গানে-ছন্দে বর্ষবরণে মেতেছিলেন প্রথম আলোর কর্মীরা
Published: 15th, April 2025 GMT
‘আলোকের এই ঝর্নাধারায় ধুইয়ে দাও/ আপনাকে এই লুকিয়ে-রাখা ধুলার ঢাকা ধুইয়ে দাও’, ‘গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান/ মিলিয়া বাউলা গান আর মুর্শিদি গাইতাম’—এমন সব গানে বাংলা নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রথম আলোর কর্মীরা। আজ মঙ্গলবার আনন্দমুখর পরিবেশে প্রথম আলোর কর্মীদের নিয়ে উদ্যাপিত হলো বাংলা নববর্ষ ১৪৩২।
মানবসম্পদ বিভাগের উদ্যোগে বৈশাখের দ্বিতীয় দিন বিকেলে কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে আয়োজন করা হয় অনুষ্ঠানটি। এতে প্রথম আলোর বিভিন্ন বিভাগের কর্মীরা কাজের ফাঁকে গান-আবৃত্তি, রম্য কথনে মেতেছিলেন। বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে আসা প্রথম আলোর কর্মীদের মধ্য থেকে সেরা সাজের জন্য চারজনকে পুরস্কৃত করা হয়।
অনুষ্ঠানস্থল প্রগতি ভবনের সাততলা সাজানো হয়েছিল নববর্ষের মোটিফ আর লোকজ নকশার রঙিন কাগজে। প্রথম আলো ট্রাস্টের মাহবুবা সুলতানার কণ্ঠে ‘আলোকের এই ঝর্নাধারা’ গান দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। ভিডিও বিভাগের খন্দকার শামসউজজোহা নিজের লেখা কবিতা আবৃত্তি করেন। উন্মুক্ত পর্বে গান ও রম্য কথনে অংশ নেন তিন সহকর্মী।
সম্পাদনা সহকারী বিভাগের রাশিদুজ্জামান দুটি গান পরিবেশন করেন। পুরুষেরা পাঞ্জাবি-ফতুয়া, নারীরা শাড়ি, মাথায় ফুলের মালা, হাতে রঙিন চুড়িতে সেজেছিলেন। সেরা সাজের জন্য ‘সুবেশী’ হিসেবে পুরস্কার জেতেন দুজন নারী ও দুজন পুরুষ সহকর্মী।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে প্রথম আলোর কর্মীদের বাংলা নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানান অভিনেতা আফজাল হোসেন, অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন, চলচ্চিত্র পরিচালক এন রাশেদ চৌধুরী, চিত্রগ্রাহক কামরুল হাসান খসরু।
অনুষ্ঠানে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক ও সহযোগী সম্পাদক সুমনা শারমীন কর্মীদের সঙ্গে নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন তপতী বর্মণ।
খৈ, মুড়ি, বাতাসা, চিড়া-মুড়ির মোয়া, মুড়ালি, চানাচুর মাখা, কাঁচা আমের শরবতের মতো ঐতিহ্যবাহী খাবার আপ্যায়নের মধ্য দিয়ে শেষ হয় দেড় ঘণ্টাব্যাপী এ অনুষ্ঠান।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দুই বন্ধু ও দুটি স্বপ্নের বিদায়
উত্তরার ১৭ নম্বর সেক্টরের ৬ নম্বর অ্যাভিনিউতে বিজিএমইএ ভবন। রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠান টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ হিল রাকিবের জানাজায় শোকাবহ পরিবেশ। প্রিয় মানুষকে চিরবিদায় জানাতে এসেছেন দীর্ঘদিনের সহকর্মী, বন্ধু, পরিবারের সদস্য ও পরিচিতজন। শোক ও অশ্রুতে তারা রাকিবকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করছিলেন। রাকিবের অসমাপ্ত কাজ ও স্বপ্ন এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার করেন সহকর্মীরা।
৯ জুন কানাডায় একটি লেকে ভ্রমণের সময় নৌকাডুবে মারা যান আবদুল্লাহ হিল রাকিব ও তাঁর বন্ধু বাংলাদেশ বিমানের ক্যাপ্টেন মো. সাইফুজ্জামান। কানাডায় বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে সাইফুজ্জামান ঈদের ছুটি কাটাতে স্ত্রী ও আরেক মেয়েকে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে বন্ধু ব্যবসায়ী রাকিব ও তাঁর ছেলের সঙ্গে একটি লেকে ঘুরতে গিয়েছিলেন। অন্টারিও প্রদেশের স্টারজিয়ন লেকে ক্যানুতে (সরু লম্বা ছোট্ট নৌকা) চড়ে ভ্রমণে বের হন। নৌকাটি উল্টে গেলে পানিতে ডুবে প্রাণ হারান দু’জন। বিদেশের মাটিতে একসঙ্গে দুই বন্ধুর মৃত্যু, একই ফ্লাইটে ফেরা, দেশে ফিরে একই কবরস্থানে শেষ শয্যা!
অশ্রুসজল চোখে রাকিবের কানাডাপ্রবাসী মেয়ে লামিয়া তাবাসসুম বলেন, ‘বাবা স্বপ্ন দেখতেন, দেখাতেন। তিনি যেসব স্বপ্ন আমাদের দেখিয়েছেন, যেসব কাজ রেখে গেছেন, আমরা যেন সুন্দরভাবে তা বাস্তবায়ন করতে পারি। পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে কানাডায় গিয়েছিলেন বাবা।’
রাকিব ও সাইফুজ্জামান ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। তাদের মরদেহ বিমানের একই ফ্লাইটে শুক্রবার রাতে ঢাকায় আনা হয়। জানাজা শেষে ঢাকায় বিমানবাহিনীর কবরস্থানে দু’জনকে সমাহিত করা হয়। তাদের সহকর্মী ও বন্ধুরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে অকালে দুটি স্বপ্ন বিদায় নিল।
রাকিবের সহকর্মীরা বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানিকে ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করার স্বপ্ন দেখতেন রাকিব। তারা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহায়তা করবেন বলে জানান।
উত্তরায় জানাজার আগে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘আবদুল্লাহ হিল রাকিবের সঙ্গে বেশ কয়েক বছর কাজ করেছি। সব সময়ই দেখেছি, তিনি নিজের পরিবার, বন্ধু, ব্যবসা ও বিজিএমইএকে সমান অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তৈরি পোশাকশিল্প খাতের যে কোনো সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তিনি সামনে চলে যেতেন। রাকিবের দর্শন ছিল– সফলতার মাত্রা নেই। তবে একজন ব্যক্তি কতটা সফল, সেটি তাঁর কর্মযজ্ঞ দেখলে বোঝা যায়।’
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এস এম ফজলুল হক বলেন, রাকিব উজ্জ্বল প্রদীপ। স্বপ্ন ছিল অনেক। ঝোড়ো হাওয়ায় সেই প্রদীপ নিভে গেছে। সবাই তাঁর জন্য দোয়া করবেন।
রাকিবের জন্য সবার কাছে দোয়া চান বিজিএমইএর সর্বশেষ নির্বাচনে বিজয়ী রাইজিং ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান। স্মৃতিচারণা করে বক্তব্য দেন রাকিবের বড় ভাই আবদুল্লাহ হিল নকীব।
ক্যাপ্টেন সাইফুজ্জামানের সহকর্মীরা জানান, শুক্রবার তাঁর মরদেহ কানাডা থেকে ঢাকায় আনার সময় তাঁর সঙ্গে স্ত্রী, দুই মেয়ে, বোন এবং ভগ্নিপতি ছিলেন। মরদেহ পৌঁছার পর উপস্থিত পাইলটরা সহকর্মীর মরদেহে স্যালুট দেন। এর পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও পাইলটস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে মরদেহ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) মর্গে রাখা হয়। সেখান থেকে মরদেহ নেওয়া হয় তাঁর বনানীর ডিওএইচএসের বাসায়। বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ঘাঁটি বাশারের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা হয়। সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল মোহাম্মদ ইনামুল বারীসহ পাইলট, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এতে অংশ নেন। পরে জোহরের নামাজ শেষে ডিওএইচএস মাঠে একসঙ্গে ক্যাপ্টেন সাইফুজ্জামান ও রাকিবের জানাজা হয়। সাইফুজ্জামানকে বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়। একই কবরস্থানে দাফন করা হয় রাকিবকে। তাঁর বাবা বিমানবাহিনীর সদস্য ছিলেন।