মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, ‘প্রাচীন ঐতিহ্যের ধারা বাঙালি সংস্কৃতির ধারায় গৃহীত হয়েছে। এই বাংলাদেশ একটি মিশ্রিত সংস্কৃতির দেশ, তা আমরা ভুলে যাই।’

শারমীন এস মুরশিদ বলেন, ‘আমাদের ব্যাপকত্ব, আমাদের উদারতা, আমাদের মিশ্র সংস্কৃতিকে যদি আমরা চেতনায় জায়গা দিই, তাহলে আমরা অনেক সমৃদ্ধ হই।’

আজ সোমবার রাজধানীর গুলশানে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন পার্কে আয়োজিত নববর্ষের উৎসবে ‘সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ এবং জনপরিসরে নারীর উপস্থিতি’ শীর্ষক ‘ভাবালাপে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথাগুলো বলেন। গুলশান সোসাইটি ও ‘অলিগলি বন্ধু’ দুই দিনব্যাপী এ উৎসবের আয়োজন করে।

বাঙালি জাতির অস্তিত্বের ইতিহাস তুলে ধরে শারমীন এস মুরশিদ বলেন, ‘আমি যে শুধু বাঙালি নই, আমি যে শুধু মুসলমান নই, আমি যে একটি সংমিশ্রিত মানুষ, আমি যে ব্যাপক—এই কথা খুব বেশি জাতি কিন্তু বলতে পারে না, কম জাতিই বলার সুযোগ পায়। আমরা বাঙালি, আমরা মুসলমান—এটাকে মুখোমুখি করা হয়েছে, এটা আলাদা নয়। আমরা চাই, আরও বেশি উৎসব হোক, পাড়ায় পাড়ায় উৎসব হোক।’

উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ জানি না, কিন্তু একটি রাষ্ট্রের ইতিহাসে এমন কতগুলো মুহূর্ত আসে, যখন আমরা জাতীয় ঐক্যের জায়গায় পদার্পণ করি। আমাদের জাতীয় সংগ্রামের ফল ১৯৭১, আর আমাদের পয়লা বৈশাখের শিকড় গ্রামীণ অর্থনীতি।’

বাংলা নববর্ষের ইতিহাস তুলে ধরে শারমীন এস মুরশিদ বলেন, আকবর সৌরবর্ষ ও চন্দ্রবর্ষকে একসঙ্গে করেছেন অর্থনৈতিক কারণে। কারণ, এ সময়ে কৃষকের হাতে পয়সা থাকে, ফলে শুল্ক আদায় সহজ হয়।

শিশু ও নারীদের ওপর অত্যাচার বন্ধে তাঁর মন্ত্রণালয় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছাতে কাজ করে জানিয়ে শারমীন এস মুরশিদ বলেন, এসব প্রতিরোধে কাজ করতে হবে, সামাজিকভাবে এসব প্রতিরোধ করতে হবে, প্রতিটি গ্রামে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এই উপদেষ্টা বলেন, এসব অপরাধ যারা করছে, তাৎক্ষণিকভাবে তাদের প্রতিরোধ করতে হবে, যারা এসবের সঙ্গ জড়িত, তারা পুরুষ নই, তারা কাপুরুষ। ’৭১–এর আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে না পারার ফলে ২৪–এ তরুণেরা জেগে উঠেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের তরুণদের আকাঙ্ক্ষা উপলব্ধি করতে পারিনি।’

আলোচনায় যোগ দিয়ে অর্থনীতিবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, মানুষ কখনো সাম্য, মানবিক মর্যাদা, বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখায় খামতি দেয়নি। কখনো বিরত হয়নি, সব সময়ই তারা লড়াই করেছে, কিন্তু সব সময়ই একটা প্রত্যাশা ভঙ্গের বেদনা তাদের সইতে হয়েছে। মানুষের ধর্মের বৈচিত্র্য থাকে, লিঙ্গীয় বৈচিত্র্য থাকে, এই বৈচিত্র্য ধারণ করতে পারাটাই শক্তি।

‘সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ’ নিয়ে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘এটি কখনো ভালো আবার কখনো খারাপ অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন স্বাধীনতার আগে বাঙালি জাতীয়তা আমাদের স্বাধীনতাসংগ্রামকে ঐক্যবদ্ধ করেছে; কিন্তু স্বাধীনতার পর সেই জাতীয়তাবাদই আমাদের অন্য জাতিগোষ্ঠীকে আড়াল করতে চেয়েছে।’

প্যানেল আলোচনায় অধ্যাপক সাইদ ফিরদৌস বলেন, ‘দীর্ঘ জুলাইয়ের পরে যে সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা বলা হচ্ছে, সেখানে মুসলমান ছাড়াও যাঁরা রয়েছেন, পুরুষ ছাড়াও অন্য লিঙ্গের যাঁরা রয়েছেন, বাঙালি ছাড়াও যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এখানে একটা আন্দোলন হয়েছে এবং এর ফলে রাতারাতি সব পরিবর্তন হয়ে যাবে, তা আশা করা উচিত নয়। আমাদের সবার জন্য দেশ গড়তে কাজ করতে হবে।’

আলোচনায় সংস্কৃতিকর্মী সারা জাকের বলেন, ‘আমাদের ভাষা, খাদ্য, ধর্ম–আচরণ—সবকিছুর মধ্য দিয়েই আমাদের সাংস্কৃতিক পরিচয় প্রকাশ পায়। বাংলা নববর্ষই আমাদের সব ধর্মের মানুষকে একত্র করে। পাশাপাশি এখানে বাংলা ভাষাও আমাদের আরও একটি বড় ঐক্য।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মির্জা তাসলিমা সুলতানা বলেন, ‘এখানে নারীর প্রতি সহিংসতা আইন দিয়ে বন্ধ করা যাবে না। এটি বন্ধ করতে হলে সামাজিকভাবে কাজ করতে হবে। জুলাই আমাদের নতুন সুযোগ এনে দিয়েছে।’

অধ্যাপক মিথিলা মাহফুজ বলেন, ‘আমাদের জনপরিসরের পরিবেশটা পিতৃতান্ত্রিক, পরিবারতান্ত্রিক, জাতীয়তাবাদী, আক্রমণাত্মক একটা “স্পেস”। যেখানে নারী–পুরুষের “প্রটেকশন” বাইরে নারীর অংশগ্রহণ কঠিন।’

আলোচনায় অধিকারকর্মী ডালিয়া চাকমা বলেন, ‘এখানে বাঙালি জাতিগোষ্ঠীর বাইরে যে আদিবাসীরা আছেন, তাঁদের আলোচনাটা বা অংশগ্রহণ খুব কম হয়। সব সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে তাঁদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা উচিত।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ই আম দ র আম দ র স ক জ কর

এছাড়াও পড়ুন:

এবারও কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে নেই বাংলাদেশ

দ্বিতীয় বছরের মত কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশের কোনো সিনেমাা বা তথ্যচিত্র দেখানো হচ্ছে না। সম্প্রতি কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব কমিটির তরফে সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি জানানো হয়ছে। পরবর্তীতে কমিটির তরফে তাদের নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে যে ছবি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তাতে কোন ক্যাটাগরিতেই বাংলাদেশি সিনেমার নাম উল্লেখ নেই। 

মূলত ভিসা জটিলতা এবং রাজনৈতিক কারণেই এই চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশের উপস্থিতি থাকছে না। 

বিষয়টি নিয়ে গত বছরই উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের চেয়ারপার্সন পরিচালক গৌতম ঘোষ। সেসময় তাকে বলতে শোনা গিয়েছিল, “এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। সেদেশে ভিসা সমস্যা রয়েছে। আর বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসতে অনেকটা সময় লাগবে। স্বাভাবিকভাবেই এই অবস্থায় চলচ্চিত্র উৎসবের তালিকায় বাংলাদেশের কোনো ছবি নেই। আমরা আশা করব চলচ্চিত্র উৎসবের পরবর্তী এডিশনের (৩১ তম) আগে প্রতিবেশী দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।”

কিন্তু এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও অবস্থার যে কোনো পরিবর্তন হয়নি তা চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশের অনুপস্থিতির ঘটনাটাই পরিষ্কার। 

যদিও কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের জুরি কমিটির এক সদস্য  বলেছেন, “আন্তর্জাতিক বিভাগে বাংলাদেশ থেকে শুধুমাত্র একটি ছবি জমা দেওয়া হয়েছিল। তানভীর চৌধুরীর ‘কাফ্ফারাহ’। কিন্তু দুঃখের বিষয় এটি আমাদের কাঙ্ক্ষিত মানদণ্ড পূরণ করতে পারেনি। ফলে চলচ্চিত্র উৎসবে এই ছবিটি জায়গা পায়নি।”

চলতি বছরের ৬ নভেম্বর থেকে শুরু হতে চলেছে ৩১ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। এক সপ্তাহব্যাপী এই উৎসব চলবে আগামী ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত। এই উৎসবে ৩৯ টি দেশের ২১৫ টি ছবি দেখানো হবে। ভারত ছাড়াও অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, পোল্যান্ড, বেলজিয়াম, ইতালি, ব্রাজিল, মরক্কো, অস্ট্রিয়া, তুরস্ক, বলিভিয়া, গুয়েতেমালা, শ্রীলংকা, চীন, জাপান, ইরান, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, ফিলিস্তিন, ইরাক, সৌদি আরব, মিশর, সুদান, লেবানন।

সুচরিতা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এবারও কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে নেই বাংলাদেশ
  • ভালো ফলনের আশায় গাছকে খাওয়ান তাঁরা
  • টগি ফান ওয়ার্ল্ডে উদযাপিত হলো হ্যালোইন উৎসব
  • উদ্ভাবন–আনন্দে বিজ্ঞান উৎসব
  • নবীনদের নতুন চিন্তার ঝলক
  • বিজ্ঞান উৎসব উদ্বোধন করল রোবট নাও
  • ‘ফাতেমা রানীর তীর্থোৎসবে’ আলোয় ভাসল গারো পাহাড়
  • টোকিওতে জমেছে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব
  • সন্ধ্যা নদীর দুকূলে উৎসবের ঢেউ, উজিরপুরে নৌকাবাইচে মাতলেন হাজারো মানুষ
  • রাঙামাটি রাজবন বিহারে দুদিনের কঠিন চীবর দানোৎসব শুরু