সরাইলে মুঠোফোন চুরির অপবাদ দিয়ে কিশোরকে গাছে ঝুলিয়ে নির্যাতন, বিএনপি নেতা কারাগারে
Published: 19th, April 2025 GMT
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে মুঠোফোন চুরির অপবাদ দিয়ে এক কিশোরকে (১৭) তার পরিবারের সদস্যদের সামনে দুই গাছের সঙ্গে উপর্যুপরি পিটিয়েছেন বিএনপির স্থানীয় এক নেতা। গত বৃহস্পতিবার উপজেলার অরুয়াইল ইউনিয়নের বাদে অরুয়াইল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার একটি ভিডিও শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী কিশোরের চাচাতো ভাই বাদী হয়ে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা আবদুল লতিফের (৫০) নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৮ থেকে ১০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। শুক্রবার বিকেলে ওই নেতাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। আবদুল লতিফ অরুয়াইল ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি।
পুলিশ, মামলার এজাহার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার ভোরে আবদুল লতিফ ৮ থেকে ১০ জনকে সঙ্গে নিয়ে ভুক্তভোগী কিশোরের বাড়িতে যান। প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে মুঠোফোন চুরির অপবাদ দিয়ে তাঁকে ধরে মারধর করতে থাকেন। একপর্যায়ে কিশোরের বাড়ির উঠানে হাত-পা বেঁধে গাছে ঝুলিয়ে লাঠি দিয়ে উপর্যুপরি পেটান। প্রভাবশালী হওয়ায় স্বজনেরা তাঁকে বাধা দেওয়ার সাহস পাচ্ছিলেন না। এ ঘটনার একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
ছড়িয়ে পড়া ১ মিনিট ৮ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, কিশোরের দুই হাত একটি গাছে এবং দুই পা অন্য আরেকটি গাছের সঙ্গে বাঁধা। কিশোরের পুরো শরীর ঝুলছে। আবদুল লতিফ লাঠি দিয়ে কিশোরের দুই পায়ের নিচের অংশে মারধর করছেন। কিশোর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আল্লাহ আল্লাহ বলে চিৎকার করছেন। উঠানের চারপাশে অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষ দাঁড়িয়ে নির্যাতনের দৃশ্য দেখছেন।
মামলার বাদী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা গ্রামের সবচেয়ে নিরীহ মানুষ। আবদুল লতিফ ইচ্ছা করলে আমাদের ওপর এসব করতে পারেন। কেউ বাধা দেবে না। তিনি কয়েক দিন ধরে আমার ভাইয়ের ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন।’
গ্রেপ্তার হওয়ায় এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আবদুল লতিফের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। জানতে চাইলে অরুয়াইল ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, তিনি (আবদুল লতিফ) দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির কমিটিতে আছেন। এমন কাজের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে উপজেলা বিএনপির মতামত চাওয়া হয়েছে। উপজেলার নেতাদের মতামতের পর তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, আবদুল লতিফ কয়েক দিন পরপর এমন ঘটনা ঘটিয়ে আসছেন। তিনি এমনটি করতে পারেন না। তিনি প্রভাবশালী লোক। তাঁর বিরুদ্ধে কেউ কথা বলেন না।
সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জব্দ করা জাটকা এতিমখানায় বিতরণ, সেই মাছ লুট করলেন আড়তদারেরা
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় জব্দ করা ৭০ কেজি জাটকা দুটি মাদ্রাসা ও এতিমখানায় বিতরণ করা হয়েছিল। তবে সেই মাছ লুট করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন আড়তদারের বিরুদ্ধে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় উপজেলার আমিরাবাদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল বিকেলে মৎস্য কার্যালয়ের উদ্যোগে পরিচালিত জাটকা রক্ষার অভিযানে আমিরাবাদ ও দশানী বাজার থেকে ৭০ কেজি জাটকা জব্দ করা হয়। অভিযান পরিচালনা করেন মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস। পরে আমিরাবাদ এলাকায় জব্দ করা জাটকা উপজেলার হাজীপুর ও ফরাজীকান্দি মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। স্থানীয় কিছু দুস্থ মানুষকেও কিছু জাটকা দেওয়া হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই জাটকা নিয়ে ওই দুই মাদ্রাসার শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কমিটির লোকজন সন্ধ্যায় আমিরাবাদের বেড়িবাঁধ এলাকায় পৌঁছান। তখন আমিরাবাদ বাজারের মাছের আড়তদার আবুল প্রধান, আরিফ গাজী, সেরু প্রধানিয়া, দেলু বেপারীসহ আরও কয়েকজন তাঁদের পথরোধ করেন এবং জাটকাগুলো লুট করে নিয়ে যান।
হাজীপুর মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম ও ফরাজীকান্দি মাদ্রাসার শিক্ষক মো. আল আমিন অভিযোগ করেন, মাছের ওই আড়তদারেরা তাঁদের নানাভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে তাঁদের কাছ থেকে জাটকা লুট করে নিয়ে যান। বাধা দিয়েও কাজ হয়নি। বিষয়টি মৎস্য কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানিয়েছেন।
এ অভিযোগের বিষয়ে আবুল প্রধান, আরিফ গাজী ও সেরু প্রধানিয়ার মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়। তবে দেলু ব্যাপারী মুঠোফোনে বলেন, জাটকা লুট করা তাঁদের উচিত হয়নি। ওই জাটকা আজ (বৃহস্পতিবার) তাঁরা ফেরত দেবেন। এটি তাঁদের বড় ভুল হয়েছে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস বলেন, বিষয়টি জানার পর ঘটনাস্থলে গিয়েছেন। জাটকা উদ্ধারে ব্যবস্থাপনা নেওয়া হচ্ছে।
ইউএনও মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর জাটকা উদ্ধারে তিনি থানার ওসি ও মৎস্য কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টির তদন্ত চলছে। এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এতিমদের জাটকা লুট হওয়ার বিষয়টি খুব দুঃখজনক।