ঢাবিতে হামলায় জড়িতদের শনাক্তে শিক্ষার্থীদের ছায়া কমিটি
Published: 17th, April 2025 GMT
গত বছরের জুলাইয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের শনাক্তে ‘ছায়া তদন্ত কমিটি' গঠন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) ঢাবি সাংবাদিক সমিতিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট নিয়ে অসন্তোষ জানিয়ে শিক্ষার্থীরা এ পাল্টা কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন।
ঘোষণা অনুযায়ী, ৩৪ সদস্যের একটি ছায়া তদন্ত কমিটি আগামী ১ মাসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করবে।
আরো পড়ুন:
মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে আগুনদাতাদের গ্রেপ্তার দাবি
ভাস্কর মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে আগুন দেওয়া ন্যক্কারজনক: সাদা দল
শিক্ষার্থীরা বলেন, জুলাইয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের অন্তত কয়েকশ নেতাকর্মী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। কিন্তু তদন্ত কমিটি মাত্র ১২৮ জনের তালিকা প্রকাশ করে, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের মতো রাঘব বোয়ালরা বাদ পড়ে। এর মধ্যে আবার ছয়জন রয়েছে, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাহিরের। এমন রিপোর্ট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রহসনের নামান্তর।
এ সময় ঢাবি শিক্ষার্থী সর্দার নাদিম মাহমুদ শুভ বলেন, “সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হাজারখানেক ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটিতে আমরা মাত্র ১২৮ জনের নাম পাই। সঠিক তদন্তের জন্য আমরা এমন উদ্যোগ নিয়েছি।”
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী রেজওয়ান আহম্মেদ রিফাত বলেন, “আমরা ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে হামলার শিকার ও প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে একটি ছায়া তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। এই কমিটির প্রধান কাজ হবে জুলাই আগস্টে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িতদের তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করা। আমরা আগামী ১ মাসের মধ্যে এই শ্বেতপত্রটি প্রকাশ করব।”
এ সময় শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং গণমাধ্যমকর্মীদের উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ দিয়ে হামলাকারীদের তালিকা প্রণয়নে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান তিনি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রিফাত বলেন, “সময় যত যাচ্ছে তথ্যপ্রমাণ মুছে যাচ্ছে। তাই আমরা একটা শ্বেতপত্র তৈরি করে রেখে দিতে চাই, যেন আগামী প্রজন্ম মনে রাখে কারা এই হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল। আমরা এটা পরে প্রশাসেনের কাছে জমা দেব। প্রশাসন চাইলে আমাদের রিপোর্ট বিবেচনায় নিয়ে তদন্তে নামতে পারে।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা প্রত্যক্ষভাবে জড়িতদের শানাক্ত করার পাশাপাশি হামলায় পরোক্ষভাবে যারা জড়িত ছিল, যেমন লাঠিসোটা এগিয়ে দেওয়া, অনলাইনে উস্কে দেওয়া, ফেসবুক মেসেঞ্জারে হামলার বিষয়ে ইন্ধন দেওয়া ব্যক্তিদেরও এ তালিকায় রাখা হবে।”
শিক্ষার্থীদের তদন্ত কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড.
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ ক ষ র থ দ র ওপর হ কম ট র
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে
সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।
এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।
এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’
আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।