ছাত্রশিবিরের শিক্ষাবৃত্তি পেলেন ইবির অর্ধশত শিক্ষার্থী
Published: 21st, April 2025 GMT
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ৫০জন শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তির জন্য মনোনীত করেছে শাখা ছাত্রশিবির। এ শিক্ষাবৃত্তির আওতায় প্রতি মাসে ন্যূনতম ১ হাজার টাকা করে শিক্ষার্থীদের বছরে ৬ লাখ টাকা প্রদান করবে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।
রবিবার (২০ এপ্রিল) শাখা ছাত্রশিবিরের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে দেওয়া বিশেষ ঘোষণায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ঘোষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ইবি শাখার ছাত্রকল্যাণ বিভাগের ‘শিক্ষাবৃত্তি প্রকল্প ২০২৫’ এর কার্যক্রম চলতি মাস থেকে শুরু হয়েছে। যাচাই-বাছাই ও সামগ্রিক বিবেচনায় প্রাথমিকভাবে প্রায় ৫০ জনকে ১ বছর মেয়াদে বৃত্তি প্রদানের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। ছাত্রকল্যাণ বিভাগের সক্ষমতার আলোকে পরবর্তী সময়ের বৃত্তি প্রদানের সংখ্যা বাড়তে পারে।
আরো পড়ুন:
ইবি অর্থনীতি ক্লাবের কমিটি গঠন
নববর্ষের ২দিন পর শোভাযাত্রা, অংশ না নেওয়ায় খাবার বন্ধ করলেন প্রাধ্যক্ষ
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক ইউসুব আলী বলেন, “আমরা মেধা, আর্থিক অসচ্ছলতা ও পারিবারিকভাবে স্বাবলম্বী নয়- এমন শিক্ষার্থীদের বিবেচনা করে শিক্ষাবৃত্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এতে প্রাথমিক ভাবে ৫০ জন শিক্ষার্থী শিক্ষাবৃত্তি পাবেন। যেখানে সকল ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থী অন্তর্ভুক্ত আছে। আমরা তাদের প্রতি মাসে ন্যূনতম ১ হাজার টাকা করে বছরে ৬ লাখ টাকা প্রদান করব।”
শিক্ষাবৃত্তি প্রদানের উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি বলেন, “ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অসচ্ছল ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে নিতে শাখা ছাত্রশিবিরের ছাত্রকল্যাণ বিভাগের এ প্রচেষ্টা। ইসলামী ছাত্রশিবির সবসময়ই ছাত্রদের কল্যাণে কাজ করে আসছে এবং এই শিক্ষাবৃত্তি প্রকল্প সেই ধারাবাহিকতারই অংশ। আমি বিশ্বাস করি, এই বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা তাদের মেধা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম বৃদ্ধি করবে এবং দেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ‘শিক্ষা বৃত্তি প্রকল্প ২০২৫’ এর আবেদনের সময় নির্ধারণ করে সংগঠনটি। এ কর্মসূচির আওতায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (অনার্স) পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ১ বছরে প্রতি মাসে ন্যূনতম ১ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত শিক্ষাবৃত্তি প্রদানের ঘোষণা দেয় সংগঠনটি।
ঢাকা/তানিম/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
মুহাম্মদ ইলিয়াসের তাবলিগি দর্শন
মানুষের হৃদয়ে ঈমানের আগুন জ্বালানোর প্রয়াসে শায়খ মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্ধলভী (১৮৮৫-১৯৪৪) গড়ে তুলেছিলেন জামায়াতে তাবলিগ, যা বিশ্বব্যাপী দাওয়াতের এক অপূর্ব নজির। তাঁর বাণী ও উপদেশের সংকলন ‘মালফুজাত’ নামে আরবি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে, যা তাঁর দাওয়াতি দর্শন ও তরবিয়তি পদ্ধতির এক জীবন্ত দলিল। দামেস্কের দারুল কলম থেকে প্রকাশিত এই গ্রন্থ, শায়খ আদিল হাররাজি আল-ইয়ামানি আন-নাদভির তত্ত্বাবধানে সম্পাদিত, তাবলিগ জামায়াতে মূল দর্শনের প্রাথমিক উৎস হিসেবে বিবেচিত। এটি শুধু মুহাম্মদ ইলিয়াসের বাণীর সংকলন নয় বরং একটি ঐতিহাসিক ও দাওয়াতি দলিল, যা আধুনিক ইসলামি আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে পুনর্মূল্যায়নের দাবি রাখে।
‘মালফুজাত’-এর শিক্ষা
শায়খ মুহাম্মদ ইলিয়াসের মজলিস মালফুজাত সংরক্ষণ করেছেন তাঁর শিষ্য মুহাম্মদ মানজুর। তাবলিগ জামায়াতে ছয়টি মূলনীতি—কালিমা, নামাজ, ইলম ও জিকর, ইকরামুল মুসলিমিন, ইখলাস ও নিয়ত এবং আল্লাহর পথে বের হওয়ার ভিত্তিতে গ্রন্থটি রচিত। তিনি তাওহিদকে (আল্লাহর একত্ব) নাজাতের মূল ভিত্তি হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, ‘তাওহিদের দুর্বলতা মুসলিমদের অধঃপতনের কারণ’। তিনি ফরজ ইবাদতের প্রাধান্য, জিকিরের প্রাচুর্য এবং তাকওয়ার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ফরজগুলোর মর্যাদা নফলের চেয়ে অনেক উঁচুতে। নফলের উদ্দেশ্য ফরজগুলোর ঘাটতি পূরণ করা’ (মালফুজাত, দারুল কলম, ২০২৫)।
তাঁর দাওয়াতি পদ্ধতি ছিল সরল কিন্তু গভীর। তিনি আল্লাহর পথে বের হওয়াকে আত্মশুদ্ধির মাধ্যম হিসেবে দেখতেন, যা তাবলিগের একটি বৈশিষ্ট্য। তিনি রিয়া (লোকদেখানো) ও বিতর্ক এড়ানোর পরামর্শ দেন, বলেন, ‘ইখলাস (খাঁটি আল্লাহর জন্য) ছাড়া কোনো কাজ কবুল হয় না।’ তাঁর দৃষ্টিতে, দাওয়াতের লক্ষ্য হলো আল্লাহর আদেশকে মানুষের স্বভাবে পরিণত করা, যাতে নিষিদ্ধ কাজ তার কাছে অপছন্দনীয় হয়। তিনি জিকিরকে এই লক্ষ্যে পৌঁছানোর প্রধান উপায় হিসেবে বিবেচনা করতেন।
শায়খ ইলিয়াসের দাওয়াতি পদ্ধতি ছিল তাওয়াজ্জুহ বা মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের পরিবর্তে তাজকিয়া (আত্মশুদ্ধি) ও ইখলাসের ওপর কেন্দ্রীভূত। তিনি জটিল তাত্ত্বিক আলোচনার পরিবর্তে সরল নসিহতের ওপর জোর দিতেন। তাঁর মতে, দাওয়াত হবে এমন, যেন ‘আল্লাহর আদেশ মানুষের স্বভাব হয়ে যায়’। তিনি আল্লাহর পথে বের হওয়াকে তুলনা করতেন সাহাবিদের ত্যাগের সঙ্গে, যা দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করে আধ্যাত্মিক উন্নতি আনে। তিনি বলেন, ‘দাওয়াতে আমর বিল মারুফ ও নাহি আনিল মুনকার ফরজ, কিন্তু কতজন এই ফরজ পালন করে?’ (মালফুজাত, দারুল কলম, ২০২৫)।
আরও পড়ুনসুরা হুমাজাতে চারটি পাপের শাস্তির বর্ণনা০৬ মে ২০২৫ঐতিহাসিক পটভূমি
মুহাম্মদ ইলিয়াস ভারতের কান্ধলায় একটি আলেম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। দেওবন্দি সংস্কার আন্দোলনের প্রভাবে তাঁর শৈশব কাটে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন, সাধারণ মুসলিমদের ধর্মীয় অজ্ঞতা এবং পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ তাঁর দাওয়াতি চিন্তার পটভূমি। তিনি বিশ্বাস করতেন, শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা মুসলিমদের সংস্কার করতে পারবে না। তাই তিনি একটি জনগণভিত্তিক, বিকেন্দ্রীকৃত আন্দোলন শুরু করেন, যেখানে সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীরা দাওয়াতে অংশ নেয়। তিনি নবীর (সা.) মক্কার জীবন থেকে অনুপ্রাণিত হন, যেখানে তিনি ঘুরে ঘুরে মানুষকে দাওয়াত দিতেন। তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) মক্কায় তাওয়াফ করে মানুষকে হকের দাওয়াত দিতেন’ (মালফুজাত, দারুল কলম, ২০২৫)।
গ্রন্থের গঠন ও সম্পাদনা
মালফুজাত তাঁর মজলিসের সংকলন হলেও এটি একটি সুশৃঙ্খল দাওয়াতি দলিল। সম্পাদনা করেছেন আবুল হাসান আলী নাদভি (রহ.)-এর শিষ্য শেখ আদিল হাররাজি। মুফতি মুহাম্মদ তকী উসমানী, ড. খালিদ সাইফুল্লাহ রাহমানি ও নূরুল হাসান রাশিদ কান্ধলভী প্রমুখের মতো পাকিস্তান ও ভারতের শীর্ষস্থানীয় ইসলামবেত্তাদের ভূমিকা গ্রন্থটিকে মহামূল্য করে তুলেছে। তাদের ভূমিকাগুলো গ্রন্থের দাওয়াতি ও ঐতিহাসিক পটভূমি বুঝতে সাহায্য করবে। আলী নাদভির সঙ্গে মুহাম্মাদ ইলিয়াসের আধ্যাত্মিক সম্পর্ক এবং তাবলিগের বিশ্বব্যাপী প্রভাবও এতে তুলে ধরা হয়েছে।
আজ যখন মুসলিম বিশ্ব নানা সংকটের মুখোমুখি, এই গ্রন্থ আমাদের তাওহিদ, ইখলাস ও তাজকিয়ার প্রতি ফিরে যেতে আহ্বান জানায়। এটি প্রতিটি দাঈ ও মুসলিমের জন্য একটি পাঠ্য, যা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ‘দাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর দ্বীনকে জীবন্ত করে তুলতে হবে।’
সূত্র: আল-জাজিরা ডটনেট
আরও পড়ুন সুরা ইউসুফের সারকথা১৫ জুলাই ২০২৪