নিজস্ব ক্ষমতায় কাজ করা ভালো। কিন্তু ভূতাত্ত্বিক গবেষণার ক্ষেত্রে দেশের প্রযুক্তি ব্যবস্থায় দুর্বলতা রয়েছে। এ কারণে গবেষণায় বরাবরের মতো বিদেশিদের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বক্তারা। তারা বলেন, সবচেয়ে বেশি গ্যাস রয়েছে দেশের পূর্বাঞ্চলে। বর্তমান দেশে ২৭টি গ্যাস কূপ আছে। এরমধ্যে ২০টি থেকে গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে।
 
সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বক্তারা। বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক সমিতি এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। 

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সংগঠনের সভাপতি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড.

বদরুল ইমাম, সাধারণ সম্পাদক (পানি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ) ড. আনোয়ার জাহিদ, উপদেষ্টা ড. নেহাল উদ্দীন, (ডিজি, জিএসবি), সহ-সভাপতি ড. আনোয়ার হোসেন ভুঁইয়া (ভুতব বিভাগ, ঢাবি),  অধ্যাপক ড. জামাল উদ্দীন (পরিবেশ বিজ্ঞান, জাবি) প্রমুখ।

তারা বলেন, আমরা পৃথিবীপৃষ্ঠ ও ভূগর্ভের প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ ও ব্যবহার করি। প্রাকৃতিক গ্যাস বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তাসহ শিল্প-কারখানার ক্রমবিকাশে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। শহরাঞ্চলে গৃহস্থালির জ্বালানি চাহিদা মেটানো থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ উৎপাদন, যানবাহন ও শিল্প কারখানার জ্বালানি উৎস হিসেবে আমাদের ভূ-খণ্ড হতে আহরিত এই প্রাকৃতিক গ্যাস অবদান রাখছে। খনিজ কয়লা, পাথর, নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত বালুসহ নানাবিধ ভূতাত্ত্বিক উপাদান জাতীয় উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ। আকরিক লোহাসহ মূল্যবান খনিজ ধাতব অনুসন্ধান ও আহরণে বাংলাদেশে ভূতাত্ত্বিক জ্ঞানের প্রয়োগ বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে।

ভূমিকম্প, নদী ভাঙ্গন, বন্যা, ভূমিধ্বসসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্ভাবনা, পূর্বাভাস, প্রতিকার ও ব্যবস্থাপনায় প্রয়োগ হয় ভূতাত্ত্বিক সমীক্ষা ও জ্ঞান। যা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। বড়মাত্রার ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশের ভূমিকম্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় ভূতাত্ত্বিক জ্ঞান বৃদ্ধির বিকল্প নেই। 

তারা বলেন, প্লাবনভূমির শ্রেণিবিন্যাস, ঢালের মাত্রা, ক্ষয় ও পলি সঞ্চয়ের প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করে নদীর গতিপথ ও পরিবর্তনের ভবিষ্যৎ পূর্বাভাস দিতে ভূতাত্ত্বিক জ্ঞান প্রয়োজনীয়। 

বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর, পেট্রোবাংলা, বাপেক্স এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠানসমূহে ভূতত্ত্ববিদ পদের অবস্থান রয়েছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভূ-গর্ভস্থ পানি বিজ্ঞান পরিদপ্তর এবং বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনে রয়েছে ভূতত্ত্ববিদের পদ। হাইড্রোকার্বন, পানি, পরিবেশ ও দুর্যোগ মোকাবিলা সংশ্লিষ্ট এনজিও, বেসরকারি কারিগরি প্রতিষ্ঠানেও কাজ করছেন ভূতত্ত্ববিদগণ। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন, বরেন্দ্র বহুমুখী কর্তৃপক্ষ, পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা, নদী গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদী ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট দপ্তর, ওয়াসাসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয়তা থাকলেও এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞানের পেশাজীবীগণের পদ নেই বললেই চলে। ফলে জাতিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে টেকসই উন্নয়নের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

প্রস্তাবিত রাজস্ব নীতি বিভাগে সচিব হিসেবে শুল্ক ও কর কর্মকর্তা পদায়নের দাবি

উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশের চূড়ান্ত খসড়ার কিছু অংশে আপত্তি জানিয়ে মতামত দিয়েছে ঢাকার বিসিএস (কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট) অ্যাসোসিয়েশন। প্রস্তাবিত রাজস্ব নীতি বিভাগে লোকবল নিয়োগের শর্ত নিয়ে তাদের এই আপত্তি। গতকাল রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা এই আপত্তি জানিয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি সাতটি বিষয়ে নিজেদের মতামত প্রকাশ করেছে। উল্লেখ্য, ১৭ এপ্রিল উপদেষ্টা পরিষদের সভায় রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর চূড়ান্ত খসড়া অনুমোদিত হয়।

গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিসিএস (কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট) অ্যাসোসিয়েশন অধ্যাদেশের যেসব বিষয়ে নিজেদের মতামত দিয়েছে, সেগুলো হলো—এক, বিসিএস (কর) অ্যাসোসিয়েশন ও বিসিএস (কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট) অ্যাসোসিয়েশন ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মরত কর্মকর্তাদের মধ্য হতে’ রাজস্ব নীতি বিভাগের সচিব নিয়োগের মতামত প্রদান করেছিল। কিন্তু খসড়ার অনুচ্ছেদে (৪২৩) ‘উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন যে কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে’ রাজস্ব নীতি বিভাগের সচিব বা সিনিয়র সচিব নিযুক্ত করার বিধান রাখা হয়েছে। এতে রাজস্ব নীতি প্রণয়নে বিসিএস (কর) ও বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যক্ষভাবে কাজ করার অভিজ্ঞতাকে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি মর্মে প্রতীয়মান। রাজস্ব নীতি প্রণয়নে কর রাজস্ব আহরণের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে রাজস্ব নীতি বিভাগের শীর্ষ পদে পদায়ন করা হলে রাজস্ব বিভাগকে পৃথক করার মূল উদ্দেশ্য অর্জনে সহায়ক হবে।

দুই, রাজস্ব নীতি বিভাগের মৌলিক পদগুলো বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ও বিসিএস (কর) ক্যাডার থেকে পূরণের প্রস্তাব করা হলেও খসড়ায় আয়কর, কাস্টমস, ভ্যাট, অর্থনীতি, ব্যবসায় প্রশাসন, গবেষণা পরিসংখ্যান, প্রশাসন, নিরীক্ষা, আইনসংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তা থেকে পূরণের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। রাজস্ব আহরণ, ব্যবস্থাপনা ও নীতি প্রণয়নে বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের রাজস্ব নীতি বিভাগে সুনির্দিষ্টভাবে পদায়নের সুযোগ রাখা হয়নি।

তিন, খসড়ার অনুচ্ছেদ ৯-এ রাজস্ব নীতি বিভাগে জনবল পদায়নের সুপারিশের লক্ষ্যে একটি কমিটির কথা উল্লেখ থাকলেও ধারা ৪(৪)–এ এমন কোনো কমিটির উল্লেখ নেই। উক্ত কমিটির গঠন উল্লেখ করা প্রয়োজন।

চার, খসড়ায় রাজস্ব নীতি বিভাগের কার্যপরিধিতে কর আইন প্রয়োগ ও কর আহরণ পরিস্থিতি পরিবীক্ষণ যুক্ত করা হয়েছে। এ বিধান রাখায় নীতি বিভাগকে ব্যবস্থাপনা বিভাগের কার্যক্রম তদারকির সুযোগ থেকে যায়। এক বিভাগের কার্যক্রম সমমর্যাদাসম্পন্ন অপর বিভাগ কর্তৃক পরিবীক্ষণের বিধান রাখা হলে তা আইনের দৃষ্টিতেও সাংঘর্ষিক বিবেচিত হয়।

পাঁচ, খসড়ার অনুচ্ছেদ ৭(৩)–এ বিসিএস (কর) ও বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারের কর্মকর্তাদের থেকে রাজস্ব আহরণে ন্যূনতম ২০ বছরের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাকে পালাক্রমে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের সিনিয়র সচিব বা সচিব হিসেবে নিয়োগ প্রদান—এই ধারা পরিবর্তনে রাজস্ব আহরণে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব বা সিনিয়র সচিব হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার প্রদানের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এতে কর-রাজস্ব আহরণে দীর্ঘদিনের অর্জিত বিশেষায়িত জ্ঞান ও দক্ষতাকে কাজে লাগানোর সুযোগ সীমিত করবে।

ছয়, খসড়ায় রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রশাসনিক পদে প্রশাসন ক্যাডার থেকে পদায়ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বর্তমানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে বিসিএস (কর) ও বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তারা পদস্থ রয়েছেন, যা তাঁদের নির্ধারিত পদ।

সাত, সরকার গঠিত রাজস্ব সংস্কারবিষয়ক পরামর্শক কমিটির প্রতিবেদন অন্য সংস্কার কমিশনের মতো জনসমক্ষে প্রকাশ করা সমীচীন বলে বিসিএস (কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট) অ্যাসোসিয়েশন মনে করে।

এর আগে ২৬ এপ্রিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাল্টিপারপাস হলে বিসিএস কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশনের বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) অনুষ্ঠিত হয়। অ্যাসোসিয়েশনের আমন্ত্রণে সভায় সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও রাজস্ব কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাকাএভ) নির্বাহী কমিটির একটি প্রতিনিধিদল উপস্থিত ছিল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে ৩ মাস মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা
  • চেয়ারম্যানের দপ্তরে বুধবারও অবস্থান করবেন কর্মকর্তারা
  • প্রস্তাবিত রাজস্ব নীতি বিভাগে সচিব হিসেবে শুল্ক ও কর কর্মকর্তা পদায়নের দাবি