অপহরণের ছয় দিন পর টেকনাফের পাহাড় থেকে সিলেটের ৬ বাসিন্দাকে উদ্ধার
Published: 22nd, April 2025 GMT
অপহরণের ছয় দিন পর কক্সবাজারের টেকনাফের বাহারছড়ার শিলখালীর পাহাড়ের আস্তানায় অভিযান চালিয়ে সিলেটের জাকিগঞ্জ এলাকার ছয় বাসিন্দাকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, মানব পাচারকারীরা তাঁদের বিদেশে পাচারের উদ্দেশ্যে অপহরণ করে গোপন আস্তানায় আটকে রেখেছিল। আজ মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে অপহৃত ব্যক্তিদের উদ্ধারের কথা জানায় পুলিশ।
অপহৃত ব্যক্তিদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৫ এপ্রিল কাজের সন্ধানে সিলেটের জকিগঞ্জ থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা দেন ছয় বাসিন্দা। ১৬ এপ্রিল কক্সবাজারে পৌঁছে সবাই পরিবারের সঙ্গে মুঠোফোনে কথাও বলেন। এরপর সবার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারের কয়েকজন সদস্য গতকাল সোমবার বিকেলে কক্সবাজার শহরে পৌঁছে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। এ নিয়ে গতকাল প্রথম আলোয় ‘কক্সবাজারে গিয়ে ৫ দিন ধরে নিখোঁজ সিলেটের এক গ্রামের ৬ জন’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
উদ্ধার হওয়া ছয়জন হলেন জকিগঞ্জের ঈদগাঁও বাজার এলাকার বাসিন্দা রশিদ আহমদ (২০), একই গ্রামের মারুফ আহমদ (১৮), শাহিন আহমদ (২১), এমাদ উদ্দিন (২২), খালেদ হাসান (১৯) ও আবদুল জলিল (৫৫)।
আজ বিকেলে অপহৃত একজনের ভাই বাহার উদ্দিন টেকনাফ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে একটি অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর পুলিশ অভিযানে নামে।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশের একটি দল বিকেল থেকে টেকনাফের পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান শুরু করে। রাত পৌনে ৯টার দিকে পুলিশের একটি দল সমুদ্র উপকূলীয় বাহারছড়া ইউনিয়নের শিলখালী গ্রামের পূর্ব পাশের পাহাড়ের একটি আস্তানা থেকে অপহৃত ছয়জনকে উদ্ধার করে। অপহরণকারী দলের সদস্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।
পুলিশ ও পরিবারের সদস্যরা জানান, আজ দুপুরে অপহৃত রশিদ আহমদের মুঠোফোন নম্বর থেকে কল দিয়ে তাঁর ভাই বাহার উদ্দিনকে বলা হয়, অপহৃত ছয়জন টেকনাফের বাহারছড়ার পাহাড়ের আস্তানায় বন্দী আছেন। রাতেই তাঁদের বাহারছড়া সৈকত থেকে ট্রলারে তুলে সমুদ্রপথে ইন্দোনেশিয়া পাঠানো হবে। ওই ছয়জনের মধ্যে বাহার উদ্দিনের আরও এক ভাই এমাদ উদ্দিনও রয়েছেন। ফোন পাওয়ার পরপরই খবরটি বাহার উদ্দিন পুলিশকে জানান।
বাহার উদ্দিন বলেন, কলটি পাওয়ার পর অপহৃত ব্যক্তিদের অবস্থান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। পুলিশকে না জানালে রাতের মধ্যে তাঁদের ইন্দোনেশিয়ায় পাচার করা হতো। রাজমিস্ত্রির কাজ করার জন্য অপহৃত ব্যক্তিরা কক্সবাজারে এসেছিলেন। মানব পাচারকারী চক্র ছয়জনকে তুলে নিয়ে কক্সবাজার থেকে টেকনাফে নিয়ে পাহাড়ের আস্তানায় জিম্মি করে। তখন ছয়জনের মুঠোফোনও বন্ধ রাখা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানান, টেকনাফে মুক্তিপণের জন্য লোকজনকে অপহরণ এবং ট্রলারে সমুদ্রপথে মানব পাচার বেড়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদস্যরা সেন্ট মার্টিন দ্বীপের পশ্চিমে গভীর সাগর থেকে ২১৪ জন যাত্রীসহ একটি ট্রলার জব্দ করেছেন। তাঁদের মালয়েশিয়ায় পাচার করা হচ্ছিল। উদ্ধার যাত্রীদের অধিকাংশই ছিলেন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও কিশোরী।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ব র র ব হ রছড় সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
আলোচনা অব্যাহত থাকা অবস্থায় কর্মসূচি দেওয়া স্ববিরোধিতা মনে করছে বিএনপি
জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা অব্যাহত থাকা অবস্থায় সনদের ভিত্তিতে নির্বাচনের দাবিতে রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণাকে স্ববিরোধিতা বলে মনে করছে বিএনপি।
জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনসহ কয়েকটি দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামীসহ চারটি রাজনৈতিক দল। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি কী হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি।
এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা অব্যাহত আছে। এ অবস্থায় রাস্তায় কর্মসূচি দেওয়া অনেকটা স্ববিরোধিতা। তবে অবশ্যই যেকোনো দলের কর্মসূচি দেওয়ার গণতান্ত্রিক অধিকার আছে। তারা কর্মসূচি দিতে পারে।
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি কী হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি।বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদজামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনের দাবির মধ্যে জাতীয় সংসদের নিম্নকক্ষেও আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এই নেতা বলেন, জাতীয় সংসদের নিম্নকক্ষে পিআর পদ্ধতির বিষয়টি কখনো ঐকমত্য কমিশনে আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল না। এখন কোনো দল তাদের রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে এটি নিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি দিতে চাইলে দিতে পারে। কিন্তু জনগণের নামে এক দলের আদর্শ বা দাবি অন্যদের ওপর আরোপ করা কতটা সঠিক, সেটা দেখতে হবে।
জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের শরিক দলগুলোকে নিষিদ্ধ করার দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘শুরু থেকেই আমরা বলেছি, শুধু প্রশাসনিক আদেশে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা আমরা সমর্থন করি না। আগে আইন ছিল না, এখন আইন হয়েছে। কোনো দলকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হওয়া উচিত। এখন ঢালাওভাবে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করতে চাইলে তা কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, এর পেছনে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে কি না, সেটা জনগণ বিবেচনা করবে।’
শুরু থেকেই আমরা বলেছি, শুধু প্রশাসনিক আদেশে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা আমরা সমর্থন করি না। আগে আইন ছিল না, এখন আইন হয়েছে। কোনো দলকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হওয়া উচিত। সালাহউদ্দিন আহমদ, বিএনপি নেতাসালাহউদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে আরও বলেন, এই আন্দোলন কাদের বিরুদ্ধে, সেটা দেখতে হবে। এটা কি অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে, নাকি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বিরুদ্ধে, নাকি বিএনপির বিরুদ্ধে? এটা নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার কোনো কৌশল কি না, সেটাও দেখতে হবে। যারা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, তাদের কর্মসূচি ঘোষণা করার অধিকার আছে। তারা যদি রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে কর্মসূচি দেয়, তাদের মাঠের রাজনৈতিক বক্তব্যের জবাব বিএনপি মাঠের বক্তৃতার মাধ্যমেই দেবে।