নতুন বছরে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হোক: এ বি পার্টি
Published: 14th, April 2025 GMT
নতুন বছরে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হোক, সেই প্রত্যাশা জানিয়েছেন আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান (মঞ্জু)। তিনি বলেছেন, কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে একধরনের সংশয় কাজ করছে। অনেকে মনে করছে অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন না দিয়ে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকতে চাইছে। কিন্তু সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে এ ধরনের কোনো বক্তব্য তাঁরা পাননি। কাজেই এখন ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিতে হবে।
আজ সোমবার বাংলা নববর্ষ ১৪৩২–এর প্রথম দিন পয়লা বৈশাখে রাজধানীতে বর্ষবরণ শোভাযাত্রা করেছে এবি পার্টি। শোভাযাত্রার আগে আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে দলের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান আরও বলেন, বাংলা নববর্ষ বাঙালির প্রাণের উৎসব। ফ্যাসিবাদী অপশক্তি বাঙালি জাতিসত্তাবিরোধী নানা অনুষঙ্গ যুক্ত করে এত দিন গণমানুষের ঐক্য বিনষ্ট করে নানা বিভক্তি তৈরি করে রেখেছিল। দীর্ঘ সময় বাংলা নববর্ষ ধর্মীয় বিভক্তি, বাঙালি–বাংলাদেশি বিভক্তি, ধর্মনিরপেক্ষতার বিভক্তি নিয়ে আটকে ছিল। মনে রাখতে হবে জাতি–ধর্ম–বর্ণনির্বিশেষে সবাই এই মাটির সন্তান। এই মাটির সব সংস্কৃতিই ধারণ করে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে হবে।
‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ প্রতিপাদ্য নিয়ে এবি পার্টি পয়লা বৈশাখ উদ্যাপন করেছে। তাদের শোভাযাত্রা উদ্বোধন করেন একুশে পদকপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সুকোমল বড়ুয়া। এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অভিনেত্রী ও শিল্পী আরজুমান্দ আরা বকুল। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন এবি পার্টির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.
শোভাযাত্রার উদ্বোধন ঘোষণা করে সুকোমল বড়ুয়া বলেন, ‘এবি পার্টি আমার দেহ ও মনোজগতের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন বাস্তবায়ন এবি পার্টির পক্ষেই সম্ভব। সব ধরনের সংস্কৃতিকেই এবি পার্টি ধারণ করে। রাষ্ট্রযন্ত্র বিনির্মাণে এখন এবি পার্টির প্রয়োজন অনস্বীকার্য।’
অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া আরও বলেন, আজকে নববর্ষের যাত্রার দিন, অতীতের জরাজীর্ণতা ছাড়িয়ে নতুনের যাত্রা—এসব স্মৃতি নিয়েই আমাদের নতুন বাংলাদেশ। আগামীর নতুন স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করতেই নববর্ষের যাত্রা। তরুণের আগমন ঘটিয়ে নতুন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বাংলা নববর্ষ পুরোনোকে বিদায় করে নতুনে অবগাহন করার দিন উল্লেখ করে অভিনেত্রী আরজুমান্দ আরা বকুল বলেন, ‘আজকে সাজানোর দিন, ঘর সাজাব, মন সাজাব, সর্বোপরি আমরা দেশকে সাজাব। যা কিছু চিরসুন্দর, তার সঙ্গেই যেন আমরা সবাই থাকি।’
এবি যুব পার্টির সদস্যসচিব হাদিউজ্জামান খোকনের সঞ্চালনায় এই আয়োজনে দলের নেতা বি এম নাজমুল হক, আবদুল্লাহ আল মামুন রানা, আনোয়ার সাদাত টুটুল, এ বি এম খালিদ হাসান, আলতাফ হোসাইন, শাহাদাতুল্লাহ টুটুল, ছাত্রপক্ষের আহ্বায়ক মোহাম্মদ প্রিন্সসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা–কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ভালো ফলনের আশায় গাছকে খাওয়ান তাঁরা
চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাহাড়ি প্রদেশ গুইঝৌতে প্রাচীনকাল থেকে ‘গেলাও’ জনগোষ্ঠীর বসবাস। ভিয়েতনামেও এই জনগোষ্ঠীর মানুষ বাস করেন। চীনে তাঁদের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ ৭৭ হাজার।
কৃষিনির্ভর গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা আজও প্রাচীনকালের পুরোনো এক ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন। বছরের নির্দিষ্ট দিনে তাঁরা গাছকে খাওয়ান, যা চীনা ভাষায় ‘ওয়েই শু’ রীতি নামে পরিচিত।
এই প্রাচীন রীতি মূলত একধরনের প্রার্থনা। স্থানীয় অধিবাসীদের বিশ্বাস, এতে প্রকৃতি তুষ্ট হয়, ফসল ভালো হয়, পরিবারে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে। প্রতিবছর দুটি উৎসবের সময় এই অনুষ্ঠান পালন করা হয়—চীনা নববর্ষে, যা বসন্ত উৎসব নামে পরিচিত। আর গেলাও নববর্ষে, যা চান্দ্র পঞ্জিকার তৃতীয় মাসের তৃতীয় দিনে পালিত হয়।
অনুষ্ঠানের দিন সকালে আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসী পাহাড়ের ঢালে জড়ো হন। তাঁরা সঙ্গে করে চাল থেকে তৈরি মদ, শূকরের মাংস, মাছ ও লাল আঠালো চাল নিয়ে আসেন। পাহাড়ে পৌঁছে প্রথমে আতশবাজি পোড়ানো হয়। এতে করে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
এর মধ্যেই একটি পুরোনো ও শক্তিশালী গাছ বাছাই করা হয়। এরপর সবাই ধূপ জ্বালিয়ে নতজানু হয়ে প্রার্থনা করেন। সবশেষে মূল পর্ব ‘গাছকে খাওয়ানো’ শুরু হয়।
একজন কুঠার বা ছুরি দিয়ে গাছে তিনটি জায়গায় ছোট করে কেটে দেন। সেই ক্ষতস্থানে চাল, মাংস ও মদ ঢেলে দেওয়া হয়, যাতে গাছ তাঁদের দেওয়া ভোগ গ্রহণ করতে পারে। পরে ওই জায়গা লাল কাগজে মুড়ে দেওয়া হয়।
এ ছাড়া গাছের গোড়া ঘিরে আগাছা পরিষ্কার করা হয়, মাটি আলগা করে দেওয়া হয়। এতে নতুন জীবনের বার্তা মেলে বলে মনে করেন গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা।
যে গাছকে খাওয়ানো হয়, সেটি যদি ফলদ হয়, তাহলে ভোগ দানকারীরা একটি আশাব্যঞ্জক শ্লোক উচ্চারণ করেন। বলেন, ‘তোমায় চাল খাওয়াই, ফল দিয়ো গুচ্ছ গুচ্ছ; তোমায় মাংস খাওয়াই, ফল দিয়ো দলা দলা।’