দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আত্মহত্যা শ্রমিকের
Published: 18th, April 2025 GMT
কালিয়াকৈরে একটি পোশাক কারখানার দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে রাসায়নিক খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন এক শ্রমিক। গত বৃহস্পতিবার রাতে মৌচাক নিশ্চিন্তপুর এলাকার মন্ট্রিমস লিমিটেড নামে একটি পোশাক কারখানায় এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী ইদ্রিস আলী (২০) মন্ট্রিমস লিমিটেড কারখানার কার্টন সেকশনে চাকরি করতেন। নিশ্চিন্তপুর এলাকার তমিজ উদ্দিনের বাড়িতে পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকতেন তিনি।
আত্মহত্যার আগে ফেসবুক পোস্টে ইদ্রিস আলী লেখেন, কারখানাটিতে এক বছর ধরে চাকরি করেন তিনি। কিছু লোক আসার তিন মাস এবং ছয় মাস হওয়ার পরেই তাদের স্থায়ী করে। তাঁকে করে না। কারণ হচ্ছে, তিনি মেশিনের লোক। একদিন ৬টায় গিয়েছিলেন, এর জন্য বিচার করেছে। কী অপরাধ ছিল তাঁর। তাদের কারণে জীবন শেষ করে দেবেন তিনি। এর জন্য দায়ী তাদের সেকশনের প্ল্যানিং কর্মকর্তা কামরুল এবং ম্যানেজার হারুন। মানুষকে মানুষ মনে করে না তারা। পোস্টে আরও লেখেন, ‘তারা মনে করে তারা সোনার তৈরি, আমরা মাটির তৈরি। আমি আজকে সুইসাইড করব। ঈদের নিয়মে আমি অনেক কষ্ট পাইছি, এই পৃথিবীর মানুষ বড়ই নিষ্ঠুর।’
ফেসবুকে এই পোস্ট দেওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই কারখানায় রাখা বিষাক্ত রাসায়নিক খান ইদ্রিস আলী। এরপর ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়লে সহকর্মী ও কারখানা কর্তৃপক্ষের লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় তানহা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। খবর পেয়ে মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ রাতেই ইদ্রিস আলীর লাশ উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
কারখানার কয়েকজন শ্রমিক জানান, ইদ্রিস আলীর চাকরির এক বছর হয়ে গেলেও তাঁকে স্থায়ী করা হয়নি। স্থায়ী করার বিষয়ে তিনি যখনই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে গেছেন, তখনই তাঁকে ওই দুই কর্মকর্তা গালাগাল করেছেন। এ ছাড়া তিনি নানা বিষয়ে বেশ কিছুদিন ধরে হতাশার মধ্যে ছিলেন।
শ্রমিকরা জানান, কারখানার কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ ও কামরুল ইসলাম ম্যানেজমেন্টে যোগ দেওয়ার পর থেকে শ্রমিকদের ওপর অত্যাচার করছেন। মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করেন তারা। কথায় কথায় চাকরি থেকে ছাঁটাই করার হুমকি দেয়। ওই দুই কর্মকর্তাকে অবিলম্বে বহিষ্কারের দাবি জানান তারা।
নিহত শ্রমিকের স্ত্রী হাসি আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী মারা গেছে, এখন তাঁকে নিয়ে হাসপাতালে রয়েছি। এর বেশি কিছু আমি বলতে পারব না।’
কারখানাটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনের ভাষ্য, কারখানার একজন শ্রমিক বিষ জাতীয় কিছু খেয়ে আত্মহত্যা করেছে। কারণ জানতে চাইলে তিনি ফোনকলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এরপর একাধিকবার ফোন করা হলেও ধরেননি।
ভুক্তভোগী ইদ্রিস আলীর বোনের জামাই বাবু বলেন, ‘অনেক দিন হলো কাজ করে ইদ্রিস। তার সঙ্গের সবাইকে চাকরিতে স্থায়ী করলেও কর্তৃপক্ষ তাকে স্থায়ী করেনি।’
কালিয়াকৈর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) যোবায়ের জানান, ইদ্রিস আলী নামে এক শ্রমিক কারখানার ভেতরে গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে বিষাক্ত কিছু খেয়ে আত্মহত্যা করেছে। তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দ ই কর মকর ত ফ সব ক
এছাড়াও পড়ুন:
পানিতে ভাসছিল ২২ দিনের শিশুর মৃতদেহ, ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন মা
ঘর থেকে প্রায় ১৫ ফিট দূরে ছোট আকারের একটি পানি নিষ্কাশনের ডোবা। হঠাৎ সেই ডোবাতে দেখা যায় শিশু মুনতাহার ভাসমান মৃতদেহ। মুহূর্তেই ওই বাড়িসহ আশপাশের এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। গতকাল শনিবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার সময় নিজের ঘরেই ঘুমিয়ে ছিলেন শিশুটির মা তানজীলা খাতুন। তবে কীভাবে ২২ দিনের শিশুটি ডোবার পানিতে পড়ল, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।
ঝিনাইদহ সদরের নরহরিদ্রা গ্রামের মিল্টন বিশ্বাসের ২২ দিন বয়সী এই কন্যা শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায় পুলিশ। শিশুটির মা তানজীলা খাতুন ও তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি হেফাজতে রেখেছে পুলিশ। শিশুর বাবা মিল্টন বিশ্বাস গাজীপুরে একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন।
জানা যায়, দুপুরে নিজ ঘরে শিশু মুনতাহাকে নিয়ে শুয়েছিলেন মা তানজীলা খাতুন। কিছুক্ষণ পর বাড়ির অন্য সদস্যরা এসে দেখেন, মুনতাহা সেখানে নেই। পরে শিশুর মাকে জিজ্ঞাসা করলে বলে কেউ জ্বীনের বেশে এসে ওকে নিয়ে গেছে। পরে কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর বাড়ির পাশের নলকূপের ডোবা থেকে মুনতাহার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয় যুবক সোহাগ হোসেন বলেন, ২২ দিনের শিশু হাঁটতে হাঁটতে গিয়ে পানিতে ডুবে মরবে এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আর ঘটনার সময় বাড়িতে তার মা ছাড়া কেউ ছিল না। পরে শিশুর মা তানজীলা খাতুনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি আমরা নিয়েছি। সেখানে বেশকিছু কথোপকথন পেয়েছি অন্য একটি ছেলের সঙ্গে। আমাদের ধারণা, পরকীয়ার জেরেই শিশুটিকে তার মা হত্যা করতে পারেন। পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এবং মোবাইল ফোনের তথ্য ঘাটলে সব বিষয় পরিষ্কার হয়ে যাবে।
শিশু মুনতাহার দাদী নাসরিন খাতুন বলেন, ঘটনার প্রায় আধাঘণ্টা আগে বাড়িতে দেখি, মুনতাহাকে নিয়ে ওর মা খেলা করছে। এরপর ফিরে দেখি, তানজীলা (শিশুর মা) ঘুমাচ্ছে; কিন্তু মুনতাহা নেই। পরে খোঁজাখুজি করে ডোবায় মৃতদেহ মেলে। তবে এই শিশুর মৃত্যুর পেছনে তার ছেলের বউ (শিশুর মা) জড়িত কি না সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি তিনি। তিনি বলেন, পুলিশ তদন্ত করে সঠিক ঘটনা বের করুক। তবে আমরা নাতনী হত্যার সঠিক বিচার চাই।
মুনতাহার মা তানজীলা খাতুন বলেন, ‘আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। দেখলাম জ্বীনের বেশ ধারণ করে কেউ ওকে (মুনতাহাকে) নিয়ে গেল। এরপর কীভাবে কি হল বলতে পারছি না।
তবে এই শিশুর মৃত্যুর পর ঘটনাস্থলে গিয়ে তানজীলা খাতুনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি হেফাজতে নিলেও এ বিষয় নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহাফুজুর রহমান।
এ বিষয়ে জেলা পুলিশের মিডিয়া বিভাগের দায়িত্বরত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান জাকারিয়া বলেন, শিশুটির মৃত্যুর বিষয় নিয়ে তদন্ত চলছে। তার মাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বিস্তারিত পরে জানানো যাবে।