গত আমন মৌসুমে সরকারি খাদ্যগুদামে চাল সরবরাহ না করায় ঈশ্বরদীর ৪৪টি চালকলের লাইসেন্স বাতিল করেছে খাদ্য বিভাগ। বুধবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক শাহিনুর আলম।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, উপজেলার ১৪৩টি চালকলের মধ্যে চুক্তির আওতায় এসেছিল ৯৯টি। এর মধ্যে ৮৩টি চালকল চুক্তি অনুযায়ী, ১৬টি আংশিক ও ৪৪টি একফোঁটা চালও সরবরাহ করেনি। চলতি মৌসুমে ঈশ্বরদীতে মোট সংগ্রহ হয়েছে ৪ হাজার ৬৪৩ টন চাল, যা চুক্তির ৬৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ। চুক্তির আংশিক চাল সরবরাহ করা চালকলগুলোর জামানতও অনুপাতে বাতিল করা হয়েছে।

লাইসেন্স বাতিল হওয়া একাধিক চালকল মালিক দাবি করেছেন, নানা জটিলতায় তাদের পক্ষে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চাল সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। তবে জটিলতা কী তা স্পষ্ট করেননি তারা।

চালকল মালিক ইমদাদুল হক বলেন, মিলের যন্ত্রাংশে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। সময়মতো মেরামত করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া অনেক চালকলে শ্রমিক সংকট ছিল। এসব পরিস্থিতি বিবেচনায় না নিয়ে হঠাৎ করে লাইসেন্স বাতিল করা অন্যায় হয়েছে।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক শাহিনুর আলম বলেন, যেসব চালকল কোনো চুক্তি করেনি কিংবা সরবরাহে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। সরকারি খাদ্যগুদামে খাদ্যশস্য সরবরাহ একটি দায়িত্বশীল কাজ। এতে অবহেলার সুযোগ নেই।

বগুড়ার নন্দীগ্রামে ৯টি চালকলের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মাজেদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় লাইসেন্সভুক্ত মোট ১৫টি চালকল রয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি চালকল মালিক সরবরাহের জন্য চুক্তি করেন। বাকি ৯টি এ চুক্তি না করায় তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।

নন্দীগ্রামে আমন মৌসুমে ৪৭ টাকা কেজি দরে ৬৭২ টন সেদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যে মালিকদের সরকারি খাদ্যগুদামে চাল সরবরাহের আহ্বান করা হয়। এতে সাড়া দিয়ে ছয় চালকল মালিক ৩৪২.

৪৫০ টন চাল সরকারি খাদ্যগুদামে সরবরাহের চুক্তি সম্পাদন করেন। এর মধ্যে একজন চাল সরবরাহ করতে ব্যর্থ হওয়ায় তাঁর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। বাকি ৯টির মালিক চুক্তি না করায় তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হয়।

নন্দীগ্রাম চালকল মালিক সমিতির সভাপতি বদরুদ্দোজা আল-তৌফিক বলেন, ‘আমরা ক্ষুদ্র মিলার। সরকারি চাল সরবরাহের শর্ত ও সময়সীমা অনেক কঠোর। কেজিতে তিন টাকা লোকসান দিয়ে সরকারি খাদ্যগুদামে চাল সরবরাহ করেছি। আমরা সরকারকে সব সময় সহযোগিতা করতে চাই। বাস্তবতা বিবেচনা করে সময় ও সুযোগ দিলে ভালো হয়।’

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মাজেদুল ইসলাম জানিয়েছেন, নিয়ম অনুযায়ী লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের অনিয়ম রোধে কঠোর নজরদারি থাকবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: চ লকল ম ল ক চ ল সরবর হ নন দ গ র ম সরবর হ র চ লকল র সরক র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা

কারিগরি ক্ষতির (সিস্টেম লস) নামে গ্যাস অপচয় বাড়ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্যাস বিতরণ লাইনে অপচয় হয়েছে গড়ে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ গ্যাস। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। আর গত অর্থবছরের (২০২৪-২৫) মার্চ পর্যন্ত অপচয় হয়েছে ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এতে আর্থিক ক্ষতি ৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। এর বাইরে সঞ্চালন লাইনে অপচয় হয়েছে ২ শতাংশ।

‘দেশের জ্বালানিনিরাপত্তা: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়; গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এতে বলা হয়, ২ শতাংশ অপচয় গ্রহণযোগ্য, তাই ওইটুকু সমন্বয় করেই আর্থিক ক্ষতির হিসাব করা হয়েছে। গ্যাসের অপচয় রোধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে ছয়টি গ্যাস বিতরণ সংস্থা।

পেট্রোবাংলা বলছে, গ্যাস অপচয়ের জন্য দায়ী হচ্ছে পুরোনো, জরাজীর্ণ পাইপলাইন; গ্যাস সরবরাহ লাইনের গ্যাসস্টেশন রাইজারে লিকেজ (ছিদ্র); তৃতীয় পক্ষের উন্নয়নকাজে পাইপলাইন ছিদ্র হওয়া এবং আবাসিক খাতে প্রচুর অবৈধ সংযোগ। তবে এসব অপচয় রোধে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানায় পেট্রোবাংলা। এর মধ্যে রয়েছে গ্যাস সরবরাহব্যবস্থায় মিটারিং/ মনিটরিং ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা; লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কারিগরি ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখা; অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও উচ্ছেদ কার্যক্রম জোরদার করা এবং আবাসিক গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা।

দেশের গ্যাস খাতের চিত্র তুলে ধরে সেমিনারে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন। তিনি বলেন, দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমতে কমতে ১৫ বছর আগের জায়গায় চলে গেছে। গ্যাস অনুসন্ধান জোরদারের কোনো বিকল্প নেই। গ্যাস চুরি ও অপচয় কমাতে হবে। সঞ্চালন ও বিতরণ মিলে কারিগরি ক্ষতি প্রায় ১০ শতাংশ, যা অনেক বেশি। সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতি কোনোভাবেই ২ শতাংশ হওয়ার কথা নয়। এটা ভালো করে দেখা উচিত।

শিল্পে নতুন সংযোগে গ‍্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান বলেন, সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতির বিষয়টি গভীরভাবে দেখা হচ্ছে। অবৈধ সংযোগ বন্ধে পেট্রোবাংলা তৎপর আছে, খোঁজ পেলেই বিচ্ছিন্ন করা হবে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিল্পে নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে গ‍্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, যেহেতু তারা বেশি দাম দেবে। তাই অগ্রাধিকার বিবেচনা করে তিনটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। প্রথম ধাপের তালিকায় থাকছে, যেসব কারখানায় এখনই সংযোগ দেওয়া যাবে। এগুলো পরিদর্শন প্রায় শেষের দিকে, আগামী সপ্তাহে শেষ হয়ে যাবে।

সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহ করতে নতুন টার্মিনাল নির্মাণে অগ্রাধিকার পাচ্ছে স্থলভাগের টার্মিনাল। মহেশখালীর মাতারবাড়ী এলাকায় এটি করা হবে। এটি হলে কম দামের সময় বাড়তি এলএনজি কিনে মজুত করা যাবে। তবে এগুলো রাতারাতি করা যায় না, পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে।

জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে

তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তি (পিএসসি) নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি) মো. শোয়েব। তিনি বলেন, স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য তৈরি পিএসসির খসড়া জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ৫০টি কূপ সংস্কার, উন্নয়ন ও খননের প্রকল্পে ইতিমধ্যে ১৮টির কাজ শেষ হয়েছে। জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে। ৪টি কূপের কাজ চলমান। এ ছাড়া পেট্রোবাংলার বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যক্রম তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (পরিকল্পনা) মো. আবদুল মান্নান পাটওয়ারী।

সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে

পেট্রোবাংলার আর্থিক দিক তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (অর্থ) এ কে এম মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, গত অর্থবছরে পেট্রোবাংলার রাজস্ব আয় ৫৪ হাজার ১১৭ কোটি টাকা, এর মধ্যে অর্ধেক বকেয়া। গত মে পর্যন্ত গ্যাস বিল বকেয়া ২৭ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। এটি ধীরে ধীরে কমে আসছে। ১৩–১৫ হাজার কোটিতে বকেয়া নেমে এলে সন্তোষজনক। সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে ১৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। এরপর সার কারখানায় বকেয়া আছে ৯৬৪ কোটি টাকা। তবে বিদেশি কোনো কোম্পানির কাছে বিল বকেয়া নেই পেট্রোবাংলার। সব বিল শোধ করা হয়ে গেছে।

গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা

পেট্রোবাংলা বলছে, এলএনজি আমদানি শুরুর পর থেকে লোকসান শুরু হয় সংস্থাটির। প্রতিবছর সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নিচ্ছে পেট্রোবাংলা। ২০১৮-১৯ সালে এলএনজি আমদানি শুরু হয়, ওই বছর ভর্তুকি ছিল ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এরপর এলএনজি আমদানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভর্তুকিও বাড়তে থাকে। গত অর্থবছরে তারা ভর্তুকি নিয়েছে ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত পেট্রোবাংলা মোট ভর্তুকি নিয়েছে ৩৬ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। পেট্রোবাংলার হিসাবে গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিট গ্যাস সরবরাহে পেট্রোবাংলার খরচ হয়েছে ২৭ টাকা ৫৩ পয়সা। তারা বিক্রি করেছে ২২ টাকা ৯৩ পয়সায়। এর মানে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা ৬০ পয়সা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বেড়েছে মাছ, মুরগি ও ডিমের দাম
  • ইরানের ভুলে আজারবাইজান যেভাবে ইসরায়েলের দিকে ঝুঁকে পড়ল
  • গাজায় দুর্ভিক্ষের অংক
  • গ্যাস সংকট
  • ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতে যেসব খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে
  • ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ
  • কাফকো সার কারখানায় গ্যাস বিক্রির চুক্তি সই
  • গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা
  • পাবনায় আগাম পাটের বাজার চড়া, বেশি দাম পেয়ে কৃষক খুশি
  • নবায়নযোগ্য জ্বালানির যুগ কড়া নাড়ছে দরজায়