কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ডাক্তার মমতাজ বেগম ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি কর্তৃক বাংলা বর্ষবরণ উদযাপনের লক্ষ্যে পয়লা বৈশাখ (১৪ এপ্রিল, সোমবার) দিনের শুরুতে নিজস্ব ক্যাম্পাসে বৈশাখী ভোজ (পান্তা ভাত), বর্ণাঢ্য র‌্যালি এবং আলপনা উৎসবের আয়োজন করা হয়। 

ইউনিভার্সিটির উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আজিজুল হক অনুষ্ঠান উদ্বোধন করে সকলকে বাংলা নববর্ষ-১৪৩২ (পয়লা বৈশাখ) এর শুভেচ্ছা জানান এবং নতুন বছরে সবার শান্তি, সুস্থতা, সাফল্য ও সমৃদ্ধি কামনা করে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।

তিনি তার বক্তৃতায় বলেন, “বাংলা নববর্ষ উদযাপনের মাধ্যমে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাংলাদেশের আপামর জনগণের যে ভ্রাতৃপ্রেম ও সম্প্রীতির বহিঃপ্রকাশ ঘটে তা রাষ্ট্রের সৌন্দর্য ও অগ্রগতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলা নববর্ষ উদযাপন আমাদের লালিত ঐতিহ্যকে সুদৃঢ় করে নিঃসন্দেহে।”

বাংলা নববর্ষ-১৪৩২ (পয়লা বৈশাখ) উদযাপন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইউনিভার্সিটির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো.

জাকির হোসেন, ইউনিভার্সিটির সায়েন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এএফএম নাজমুস সাদাত, ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন মো. আশেক-আল-আজিজ, বিজনেস অনুষদের ডিন ড. আকিম. এম. রহমান।

এছাড়া সব বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এবং বিভিন্ন বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণে একটি প্রাণবন্ত বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান উদযাপন করা হয়।

এছাড়া ডা. মমতাজ বেগম ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বন্দরনগরী ভৈরবস্থ মেঘনা নদীর তীরে আয়োজিত বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈশাখী মেলায় দুইটি স্টল নিয়ে অংশগ্রহণ করেছে, যেখানে ফ্রি হেলথ ক্যাম্প ও অ্যাডমিশন প্রমোশন স্টরের মাধ্যমে মেলায় আগত আগ্রহীদের ভর্তি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য প্রদানসহ সহস্রাধিক মানুষকে ফ্রি হেলথ ক্যাম্পের মাধ্যমে ব্লাড প্রেশার, ব্লাড গ্রুপিং, ওজন মাপা, ইত্যাদি সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে স্বতঃস্ফুর্তভাবে বাংলা নববর্ষ-১৪৩২ পালন করেন।

ডা. মমতাজ বেগম ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আজিজুল হক বৈশাখী মেলায় উপস্থিত হয়ে ভৈরব আয়োজক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ-এর সদস্যদের সাথে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং একইসাথে তিনি তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ডা. মমতাজ বেগম ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য সবার সাথে শেয়ার করেন।

ঢাকা/সুমন/এসবি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর নববর ষ উদয প

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে

সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’

বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।

এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।

এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’

আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ