ফিলিস্তিনি ও ত্রাণকর্মীদের জন্য গাজা এখন ‘গণকবর’: এমএসএফ
Published: 17th, April 2025 GMT
গাজায় বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখে ইসরায়েল পরিকল্পিতভাবে ফিলিস্তিনি বসতি ধ্বংস করছে। পাশাপাশি ইসরায়েল সেখানে মানবিক কার্যক্রম পরিচালনাকারীদের নিরাপত্তার বিষয়টির প্রতি চূড়ান্ত অবজ্ঞা প্রদর্শন করছে বলে মনে করছে ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ)।
গতকাল বুধবার গাজায় এমএসএফের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়। উপত্যকাটিতে দায়িত্বরত দাতব্য সংস্থাটির জরুরি সমন্বয়ক আমন্ড বাহজেরওল ওই বিবৃতিতে বলেছেন, গাজার ফিলিস্তিনিদের ও তাঁদের সহায়তায় যাঁরা আসছেন, তাঁদের একটি গণকবরে পরিণত হয়েছে।
গত মাসে ইসরায়েলি সেনারা গাজায় একটি অ্যাম্বুলেন্স লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে ১৫ চিকিৎসা ও উদ্ধারকর্মী নিহত হন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এ ঘটনা তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
বাহজেরওল বলেছেন, ‘আমরা গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ ও সেখানকার সব বাসিন্দাকে জোর করে বাস্তুচ্যুত হতে দেখতে পাচ্ছি।’
ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গাজার চিকিৎসাকেন্দ্রগুলো পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলা এবং জায়গা খালি করে দেওয়ার নির্দেশ থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। এমএসএফ কর্মীদেরও অনেক জায়গা থেকে সরে যেতে হয়েছে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও রোগীদের সঙ্গে এমএফএফ কর্মীরা আটকা পড়ে গেছেন এবং নিরাপদে সরে যেতে পারছেন না।
বাহজেরওল আরও বলেছেন, ফিলিস্তিনি ও তাঁদের যাঁরা সাহায্য করতে এসেছেন, তাঁদের জন্য গাজায় নিরাপদ কোনো জায়গা নেই। চরম অনিরাপত্তার মধ্যে মানবিক সহায়তায় এগিয়ে যেতে দারুণ সংগ্রাম করতে হচ্ছে, জরুরি সরবরাহ প্রায় নেই।
প্রায় দুই মাস যুদ্ধবিরতির পর মার্চ থেকে গাজায় পুনরায় বিমান হামলা এবং স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল।
এর পর থেকে গাজায় কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন, বাস্তুচ্যুত হয়েছেন আরও বহু মানুষ।
এদিকে গত ২ মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজায় মানবিক ত্রাণসহায়তা প্রবেশ করতে দিচ্ছে না।
জাতিসংঘ বলেছে, গাজায় জ্বালানি, পানিসহ অন্যান্য জরুরি পণ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
ত্রাণ সরবরাহ আটকে দেওয়া নিয়ে গতকাল বুধবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কারৎজ বলেছেন, ইসরায়েলের কৌশল একদম পরিষ্কার, গাজায় কোনো মানবিক ত্রাণ প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে এটা প্রধান অস্ত্রগুলোর একটি।
বর্তমান বাস্তবতায় গাজায় কোনো মানবিক ত্রাণ প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলেও স্পষ্ট করে বলেছেন এই মন্ত্রী।
আরও পড়ুনগাজায় অ্যাম্বুলেন্সে ইসরায়েলের হামলা, নিহত ১৫০৩ নভেম্বর ২০২৩.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ঈদের পর ঢিলেঢালা বাজার, পণ্যের দামও কমেছে
কোরবানি ঈদের চার দিন পরেও নিত্যপণ্যের বাজারে বেশ ঢিলেঢালা ভাব দেখা গেছে। বাজারে ক্রেতার উপস্থিতি যেমন কম, অন্যদিকে অনেক দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া ঈদের আগমুহূর্তে মুরগি, শসাসহ কিছু পণ্যের যে দাম বেড়েছিল, সেটিও কমেছে।
গত শনিবার ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ অনুষ্ঠিত হয়। এবারের ঈদে টানা ১০ দিনের ছুটি রয়েছে, যা শেষ হবে ১৪ জুন শনিবার। লম্বা এই ছুটিতে যাঁরা রাজধানীর বাইরে গেছেন, তাঁদের অনেকে এখনো ঢাকায় ফেরেননি। সবজি, মাছ ইত্যাদি ছাড়া অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ–শৃঙ্খলও সেভাবে সচল হয়নি।
বিক্রেতারা জানান, ক্রেতা কম থাকায় গত কয়েক দিনেই খুবই ঢিলেঢালাভাবে বিক্রি হয়েছে। তবে আজ শুক্রবার থেকে বেচাকেনা ভালোভাবে শুরু হবে বলে আশা করছেন তাঁরা। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, টাউন হল বাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে এবং বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
কোরবানির ঈদের আগে হঠাৎ বাজারে শসা, কাঁচা মরিচ, গাজর, টমেটো ও লেবুর দাম বেড়ে গিয়েছিল। মূলত ওই সময় এসব পণ্যের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছিল। তবে ঈদের পরে সেই দাম কমেছে। গতকাল বাজারে প্রতি কেজি শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ঈদের আগে শসার কেজি ছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকা। কোথাও এর চেয়ে বেশি দামেও শসা বিক্রি হয়েছিল। বাজারে গতকাল প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ৫০-৬০ টাকায়, যা ঈদের আগে ১২০ থেকে ১৬০ টাকা ছিল। সালাদ পণ্যের মধ্যে টমেটোর দাম এখনো বেশি রয়েছে। গতকাল পর্যন্ত প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হয়েছে ১০০-১২০ টাকায়, যা ঈদের আগেও একই ছিল।
বাজারে অন্যান্য সবজির দামও স্থিতিশীল রয়েছে। অধিকাংশ সবজিই ৪০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। যেমন লাউ, পেঁপে, পটোল, চিচিঙ্গা, ঝিঙে, ধুন্দুল প্রভৃতি সবজি ৪০-৫০ টাকায় এবং বরবটি, ঢ্যাঁড়স, কাঁকরোল, করলা, বেগুন প্রভৃতি সবজি ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি আলু ২০-২২ টাকা ও পেঁয়াজ ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
কোরবানি ঈদের পরপর বাজারে গরু, খাসি ও মুরগির মাংসের চাহিদা তুলনামূলক কম। এ কারণে মাংসের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের উপস্থিতিও কম দেখা গেছে। ঈদের আগে মুরগির দাম বেড়েছিল, সেটি কমেছে। তবে গরু ও খাসির দাম আগের মতোই রয়েছে। গতকাল প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০-১৮০ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৫০-৩০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে। ঈদের আগে এই দাম কেজিতে ২০-৩০ টাকা বেশি ছিল। আর ফার্মের মুরগির ডিমের দাম আগের মতোই ডজন ১৩০ টাকা রয়েছে। মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে গরুর মাংস বিক্রেতা মো. রানা বলেন, বর্তমানে সাধারণ গ্রাহক খুব কম। তবে ঈদ–পরবর্তী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য মাংস বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজারেও কমসংখ্যক ক্রেতা দেখা গেছে। অধিকাংশ মাছের দাম কিছুটা কমেছে। গতকাল প্রতি কেজি চাষের রুই ৩২০-৩৮০
টাকা, তেলাপিয়া ২২০-২৪০ টাকা, পাঙাশ ২০০-২৩০ টাকা, কই ২৩০-২৫০ টাকা, চিংড়ি ৭০০-৮৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আকারভেদে ইলিশের দামও কেজিতে ১০০-৩০০ টাকার মতো কমেছে।
অন্যান্য মুদিপণ্যের মধ্যে চাল, ডাল, তেল প্রভৃতি আগের দামেই বিক্রি হতে দেখা গেছে। বর্তমানে বাজারে ডায়মন্ড, মঞ্জুর, সাগরসহ অধিকাংশ মিনিকেট চাল প্রতি কেজি ৭২-৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম রাখা হচ্ছে ১৮৯ টাকা।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারে কথা হয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সাব্বির আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঈদের ছুটি শেষে গতকাল সকালেই ঢাকায় ফিরেছি। বাসায় মাছ, মাংস আছে; শুধু সবজি কিনতে বাজারে এসেছি।’