শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে জ্বর বলা হয়। জ্বর আসলে কোনো রোগ নয়, বরং এটি রোগের একটি লক্ষণ বা উপসর্গ। ফলে জ্বর হওয়াকে শরীরের ভেতরের কোনো রোগের সতর্কবার্তা বলা যেতে পারে।
একজন পূর্ণবয়স্ক সুস্থ মানুষের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয় তখন তাকে জ্বর বলা হয়। সাধারণত শরীরের তাপমাত্রা ৯৯ ° থেকে ১০০° ফারেনহাইটের মধ্যে থাকলে সেটি অল্প জ্বর, এর চেয়ে বেশি হলে তীব্র জ্বর।
শরীরের ভেতরে যখন কোনো জীবাণু আক্রমণ করে, সেটি ঠেকাতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে বিভিন্ন কোষ থেকে পাইরোজেন নামক এক ধরনের পদার্থ নিঃসরণ করে। এটি শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে। এ সময় তাপমাত্রা বেড়ে জ্বরের অনুভূতি হয়।
জ্বর কেন হয়?
অনেক কারণে জ্বর হতে পারে।
lসংক্রমণ– যেমন ভাইরাস ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া ব্যাকটেরিয়া–মূত্রনালির সংক্রমণ, টাইফয়েড, নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা ইত্যাদি।
lপ্রোটোজোয়া– ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর।
lঅটো ইমিউন ডিজিজ যেমন, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, এসএলই (SLE)
lযে কোনো ধরনের ক্যান্সারের কারণেও জ্বর হতে পারে যেমন– লিম্ফোমা, লিউকেমিয়া, লিভার ক্যান্সার।
lআকস্মিক ভয় বা মানসিক আঘাত পেলে জ্বর হতে পারে।
জ্বরের জন্য কিছু পরামর্শ:
যে কারণে জ্বর হোক, চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হওয়া পর্যন্ত নিজেকে নিরাপদ রাখতে কিছু পরামর্শ–
lঘুম বা বিশ্রামে থাকা।
lপ্রচুর তরল পানীয় পান করা।
lপুষ্টিকর খাবার গ্রহণ।
lউষ্ণ পরিবেশে থাকা।
lজ্বর 101° F-এর বেশি হলে প্যারাসিটামল খেতে হবে, সঙ্গে ভেজা কাপড় দিয়ে মাথা ও সমস্ত শরীর মুছে দিতে হবে।
জ্বর হলে কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে?
উল্লেখযোগ্য কিছু লক্ষণ দেখা মাত্রই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। যেমন-
lজ্বর ১০৩°F কিংবা ৩৯.
lতীব্র মাথাব্যথার সঙ্গে ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, শরীরে র্যাশ দেখা দিলে।
lশ্বাসকষ্ট ও বুক ব্যথা।
lমানসিক বিভ্রান্তি, অদ্ভুত আচরণ কিংবা প্রলাপ বকা।
lখিচুনি হলে।
lক্রমাগত বমি করা।
lপেট ব্যথা।
lত্বকে ফুসকুড়ি বের হওয়া।
lপ্রস্রাব করার সময় ব্যথা, জ্বালাপোড়া।
lউজ্জ্বল আলোতে সংবেদনশীলতা।
lপানিশূন্যতা।
lরাত্রে ঘাম হওয়া, লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়া।
lকাশির সঙ্গে হলুদ, সবুজ কিংবা রক্তযুক্ত কফ।
lঅতি সম্প্রতি বিদেশ সফর থেকে এসে জ্বরে আক্রান্ত হওয়া ।
lদীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতা যেমন– অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ক্যা ন্সার, লিভারের সমস্যা।
lসর্বোপরি ডেঙ্গু মৌসুমে যদি গা ব্যথা, মাথা ব্যথার সঙ্গে জ্বর হয় তাহলে অবশ্যই দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে ডেঙ্গু টেস্ট করতে হবে।
lউচ্চমাত্রার জ্বর বা হাইপারপাইরেক্সিয়া শরীরের তাপমাত্রা যখন ১০৬.৭° ফারেনহাইটের ওপরে উঠে যায় মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের আশঙ্কা থাকে– এ ক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা নিতে হবে।
চিকিৎসক কী করবেন?
রোগীর ইতিহাস ও ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার পর রোগ সম্বন্ধে ধারণা করবেন–কিছু রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে কিছু রোগী বহির্বিভাগে/চেম্বারে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর রোগ নির্ণয়সাপেক্ষে যথাযথ চিকিৎসা দেবেন।
জ্বর হলে যা করা উচিত নয়
lজ্বর কমানোর জন্য ব্যথানাশক ওষুধ যেমন ন্যাপরোক্স, ডাইক্লোফেনাক ব্যবহার করা যাবে না।
lচিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ও স্ট্যাররয়েড জাতীয় ওষুধ সেবন করা যাবে না।
পরামর্শ: জ্বর একটি লক্ষণ মাত্র, রোগ নয়। জ্বরের মূল কারণ নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা খুবই জরুরি।
[অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, ঢাকা আলোক হেলথকেয়ার]
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
অটোরিকশার ধাক্কায় ছিটকে বাসের নিচে, দুই বন্ধু নিহত
রাজধানীতে অটোরিকশার ধাক্কায় ছিটকে বাসের নিচে পড়ে দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার বনশ্রীর এফ ব্লক সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এদিন মতিঝিলের ফকিরাপুল মোড়ে প্রাইভেট কারের চাপায় আব্দুল মতিন (৩৬) নামে এক রিকশাচালক নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া পাঁচ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ছয়জন প্রাণ হারিয়েছেন।
বনশ্রীতে নিহত দু’জন হলেন– আব্দুল্লাহ আল নোমান (২১) ও পাভেল মিয়া (২০)। নোমানের মামা আব্দুল হামিদ জানান, নিহতরা পরস্পর বন্ধু। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে ঢাকায় ঘুরতে যাওয়ার সময় দু’জন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। তারা রূপগঞ্জের নামারমুসুরি এলাকায় থাকতেন। নোমান মুড়াপাড়া ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। পাভেল তেমন কিছুই করতেন না। এ ঘটনায় নোমানের পরিবারের পক্ষ থেকে সড়ক নিরাপত্তা আইনে খিলগাঁও থানায় মামলা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী মোটরসাইকেল চালক টিপু সুলতান বলেন, সড়কটি যানবাহনে ঠাসা ছিল। এ কারণে গাড়ি চলছিল ধীরগতিতে। হঠাৎ একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা পাশ থেকে এসে নোমানের মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। এতে দু’জন সড়কের ওপর ছিটকে পড়েন। পরে মিয়ামি পরিবহনের একটি বাস তাদের চাপা দেয়। নোমান ঘটনাস্থলেই মারা যান। মোটরসাইকেল আরোহী পাভেলকে গুরুতর আহত অবস্থায় ফরাজী হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
খিলগাঁও থানার ওসি দাউদ হোসেন জানান, বাসটি জব্দ করা হয়েছে। চালক ও তার সহকারী পালিয়ে গেছে। অটোরিকশা চালককেও আটক করা যায়নি। মরদেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পাঠানো হয়েছে।
গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফকিরাপুল মোড়ে প্রাইভেটকারের চাপায় প্রাণ হারান রিকশাচালক আব্দুল মতিন। তাঁর বাড়ি রংপুরে। তিনি মুগদার মাণ্ডা এলাকায় একটি রিকশার গ্যারেজে থাকতেন। মতিঝিল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাইমিনুল ইসলাম জানান, প্রাইভেটকারের চালক আল আমিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়েছে। ময়নাতন্ত শেষে পরিবারের কাছে মতিনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার রাতে বিমানবন্দর থানার সিভিল এভিয়েশন কোয়ার্টার গেটের (সি-টাইপ) সামনের ফুটপাত থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার বয়স আনুমানিক ২৫ বছর। বিমানবন্দর থানার এসআই আমিনুল ইসলাম বলেন, ওই যুবকের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে। মরদেহ ঢামেক মর্গে রাখা হয়েছে।
সড়কে ঝরল আরও ছয় প্রাণ
খুলনার ডুমুরিয়ায় তেলবাহী লরির চাপায় দুই নারী নিহত হয়েছেন। গতকাল বিকেলে উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নের নরনিয়া মহিলা মাদ্রাসার কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন– রোকেয়া বেগম (৫৫) ও রশিদা বেগম (৪৫)।
গতকাল সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কাছে সেলফি পরিবহনের বাসের ধাক্কায় শামসুল হক নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। তিনি গাজীপুরের শ্রীপুরে গণস্বাস্থ্য উপকেন্দ্রের নিরাপত্তাকর্মী ছিলেন। সাভার থেকে অবসরের পাওনাদি নিয়ে ফেরার পথে তিনি প্রাণ হারান। শামসুলের বাড়ি চাঁদপুরে। ঘটনার পর গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মচারীরা সেলফি পরিবহনের পাঁচটি বাস আটক করেন।
এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অটোরিকশা ও পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে নয়ন মিয়া (৩৭) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১০ জন। গতকাল বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মোগড়াপাড়া ইউনিয়নের রতনদী এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে শান্ত ইসলাম (১৮) নামে এক তরুণ নিহত হয়েছেন। গতকাল উপজেলার কুষ্টিয়া-প্রাগপুর সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। শান্ত মথুরাপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের রিপন মণ্ডলের ছেলে।
রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার মৃগী বাজারে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কে ছিটকে পড়ে স্বপন শীল নামে এক স্যালুন ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। গতকাল ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণপত্র বিলি করতে বেরিয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তিনি।