বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ‘আমাদের দেশটা এখন খুব খারাপ অবস্থায় আছে। দেশের জনগণের, জাতির, দলের প্রত্যেকটা নেতা-কর্মীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। যদি বাংলাদেশের জনগণকে বিভক্ত করা যায়, এদেশকে আবারও ভারতীয় আধিপত্যবাদের হাতে চলে যেতে হবে। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ থাকতেই পারে। কিন্তু, যে দলই হোক, বিএনপি-জামায়াত, এনসিপিসহ অন্যান্য সকল দলকে জাতীয় স্বার্থে, দেশের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’ 

আজ বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে গণতন্ত্র ফোরামের উদ্যোগে আয়োজিত ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে গণতন্ত্র, সংস্কার ও বাস্তবতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।   

তারেক রহমানকে নিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমরা আজকে থেকে বিশ বছর আগে তাকে যেরকম দেখেছি বিশ বছর পরে দেখছি অনেক তফাৎ। আজকে তারেক রহমান সত্যি সত্যি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন এবং সঠিকভাবে পালন করছেন। যারা একসময় তাকে পছন্দ করতেন না, তারাও আজকে বলতে বাধ্য হচ্ছেন যে তারেক রহমানের মধ্যে ম্যাচিউরিটি এসেছে। এটা শুনতে ভালো লাগে আমাদের।’ 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘আজকে দেশে একটা বিষয় বেশ আলোচনায় এসেছে; নির্বাচন না সংস্কার। তবে আমি বলতে চাই নির্বাচনের বিকল্প কেবল নির্বাচনই হতে পারে। অন্য কোনো কিছু হতে পারে না। নির্বাচনের বিকল্প নির্বাচন। এখন কথা বললেই বলবে যে, মির্জা আব্বাস সংস্কারের বিরুদ্ধে কথা বলে, সংস্কার চায় না। কিন্তু না, আমাদের জন্য, নির্বাচনের জন্য, দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য যে সংস্কারটুকুর প্রয়োজন আমরা সেই সংস্কারটুকু চাই-ই।’ 

তিনি বলেন, ‘আমি একবার বলেছিলাম যে, আপনারা যে সংস্কারের কথা বলছেন সব সংস্কারতো মানা যাবে না। সেই কথাটিকে টুইস্ট করে আমাদের বিদেশে অবস্থানর তথাকথিত সাংবাদিক এমনভাবে বলল, বিএনপি সংস্কার চায় না, মির্জা আব্বাস সংস্কার চায় না। এমন কী সালমান এফ রহমানের টাকা খেয়ে যার স্বাস্থ্য-চেহারা মোটা হয়েছে তিনি প্রায়ই ফেসবুকে এসে বলেন, কেন মির্জা আব্বাস মানবেন না? আমি বলতে চাই, তোমার যেমন বিদেশে পালিয়ে থেকে কথা বলার অধিকার আছে, আমার কী দেশে থেকে কথা বলার অধিকার নাই?’ আমি এই দেশে মৃত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে জেলে থেকেছি সহকর্মীদের নিয়ে। পালিয়ে যাইনি। আপনারা তো পালিয়ে গিয়ে লম্বা লম্বা কথা বলতেছেন। আমি আপনাদের প্রতি সম্মান রেখেই বলতে চাই, যারা দেশের বাইরে আছেন, ইউটিউবার যারা আছেন; ভাই আমরা রাজনীতি ছেড়ে দেব, আপনারা দেশে আসেন। আপনাদের অনেক জ্ঞান, অনেক বুদ্ধি। আপনাদের জ্ঞান বুদ্ধি আমাদের অনেক প্রয়োজন। আপনারা দয়া করে দেশে আসেন। বুদ্ধি দেন, কথা বলেন, কাজ করেন, মেনে নেব।’

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘এনসিপির একজন বলে ফেললেন, এখন নির্বাচন করা সম্ভব না। কারণ প্রশাসনের সব জায়গায় বিএনপির লোক বসে আছেন। আরে ভাই, ১৭ বছর আওয়ামী লীগ দেশ শাসন করল, আপনি বিএনপির লোক কই পাইলেন? আমি বুঝলাম না। এই সমস্ত কথা নেহাতই বাচ্চাদের কথার মতো বলছেন।’

তিনি বলেন, ‘ইদানিং একটা গ্রুপ ফেসবুকে বলার চেষ্টা করছে যে, বিএনপি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে। আরে ভাই, ১৭ বছর এদের (আওয়ামী লীগ) যন্ত্রণায় পাগল হয়ে গেছি। পরিবার-পরিজনসহ অশান্তিতে ভুগেছি। বিএনপি অনেকের পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে আওয়ামী লীগের অত্যাচারের কারণে। বরং আমি বলতে চাই আওয়ামী লীগকে যারা দেশে পুনর্বাসিত করার চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। এই দেশে আওয়ামী লীগের অবস্থান থাকতে পারে না। এবং শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের সব নেতা-কর্মীসহ প্রশাসনের ব্যক্তিবর্গ, তাদের সবার বিচার হতে হবে।’ 

সোশ্যাল মিডিয়ার একটিভিস্টদেরকে উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এদের কাজ হলো দেশের মধ্যে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে রাখা। এদের থেকে আমাদেরকে সাবধান থাকতে হবে। জাতির বিবেক এখনো অন্ধ হয়ে যায়নি। দু’একজন লোকের কথায় সব শেষ হয়ে যায়নি। শেষ হয়ে যাবে না।’ 

ড.

ইউনূসকে উদ্দেশে করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘কয়েকদিন আগে শফিউর রহমান নামে একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ তো আওয়ামী লীগের প্রোডাক্ট। আরও আওয়ামী লীগের প্রোডাক্ট কিন্তু আপনার (ড. ইউনূস) ডানে-বামে আছে। আপনি একটু ওদের কাছ থেকে সাবধানে থাইকেন। সচিবালয়ের চারজন সচিব, এর বাইরে আরেকজন সচিব মর্যাদায় রয়েছে, এই মোট পাঁচজন এবং আপনার উপদেষ্টা পরিষদের কিছু লোক আপনাকে সঠিক রাস্তায় চলতে দেবে না। আপনার সারা জীবনের অর্জন কিন্তু এরা শেষ করে দেবে। আপনি দয়া করে এদের কাছ থেকে সাবধানে থাকবেন। আমরা আপনার সম্মান রক্ষা করে দেশটাকে সুন্দর করতে চাই। আপনি সফল হলে দেশটা ভালো হবে। আপনার সফলতা আমরা চাই। আপনার সফলতার ওপর নির্ভর করছে আমাদের দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব।’  

গণতন্ত্র ফোরামের সভাপতি ভিপি ইব্রাহিমের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার ওবায়দুর রহমান টিপুর সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ প্রমুখ।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ আপন র স ব এনপ র র জন য আম দ র রহম ন

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে

সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’

বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।

এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।

এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’

আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ