মারিও বার্গাস য়োসা: জীবন দিয়ে সাহিত্য আর সাহিত্য দিয়ে জীবন
Published: 21st, April 2025 GMT
‘পেরুর এখন দুঃসময়, আর যে কেউ এমন সময়ে দেশের জন্য এগিয়ে আসতে পারেন। আপনি আমাকে বলতে পারেন জরুরি অবস্থার প্রার্থী।’ ১৯৮৯ সালে মার্কিন সাংবাদিক এড ব্র্যান্ডির মুখোমুখি বসে মারিও বার্গাস য়োসা নিজের সম্পর্কে এ কথা বলেছিলেন। তত দিনে লোকটা বিখ্যাত লেখক, সাহিত্যে নোবেল ছাড়া সম্ভাব্য আর সবকিছুই জয় করেছেন, নিজের দেশ ছাপিয়ে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়েছে লাতিন আমেরিকাসহ গোটা এস্পানলভাষী অঞ্চলে, ইউরোপে আর উত্তর আমেরিকায়ও। সেই লোক লড়ছিলেন নিজ দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য, তখন তিনি আর বামও নন, পেরুর মধ্যম ডানপন্থী কোয়ালিশন ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের মুখপাত্র।
শুধু পেরু নয়, মারিওর প্রজন্মে লাতিন আমেরিকার প্রায় সব দেশের লেখকেরাই রাজনৈতিকভাবে দারুণ সক্রিয় ছিলেন। য়োসার তো পরিবারটাই ছিল রাজনৈতিক। ওঁর নানা ছিলেন তৎকালীন পেরুর প্রধানমন্ত্রী হোসে বাসতামানতে ই রিভিয়েরোর নিকটাত্মীয়। ১৯৪৮ সালে এই বাসতামানতের সরকারকে সরিয়েই ক্ষমতা দখল করেন সেনা কর্মকর্তা মানুয়েল ওদরিয়া। ওদরিয়ার আট বছরের শাসনকাল পরবর্তীকালে হয়ে ওঠে তর্কসাপেক্ষে য়োসার সেরা উপন্যাস কনভার্সেশন ‘ইন দ্য ক্যাথিড্রাল’-এর ভিত্তি।
খালি চোখে দেখলে তাঁর লেখালেখির জীবন ভরে আছে তুখোড় সব রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক আখ্যানে, যেখানে কখনো তিনি মিশিয়েছেন থ্রিলারের উপাদানও, করেছেন স্বৈরতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় দুর্নীতির সমালোচনা, উঠিয়ে এনেছেন কাল্ট আন্দোলন, রাজনৈতিক ঘটনা ও ব্যক্তিত্বদের সংগ্রাম। আর এসব উপন্যাসের বিষয়বস্তু পেরুকে ছাপিয়ে গেছে; কখনো ব্রাজিলে, কখনো গ্রেটার ক্যারিবিয়ান অঞ্চল, এমনকি আয়ারল্যান্ডের ইতিহাসেও। কিন্তু একটু গভীরে তাকালে বোঝা যায়, এককালের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ঔপন্যাসিক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের মতো য়োসার লেখালেখিও তাঁর জীবন অভিজ্ঞতা থেকেই উৎসারিত। আর তাঁর জীবনও যেন উৎসারিত তাঁর সাহিত্যকর্ম থেকে।
কেন প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন য়োসা
পেরুর প্রধানমন্ত্রী হতে চাওয়ার পেছনে সম্ভবত য়োসার একটা প্রতিজ্ঞা ছিল। সংক্ষেপে এটা নিয়ে আলাপ করা যেতে পারে।
যৌবনের কড়া বামপন্থী চিন্তাভাবনা থেকে ধীরে ধীরে উদার ও মধ্যম ডানে বদলে যাওয়া তাঁর যে মতাদর্শ, এর পেছনে অনেক ক্ষেত্রে সরাসরি ফিদেল কাস্ত্রোকে তিনি উদাহরণ হিসেবে টেনেছেন। কারণ, কিউবার বিপ্লবের সক্রিয় সমর্থক ছিলেন য়োসা ও তাঁর বন্ধুরা। সরকার গঠনের পর কাস্ত্রো প্রশাসনের কাজকর্ম য়োসা দেখতে থাকেন হতাশার চোখে। বিশেষ করে, ১৯৭১ সালে কিউবান কবি এবেরত হুয়ান পাদিইয়াকে যখন সরকারের সমালোচনার অভিযোগে গ্রেপ্তার করে কাস্ত্রো প্রশাসন, য়োসা কাস্ত্রোকে সরাসরি চিঠি লেখেন। মানুষের স্বাধীন জীবনযাপনের জন্য সাম্যবাদ উপযুক্ত নয়, এই ধারণা তাঁর মনে ধীরে ধীরে বদ্ধমূল হয়ে যায় এবং পেরুতে তাঁর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের একটা লক্ষ্যও অনুমান করা যায় যে নিজের দেশে বামপন্থার বিকাশের বিরুদ্ধে তিনি লড়বেন। এটা ধীরে ধীরে আরও নিশ্চিত এক ঘটনা হয়ে ওঠে যেন তাঁর নিজের কোনো রাজনৈতিক থ্রিলার উপন্যাসের মতোই।
দীর্ঘ প্রায় এক যুগের সেনাশাসন (১৯৬৮-১৯৮০) পেরুকে বিধ্বস্ত করে তুলেছিল। ১৯৮০ সালে এর পতন হলে জনগণের ভোটে প্রধানমন্ত্রী হন ফার্নান্দো বেলাউন্দে, যিনি সেনাশাসনের আগের মেয়াদেও এই দায়িত্বে ছিলেন। মধ্যডান বেলাউন্দের শাসনামলকে অস্থির করে তুলেছিল এর মধ্যেই ভেঙে পড়া অর্থনৈতিক কাঠামো, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, আর চরমপন্থী মাওবাদী গেরিলা সংগঠন শাইনিং পাথ। ১৯৮৫ সালের নির্বাচনে তাই জিতে যায় অ্যালান গার্সিয়ার পপুলিস্ট বামপন্থী সরকার। কিন্তু পেরুর দুরবস্থা কাটে না। শাইনিং পাথের অসহযোগ ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডও ব্যাপক বেড়ে যায়। সেই সংকটময় অবস্থায়ই গণবুদ্ধিজীবী ও লেখক হিসেবে য়োসার জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে পেরুতে। সরকারের বিভিন্ন জনবিরোধী কর্মপন্থার অন্যতম সমালোচক ছিলেন তিনি। ১৯৮৭ সালের দিকে লিবার্টি মুভমেন্ট নামের ডানপন্থী দলের নেতা হিসেবে তিনি আত্মপ্রকাশ করেন এবং ১৯৯০ সালের নির্বাচনে ডানপন্থী কোয়ালিশনের প্রধান হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন।
মারিও বার্গাস য়োসা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক সরক র মপন থ
এছাড়াও পড়ুন:
৪৪তম বিসিএসের ৪০০ রিপিট ক্যাডার বাদ দিচ্ছে সরকার, নতুন সিদ্ধান্ত আসছে
৪৪তম বিসিএসে পুনরাবৃত্তি হওয়া ৪০০ ক্যাডারকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। তারা ৪৩তম বিসিএসে বা আগের বিসিএসে যে ক্যাডারে আছেন ৪৪তম বিসিএসেও একই ক্যাডার পেয়েছিলেন। এই ৪০০ ক্যাডারকে নিয়ে সিদ্ধান্ত দ্রুতই হবে বলে জানিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা।
প্রথম আলোকে ওই কর্মকর্তা আজ বৃহস্পতিবার বলেন, ৪০০ ক্যাডারকে নিয়ে পিএসসির কিছু সুপারিশ আমরা পেয়েছি। এগুলো বাদ দিতে সরকার কাজ করছে। বাদ দিলে কি করা হবে তা নিয়েও কাজ করছে সরকার। এখন পিএসসিকে এ বিষয় নিয়ে একটি মতামত দিতে বলা হয়েছে। পেলেই তা পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে প্রজ্জাপন দেওয়া হবে। এটি যাতে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয় সেজন্য আমরা কাজ করছি।
আরও পড়ুন৪৯তম বিসিএস: অনলাইন আবেদন ও ফি জমাদানে পিএসসির নতুন নির্দেশনা৩০ জুলাই ২০২৫৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল ৩০ জুন প্রকাশিত হয়। এতে বিভিন্ন ক্যাডারে ১ হাজার ৬৯০ জনকে নিয়োগের জন্য সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) সাময়িকভাবে মনোনীত করেছে।
প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১ হাজার ৬৯০ জনের মধ্যে প্রায় ৪০০ জন প্রার্থী একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একই ক্যাডারে পুনরায় সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন (রিপিট ক্যাডার)। এই ৪০০ জনের তালিকা পেয়েছে পিএসসি। এই রিপিট ক্যাডার বন্ধে বিধি সংশোধন করা হচ্ছে। এ–সংক্রান্ত চিঠি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় পিএসসি।
পিএসসি জনপ্রশাসনের চিঠিতে বলছে, এই রিপিট ক্যাডারের ফলে নতুন ও অপেক্ষমাণ মেধাবীরা সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এটি প্রশাসনিক কাঠামো ও জনসম্পদের সদ্ব্যবহারে বাধা সৃষ্টি করছে। এখন এটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একই ক্যাডারে পুনরায় সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়া বন্ধ করার জন্য বিদ্যমান বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বয়স, যোগ্যতা ও সরাসরি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা ২০১৪–এর বিধি-১৭ এর শেষে নিম্নোক্ত শর্ত যুক্ত করার প্রস্তাব করেছে পিএসসি।
আরও পড়ুনসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের ৩৪০০০ শূন্য পদ পূরণে উদ্যোগ২৯ জুলাই ২০২৫শর্তে কী আছে—পিএসসির চিঠিতে শর্ত হিসেবে বলা আছে, ‘তবে শর্ত থাকে যে এই বিধির আওতাধীন সরকারের নিকট সুপারিশ প্রেরণ করিবার প্রাক্কালে, কিংবা কোনো বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রস্তুতকালে, সংশ্লিষ্ট প্রার্থী কর্তৃক প্রদত্ত লিখিত তথ্যের ভিত্তিতে কিংবা কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত কোনো পদ্ধতির মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে যদি কমিশনের নিকট প্রতীয়মান হয় যে এই বিধির আওতাধীন মনোনয়নযোগ্য কিংবা মনোনীত কোনো প্রার্থী একই ক্যাডার পদ, সমপদ কিংবা প্রার্থীর আগ্রহ নেই এমন কোনো সার্ভিস বা ক্যাডার পদে পুনরায় মনোনীত হইবার কারণে মনোনীত সার্ভিসে বা ক্যাডার পদে যোগদান করিতে অনিচ্ছুক, এইরূপ ক্ষেত্রে কমিশন অনাগ্রহ প্রকাশকারী প্রার্থীকে এই বিধির আওতাধীন সরকারের নিকট সুপারিশ করা হইতে বিরত থাকিতে পারিবে; আরও শর্ত থাকে যে প্রথম শর্তাংশে বর্ণিত বিধান অনুযায়ী কোনো প্রার্থীকে সুপারিশ করা হইতে বিরত থাকিবার কারণে উদ্ধৃত শূন্য পদে নিয়োগের লক্ষ্যে সুপারিশ প্রেরণ করিবার জন্য উত্তীর্ণ প্রার্থিগণের মধ্য হইতে মেধাক্রম অনুযায়ী প্রার্থী নির্বাচনপূর্বক কমিশন সম্পূরক ফলাফল প্রকাশ এবং সার্ভিসে বা ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য সরকারের নিকট সুপারিশ প্রেরণ করিতে পারিবে;আরও অধিকতর শর্ত থাকে যে দ্বিতীয় শর্তাংশে উল্লিখিত সম্পূরক ফলাফল দ্বারা বা উহার পরিণতিতে প্রথম ঘোষিত ফলাফলে সার্ভিস বা ক্যাডার পদের জন্য মনোনীত কোনো প্রার্থীর প্রতিকূলে কোনো পরিবর্তন ঘটানো কিংবা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাইবে না।’
আরও পড়ুনবস্ত্র অধিদপ্তরে বড় নিয়োগ, চাকরির সুযোগ ১৯০ জনের২৯ জুলাই ২০২৫