মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে মারামারির মামলায় আসামি ধরার পর পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সিংগাইর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) পার্থ শেখর ঘোষের বিরুদ্ধে। পরে আহত ওই নারী সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন। 

আহত ওই নারীর নাম সায়মা আক্তার। তিনি সিঙ্গাইর উপজেলার ধল্লা ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের হুমায়ন মিয়ার স্ত্রী।

এ দিকে আহত সায়মা আক্তারকে সহযোগিতা করতে এসে সোনিয়া আক্তারকে নামের এক নারী ও তার দেড় বছরের ছেলেকে ২১ ঘণ্টা থানা-হেফাজতে আটকে রাখার অভিযোগ করা হয়েছে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জে ও এম তৌফিক আজমের বিরুদ্ধে। সোনিয়া আক্তার একই মামলার আসামি ওয়াজ উদ্দিনের মেয়ে। এ ঘটনায় সায়মা আক্তার গতকাল রোববার মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

ভুক্তভোগীর পরিবার এবং সিঙ্গাইর থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার বিকেল ৩টার দিকে মাসুদ বাদশার ওপর হামলা মামলার আসামি হুমায়ন মিয়াকে গ্রেপ্তারে তার বাড়িতে অভিযান চালান সিংগাইর থানার এসআই পার্থ শেখর ঘোষ। অভিযানে গ্রেপ্তার হন হুমায়ন এবং তাকে পরানো হয় হাতকড়া। তবে এ সময় পুলিশের সঙ্গে আসামির ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এর একপর্যায়ে আসামি পালিয়ে যায়। এতে ক্ষিপ্ত হন এসআই পার্থ শেখর ঘোষ। এবং ক্ষিপ্ত হয়ে আসামির স্ত্রী আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা সায়মা গালমন্দ করে ও ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেন। এতে সায়মা আহত হন।

পুলিশ সুপার বরাবর পাঠানো সায়মা আক্তারের ‎অভিযোগ সূত্রে আরও জানা গেছে, এসআই-এর ধাক্কায় আহত সায়মাকে সহযোগিতা করতে আসেন প্রতিবেশী সোনিয়া আক্তার ও আরিফ নামের দুজন। তখন ওসির নির্দেশে তাদের আটক করে থানায় নেওয়া হয়। পরবর্তীতে দেড় বছরের ছেলেসহ সোনিয়া আক্তারকে ২১ ঘণ্টা থানায় আটকে রাখা হয়। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে আরিফকে আদালতে চালান করা হয়।

সায়মা আক্তার আরও অভিযোগ করেন, এ ঘটনার পর সিংগাইর থানার ওসি জে ও এম তৌফিক আজম সায়মা আক্তারের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের হুমকি দিয়ে এসেছেন। পালিয়ে যাওয়া আসামি হুমায়ন আত্মসমর্পণ না করলে পরিবারের সবাইকে গ্রেপ্তার করা হবে বলেও হুমকি দেন তিনি।

এদিকে সিংগাইর থানা সূত্রে জানা যায়, আসামি হুমায়ন পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর দিন রোববার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে তার ভাই আক্তার হোসেন ও তার স্ত্রী ইয়াসমিনসহ তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন এসআই পার্থ শেখর ঘোষ।  

পুলিশ জানায়, আসামি হুমায়নকে গ্রেপ্তার করতে গেলে তার পরিবারের সদস্যরাসহ আশপাশের লোকজন পুলিশকে বাধা দেয় এবং পুলিশের ওপর হামলা চালায়। হামলায় এসআই পার্থ শেখর ঘোষ, পুলিশ সদস্য মাহবুবুর রহমান ও মো.

শহীদুল ইসলাম আহত হন। এ ঘটনায় এসআই পার্থ শেখর ঘোষ বাদী হয়ে ৯ জনের নাম উল্লেখসহ এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন। এ মামলায় আসামি আক্তার হোসেন, ইয়াসমিন আক্তার চায়না, আরিফ হোসেনসহ চারজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

তবে অন্তঃসত্ত্বা সায়মা আক্তারকে ধাক্কা দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন এসআই পার্থ শেখর ঘোষ। তিনি বলেন, আসামি হুমায়নকে গ্রেপ্তার করতে গেলে তার পরিবারে সদস্যরা এবং আশপাশের লোকজন আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে মব সৃষ্টি করে। তারা হুমায়নকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করে। তবে আসামির স্ত্রী সায়মাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়নি।  

সিংগাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জে ও এম তৌফিক আজম অভিযোগের বিষয়ে বলেন, ছেলেসহ ওই নারীকে ২১ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়নি। আটক সোনিয়াকে থানার আনার পর তার পরিবারের সদস্যরা ছেলেকে মায়ের সঙ্গে দেখ করানোর জন্য থানায় আনেন। ছেলে মায়ের সঙ্গে গারদে দেখা করে। কোনোভাবেই শিশুকে ২১ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়নি। এছাড়া ঘটনার সঙ্গে সোনিয়ার সম্পৃক্ত না থাকায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আর বাকি চারজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

তবে থানা-পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে মা-ছেলেকে ২১ থানা-হেফাজতে আটকে রাখার তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এ সব বিষয়ে মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার মোসাম্মৎ ইয়াছমিন খাতুন বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম ন কগঞ জ অভ য গ আটক ত র পর ব র পর ব র র সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

যশোরে সড়ক দুর্ঘটনায় এসআইসহ নিহত ৩

যশোরে বাঁশ বোঝাই ট্রাকে বাসের ধাক্কায় পুলিশের এসআইসহ তিনজন মারা গেছেন।

রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টার দিকে বাঘারপাড়া উপজেলার জামদিয়া ইউনিয়নের ভাঙ্গুড়া বাজার সংলগ্ন ব্রিজের কাছে যশোর-নড়াইল মহাসড়কে দুর্ঘটনার শিকার হন তারা।

আরো পড়ুন:

বরিশালে দুই বাসের সংঘর্ষে আহত ৬

বরিশালে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় পথচারীর মৃত্যু

নিহতরা হলেন- যশোর সদর উপজেলার বড় ভেকুটিয়া গ্রামের মুজিদ হাওলাদারের ছেলে ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক এম জাফর আলী, বসুন্দিয়া আহমেদ আলীর ছেলে আক্তার হোসেন, বাঘারপাড়া উপজেলার ছাতিয়ানতলা এলাকার নিশিকান্ত অঢ্যের ছেলে এসআই নিক্কন অঢ্য।

তুলারামপুর হাইওয়ে পুলিশ জানায়, নড়াইল-যশোর মহাসড়কের ভাঙুড়া বাজার এলাকায় একটি বাঁশ বোঝাই ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। ঢাকা থেকে যশোরগামী ‘নড়াইল এক্সপ্রেসের’ একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। ঘটনাস্থলেই মারা যান বাসযাত্রী আক্তার হোসেন।

আশঙ্কাজনক অবস্থায় স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী আবু জাফর ও পুলিশ কর্মকর্তা নিক্কন আঢ্যকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান এলাকাবাসী। হাসপাতালে নেওয়ার পর আবু জাফরকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

পুলিশ কর্মকর্তা নিক্কনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে নড়াইল সদর হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। রাত সাড়ে ১২ টার দিকে চিকিৎসক নিক্কনকে মৃত ঘোষণা করেন।

পুলিশ জানায়, এসআই নিক্কন আঢ্য ৩৭ ব্যাচে আউটসাইড ক্যাডেট হিসাবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। তিনি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে লোহাগড়া থানার লাহুড়িয়া তদন্তে কেন্দ্রে যোগ দেন। এর আগে তিনি র‍্যাবে কর্মরত ছিলেন।

তুলারামপুর হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ সেকেন্দার আলী জানান, স্বেচ্ছাসেবক দলনেতা জাফর ও আক্তারের মরদেহ যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তার মরদেহ নড়াইল মর্গে রয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

ঢাকা/রিটন/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জাল টাকা বহন: ২ জনের ১৪ বছর কারাদণ্ড
  • যশোরে সড়ক দুর্ঘটনায় এসআইসহ নিহত ৩