চার দিনের রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত সফরে সপরিবার ভারতে এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স। তবে চার দিন ভারতে থাকলেও শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছেন না তিনি। কেন যাচ্ছেন না, তা অবশ্য কারও জানা নেই।

জে ডি ভ্যান্সের স্ত্রী ঊষা বালা চিলুকুরি ভারতীয় বংশোদ্ভূত। ৩৯ বছর বয়সী ঊষার বাবা রাধাকৃষ্ণ (কৃষ) ও মা লক্ষ্মী দক্ষিণ ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে ১৯৮০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। ঊষার বাবা রাধাকৃষ্ণ মাদ্রাজ আইআইটির মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, মা লক্ষ্মী মলিকিউলার বায়োলজিস্ট। দুজনেই যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করতেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় ১৯৮৬ সালে ঊষার জন্ম। আইনজীবী ঊষার সঙ্গে জে ডি ভ্যান্সের বিয়ে হয় ২০১৪ সালে। তাঁদের তিন সন্তান রয়েছে। দুই ছেলে ইউয়ান ও বিবেক। মেয়ে মিরাবেল। জে ডি ও ঊষা তিন সন্তান নিয়েই আজ সকাল ১০টার সময় ইতালি থেকে দিল্লি আসেন। চার দিন ভারতে থাকলেও অন্ধ্রপ্রদেশে যাওয়ার কোনো কর্মসূচি তাঁদের নেই।

ভ্যান্সের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক হচ্ছে আজ রাতেই। ভাইস প্রেসিডেন্টের সম্মানে প্রধানমন্ত্রী নৈশভোজের আয়োজন করেছেন। সেই বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল উপস্থিত থাকবেন।

নরেন্দ্র মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কথা হয়েছিল। তার পর থেকে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করতে দুই দেশের মধ্যে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। মোদি-ভ্যান্স বৈঠকে সেই চুক্তি চূড়ান্ত করার বিষয়টি প্রাধান্য পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আলোচনায় আসতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতিও।

এই সফর নিয়ে দেওয়া বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আগে জানিয়েছিল, গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় দুই দেশের যৌথ বিবৃতিতে যা যা বলা হয়েছিল, সেগুলোর রূপায়ণ ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে দুই দেশের নেতারা আলোচনা করবেন। সেই সঙ্গে পর্যালোচনা করা হবে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি।

ভ্যান্সের সঙ্গে ভারতে এসেছেন মার্কিন প্রশাসনের পাঁচ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তাঁদের কেউ পেন্টাগনের, কেউ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্ত।

ভারতীয় কূটনৈতিক সূত্র অনুযায়ী, মোদি-ভ্যান্স বৈঠকে চতুর্দেশীয় অক্ষ ‘কোয়াড’শীর্ষ সম্মেলন নিয়েও আলোচনা হতে পারে। আগামী বছরের শেষ দিকে কোয়াডের শীর্ষ সম্মেলন ভারতে হওয়ার কথা। প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনাবেচা নিয়েও দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হতে পারে।
ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ভ্যান্সের এটাই প্রথম ভারত সফর। আজ দিল্লি বিমানবন্দরে তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানান কেন্দ্রীয় রেল ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। ভ্যান্সের ছেলেদের পরনে ছিল কুর্তা–পায়জামা। আর মেয়ে পরেছিল ঘাগরা–চোলি।

যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ বা বৈঠক হওয়ার কোনো খবর নেই। কেন নেই, তা নিয়ে কোনো কোনো মহলে আলোচনা চলছে। প্রটোকল অনুযায়ী, ভ্যান্সের সম্মানে ভোজ দেওয়ারও কথা উপরাষ্ট্রপতির। কিন্তু নৈশভোজের আয়োজন করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

আজই দিল্লিতে স্বামীনারায়ণ অক্ষরধাম মন্দিরে যাবেন ভ্যান্স দম্পতি। দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ও নৈশভোজের পর তাঁরা চলে যাবেন মরুরাজ্য রাজস্থানের রাজধানী জয়পুরে। সেখানে এক অনুষ্ঠানে জে ডি ভ্যান্স ভাষণ দেবেন। আগামী বুধবার জয়পুর থেকে তাঁরা যাবেন আগরা। বৃহস্পতিবার জয়পুর থেকেই ভাইস প্রেসিডেন্ট দেশে ফিরবেন। শ্বশুরবাড়ি অন্ধ্রপ্রদেশ তাঁর অদেখা থেকে যাবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: মন ত র

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পবিরোধী স্লোগান দিয়ে উড়োজাহাজে গ্রেপ্তার ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের নাগরিক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পতন চেয়ে স্লোগান দেওয়ার অভিযোগে যুক্তরাজ্যে ৪১ বছর বয়সী এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত রোববার লন্ডনের লুটন বিমানবন্দর থেকে গ্লাসগোগামী একটি ফ্লাইটে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই ব্যক্তির নাম অভয় নায়েক। তিনি লন্ডনের কাছে বেডফোর্ডশায়ারের লুটন শহরের বাসিন্দা।

অভয় নায়েক ইজিজেট ফ্লাইটে হামলা ও যাত্রীদের নিরাপত্তাঝুঁকিতে ফেলার মতো আচরণ করেছেন। তিনি উড়োজাহাজে বোমা ফাটানোর হুমকি দিয়েছিলেন। তিনি মাঝ আকাশে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় স্লোগান দিয়ে চিৎকার করেছিলেন, যা যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়।

ওই ঘটনার একটি ভিডিও এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, অভয় নায়েক স্লোগান দিচ্ছেন, ‘আমেরিকার পতন হোক’, ‘ট্রাম্পের পতন হোক’। এরপরই তিনি ‘আল্লাহু আকবর’ (যার অর্থ ‘আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ’) বলে স্লোগান দেন। পরে দুজন ব্যক্তি তাঁকে কাবু করে উড়োজাহাজের মেঝেতে ফেলে দেন।

ওই ব্যক্তির নাম অভয় নায়েক। তিনি কোন ধর্মের অনুসারী, সে ব্যাপারে তাৎক্ষিণক কিছু জানা যায়নি।

ওই ব্যক্তির এমন আচরণের পর পাইলটরা বাধ্য হয়ে গ্লাসগোতে জরুরি অবতরণ করেন। সেখানেই স্কটিশ পুলিশ এসে অভয় নায়েককে গ্রেপ্তার করে।

স্কটল্যান্ডের পুলিশ এক বিবৃতিতে জানায়, ‘গত রোববার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ২০ মিনিটের দিকে গ্লাসগোতে পৌঁছানো ইজিজেটের একটি ফ্লাইটে এক ব্যক্তি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন এমন খবর পেয়ে আমরা সেখানে যাই।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা মনে করি, ঘটনাটি এককভাবে ওই ব্যক্তির, অন্য কেউ জড়িত নন। যেসব ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়েছে, সেগুলো সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকর্তারা খতিয়ে দেখছেন।’

উড়োজাহাজ অবতরণের পরই অভয় নায়েককে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে আক্রমণ ও যাত্রীদের নিরাপত্তাঝুঁকিতে ফেলার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের কোনো অভিযোগ আনা হয়নি।

ইজিজেট এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘বেপরোয়া আচরণের কারণে একজন যাত্রীকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আমরা কর্তৃপক্ষকে তদন্তে সহযোগিতা করছি।’

পাইসলি শেরিফ আদালতে হাজিরার সময় অভয় নায়েক কোনো বক্তব্য দেননি। তাঁকে বিচারিক হেফাজতে পাঠানো হয়েছে এবং আগামী সপ্তাহে তাঁকে আবার আদালতে হাজির করা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ