চাল উৎপাদনের ঘাটতি মেটাতে সরকার বেসরকারি খাতে ১৬ লাখ ৭৫ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছিল। চাল আমদানি উৎসাহিত করতে শুল্ক–করও তুলে দেওয়া হয়। ব্যবসায়ীরা যাতে চাল আমদানি করেন, সে জন্য চার দফা আমদানির অনুমতির সময় বাড়ানো হয়েছিল। তবে শুল্ক ছাড়ের সুবিধা এবং সময়সীমা বাড়ানোর পরও অনুমতির ৬৮ শতাংশ চাল আমদানি করেননি ব্যবসায়ীরা।

চাল আমদানির সময়সীমা পার হওয়ার পর বাজারে মোটা চালের দাম আবারও বেড়েছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবির হিসাবে, এক সপ্তাহে মোটা চালের দাম ২ শতাংশ বেড়েছে। মোটা চালের দাম ৫০–৫৫ টাকা থেকে বেড়ে ৫০–৫৭ টাকায় উন্নীত হয়েছে।

বোরো মৌসুমের নতুন ফসল বাজারজাত হওয়ার আগপর্যন্ত আমদানির সময়সীমা বাড়ানো দরকার ছিল। আবার একই সঙ্গে কৃষকেরা যাতে ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত না হন, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।  খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষণা পরিচালক, সিপিডি

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ গত ৩১ মার্চ এক প্রতিবেদনে বলছে, ২০২৫ সালে সব ধরনের চালের দাম রেকর্ড পরিমাণে বেড়েছে। আগামী মে মাসে বোরোর ফলন বাজারজাত হলে চালের দাম কিছুটা কমতে পারে। তবে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় আগস্ট থেকে চালের দাম আবার বাড়তে পারে বলে সংস্থাটি পূর্বাভাস দিয়েছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.

মাসুদুল হাসান সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, চালের দাম সহনীয় রাখতে সরকার বেসরকারি খাতে আমদানির অনুমতি দিয়েছিল। ব্যবসায়ীরা খুব বেশি আমদানি করেননি, এটা ঠিক। তবে সরকারি–বেসরকারি খাতে এখন পর্যন্ত যা চাল আমদানি হয়েছে তাতে চাল নিয়ে আতঙ্ক কেটে গেছে। বাজারের মোটা থেকে মাঝারি আকারের চালের দামে স্থিতিশীলতা এসেছে।

চালে আমদানি শুল্ক, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক, অগ্রিম আয়কর এবং আগাম কর মিলে ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ শুল্ক-কর ছিল। এনবিআর অক্টোবর তিন দফায় সব ধরনের শুল্ক–কর প্রত্যাহার করে নেয়। এরপরও চাল আমদানি বাড়েনি।

অনুমতির ৬৮ শতাংশ চাল আসেনি

খাদ্য মন্ত্রণালয় গত বছরের নভেম্বরে চার দফায় ২৭৭টি বরাদ্দপত্রে (একই প্রতিষ্ঠানকে একাধিকসহ) ১৪ লাখ ৮১ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দেয়। অনুমতিপত্রে ১০ ও ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে চাল আমদানি করে বাজারজাতের শর্ত দেওয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে মাত্র এক লাখ টন চাল আমদানি করে বেসরকারি খাতে বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো। অর্থাৎ অনুমতির মাত্র ৭ শতাংশ চাল আমদানি হয়। এ পরিস্থিতিতে নতুন করে আরও দুই দফায় ৫৭টি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় দুই লাখ টন চাল আমদানির বরাদ্দ দেওয়া হয়। আবার এক মাস করে চার দফায় চাল আমদানির সময় বাড়ানো হয়। সর্বশেষ সময় বাড়িয়ে ১৫ এপ্রিল করা হয়েছিল। সব মিলিয়ে ৩৩৪টি বরাদ্দপত্রে ১৬ লাখ ৭৫ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছিল খাদ্য মন্ত্রণালয়।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরের তথ্যে দেখা যায়, গত নভেম্বরে অনুমতি দেওয়ার পর ১৫ এপ্রিলের সময়সীমা পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ৫ লাখ ৪০ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে। এসব চাল আমদানি করেছে ১৯০টি প্রতিষ্ঠান। চালে আমদানি শুল্ক, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক, অগ্রিম আয়কর এবং আগাম কর মিলে ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ শুল্ক-কর ছিল। এনবিআর অক্টোবর তিন দফায় সব ধরনের শুল্ক–কর প্রত্যাহার করে নেয়। এরপরও চাল আমদানি বাড়েনি।

সামনে বোরো মৌসুমের ফসল উঠবে। ফলে এখন আমদানি করে লাভ করা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় থাকায় চাল আমদানি পুরোটা হয়নি।চট্টগ্রামের আফসানা ট্রেডিংয়ের কর্ণধার ওমর আজম

বেসরকারি খাতে আমদানির অনুমতি পাওয়া একটি প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের আফসানা ট্রেডিং। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার ওমর আজম প্রথম আলোকে বলেন, সামনে বোরো মৌসুমের ফসল উঠবে। ফলে এখন আমদানি করে লাভ করা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় থাকায় চাল আমদানি পুরোটা হয়নি। তবে চাল আমদানি কম হলেও বাজারে সংকট নেই। আবার মধ্যস্বত্বভোগীরা ধানের দাম বাড়ানোর সুযোগ পায়নি।

বরাদ্দ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর আরেকটি চট্টগ্রামের চাক্তাইয়ের প্রতিষ্ঠান মক্কা ট্রেডার্স। প্রতিষ্ঠানটি ১১ হাজার টন চালের বরাদ্দ পেয়ে ১০ হাজার ৯১৭ টন আমদানি করেছে। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার মহিউদ্দিন আহমেদ বেলাল প্রথম আলোকে বলেন, মূলত যাদের চাল বিক্রির চ্যানেল রয়েছে, তারাই চাল আমদানি করেছে। যারা আমদানি করেছে, তারা নামমাত্র লাভে বিক্রি করেছে। নতুন প্রতিষ্ঠানগুলো সেভাবে আমদানি করতে পারেনি।

সরকারি আমদানি বাড়ছে

ট্যারিফ কমিশনের হিসাবে, দেশে বছরে চালের চাহিদা ৩ কোটি ৫০ লাখ থেকে ৩ কোটি ৮০ লাখ টন। গত আগস্টে বন্যার কারণে চাল উৎপাদন কমতে পারে, সে জন্য অন্তর্বর্তী সরকার চালের মজুত বাড়াতে সচেষ্ট হয়। বেসরকারি খাত ছাড়াও সরকারি খাতে সাড়ে ৯ লাখ টন চাল আমদানির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে সরকার। এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, সরকারিভাবে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত আমদানি করা ৬ লাখ ৩৮ হাজার টন চাল খালাস হয়েছে।

চালের নিরাপত্তা মজুতের পরিমাণ ধরা হয় ১১ লাখ টন। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, সরকারি আমদানির পরও ১৬ এপ্রিল সরকারি গুদামে চালের মজুত ছিল ৯ লাখ ২৭ হাজার টন। পাইপলাইনে থাকা চাল গুদামে পৌঁছালে মজুত আরও বাড়বে।

খাদ্যসচিব মো. মাসুদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি মজুত কমবেশি ১০ লাখ টনের আশপাশে থাকবে। চালের মজুত বিপজ্জনক পর্যায়ে নামার শঙ্কা নেই। কারণ, আমদানির পাশাপাশি বোরো মৌসুমে চাল সংগ্রহ শুরু হবে। 

আমদানির সুযোগ বহাল রাখা দরকার 

গবেষণা সংস্থা সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদিন দেশে এক লাখ টন করে চালের চাহিদা রয়েছে। সরবরাহ স্বাভাবিক না থাকলে এখন দাম যে টান টান অবস্থায় রয়েছে, তা না–ও থাকতে পারে। এ জন্য বোরো মৌসুমের নতুন ফসল বাজারজাত হওয়ার আগপর্যন্ত আমদানির সময়সীমা বাড়ানো দরকার ছিল। আবার একই সঙ্গে কৃষকেরা যাতে ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত না হন, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হ জ র টন চ ল আমদ ন টন চ ল আমদ ন র আমদ ন র সময় প রথম আল ক আমদ ন র স র সময়স ম শ ল ক কর ব সরক র ল খ টন বর দ দ

এছাড়াও পড়ুন:

৪৭তম বিসিএস প্রিলি পরীক্ষার্থীদের জন্য পিএসসির যত নির্দেশনা

আগামী শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের ওয়েবসাইটে পরীক্ষার আসনব্যবস্থা, সময়সূচি ও শিক্ষার্থীদের জন্য নানা নির্দেশনা প্রকাশ করা হয়েছে।

পিএসসি জানিয়েছে, ৪৭তম বিসিএসে অংশ নিতে মোট ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৭৪৭ জন চাকরিপ্রার্থী আবেদন করেছেন। ৪৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, ৪৭তম বিসিএসে মোট শূন্য ক্যাডার পদের সংখ্যা ৩ হাজার ৪৮৭। আর নন-ক্যাডার পদের সংখ্যা ২০১। এই বিসিএস থেকে মোট ৩ হাজার ৬৮৮ জনকে (ক্যাডার ও নন–ক্যাডার মিলিয়ে) নিয়োগ দেওয়া হবে। এই বিসিএসে কিছু নতুন পদ যুক্ত হয়েছে।

সময়সূচি ও কেন্দ্র

১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে পরীক্ষা। পরীক্ষাকেন্দ্র ৮টি। ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ।

আরও পড়ুনইউনিমেট-শাবানা মাহমুদ-দেখার হাওর-বেন গুরিয়ান বিমানবন্দর-কী, জেনে নিন১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫পরীক্ষার্থীদের করণীয়

১। পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই সকাল ৯টা ৩০ মিনিটের মধ্যে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে হবে। ৯টা ৩০ মিনিটের পর কোনো পরীক্ষার্থী হলে প্রবেশ করতে পারবেন না। পরীক্ষার্থীদের হলের নাম ও কক্ষ নম্বর আগেই মেসেজের মাধ্যমে তাঁদের মুঠোফোন নম্বরে প্রেরণ করা হবে।

২। সকাল ৯টা ৩০ থেকে ৯টা ৫৫ মিনিটের মধ্যে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তরপত্র বিতরণ করা হবে। উত্তরপত্রের ৪টি সেট থাকবে, যেমন সেট # ১, ২, ৩ ও ৪। সকাল ১০টায় পরীক্ষার্থীদের মধ্যে প্রশ্নপত্র বিতরণ করা হবে।

আরও পড়ুন১২ দিনের ছুটিতে যাচ্ছে সরকারি নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

৩। পরীক্ষাকেন্দ্রে বইপুস্তক, সব ধরনের ঘড়ি, মুঠোফোন, ক্যালকুলেটর, সব ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস, ব্যাংক কার্ড/ক্রেডিট কার্ডসদৃশ কোনো ডিভাইস, গহনা ও ব্যাগ আনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বর্ণিত নিষিদ্ধ সামগ্রীসহ কোনো পরীক্ষার্থী পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে পারবেন না।

৪। পরীক্ষার সময় পরীক্ষার্থীরা কানের ওপর কোনো আবরণ রাখবেন না, কান খোলা রাখতে হবে। কানে কোনো ধরনের হিয়ারিং এইড ব্যবহারের প্রয়োজন হলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শপত্রসহ কমিশনের অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে।

৫। পরীক্ষায় মোট ২০০টি এমসিকিউ টাইপ প্রশ্ন থাকবে। পরীক্ষার্থী প্রতিটি শুদ্ধ উত্তরের জন্য ১ নম্বর পাবেন, তবে ভুল উত্তর দিলে প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য মোট প্রাপ্ত নম্বর থেকে ০.৫০ নম্বর করে কাটা হবে।

আরও পড়ুন৪৭ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি: শেষ মুহূর্তে আত্মবিশ্বাসই আসল প্রস্তুতি১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

৬। প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন থেকে শ্রুতলেখক নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কমিশনের মনোনীত শ্রুতলেখক ছাড়া অন্য কেউ শ্রুতলেখক হিসেবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী প্রার্থীদের জন্য শ্রুতলেখকদের ক্ষেত্রে প্রতি ঘণ্টার পরীক্ষার জন্য ১০ মিনিট অতিরিক্ত সময় দেওয়া হবে এবং অন্যান্য প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে প্রতি ঘণ্টার পরীক্ষার জন্য ৫ মিনিট অতিরিক্ত সময় দেওয়া হবে।

পরীক্ষাকেন্দ্র ও নির্দেশনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন।

আরও পড়ুন৪৩তম বিসিএসের প্রশাসনে প্রথম শানিরুলকে ভাইভায় যেসব প্রশ্ন করা হয়েছিল ২৯ মে ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চাকসু: মনোনয়নপত্র বিতরণের সময় বৃদ্ধির দাবি ছাত্রদলের
  • ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাংলাদেশ সফরের সময়সূচি ঘোষণা
  • ৪৭তম বিসিএস প্রিলি পরীক্ষার্থীদের জন্য পিএসসির যত নির্দেশনা
  • যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের মালিকানা সংক্রান্ত চুক্তি নিয়ে ওয়াশিংটন–বেইজিং সমঝোতা