পাকিস্তানে কেএফসির বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নিহত ১, গ্রেপ্তার ১৭৮
Published: 19th, April 2025 GMT
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ এবং এতে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের প্রতিবাদে পাকিস্তানজুড়ে মার্কিন ফাস্টফুড চেইন কেএফসির শাখাগুলোর বিরুদ্ধে একাধিক বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে কেএফসির এক কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া কেএফসির একাধিক শাখায় ক্ষুব্ধ জনতার ১০ টিরও বেশি হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় অন্তত ১৭৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। খবর রয়টার্স ও বিবিসির
গত এক সপ্তাহে দেশজুড়ে কেএফসির অন্তত ২০টি শাখায় হামলার চেষ্টা হয়েছে বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তালাল চৌধুরী।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, লোহার রড হাতে জনতা কেএফসি দোকানে ঢুকে পড়ছে এবং দোকান জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। এরপর পুলিশ এসে বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার করে। করাচিতে দুটি দোকানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
একটি ভিডিওতে একজন লোক চিৎকার করে বলছেন, ‘তোমরা যেটা থেকে টাকা কামাচ্ছো, ওরা সেই টাকা দিয়ে গুলি কিনছে।’
কর্মকর্তারা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, করাচি, লাহোর ও ইসলামাবাদসহ পাকিস্তানের প্রধান প্রধান শহরে অন্তত ১১ টি ঘটনায় লাঠিসোটা হাতে বিক্ষোভকারীরা কেএফসির দোকানে ভাঙচুর চালায়। এতে জড়িত থাকার অভিযোগে ওই বিক্ষোভকারীদের আটক করে পুলিশ।
লাহোরে একটি দোকানে বন্দুকধারীদের গুলিতে এক কর্মচারী এ সপ্তাহে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশ কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, হামলার সময় সেখানে কোনও বিক্ষোভ চলছিল না। ঘটনাটি রাজনৈতিক ভাবাবেগ থেকে ঘটেছে কিনা বা অন্য কোনও কারণ ছিল কিনা তা তদন্ত করে দেখছেন তারা।
লাহোর পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ফয়সাল কামরান জানান, শহরজুড়ে ২৭টি কেএফসি আউটলেটে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। শহরটিতে দুইটি হামলা সংঘটিত হয়েছে এবং পাঁচটি হামলা পুলিশ ঠেকাতে পেরেছে।
টিএলপির মুখপাত্র রেহান মহসিন খান বলেন, ‘আমরা মুসলিমদের ইসরায়েলি পণ্য বর্জনের আহ্বান জানিয়েছি, তবে কেএফসির সামনে প্রতিবাদের ডাক দেইনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোনও ব্যক্তি দলীয় পরিচয়ে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলেও, সেটি দলীয় নীতির অংশ নয়।’
পাকিস্তানে দীর্ঘদিন ধরেই কেএফসি মার্কিন সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে দেখা হয়ে আসছে, যার কারণে মানুষের যুক্তরাষ্ট্র-বিরোধী ভাবাবেগের কারণে বহুবার তা বিক্ষোভ ও হামলার শিকার হয়েছে।
সম্প্রতি গাজায় ইসরায়েলের অভিযানের বিরুদ্ধে পাকিস্তানসহ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে পশ্চিমা ব্র্যান্ডগুলো বর্জন ও প্রতিবাদ চলছে।
রয়টার্স লিখেছে, কেএফসির মূল প্রতিষ্ঠান ইয়াম ব্র্যান্ডস এখনও এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। তবে তাদের আরেক ব্র্যান্ড পিৎজা হাটও গাজা যুদ্ধের কারণে বর্জনের মুখে থাকায় ব্যবসায়িক ক্ষতিতে পড়েছে বলে জানায় সংস্থাটি।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ