শেষ হবে বাফারিং,
কখন পুরো ছবিটা দেখতে পাব।
কিন্তু বাফারিং থামে না, ছবিটা অসম্পূর্ণই থেকে যায়
হ্যাশট্যাগ আর লাইকের ভিড়ে।
ভাবছি, ছবিটা কি আমার ডিজিটাল লাইফ?
নাকি শুধু একটা অটোপ্লে লুপ,
যেখানে বাফারিং কখনো থামে না—
ছবিটা কখনো শেষ হয় না,
শুধু স্ক্রলে চলে যায় অনন্তের দিকে।
রওশন আরা মুক্তা
গ্রিন ডেলটা
কয়েক দিনের জন্য এক ছটাক আঙুর খাওয়ার
আইন থেকে মুক্তি পেল রাজধানীবাসী।
দেশের প্রধান ফল বিকিয়ে প্রতিষ্ঠানের
গদিওয়ালা তা-ই জানিয়েছে। দেশের
ফলখেকো জানোয়ারগুলো আপন ভাইয়ের
মাংস চাবাইতেছে, আপন ভাইয়ের চামড়া
ছাড়ায়া লবণ মাখায়া পাঠায়া দিচ্ছে
জমিদারবাড়ি। বাবুরবাড়ির কুয়ার ভেতরে
অনেক চিৎকার। বাবুরবাড়ির বিড়াল-গলায়
ঘণ্টা পরানো রয়েল বেঙ্গল টাইগার!
নাহিদ ধ্রুব
প্রবহমান
তুমুল রোদের দিন। হুডখোলা রিকশায়
পাশাপাশি বসে ছিল, আমাদের প্রিয়জন
আমরা গিয়েছি দূরে—যত দূর চোখ যায়,
শহরের অলিগলি হয়ে যাচ্ছিল বন
এমন বৈশাখী দিন, ছিল দুজনার মনে—
তুমি পরেছিলে যেন—সাদা শাড়ি, লাল পাড়
লিলুয়া বাতাস ছিল কোথাও সঙ্গোপনে—
খোলা চুলে বসেছিল, পাখিদের দরবার
তুমি হেসে বলেছিলে, এমন দিনের কথা—
দুজনের মাঝে কারও ভুলে যেতে হয় যদি
বিদ্রূপ করে যদি একদিন নীরবতা,
তখন আমরা যেন ভেসে ভেসে হই নদী
যে নদীর তীরে বসে, সে-ই বিকেলের মতো
ভুলে যাওয়া যায় সব জাগতিক পিছুটান—
যে নদীর কাছে গেলে, মনে হবে অন্তত
আমাদের ভালোবাসা, এখনো প্রবহমান।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মিরাজে দুর্দান্ত জয় বাংলাদেশের
এমন পারফরম্যান্সই তো চাওয়ার থাকে ভালো দলের কাছে। মেহেদী হাসান মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্য, সাদমান ইসলামের সেঞ্চুরি, তাইজুল ইসলামের ৯ উইকেট শিকারে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংস ও ১০৬ রানের বিশাল জয় এনে দেয় বাংলাদেশকে। প্রথম টেস্ট হারের পর যে সমালোচনা হয়েছিল, তার জবাবটা বোধ হয় দ্বিতীয় টেস্ট তিন দিনে জিতে দিয়ে দিলেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। ‘বাউন্স ব্যাক’ করে সিরিজ ড্র ১-১-এ।
চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে বীরোচিত পারফরম্যান্স ছিল টাইগারদের। এটি সম্ভব হয়েছে পছন্দের উইকেটে খেলা হওয়ায়। স্পিন ভুবনে উইকেট উৎসব করেছেন তাইজুল, মিরাজ গাঁটছড়া বেঁধে। সিরিজ নির্ধারণী টেস্টে দুটি সেঞ্চুরি দারুণ অর্জন অধারাবাহিক ব্যাটিং লাইনআপের। এই টেস্টে ওপেনিং জুটি ভালো করেছে। লম্বা সময় পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া এনামুল হক বিজয় ভালোই সঙ্গ দেন সাদমানকে। লোয়ার মিডলঅর্ডারে মিরাজের লড়াই ছিল দেখার মতো।
টেলএন্ডারদের নিয়ে রীতিমতো বাজিমাত করেছেন তিনি। শেষ ৩ উইকেটে তৃতীয় দিন ১৫৩ রান যোগ করেন। বাংলাদেশকে পৌঁছে দেন ৪৪৪ রানে। ২১৭ রানের লিড থাকায় ইনিংস ব্যবধানে জয়ের স্বপ্ন দেখায়। মিরাজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সে স্বপ্ন পূরণ হয়। সাকিব আল হাসান ও সোহাগ গাজীর পর তৃতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার তাঁর।
গত বছর দেশের মাটিতে টেস্টে ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার পর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। ২০২৫ সালের শুরুটাও ভালো ছিল না। সিলেটে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছে। সিরিজ বাঁচাতে চট্টগ্রামে জিততেই হতো। লক্ষ্যে পৌঁছাতে কন্ডিশনেও পরিবর্তন আনা হয়। চট্টগ্রামের উইকেটে খেলা হয় দ্বিতীয় টেস্ট। যেখানে শাসন ছিল স্পিনারদের। পছন্দের উইকেট পাওয়ায় তিন স্পিনার নিয়ে খেলে বাংলাদেশ। তিনজনই দারুণ বোলিং করেন প্রথম থেকে।
দীর্ঘ বিরতির পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া অফস্পিনার নাঈম হাসান চ্যালেঞ্জ নিয়ে বোলিং করে গেছেন। বেশি উইকেট না পেলেও এক প্রান্তে ব্যাটারদের চাপে ফেলেছেন। যার সুফল তাইজুল ও মিরাজ পেয়েছেন অন্য প্রান্তে। প্রথম দিন শেষ সেশনে ব্রেক থ্রু দেন তিনি। বাঁহাতি স্পিনার পরে পিক করে ৬ উইকেট শিকার করেন। জিম্বাবুয়ে ৯ উইকেটে ২২৭ রানে প্রথম দিন শেষ করে। পরের দিন এক বল খেলে ওই রানেই অলআউট হয়। বাংলাদেশ ব্যাটিং শুরু করে বড় লক্ষ্য নিয়ে। সাদমান ইসলাম ও এনামুল হক বিজয় ১১৮ রানের ওপেনিং জুটি করায় প্রতিপক্ষকে ছাড়িয়ে যাওয়া সহজ হয়। সাদমানের সেঞ্চুরি ও মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম কিছু রান করায় ৭ উইকেটে ২৯১ রানে দ্বিতীয় দিন শেষ করে বাংলাদেশ।
সেদিন সংবাদ সম্মেলনে সাদমান আশা প্রকাশ করেন, মিরাজ ও তাইজুল জুটি করবেন। অষ্টম উইকেটে ৬৪ রানের জুটি দু’জনের। বেশি ভালো করেছেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব। মিরাজের সঙ্গে ১৫৬ বলে ৯৬ রানের জুটি। অভিষেক টেস্টে সাকিবের ব্যাটিং দারুণ লেগেছে অধিনায়ক শান্তর কাছে। ৮০ বলে ৪১ রান করেন তিনি। সবচেয়ে বড় কথা, মাথায় বল লাগার পরও বিচলিত হননি তিনি। মিরাজ ছাড়া চট্টগ্রাম টেস্টের প্রাপ্তি হিসেবে ওপেনিং জুটির ভালো খেলা, সাদমানের সেঞ্চুরি, তাইজুলের ৫ উইকেট শিকার ও সাকিবের রান করাকে মনে করেন শান্ত।
শেষের তিন উইকেটে তৃতীয় দিন প্রায় দুই সেশন ব্যাট করে বাংলাদেশ। তাইজুল, সাকিব ও হাসানকে নিয়ে ১৫৩ রান যোগ করে। মিরাজ ১০৪ রান করে ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে উইকেট দেন। নার্ভাস নাইটির ঘরে প্রবেশ করে কিছুটা ঝুঁকির মুখে ছিলেন মিরাজ। ৯৮ রানে পৌঁছানোর পর সেঞ্চুরি ছুঁতে দুই রান নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফিল্ডারের কাছে বল চলে যাওয়ায় এক রানে থামতে হয়। তখন স্ট্রাইকে হাসান থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল সবাই। ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের সবাই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। কখন হাসান আউট হয়ে যায়, সে ভয় কাজ করছিল হয়তো। কিন্তু হাসান ছিলেন দৃঢ়চেতা। মাসাকাদজাকে ডিফেন্স করে স্বস্তি দেন।
মিরাজ স্ট্রাইকে এসে মেদেভেরের প্রথম দুই বলে ঝুঁকি নেননি। তৃতীয় বলে এক রান নিয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরির স্বাদ নেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ ও দ্বিতীয় টেস্টের সেরা খেলোয়াড় মিরাজ। প্রথম ম্যাচের উভয় ইনিংসে ৫ উইকেট করে ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে অতীতের সব পারফরম্যান্স ছাড়িয়ে গেছেন। সেঞ্চুরির সঙ্গে ৫ উইকেটপ্রাপ্তি, দুই হাজার রানের মাইলফলক পেয়েছেন। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। ২১৭ রানে পিছিয়ে থাকা জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয় ১১১ রানে। ফ্লাডলাইটের আলো জ্বেলে নির্ধারিত সময়ের বেশি খেলান আম্পায়াররা। প্রায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খেলা হয়। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটাররা তাতে আপত্তি করেননি। তাইজুল ৩, নাঈম ১ ও মিরাজ ৫ উইকেট নিলে ম্যাচ শেষ হয়।
সিলেটে প্রথম টেস্ট হারের পর চট্টগ্রামে প্রভাব বিস্তার করে খেলে ম্যাচ জেতার পরও খুশি নন অধিনায়ক শান্ত, ‘আমি টেস্ট সিরিজ ড্র করে খুশি না। কারণ, প্রথম টেস্টে আমরা একেবারেই ভালো খেলিনি। এই টেস্টে একপেশে খেলে জিতলেও সিরিজে আরও ভালো খেলা উচিত ছিল। সিরিজটি জিততে হতো।’ টাইগার দলপতি জানান, এই পারফরম্যান্স শ্রীলঙ্কা সফরে কাজে দেবে। দেশের মাটিতে স্পোর্টিং উইকেট বানিয়ে বিদেশে খেলার পরিবেশ তৈরি করছিল বিসিবি। ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হচ্ছে। কিউইদের বিপক্ষে সিলেটে ঐতিহাসিক জয় পেলেও মিরপুর থেকে হারতে শুরু করে। দেশের মাটিতে টানা ছয় হারের পর জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ।