সম্প্রতি একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ ক্যাপ্টেন রফিকুল আলম মোহাম্মদ খায়রুল বাশারের (ক্যাপ্টেন বাশার) অবিচল দেশপ্রেম ও অসম সাহসিকতার অজানা প্রামাণ্যচিত্র বিটিভি সম্প্রচার করেছে। বিটিভির এক সময়ের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘আইন-আদালত’-এর সফল নির্মাতা ও উপস্থাপক স্বনামধন্য আইনবিশারদ ও মানবাধিকারকর্মী ব্যারিস্টার রেজাউর রহমানের আন্তরিক প্রচেষ্টায় এটি সম্ভব হয়েছে। এজন্য তাঁকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। স্বাধীনতার ৫৪ বছরে এই প্রথম প্রামাণ্যচিত্রটি রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেলে সম্প্রচারিত হয়েছে। এটি দেশ-বিদেশে অসংখ্য দর্শকের মনে ব্যাপক নাড়া দিয়েছে। 
ক্যাপ্টেন বাশার একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর টর্চার (নির্যাতন) সেলে আটক ছিলেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন একাধিক উচ্চপর্যায়ের সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তা। রেজাউর রহমান তাদের মুখে বাংলার এই বীর সন্তানের অসম সাহসিকতা ও হানাদার বাহিনী কর্তৃক অকথ্য নির্যাতনের কাহিনি শুনে ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে এই প্রামাণ্যচিত্র তৈরিতে সংকল্পবদ্ধ হন এবং প্রস্তুতি নিতে থাকেন। 

ফ্যাসিস্ট শাসনামলে ব্যাপক ইতিহাস বিকৃতি ঘটে। ক্যাপ্টেন বাশারের বীরত্বগাথা, ত্যাগ-তিতিক্ষা ও দখলদার পাকিস্তান বাহিনীর নির্যাতন সেলে তাঁর প্রতি অকথ্য অত্যাচারের কাহিনি গোটা জাতি কখনও জানতে পারেনি। যাই হোক, ব্যারিস্টার রেজাউর রহমান প্রামাণ্যচিত্রটি করার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের পর তাঁর কাছে সেই সুযোগ আসে। তিনি বিটিভি কর্তৃপক্ষকে বোঝাতে সক্ষম হলেন যে, ঐতিহাসিক প্রয়োজনে ক্যাপ্টেন বাশারের প্রামাণ্যচিত্রটি সম্প্রচার করা অত্যাবশ্যক। বিটিভি কর্তৃপক্ষের সম্মতিক্রমে গত ১৪ মার্চ তিনি তাঁর পরিকল্পনা ও উপস্থাপনায় রাষ্ট্র ও জনগণের উন্নয়নবিষয়ক অনুষ্ঠান ‘জনতার সামনে’ সেটি সম্প্রচার করেন। সেখানে তিনি দেশবাসীকে দেখালেন শত নির্যাতনেও ক্যাপ্টেন বাশার তাঁর দেশপ্রেমে অবিচল ছিলেন এবং দেশের মর্যাদা রক্ষার্থে সদা সচেষ্ট থেকেছেন।

ক্যাপ্টেন বাশার ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আছির উদ্দিন আহমেদ ও মানবহিতৈষী রিজিয়া আহমেদের দ্বিতীয় সন্তান। পিতা আছির আহমেদ ছিলেন নীলফামারী গভর্নমেন্ট বয়েজ হাইস্কুলের (সাবেক হাই ইংলিশ স্কুল) প্রথম মুসলিম প্রধান শিক্ষক। ১৯৪০ সালে ক্যাপ্টেন বাশার জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তিনি শহীদ হন। 
ক্যাপ্টেন বাশার দেশপ্রেমে আত্মত্যাগ করে শহীদ হয়েছেন। তাঁর এই ত্যাগে অনুপ্রাণিত হয়ে আদর্শ দেশ গড়াই হোক আমাদের এ মুহূর্তের অঙ্গীকার। সুশাসন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই, অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা আনার জন্য আমাদের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে। একটি ন্যায়নিষ্ঠ সমাজ প্রতিষ্ঠাকল্পে সব ধরনের অনাচার, অবিচার, মিথ্যাচার, ঘুষ ও দুর্নীতি থেকে দূরে থাকতে হবে। মুনাফালোভী, কালোবাজারি, চাঁদাবাজ এবং সব ধরনের অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে। ভোটের মাধ্যমে সৎ, যোগ্য ও সুশিক্ষিত ব্যক্তিদের নির্বাচিত করে তাদের হাতে দেশ 
পরিচালনার ভার দিতে হবে। গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ, প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গড়ার মাধ্যমে একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত করতে পারলেই আমরা সত্যিকার 
অর্থে ক্যাপ্টেন বাশারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে পারব। তাঁর আত্মা শান্তি পাবে। তাহলে কেবল আমরা তাঁর রক্তঋণ কিছুটা হলেও পরিশোধ করতে সক্ষম হবো।
এখন রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ক্যাপ্টেন বাশারের পুনর্মূল্যায়নের সময় এসেছে। পারিবারিক পর্যায়ে ও সর্বমহলে দাবি উঠেছে ক্যাপ্টেন বাশারকে ‘জাতীয় বীর’ হিসেবে আখ্যায়িত করার। আশা করি উচ্চতর কর্তৃপক্ষ বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করে এ মর্মে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

একটি কথা উল্লেখ না করলেই নয়। ইতোমধ্যে দেশ-বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশিসহ বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছ থেকে প্রামাণ্যচিত্রটির নির্মাতা ব্যারিস্টার রেজাউর রহমান প্রশংসা কুড়াচ্ছেন। তাঁকে সশ্রদ্ধ অভিনন্দন। বিটিভি কর্তৃপক্ষ অনেক দিন পর এমন একটি উন্নত মানের অনুষ্ঠান সম্প্রচার করায় জন্য অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।

জেডএএম খায়রুজ্জামান: 
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও ক্যাপ্টেন বাশারের কনিষ্ঠ ভ্রাতা
zamkhairz@gmail.

com

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স মরণ

এছাড়াও পড়ুন:

আমরা চাঁদাবাজি, অসততা, দখলদারি, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে লড়ছি: জামায়াত আমির

ছবি. প্রথম আলো

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আইসিজের শুনানিতে পাল্টাপাল্টি অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া
  • আমরা চাঁদাবাজি, অসততা, দখলদারি, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে লড়ছি: জামায়াত আমির