প্রযুক্তি ব্যবস্থায় দুর্বলতা, ভূতাত্ত্বিক গবেষণায় নির্ভর বিদেশিদের ওপর
Published: 21st, April 2025 GMT
নিজস্ব ক্ষমতায় কাজ করা ভালো। কিন্তু ভূতাত্ত্বিক গবেষণার ক্ষেত্রে দেশের প্রযুক্তি ব্যবস্থায় দুর্বলতা রয়েছে। এ কারণে গবেষণায় বরাবরের মতো বিদেশিদের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বক্তারা। তারা বলেন, সবচেয়ে বেশি গ্যাস রয়েছে দেশের পূর্বাঞ্চলে। বর্তমান দেশে ২৭টি গ্যাস কূপ আছে। এরমধ্যে ২০টি থেকে গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে।
সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বক্তারা। বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক সমিতি এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সংগঠনের সভাপতি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড.
তারা বলেন, আমরা পৃথিবীপৃষ্ঠ ও ভূগর্ভের প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ ও ব্যবহার করি। প্রাকৃতিক গ্যাস বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তাসহ শিল্প-কারখানার ক্রমবিকাশে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। শহরাঞ্চলে গৃহস্থালির জ্বালানি চাহিদা মেটানো থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ উৎপাদন, যানবাহন ও শিল্প কারখানার জ্বালানি উৎস হিসেবে আমাদের ভূ-খণ্ড হতে আহরিত এই প্রাকৃতিক গ্যাস অবদান রাখছে। খনিজ কয়লা, পাথর, নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত বালুসহ নানাবিধ ভূতাত্ত্বিক উপাদান জাতীয় উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ। আকরিক লোহাসহ মূল্যবান খনিজ ধাতব অনুসন্ধান ও আহরণে বাংলাদেশে ভূতাত্ত্বিক জ্ঞানের প্রয়োগ বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে।
ভূমিকম্প, নদী ভাঙ্গন, বন্যা, ভূমিধ্বসসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্ভাবনা, পূর্বাভাস, প্রতিকার ও ব্যবস্থাপনায় প্রয়োগ হয় ভূতাত্ত্বিক সমীক্ষা ও জ্ঞান। যা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। বড়মাত্রার ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশের ভূমিকম্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় ভূতাত্ত্বিক জ্ঞান বৃদ্ধির বিকল্প নেই।
তারা বলেন, প্লাবনভূমির শ্রেণিবিন্যাস, ঢালের মাত্রা, ক্ষয় ও পলি সঞ্চয়ের প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করে নদীর গতিপথ ও পরিবর্তনের ভবিষ্যৎ পূর্বাভাস দিতে ভূতাত্ত্বিক জ্ঞান প্রয়োজনীয়।
বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর, পেট্রোবাংলা, বাপেক্স এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠানসমূহে ভূতত্ত্ববিদ পদের অবস্থান রয়েছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভূ-গর্ভস্থ পানি বিজ্ঞান পরিদপ্তর এবং বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনে রয়েছে ভূতত্ত্ববিদের পদ। হাইড্রোকার্বন, পানি, পরিবেশ ও দুর্যোগ মোকাবিলা সংশ্লিষ্ট এনজিও, বেসরকারি কারিগরি প্রতিষ্ঠানেও কাজ করছেন ভূতত্ত্ববিদগণ। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন, বরেন্দ্র বহুমুখী কর্তৃপক্ষ, পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা, নদী গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদী ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট দপ্তর, ওয়াসাসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয়তা থাকলেও এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞানের পেশাজীবীগণের পদ নেই বললেই চলে। ফলে জাতিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে টেকসই উন্নয়নের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
এনবিআরের অনলাইন সভায় ‘ট্রাম্প’ ‘ইলন মাস্ক’ ‘ডিম ব্যবসায়ী সমিতি’ ‘মায়ের দোয়া স্যানিটারি’
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়কর অনুবিভাগের রাজস্ব আহরণ ও অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে। এ সভায় সাধারণত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সরাসরি ও ভার্চুয়ালি যোগ দেওয়ার সুযোগ আছে। গতকাল রোববার আয়োজিত সভায় ভার্চুয়াল প্লাটফর্ম জুমে যোগ দেওয়া আইডিগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ও স্টারলিংকের মালিক ইলন মাস্কের নামে কয়েকজনকে অংশ নিতে দেখা গেছে। এছাড়াও তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতি, মায়ের দোয়া স্যানিটারিসহ বিভিন্ন নামে আইডি খুলেও অংশ নিয়েছেন কেউ কেউ। সভা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এ নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে বিভিন্ন মহলে।
এ বিষয়ে এনবিআরের কর্মকর্তাদের কেউ কেউ বলেন, সম্প্রতি এনবিআর বিলুপ্ত করে দুই ভাগে বিভক্ত করে জারি করা অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করেন সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ওই বিষয়ে এনবিআরের চেয়ারম্যান কোনো কথা বলেন কিনা তা জানতে ‘ভুয়া’ নামে অংশ নিয়েছেন কেউ কেউ। আবার কর্মকর্তাদের একটা অংশের ধারণা- আন্দোলনকারীরা এনবিআরের চেয়ারম্যানকে অসহযোগিতা করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তাই অনেকেই অংশ নেননি। সেজন্য সভায় বেশি অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বেশি দেখাতে ভুয়া আইডি খোলা হতে পারে বলেও ধারণা কারও কারও।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ভেঙে আলাদা করে অধ্যাদেশ জারির পর থেকে ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের’ ব্যানারে আন্দোলনে নামেন সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গত ১২ মে আন্দোলন শুরু হওয়ার পর অর্থ মন্ত্রণালয় ২৫ মে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অধ্যাদেশটি সংশোধনের আশ্বাস দেয়। এরপর আন্দোলন প্রত্যাহার করলেও এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে তাকে অসহযোগিতা করার ঘোষণা দেয় ঐক্য পরিষদ। টানা ১০ দিন ঈদের ছুটির পর রোববার রাজস্ব সভা অনুষ্ঠিত হয়। মাসিক এই সভায় রাজস্ব আহরণের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়।
সভায় সশরীরে অংশ নেন এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান, কর বিভাগের সদস্য ও কমিশনাররা। বাকি র্কমকর্তারা ভার্চুয়ালি অংশ নেন। এতে কেউ নামে বা কেউ সংশ্লিষ্ট কমিশনারেটের নাম ব্যবহার করে যুক্ত হন। চার শতাধিক অংশগ্রহণকারীর অনেকে ভুয়া নাম ব্যবহার করেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প, ইলন মাস্ক, তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতি, মায়ের দোয়া স্যানিটারি, স্যামসাং ও আইফোনের বিভিন্ন মডেলের নাম, বিভিন্ন সালের নাম ও নানা ধরনের সংখ্যা দিয়ে সভায় অংশ নেন অনেকে।
জানা গেছে, এই সভায় অংশ নিতে গত ৪ জুন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে এনবিআরের সদস্য (কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) জি এম আবুল কালাম কায়কোবাদের দপ্তর থেকে। ওই চিঠিতে বলা হয়, আয়কর বিভাগের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের কর্মকৌশল বাস্তবায়ন অগ্রগতি এবং মে মাস পর্যন্ত রাজস্ব আহরণ পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য সকাল সাড়ে ১০টায় এনবিআরের সম্মেলন কক্ষে মাসিক রাজস্ব সভা অনুষ্ঠিত হবে। এনবিআরের চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে আয়কর বিভাগের সব সদস্য, কর কমিশনার ও মহাপরিচালকরা উপস্থিত থাকবেন। সভায় আয়কর বিভাগের সব কর কমিশনার ও মহাপরিচালক সশরীরে এবং সব রেঞ্জ কর্মকর্তা ও সার্কেল কর্মকর্তারা ভার্চুয়াল প্লাটফর্ম জুমে অংশ নেবেন।
আন্দোলনে যুক্ত আছেন এনবিআরের এমন কিছু কর্মকর্তার অভিযোগ, অধ্যাদেশ বাতিলসহ চার দাবিতে আন্দোলন হয়েছিল। চেয়ারম্যানকে অপসারণের দাবিতে এখন তাকে অসহযোগিতা করছেন কর্মকর্তাদের একাংশ। তাই জুমে বেশি উপস্থিতি দেখাতেই এমনটা করা হতে পারে।
এ বিষয়ে এনবিআর সদস্য (কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) জি এম আবুল কালাম কায়কোবাদ সমকালকে বলেন, ‘সভায় অংশ নেওয়ার জন্য ট্রাম্প বা ইলন মাস্ক এমন কাউকে তো চিঠি দেওয়া হয়নি। এ ধরনের সভা প্রতি মাসে হয় এবং এভাবেই হয়। সভায় যাদের অংশ নেওয়ার কথা, তাদেরকেই চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে তো কারো কাছে এই চিঠি যাওয়ার কথা নয়। কারা এ ধরনের নাম ব্যবহার করেছেন কিংবা কেন করেছেন সেটি আপনারা খুঁজে বের করতে পারেন।’
জানতে চাইলে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান সমকালকে বলেন, এটা কেন করা হয়েছে সেটি তার জানা নেই।
সভায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মে পর্যন্ত ১১ মাসের আয়কর খাত থেকে রাজস্ব আদায়ের চিত্র তুলে ধরা হয়।