ইসরায়েলকে ড. ইউনূসের ১ হাজার কোটি টাকা দেওয়ার তথ্যটি ভুয়া:
Published: 20th, April 2025 GMT
ইসরায়েলকে ১ হাজার কোটি টাকা সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সম্প্রতি মুফতি আলাউদ্দিন জিহাদী নামের এক বক্তা তার এক বয়ানে এ অভিযোগ করেছেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং দাবি করছে, ইসরায়েলকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের টাকা দেওয়ার তথ্যটি ভুয়া।
রবিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের ফ্যাক্ট বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, ওই মুফতির ভুয়া বক্তব্য আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা প্রচার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। এ ধরনের মিথ্যা ও বানোয়াট প্রচারণা মূলত অধ্যাপক ইউনূস ও তার নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে চলমান সংঘবদ্ধ ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারের অংশ।
স্বতন্ত্র ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, প্রফেসর ইউনূসের প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ আমেরিকার ইসরায়েলকে ১ কোটি ডলারের সহায়তার বিষয়টি সর্বপ্রথম ২০২৩ সালের অক্টোবর বাংলা ইনসাইডার নামের একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত হয়। পরে তা আরো কিছু অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানার।
রিউমার স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২৩ সালের অক্টোবরে যখন ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা শুরু হয়, সে সময় বাংলাদেশে প্রচার করা হয় যে, ইসরায়েলকে ১০০ কোটি টাকা সহায়তা দিয়েছেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড.
অনুসন্ধানে জানা যায়, আওয়ামী লীগের প্রোপাগান্ডা সাইট হিসেবে পরিচিত অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ইনসাইডারের সে বছরের ১৩ অক্টোবরের একটি প্রতিবেদন থেকে আলোচিত অভিযোগটি ছড়িয়ে পড়ে। ওই প্রতিবেদনে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিবৃতির বিষয়ে বলা হলেও ওই মন্ত্রণালয় থেকে সে সময়ে প্রকাশিত কোনো বিবৃতিতে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ওই বিষয়ে কোনো বিবৃতি প্রকাশিত হয়নি বলে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও রিউমার স্ক্যানারকে নিশ্চিত করা হয়। তাছাড়া, ইসরায়েলের সাংবাদিক এবং ফ্যাক্ট চেকারও এমন কোনো অর্থ সহায়তার বিষয়ে অবগত নন বলে রিউমার স্ক্যানারকে জানান। একই সঙ্গে ইউনূস সেন্টারও বিষয়টি ভুয়া বলে জানায়।
এ অবস্থায় দেশের সব আলেম-ওলামা ও দায়িত্বশীল নাগরিকদের বিভ্রান্ত না হয়ে শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্টের চেষ্টায় লিপ্ত থাকা ব্যক্তিদের অপপ্রচার রুখে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
ঢাকা/হাসান/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইউন স ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
আইএমএফের পর্ষদ বৈঠক ২৩ জুন, এরপর মিলতে পারে দুই কিস্তি অর্থ
২৩ জুন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্বাহী পর্ষদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেই বৈঠকে বাংলাদেশের সঙ্গে আইএমএফের চলমান ঋণ কর্মসূচির দুই কিস্তির অর্থ ছাড়ের বিষয়টি উত্থাপনের কথা রয়েছে। বৈঠকে অনুমোদন হলে চলমান ঋণ কর্মসূচির আওতায় একসঙ্গে দুই কিস্তির অর্থ পাবে বাংলাদেশ। আইএমএফ গতকাল শুক্রবার তার কার্যসূচিতে নির্বাহী পর্ষদের বৈঠকের এ তারিখ নির্ধারণসংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আইএমএফের এ বৈঠকে চলমান ঋণ কর্মসূচির তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যালোচনার (রিভিউ) প্রতিবেদন উপস্থাপনের কথা রয়েছে। এ প্রতিবেদন পর্ষদ অনুমোদন করলে বাংলাদেশ একসঙ্গে পেয়ে যাবে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ। দুই কিস্তির অর্থ একসঙ্গে হতে পারে ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার।
এর আগে ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য সাড়ে তিন বছর মেয়াদি ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে। ঋণ অনুমোদনের সময় আইএমএফ বলেছিল, বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, ঝুঁকিতে থাকা ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়া এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশসম্মত প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করবে এ ঋণ কর্মসূচি। চলতি হিসাবের ঘাটতি বেড়ে যাওয়া, টাকার দরপতন ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া—মূলত এ তিন কারণে ওই সময় আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।
আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির মধ্যে বর্ধিত ঋণসহায়তা (ইসিএফ) ও বর্ধিত তহবিলসহায়তা (ইএফএফ) বাবদ ঋণ রয়েছে ৩৩০ কোটি ডলার। আর রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ) বাবদ ঋণ রয়েছে ১৪০ কোটি ডলার। আরএসএফ আইএমএফের একটি নতুন তহবিল, যেখান থেকে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশকেই প্রথম ঋণ দেওয়া হচ্ছে। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আইএমএফের কাছ থেকে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ও ২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে এখন পর্যন্ত ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি আছে ঋণের ২৩৯ কোটি ডলার।
আইএমএফের ঋণের চতুর্থ কিস্তির অর্থ গত বছরের ডিসেম্বরে পাওয়ার কথা থাকলেও তা আর পাওয়া যায়নি। আইএমএফের সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অবস্থিত। প্রায় প্রতিবছর ওয়াশিংটনসহ প্রতিবেশী রাজ্যগুলোতে বড় ধরনের তুষারপাত হয়। গত বছরও তাই হয়েছে। অতিমাত্রার বরফের কারণে অচল হয়ে যায় জনজীবন। মার্কিন প্রশাসন সতর্কবার্তা জারি করে। তুষারপাতের কারণে আইএমএফসহ অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল অনেক দিন।
পরে আইএমএফের পক্ষ থেকে প্রথমে এ বছরের ফেব্রুয়ারি ও পরে মার্চে পর্ষদ বৈঠকের কথা বলা হয়। গত এপ্রিলে আইএমএফের একটি দল পর্যালোচনা করতে ঢাকায় আসে দুই সপ্তাহের জন্য। এর মধ্যে শর্ত পরিপালন নিয়ে দর–কষাকষিতে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড় আটকে যায়। এরপর ওয়াশিংটনে গত ২১ থেকে ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে এ বিষয়ে আরও আলোচনা হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। তখন দর-কষাকষি হচ্ছিল মূলত মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা নিয়ে। আইএমএফ তা চাইলেও করতে চাইছিল না সরকার।
সবশেষে গত মাসে এ নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে কয়েকটি ভার্চ্যুয়াল বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১২ মে দুই পক্ষ চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছায় ও বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করে বাংলাদেশ। ১৪ মে আইএমএফ ওয়াশিংটন থেকে এক বিবৃতিতে জানায়, দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে এবং ঋণের অর্থ ছাড় করা হবে জুনে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত পর্ষদ বৈঠকে অনুমোদন হওয়ার দুই থেকে তিন দিনের মাথায় আইএমএফ অর্থ ছাড় করে দেয়। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না।