বাংলাদেশ একটি মিশ্রিত সংস্কৃতির দেশ, তা আমরা ভুলে যাই: শারমীন এস মুরশিদ
Published: 14th, April 2025 GMT
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, ‘প্রাচীন ঐতিহ্যের ধারা বাঙালি সংস্কৃতির ধারায় গৃহীত হয়েছে। এই বাংলাদেশ একটি মিশ্রিত সংস্কৃতির দেশ, তা আমরা ভুলে যাই।’
শারমীন এস মুরশিদ বলেন, ‘আমাদের ব্যাপকত্ব, আমাদের উদারতা, আমাদের মিশ্র সংস্কৃতিকে যদি আমরা চেতনায় জায়গা দিই, তাহলে আমরা অনেক সমৃদ্ধ হই।’
আজ সোমবার রাজধানীর গুলশানে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন পার্কে আয়োজিত নববর্ষের উৎসবে ‘সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ এবং জনপরিসরে নারীর উপস্থিতি’ শীর্ষক ‘ভাবালাপে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথাগুলো বলেন। গুলশান সোসাইটি ও ‘অলিগলি বন্ধু’ দুই দিনব্যাপী এ উৎসবের আয়োজন করে।
বাঙালি জাতির অস্তিত্বের ইতিহাস তুলে ধরে শারমীন এস মুরশিদ বলেন, ‘আমি যে শুধু বাঙালি নই, আমি যে শুধু মুসলমান নই, আমি যে একটি সংমিশ্রিত মানুষ, আমি যে ব্যাপক—এই কথা খুব বেশি জাতি কিন্তু বলতে পারে না, কম জাতিই বলার সুযোগ পায়। আমরা বাঙালি, আমরা মুসলমান—এটাকে মুখোমুখি করা হয়েছে, এটা আলাদা নয়। আমরা চাই, আরও বেশি উৎসব হোক, পাড়ায় পাড়ায় উৎসব হোক।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ জানি না, কিন্তু একটি রাষ্ট্রের ইতিহাসে এমন কতগুলো মুহূর্ত আসে, যখন আমরা জাতীয় ঐক্যের জায়গায় পদার্পণ করি। আমাদের জাতীয় সংগ্রামের ফল ১৯৭১, আর আমাদের পয়লা বৈশাখের শিকড় গ্রামীণ অর্থনীতি।’
বাংলা নববর্ষের ইতিহাস তুলে ধরে শারমীন এস মুরশিদ বলেন, আকবর সৌরবর্ষ ও চন্দ্রবর্ষকে একসঙ্গে করেছেন অর্থনৈতিক কারণে। কারণ, এ সময়ে কৃষকের হাতে পয়সা থাকে, ফলে শুল্ক আদায় সহজ হয়।
শিশু ও নারীদের ওপর অত্যাচার বন্ধে তাঁর মন্ত্রণালয় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছাতে কাজ করে জানিয়ে শারমীন এস মুরশিদ বলেন, এসব প্রতিরোধে কাজ করতে হবে, সামাজিকভাবে এসব প্রতিরোধ করতে হবে, প্রতিটি গ্রামে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এই উপদেষ্টা বলেন, এসব অপরাধ যারা করছে, তাৎক্ষণিকভাবে তাদের প্রতিরোধ করতে হবে, যারা এসবের সঙ্গ জড়িত, তারা পুরুষ নই, তারা কাপুরুষ। ’৭১–এর আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে না পারার ফলে ২৪–এ তরুণেরা জেগে উঠেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের তরুণদের আকাঙ্ক্ষা উপলব্ধি করতে পারিনি।’
আলোচনায় যোগ দিয়ে অর্থনীতিবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, মানুষ কখনো সাম্য, মানবিক মর্যাদা, বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখায় খামতি দেয়নি। কখনো বিরত হয়নি, সব সময়ই তারা লড়াই করেছে, কিন্তু সব সময়ই একটা প্রত্যাশা ভঙ্গের বেদনা তাদের সইতে হয়েছে। মানুষের ধর্মের বৈচিত্র্য থাকে, লিঙ্গীয় বৈচিত্র্য থাকে, এই বৈচিত্র্য ধারণ করতে পারাটাই শক্তি।
‘সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ’ নিয়ে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘এটি কখনো ভালো আবার কখনো খারাপ অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন স্বাধীনতার আগে বাঙালি জাতীয়তা আমাদের স্বাধীনতাসংগ্রামকে ঐক্যবদ্ধ করেছে; কিন্তু স্বাধীনতার পর সেই জাতীয়তাবাদই আমাদের অন্য জাতিগোষ্ঠীকে আড়াল করতে চেয়েছে।’
প্যানেল আলোচনায় অধ্যাপক সাইদ ফিরদৌস বলেন, ‘দীর্ঘ জুলাইয়ের পরে যে সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা বলা হচ্ছে, সেখানে মুসলমান ছাড়াও যাঁরা রয়েছেন, পুরুষ ছাড়াও অন্য লিঙ্গের যাঁরা রয়েছেন, বাঙালি ছাড়াও যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এখানে একটা আন্দোলন হয়েছে এবং এর ফলে রাতারাতি সব পরিবর্তন হয়ে যাবে, তা আশা করা উচিত নয়। আমাদের সবার জন্য দেশ গড়তে কাজ করতে হবে।’
আলোচনায় সংস্কৃতিকর্মী সারা জাকের বলেন, ‘আমাদের ভাষা, খাদ্য, ধর্ম–আচরণ—সবকিছুর মধ্য দিয়েই আমাদের সাংস্কৃতিক পরিচয় প্রকাশ পায়। বাংলা নববর্ষই আমাদের সব ধর্মের মানুষকে একত্র করে। পাশাপাশি এখানে বাংলা ভাষাও আমাদের আরও একটি বড় ঐক্য।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মির্জা তাসলিমা সুলতানা বলেন, ‘এখানে নারীর প্রতি সহিংসতা আইন দিয়ে বন্ধ করা যাবে না। এটি বন্ধ করতে হলে সামাজিকভাবে কাজ করতে হবে। জুলাই আমাদের নতুন সুযোগ এনে দিয়েছে।’
অধ্যাপক মিথিলা মাহফুজ বলেন, ‘আমাদের জনপরিসরের পরিবেশটা পিতৃতান্ত্রিক, পরিবারতান্ত্রিক, জাতীয়তাবাদী, আক্রমণাত্মক একটা “স্পেস”। যেখানে নারী–পুরুষের “প্রটেকশন” বাইরে নারীর অংশগ্রহণ কঠিন।’
আলোচনায় অধিকারকর্মী ডালিয়া চাকমা বলেন, ‘এখানে বাঙালি জাতিগোষ্ঠীর বাইরে যে আদিবাসীরা আছেন, তাঁদের আলোচনাটা বা অংশগ্রহণ খুব কম হয়। সব সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে তাঁদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা উচিত।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ই আম দ র আম দ র স ক জ কর
এছাড়াও পড়ুন:
পূজাকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলায় বাহিনী তৎপর : ডিসি
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, আইনসৃঙ্খলা স্বাভাবিক রয়েছে, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে সকল ধর্মমত, সকল সম্প্রদায় তারা একত্রিত হয়েছে।
সকলেই সার্বিক সহয়তা করছে যাতে করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা উৎসব সুন্দর ভাবে পজলন করতে পারে। পূজাকে ঘিরে একটি গোষ্ঠি চাইবে পূজা উৎসব নষ্ট করে দেয়ার জন্য।
সে জন্য আমাদের তৎপরতা রয়েছে। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। তার পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশবাহিহনী সবাই কাজ করছে যাতে করে সুন্দর ভাবে পূজা উৎসব শেষ করতে পারি।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ৫নং ঘাটে দূর্গা পূজার প্রতিমা বিসর্জনের স্থান পরিদর্শনকালে তিনি এ নির্দেশনা দেন।
দূর্গা পূজা বিজয়া দশমী শেষে প্রতিমা বিসর্জনের সময় যেকোনো অপ্রীতিকর দূর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সুন্দর ভাবে প্রতিমা বিসর্জনের স্থান নিরাপদ রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন জেলা প্রশাসক।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, নারায়ণগঞ্জের ২২৩টি পূজা মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে পূজা উদযাপনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এবং সম্প্রীতি বজায় রেখে বর্তমানে পূজা উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে।
এসময় তিনি প্রতিটি মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে ও নির্বিঘ্নে পূজা অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাযথ সহযোগিতার নির্দেশনা দেন।
তিনি বলেন, সকলে মিলে সব উৎসব উদযাপন করাই বাংলার ঐতিহ্য ও গৌরব।
এসময় জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।