স্বজাতিকে বাঁচাতে চাইল যে কাঠমিস্ত্রি
Published: 16th, April 2025 GMT
কোরআনে আল্লাহ ‘এক জনপদের অধিবাসীদের দৃষ্টান্ত’ বর্ণনা করে বলেছেন, ‘যখন তাঁদের কাছে এসেছিল রাসুলগণ।’ (সুরা ইয়াসিন, আয়াত: ১৩)
এই জনপদের নাম কোরআনে উল্লেখ নেই। মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক, ইবনে আব্বাস, কাব ইবনে আহবার ও ওয়াহাব ইবনে মুনাব্বেহ’র মতো ইতিহাসবেত্তগণ বলেছেন, জনপদটির নাম ‘আন্তাকিয়া’। মুজামুল বুলদান গ্রন্থে আছে, আন্তাকিয়া শাম অঞ্চলের প্রাচীন নগরী। এটি বর্তমান তুরস্কে অবস্থিত। সেই যুগে সমৃদ্ধি ও স্থাপত্যে প্রসিদ্ধ ছিল আন্তাকিয়া। নগরীটি দর্শনার্থীদের চোখ আটকে রাখত নিজস্ব সৌন্দর্যে। এতে খ্রিষ্টানদের সোনা-রুপার কারুকার্য খচিত বড় বড় গির্জা ছিল। সাহাবি আবু উবায়দা ইবনে জাররা (রা.
আন্তাকিয়ার অধিবাসীরা আল্লাহর একত্ববাদকে অস্বীকার করত। তাদের বাদশাহ আন্তিখিস বিন আন্তিখিসও ছিলেন বহু ঈশ্বরের পূজারী। তাঁদের হেদায়াতের জন্য আল্লাহ তিনজন রাসুল পাঠান—সাদেক, সাদুক ও শালুম। কোনো বর্ণনায় আছে, তৃতীয়জনের নাম শাকুম। (কাসাসুল কোরআন, মূল: মাওলানা হিফজুর রহমান, অনুবাদ: আবদুস সাত্তার আইনী, ৭/২৪)
আরও পড়ুনজুলকারনাইনের ঘটনা০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫রাসুলরা আন্তাকিয়াবাসীকে আল্লাহর পথে দাওয়াত দিলেন। তারা মুখ ফিরিয়ে নিল। তাঁদের মিথ্যাবাদী বলল। তাঁরা দাওয়াত অব্যাহত রাখলেন। অবিশ্বাসীরা বিরক্ত হলো। রাসুলদের মেরে ফেলার ফন্দি করল।
সেসময় শহরের প্রান্তে থাকতেন হাবিব নাজ্জার নামে এক বিশ্বাসী মানুষ। তিনি ছিলেন একজন কাঠমিস্ত্রি। শহরের শেষ প্রান্তে থাকতেন তিনি। তাঁর ছিল কুষ্ঠরোগ। রোগের সুস্থতায় বহু চিকিৎসা করেছেন। তখনকার দেব-দেবীর কাছে ৭০ বছর প্রার্থনা করেছেন—ফল পাননি।
তিনজন রাসুল শহরের প্রান্তবর্তী প্রবেশপথ দিয়ে আন্তাকিয়ায় ঢোকার সময় পথে তাঁর সঙ্গে দেখা হয়। তাঁরা তাঁকে একাত্ববাদের দাওয়াত দেন। তিনি বললেন, ‘এতে আমার লাভ কী?’ তাঁরা বললেন, ‘তোমার রোগমুক্তির জন্য আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করব। তিনি তোমাকে রোগমুক্তি করবেন।’ তিনি আশ্চর্য হয়ে বললেন, ৭০ বছর ধরে প্রার্থনা করে লাভ হয়নি, আপনাদের ‘আল্লাহ’ একদিনে কী করে সুস্থ করবেন।’ তাঁরা বললেন, তিনি সর্বশক্তিমান। হাবিব নাজ্জার ইমান আনলেন এবং তাঁদের প্রার্থনায় তার নিরাময় হলো।
আরও পড়ুনসুরা মাউনে মানুষদের মধ্যে দুটি দলের কথা বলা হয়েছে০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫তাঁর ইমান আরও মজবুত হলো। তিনি নির্জনে নগরীর এক প্রান্তে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল রইলেন। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে থাকলেন। (তাফসিরে ইবনে কাসির, সুরা ইয়াসিন; আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া, ১/২২৯)
এভাবে কেটে গেল বহু দিন। এর মধ্যে রাসুলদের বিরুদ্ধে শহরবাসীর বিক্ষোভের খবর পেলেন, সঙ্গে সঙ্গে তিনি শহরে ছুটে এলেন। শহরবাসীকে সতর্ক করতে থাকলেন এবং বোঝাতে লাগলেন। কাজ হলো না। তারা বরং তাঁকে ঝামেলা মনে করল। তাঁর ওপর উদ্যত হলো। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘লাথি মেরে মেরে সবাই তাঁকে শহিদ করে দিল। বেদম প্রহারের সময়ও তিনি বলছিলেন, হে আমার পালনকর্তা, আমার সম্প্রদায়কে হেদায়াত দান করুন।’ (তাফসিরে মারেফুল কোরআন, মূল: মুফতি মুহাম্মাদ শফি, অনুবাদ, মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, পৃষ্ঠা: ১,১৩১)
আল্লাহ তাঁকে এর বিনিময়ে জান্নাত দিলেন। তিনি জান্নাতের নেয়ামত দেখে সম্প্রদায়ের লোকদের কথা মনে করে আফসোস করছিলেন, যা কোরআনে উল্লেখ রয়েছে এভাবে যে, ‘তাকে বলা হলো, তুমি জান্নাতে প্রবেশ করো।’ সে বলল, ‘হায়! আমার জাতি যদি জানতে পারত যে আমার রব আমাকে ক্ষমা করেছেন এবং আমাকে সম্মানিতদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন!’ (সুরা ইয়াসিন, আয়াত: ২৬-২৭)
ওদিকে আল্লাহ আন্তাকিয়াবাসীকে ধ্বংস করে দেন। এর জন্য তিনি কোনো ফেরেশতা পাঠাননি। জিবরাইল (আ.)-কে শুধু আওয়াজ দিতে আদেশ করলেন। জিবরাইল (আ.) এমন ভয়ংকর গর্জন করে উঠলেন, তা শুনে জনপদের অধিবাসীরা যে যেখানে ছিল, সে অবস্থায় মরে পড়ে থাকল। (তাফসিরে ইবনে কাসির, সুরা ইয়াসিন; আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া, ১/২২৯)
আল্লামা ইবনে কাসির ও ইমাম বুখারি (রহ.)-এর মতে, এই ঘটনা ঘটেছিল ইসা (আ.)-এর পূর্ববতী সময়। (ফাতহুল বারি, খণ্ড ৬; তাফসিরে ইবনে কাসির, খণ্ড ৩; সুরা ইয়াসিন)
আরও পড়ুনবিপদের সময় বলতে হবে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আল ল হ কর ছ ন ক রআন বলল ন
এছাড়াও পড়ুন:
উপকূল রক্ষা বাঁধে ভয়াবহ ধস, প্লাবনের আশঙ্কা সুন্দরবন তীরবর্তী জনপদে
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মালঞ্চ নদীর চর দেবে গিয়ে উপকূল রক্ষা বাঁধের পাঁচ নম্বর পোল্ডারের সিংহড়তলী অংশে ভয়াবহ ধসের সৃষ্টি হয়েছে। শনিবার দুপুরে শুরু হওয়া ধস আজ সোমবার আরও গুরুতর আকার ধারণ করেছে। এর আগে শুক্রবার রাতে আকস্মিকভাবে চুনকুড়ি ও সিংহড়তলী এলাকায় চর দেবে যাওয়ার পর থেকেই বাঁধে ধস শুরু হয়।
খবর পেয়ে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা রোববার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে কাজ করছেন।
ধস একেবারে জনবসতির কোল ঘেঁষে হওয়ায় গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নদীতে জোয়ারের চাপ বেড়ে যাওয়ায় বাঁধের অবশিষ্ট দুই থেকে আড়াই ফুট অংশ যে কোনো সময় নদীতে বিলীন হতে পারে। এতে সুন্দরবন তীরবর্তী কয়েকটি জনপদ লবণ পানিতে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মালঞ্চ নদীর ছয়টি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিলেও সিংহড়তলী অংশের অবস্থা সবচেয়ে সংকটাপন্ন। তারা জানান, দ্রুত বিকল্প বাঁধ নির্মাণ করা না হলে পরবর্তী জোয়ারে সাত থেকে আটটি গ্রাম পানিতে তলিয়ে যেতে পারে।
স্বেচ্ছাসেবক আব্দুর রাজ্জাক সমকালকে বলেন, ‘মাত্র সাত-আট মাস আগে এখানে মাটির কাজ হয়েছিল। বাঁধের পাশে অতিরিক্ত মাটি নেওয়ায় বাঁধ অনেকটা খাড়া হয়ে ছিল। কয়েকদিন ধরে ফাটল দেখা দেয়ার পর শনিবার থেকে ধস শুরু হয়। পাউবো তাৎক্ষণিকভাবে জিওশিট চাপিয়ে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করলেও শনিবার রাতে সবকিছু ধসে যায়।’
স্থানীয় বনজীবীদের নেতা বাবলুর রহমান সমকালকে বলেন, শনিবার দুপুরে বাঁধের প্রায় ৩০ ফুট অংশ নদীতে ধসে পড়ে। রোববার সকালের জোয়ারে আরও এক দফা ধসের পর বাঁধের অবশিষ্ট উচ্চতা এখন মাত্র দেড় থেকে দুই ফুট। তিনি বলেন, দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে সিংহড়তলী, চুনকুড়ি, হরিনগর, যতীন্দ্রনগর, ছোট ভেটখালীসহ অন্তত সাতটি গ্রাম তাৎক্ষণিকভাবে প্লাবিত হতে পারে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য নীপা রানী সমকালকে বলেন, ছয় নম্বর ওয়ার্ডের অন্তত ছয়টি অংশে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। সিংহড়তলীর অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বসতবাড়ির পাশে ভাঙন দেখা দেয়ায় এলাকাবাসী উদ্বাস্তু হওয়ার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। অনেকেই ইতোমধ্যে একাধিকবার সর্বস্ব হারিয়েছেন।
ঘটনাস্থলে থাকা পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দীন সমকালকে বলেন, শনিবার বিকেলে ভাঙন কবলিত অংশে শতাধিক জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হলেও তাতে ভাঙন রোধ করা সম্ভব হয়নি। এখন বাঁধের ভেতর দিয়ে ৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের রিং বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। তিনি জানান, রোববার রাতের মধ্যে বিকল্প বাঁধ নির্মাণ শেষ করা গেলে বড় ধরনের বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হবে।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. রনী খাতুন সমকালকে বলেন, স্থানীয়দের সহযোগিতায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ভাটার জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। পানি নামলে শত শত গ্রামবাসীকে নিয়ে ভাঙন রোধে পুনরায় কাজ শুরু করা হবে।’