নাসিরনগরের শুঁটকি মেলা: আগে বেচাকেনা ছিল বিনিময় প্রথায়, এখন নগদ টাকায়
Published: 15th, April 2025 GMT
ব্যবসায়ীরা দোকান সাজাতে ব্যস্ত। তাঁদের যেন কথা বলার ফুরসত নেই। তাঁরা বিভিন্ন মাছের তৈরি শুঁটকি পসরা সাজাতে ব্যস্ত। এই চিত্র ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের কুলিকুন্ডা গ্রামের; আজ মঙ্গলবার সকাল সাতটার।
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আজ থেকে এখানে দুই দিনব্যাপী শুঁটকি মেলা শুরু হয়েছে। নাসিরনগরের এ মেলার ঐহিত্য দীর্ঘদিনের। মেলার প্রধান পণ্য শুঁটকি। বর্তমানে বাংলা সনের দ্বিতীয় দিনে এ মেলা শুরু হয়। যদিও পুরোনো পঞ্জিকা অনুযায়ী দিনটি পয়লা বৈশাখ। স্থানীয় জেলেরা পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য ধরে রাখতে ব্যতিক্রমধর্মী এ মেলা করে থাকেন।
কুলিকুন্ডা গ্রামের কুলিকুন্ডা (উওর) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে মেলা শুরু হয়েছে। গ্রামবাসী ও মেলায় আসা একাধিক ব্যক্তি জানান, কবে মেলা শুরু হয়েছে, তাঁদের জানা নেই। তাঁদের ধারণা, ‘শুঁটকি মেলা’ প্রায় ৩০০ বছরের পুরোনো। যখন কাগজের মুদ্রার প্রচলন হয়নি, তখন স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বী লোকজন নিজেদের উৎপাদিত শুঁটকি বিক্রি করতেন। স্থানীয় কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদিত চাল, ডাল, ধান, শিমের বিচি, আলু, শর্ষে, পেঁয়াজ, রসুনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় নানা পণ্যের বিনিময়ে শুঁটকি কিনতেন। এ মেলার প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল পণ্যের বিনিময়ে শুঁটকি কেনাবেচা। ওই ঐতিহ্য ধরে রাখতে স্বল্প সময়ের জন্য পণ্যের বিনিময়ে শুঁটকির বিনিময় হতো। বর্তমানে ওই ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে। এখন নগদ টাকায় বেচাকেনা হয়। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীরা এখানে শুঁটকি বেচাকেনা করতে আসেন।
মেলায় বোয়াল, গজার, শোল, বাইম, ছুরি, লইট্টা, পুঁটি, গনা, গুচি, ট্যাংরা আইড়সহ আড়াই শর বেশি ধরনের শুঁটকির পসরা নিয়ে বসেছেন দোকানিরা। এ ছাড়া ইলিশ ও সামুদ্রিক মাছের শুঁটকি রয়েছে। পাশাপাশি ইলিশ ও কার্পজাতীয় বিভিন্ন মাছের ডিমও বিক্রি হচ্ছে। মেলায় স্থানীয় কুমারদের হাতের তৈরি হাঁড়ি, পাতিল, কলসি, ঝাঁজর, থালা, ঘটি, বদনা, বাটি, পুতুলসহ নানা ধরনের সামগ্রী আছে।
আজ সকালে মেলায় এসেছেন উপজেলার গোকুলনীয় ইউনিয়নের জেঠাগ্রামের বাসিন্দা জ্যোৎস্না চৌধুরী। তিনি সঙ্গে করে এসেছেন নিজের উৎপাদিত আম, পেঁয়াজ, চাল, শিমের বিচি ও বেগুন। এসব পণ্যের বিনিময়ে তিনি শুঁটকি নেন।
হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলা থেকে মেলায় এসেছেন মহেশ্বর দাস। তিনি বলেন, এ মেলায় শুঁটকির বেচাকেনা ভালো হয়। ১৫ ধরনের শুঁটকি এনেছেন, যার দাম ১ লাখ ২০ হাজার টাকা।
আরেক ব্যবসায়ী আবদুর রহমান এসেছেন সরাইল উপজেলা থেকে। তিনি জানান, তিনি ৩০ বছর ধরে মেলায় আসছেন। তাঁর বাবা-দাদাও শুঁটকির ব্যবসা করতেন। ছোটবেলা থেকেই এ মেলায় আসেন।
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এস ছ ন ব যবস উপজ ল ধরন র
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই ডকুমেন্টরিতে ‘ফুটেজ’ না থাকায় জাবি ছাত্রদল নেতার হট্টগোল
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মরণে নির্মিত দেশের প্রথম স্মৃতিস্তম্ভ ‘অদম্য ২৪’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রচারিত ডকুমেন্টরিতে ফুটেজ না থাকায় এক ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে হট্টগোল করা অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ৩৯তম ব্যাচের (২০০৯-১০ সেশন) সাবেক শিক্ষার্থী এবং শাখা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বিকেল ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন ফজিলাতুন্নেসা হলের সামনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ডকুমেন্টরি প্রদর্শন শেষে এ হট্টগোল করেন তিনি।
আরো পড়ুন:
জুলাই শহীদ পরিবারদের সংবর্ধনা দিল জাবি
জুলাই শহীদদের স্মরণে জাবি ছাত্রদলের বৃক্ষরোপণ
এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের শিল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
ডকুমেন্টরি প্রদর্শন শেষে ওই ছাত্রদল নেতা উত্তেজিত কণ্ঠে বলতে থাকেন, “এই ডকুমেন্টরিতে ইতিহাস বিকৃতি করা হয়েছে। ডকুমেন্টরিতে ছাত্রদলের অবদানকে অস্বীকার করা হয়েছে। আমরাও আন্দোলন মাঠে ছিলাম, জেল-জুলুম, মামলা আমরাও খেয়েছি।”
এ সময় তার সঙ্গে শাখা ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক রোমান রাশিদুল ও হাসান শাহরিয়ার রমিমকেও হট্টগোল করতে দেখা যায়।
অনুষ্ঠানের আয়োজকরা জানান, ডকুমেন্টরি নির্মাণের জন্য তাদের দুইদিন সময় দেওয়া হয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে একটি মাত্র ক্যামেরা দিয়ে ২৫ থেকে ৩০ জনের ইন্টারভিউ নেওয়া খুবই কষ্টসাধ্য কাজ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে পর্যাপ্ত ইকুইপমেন্ট ও সময় না পাওয়ায় তাদের পূর্ণাঙ্গ ডকুমেন্টরি নির্মাণ কাজ বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
তবে এ ঘটনার পেছনে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের এক প্রভাবশালী শিক্ষকের হাত রয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষক।
তারা জানান, ডকুমেন্টরি নির্মাণের পূর্বে তারা জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব ছবি ও ভিডিও ফুটেজ চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সব পাবলিক ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করেছিলেন। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের পাঠানো ও সাংবাদিকদের থেকে সংগৃহীত ছবি ও ফুটেজ দিয়ে ডকুমেন্টরি নির্মাণ করা হয়েছে। যে ব্যক্তি দাবি করেছেন তার ছবি বা ফুটেজ দেয়া হয়নি, তার ছবি বা ফুটেজ তাদের কাছে কেউ দেয়নি। এজন্য তারা ডকুমেন্টরিতে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেননি?
এ নিয়ে জাবি উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, “আজ যে একটা বিশেষ পরিস্থিতি দেখেছি, এটাও জাহাঙ্গীরনগরের বৈশিষ্ট্য, এটাও ২৪ এর অর্জন। খারাপভাবে দেখার প্রয়োজন নেই। প্রত্যেকটি কাজের মধ্যে ভুল থাকতে পারে, এখানে শিক্ষার বিষয় রয়েছে। ঠিক একইসঙ্গে প্রতিবাদের যে ভাষা, সেখানেও শিক্ষিত হবার প্রয়োজন রয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে সমালোচনা ও কুৎসার পার্থক্য শিখবে। একইসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশংসা ও পূজার পার্থক্য শিখবে ও বুঝবে।”
ঢাকা/আহসান/মেহেদী