দানপত্র দলিলে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জমি দখল, দলীয় কার্যালয়
Published: 20th, April 2025 GMT
কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ১০ শতক জায়গা দখল করে মহানগর আওয়ামী লীগের অফিস করার অভিযোগ উঠেছে। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ২০১৭ সালে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার সফিউল আহমেদ বাবুলকে হাত করে জায়গাটি হাতিয়ে নিয়ে ৯ তলা ভবন নির্মাণ করেন। সেসময় মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ছিলেন বাবুল।
শনিবার কুমিল্লা প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সাংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন ন্যাশনাল ফ্রিডম ফাইটার্স (এফএফ) ফাউন্ডেশনের নেতারা। জায়গাটি ফিরে পাওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তারা।
লিখিত বক্তব্য দেন সংগঠনটির কুমিল্লা শাখার আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউনুস আলী। তবে কমান্ডার সফিউল আহমেদ বাবুল বলেন, সাবেক এমপি বাহার জমির দলিল দিতে বাধ্য করেছিলেন, এই দলিলের বৈধতা নেই।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২০১৭ সালের ২৯ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নামে বরাদ্দ পাওয়া জায়গাটি অনিয়মতান্ত্রিক উপায়ে কমান্ডার সফিউল আহমেদ বাবুলের কাছ থেকে ১ কোটি ৪৮ লাখ টাকায় রেজিস্ট্রি দলিল করে নেন সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। জায়গাটি বিক্রির টাকা এনসিসি ব্যাংক কুমিল্লা শাখায় তাঁর (সফিউল আহমেদ বাবুল) ব্যক্তিগত হিসাবে জমা হয়। এ ঘটনায় ২০২৩ সালে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন করা হয়।
মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, সাবেক এমপি বাহার ও সফিউল আহমেদ বাবুল যোগসাজশ করে মুক্তিযোদ্ধাদের জায়গাটি হাতিয়ে নিয়েছেন। এ বিষয়ে গত ১৩ এপ্রিল অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছে একটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এর আগে ২০২২ সালের ২৩ জানুয়ারি কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের কাছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয় ভবন ভেঙে বিক্রির প্রসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধারা একটি অভিযোগ দেন, কিন্তু বাহারের প্রভাবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এফএফ ফাউন্ডেশনের সদস্য অধ্যাপক বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর হারুনুর রশিদ, মুকবুল আহমদ, মো.
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে কুমিল্লা সদর আসনের সাবেক এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সাবেক কমান্ডার সফিউল আহমেদ বাবুল। সমকালকে তিনি বলেন, ‘জায়গাটি বিক্রি ও দলিল দেওয়ার আইনগত ক্ষমতা ছিল না আমার। এ জমির মালিক কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। জেলা পর্যায় থেকে এ দলিল দেওয়া যায় না।’ তাঁর দাবি, সাবেক এমপি বাহার হুমকি দিয়ে তাঁর কাছ থেকে দানপত্র দলিল নিয়ে ওই জায়গায় মহানগর আওয়ামী লীগের অফিসের নামে ভবন করেন। আইনগতভাবে জায়গাটি মুক্তিযোদ্ধাদেরই রয়েছে। জায়গা বিক্রির অভিযোগ সঠিক নয়।
২০২১ সালের ২১ অক্টোবর গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে নতুন মহানগর আওয়ামী লীগের অফিস হিসেবে ভবনটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন ভবনটিতে হামলা ভাঙচুর ও লুট চালায় বিক্ষুব্ধ জনতা।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের শুনানি শেষ, আদেশ ৬ আগস্ট
রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের (রিভিউ) ওপর আদেশের জন্য আগামী ৬ আগস্ট তারিখ ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ।
আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের বেঞ্চ আজ বুধবার শুনানি শেষে আদেশের এই তারিখ ধার্য করেন।
গত ১৮ মে শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ রিভিউ আবেদনটি শুনানির জন্য ১ জুলাই তারিখ ধার্য করেছিলেন। ধার্য তারিখে বিষয়টি শুনানির জন্য রিভিউ আবেদনকারীপক্ষের আইনজীবীর সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ ১৫ জুলাই পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল মঙ্গলবার ও আজ বুধবার শুনানি হয়।
ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স সংশোধন করে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। পরে ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। রায়ে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক পদধারীদের পদক্রম ওপরের দিকে রাখা ও অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়; পাশাপাশি জেলা জজদের পদক্রম আট ধাপ উন্নীত করে সচিবদের সমান করা হয়।
আপিল বিভাগের রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতির পদক্রম এক ধাপ উন্নীত করে জাতীয় সংসদের স্পিকারের সমান এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক ও মহান স্বাধীনতাসংগ্রামে অংশগ্রহণ করে যে মুক্তিযোদ্ধারা বীর উত্তম খেতাব পেয়েছেন) পদক্রমে যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত বলে উল্লেখ করা হয়।
ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) তৎকালীন চেয়ারম্যান ২০১৭ সালে পৃথক আবেদন করেন। রিভিউ আবেদনে রাষ্ট্রের ৯০ জন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পক্ষভুক্ত হন। পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের ওপর গত ২৭ এপ্রিল শুনানি শুরু হয়।
আজ আদালতে রিভিউ আবেদনকারী মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন শুনানি করেন। রিট আবেদনকারীপক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলদের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম শুনানিতে অংশ নেন। এ ছাড়া ইন্টারভেনার (ব্যাখ্যাকারী) হিসেবে শুনানিতে অংশ নেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী, ১৯৮৬ সালে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরি করে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর একই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর তা জারি করা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে তা সংশোধন করা হয়।
সর্বশেষ সংশোধন করা হয় ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে। সংশোধিত এই ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরির ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদ, সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত ও সংজ্ঞায়িত পদগুলো প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিচের ক্রমিকে রাখা হয়েছে—এমন উল্লেখ করে এর বৈধতা নিয়ে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন মহাসচিব মো. আতাউর রহমান ২০০৬ সালে রিট করেন।
রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট আট দফা নির্দেশনাসহ ১৯৮৬ সালের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স (সংশোধিত) অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ২০১১ সালে আপিল করে। এ আপিলের ওপর শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ২০১৭ সালে করা আবেদনের ওপর আজ শুনানি শেষ হলো।