ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কে বাংলাদেশের ভয়ের কিছু নেই: বিআইডিএসের মহাপরিচালক
Published: 15th, April 2025 GMT
ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘটনায় বাংলাদেশের ভয়ের কিছু নেই বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক এ কে এনামুল হক। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভয়ের কিছু নেই। কারণ, লড়াই হচ্ছে বড় বড় দেশের মধ্যে। এতে ব্যবসা ও বিনিয়োগ এক দেশ থেকে অন্য দেশে স্থানান্তরিত হবে। বিশেষ করে চীনের বিনিয়োগ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে যাবে। তাতে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ লাভবান হতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের আওতায় পরিচালিত অধ্যয়ন কেন্দ্র ইকোনমিকস স্টাডি সেন্টার (আইজিসি) আয়োজিত ষষ্ঠ বাংলাদেশ অর্থনীতি সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে এ কথা বলেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মোজ্জাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে আজ মঙ্গলবার তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলন শুরু হয়েছে।
‘অস্থির বিশ্বে বাংলাদেশ: বাণিজ্য, কূটনীতি এবং প্রবৃদ্ধির সন্ধান’ শীর্ষক অধিবেশনে সঞ্চালকের ভূমিকায় ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক অতনু রব্বানী। আলোচক ছিলেন ঢাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন ও ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পারভেজ করিম আব্বাসী।
বিআইডিএসের মহাপরিচালক এ কে এনামুল হক বলেন, ট্রাম্প বাণিজ্যঘাটতি কমানোর কথা বললেও পাল্টা শুল্ক আরোপের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দর-কষাকষি। সেদিক থেকে ট্রাম্প সফল। ১৭৫টি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। এর বাইরে পাল্টা শুল্ক আরোপের আরেকটি দীর্ঘমেয়াদি উদ্দেশ্য হচ্ছে চীনের উত্থান বাধাগ্রস্ত করা। তিনি বলেন, চীনের আজকের অবস্থানের পেছনে মূল রহস্য শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ।
বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধে বাংলাদেশকে কৌশল নির্ধারণে জোর দিতে হবে বলে মনে করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক। তিনি বলেন, ডলার ছাড়াও অন্য মুদ্রায় ব্যাংক হিসাব খোলার অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ। এতে ডলারের ওপর চাপ কমবে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র থেকে চাপ আসতে পারে।
ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পারভেজ করিম আব্বাসী বলেন, চীন সিল্ক রুট করেছে। প্রযুক্তি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করেছে চীন। বর্তমানে বিশ্বের বৈদ্যুতিক গাড়ির ৬৪ শতাংশ তাদের উৎপাদিত। ২০২০ সালে যুক্তরাজ্য সরকার চীনের হুয়াওয়েকে ৫জির কাজ দেয়। তখন পর্দার অন্তরালে চীনকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে যুক্তরাষ্ট্র। গণতন্ত্র, মানবাধিকার, পরিবেশ রক্ষার কথা বলে কাজগুলো করা হয়। ট্রাম্প পাল্টা শুল্ক আরোপের মাধ্যমে নিজের দেশে বিনিয়োগ আনার কথা বলছেন। মূল বিষয় হচ্ছে চীনের সরবরাহব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটাতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকাণ্ডের দীর্ঘ মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাস আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিভিন্ন পদক্ষেপকে বড় ভুল উল্লেখ করে ঢাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন বলেন, এটির জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে মূল্য দিতে হবে। অন্য দেশগুলোর প্রতি যুক্তরাষ্ট্র একধরনের ভীতি ছড়াচ্ছে। বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ পড়াশোনা ও ঘুরতে যুক্তরাষ্ট্রে যায়। তবে মেধাবৃত্তি বন্ধ করেছে তারা। আগামী দিনে শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রের বদলে চীন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) যাবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প র
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার
রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।
গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।
সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।
ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’