‘একটি বাক্সে ভোট পাঠাতে’ সমমনা পাঁচ ইসলামি রাজনৈতিক দলের নেতারা একমত হয়েছেন। আজ বুধবার সমমনা দলের সঙ্গে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংলাপে এ বিষয়ে নেতারা একমত হন।

এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতারা। এতে নেতৃত্ব দেন দলটির আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংস্কার, নির্বাচন ও চলমান পরিস্থিতি নিয়ে এই সংলাপ করে ইসলামী আন্দোলন।

বেলা সোয়া একটায় সংলাপ বৈঠক শেষ করে আনুষ্ঠানিক ব্রিফিং করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম। তিনি বলেন, ‘আমরা সমমনা পাঁচটি ইসলামী রাজনৈতিক দল একত্র হয়ে কতগুলো মৌলিক বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পেরেছি। সামনে জাতীয় নির্বাচন, আমরা যেন ইসলামি দলগুলো একটি বাক্সে ভোট পাঠাতে পারি, বিষয়টি নিয়ে কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। অনেকের আন্তরিকতা প্রকাশ পেয়েছে। আলোচনায় আমরা সন্তুষ্ট।’

প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো শেষ হওয়ার পরই যৌক্তিক সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে সবাই একমত হয়েছেন বলে জানান তিনি।

মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, ‘বিদেশিরা যাতে বাংলাদেশকে নিয়ে টালবাহানা না করতে পারে, এর প্রতিবাদ করার বিষয়ে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে। ইসলামি কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায়ও আমরা ঐকমত্যে পৌঁছেছি।’

নারী সংস্কারবিষয়ক কমিশন বাতিলের দাবি জানিয়ে রেজাউল করীম বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণ বাতিল করতে হবে। আমরা এ বিষয়ে একমত হয়েছি। তা না করলে প্রতিবাদে আমরা কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।’ তিনি আরও বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট, খুনি ও টাকা পাচারকারীদের বিচার ও টাকা ফেরত আনার বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি সম্পন্ন করতে হবে।’

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এটি শেষ সংলাপ নয়, জানিয়ে ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, এই আনুষ্ঠানিকতা আজই শেষ নয়। লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য ধারাবাহিকভাবে এই কার্যক্রম (সংলাপ) চলবে।

সংস্কার ও নির্বাচনের জন্য যৌক্তিক সময় কত দিন, এমন প্রশ্নের জবাবে মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, ‘সংস্কারের বিষয়ে নির্ধারিত সময় বলা যায় না। তবে সংস্কার যাতে দ্রুত হয় এটাই আমাদের চাওয়া।’

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এই সংলাপ ধারাবাহিকভাবে চলবে বলে জানান উপস্থিত রাজনৈতিক দলের নেতারা।

ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে আজকের সংলাপে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, নেজামে ইসলাম পার্টি ও খেলাফত মজলিস অংশ নেয়।

বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, ইসলামী আন্দোলন সংস্কারকে মুখ্য বিবেচনা করে নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়ে আসছে। নির্বাচনে ইসলামপন্থীদের আসনভিত্তিক একক প্রার্থী দেয়া এবং নারী কমিশনের বিতর্কিত সুপারিশ নিয়ে করণীয় নির্ধারণ বিষয়ে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সংলাপে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দীন আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী, মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া, সহসভাপতি মাওলানা আবদুল কুদ্দুস কাসেমী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা তাফাজ্জুল হক আজিজ।

আরও উপস্থিত ছিলেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, মাওলানা সাখাওয়াত হুসাইন, নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইজহার, সহসভাপতি মাওলানা আবদুল মাজেদ আতহারি, জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুফতি রেজাউল করীম আবরার প্রমুখ।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষে দলটির মহাসচিব হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমাদ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা মুসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমানসহ দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপস থ ত ত হয় ছ র আম র আম র ম ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

দলগুলো ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে ব্যর্থ হলে সরকার নিজের মতো সিদ্ধান্ত নেবে

জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিক-নির্দেশনা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারে, তাহলে সরকার তার মতো করে সিদ্ধান্ত নেবে।

আজ সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের ‘জরুরি সভায়’ এই সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। পরে সেখানে এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের সিদ্ধান্ত জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, আদিলুর রহমান খান ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

গত মঙ্গলবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এতে বলা হয়েছে, সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে বিশেষ আদেশ জারি করে তার ভিত্তিতে গণভোট হবে। গণভোটে প্রস্তাব পাস হলে আগামী সংসদ সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে।

তবে গণভোট কবে হবে, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার সরকারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। সরকার সিদ্ধান্ত নেবে গণভোট কি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে হবে, নাকি আগে হবে। এসব সুপারিশ জমা দেওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। এ রকম পরিস্থিতিতে আজ জরুরি বৈঠকে বসে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।

সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • উদ্বিগ্ন সরকার, দায়িত্ব দিল দলগুলোকে
  • সরকার, রাজনৈতিক দল সবারই দায়িত্ব আছে
  • সরকারের ভেতরে একটা অংশ নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা করছে: এনসিপি
  • প্রথম আলোরও একটা ঐকমত্য সনদ আছে, আর তা আছে আমাদের হৃদয়ে
  • রাজনৈতিক দলগুলোকে ৭ দিনের সময় দিলে সরকার
  • গণভোট নিয়ে মতভেদে উপদেষ্টা পরিষদের উদ্বেগ
  • দলগুলো ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে ব্যর্থ হলে সরকার নিজের মতো সিদ্ধান্ত নেবে
  • দেশের মানুষ ১৭ বছর ধরে নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে: সাইফুল হক
  • জুলাই সনদে সই না করা অংশের দায় নেব না: মির্জা ফখরুল
  • ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশকে ‘অশ্বডিম্ব’ বললেন সিপিবি সভাপতি