Samakal:
2025-08-01@20:06:49 GMT

চার দশকের যাত্রায় ‘অবসকিওর’ 

Published: 24th, April 2025 GMT

চার দশকের যাত্রায় ‘অবসকিওর’ 

‘‘সম্বল বলতে ছিল অ্যাকুস্টিক গিটার আর হারমোনিয়াম; যা দেখে অনেকেই বলেছিল, এ দিয়ে কী গান হবে? আশ্বাস দিয়ে বলেছিলাম, এতেই হবে। গান গাওয়ার জন্য এই দুই বাদ্যযন্ত্রই বা কম কী? দেখি না শুরু করে, কী হয়। ব্যস, এরপর শুরু হয়ে গেল আমাদের প্র্যাকটিস পর্ব। সে সময় আমরা না ছিলাম বড় শিল্পী, না বড় মাপের মিউজিশিয়ান। তবু আমরা ছিলাম খুব সাহসী; যাদের উৎসাহ, উদ্দীপনায় এতটুকু কমতি ছিল না। জন বালা এক পাদ্রির কাছে গিটার শিখেছিল। যতটুকু শিখেছিল, তা শুনে আশার জাল বুনেছিলাম নতুন কিছু করার। এরপর সোহেল আজিজকে হারমোনিয়াম বাজাতে দেখে, দলের কি-বোর্ডিস্ট করে নেওয়ার পরিকল্পনা করি। একইভাবে আজম বাবু ড্রামস বাজানো শিখেছে জেনে টেনেহিঁচড়ে দলে নিয়ে আসি। তখন পর্যন্ত আমার সম্পর্কে সবার জানাশোনা এটুকু যে, চাইম ব্যান্ড ইংরেজি গান গায়। এখন সেই ব্যান্ড ছেড়ে দিয়েছি। বাংলা গান গাওয়ার নেশায় গড়তে চাইছি নতুন এক ব্যান্ড। আমাকে নিয়ে নতুন ব্যান্ড গড়ে তুলতে সব রকম সহযোগিতা করছে বড় ভাইয়ের বন্ধু মাসুদ। দলের প্রযোজনে সে মাসুদও রিদম গিটার বাজানো ছেড়ে বেস গিটার হাতে তুলে নিয়েছে। এসব শুনে আর অভিনব কিছু করার আশায় তুষার, সোহেল আলম, আহসানরা দলে ভিড়েছিল। যেহেতু গানের জগতে আমরা অনেকটা আনকোড়া, বড় কোনো পরিচয় নেই, তাই দলের নামকরণ করা হয় ‘অবসকিউর’। ৮ বছর পর যার নামের বানান বদলে করা হয় ‘অবসকিওর’। এই হলো ব্যান্ডের জন্মবৃত্তান্ত।’’

বললেন অবসকিওরের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও কণ্ঠশিল্পী সাঈদ হাসান টিপু। 

গত চার দশক ধরে যিনি এখন ব্যান্ডের হাল ধরে আছেন। এই দীর্ঘ সময়ে পুরোনো সদস্যদের কেউ চলে গেছেন গানের ভুবন ছেড়ে, কেউ ভিন্ন দেশে, কেউ আবার চিরবিদায় নিয়েছেন পৃথিবী থেকে। তারপরও অবসকিওরের সংগীতযাত্রা থেমে থাকেনি। টিপুর নেতৃত্বে একে একে পেরিয়ে এসেছে চার দশকের পথ। ১৯৮৫ থেকে ২০২৫–এ পথপরিক্রমায় ‘অবসকিউর’, ‘অবসকিউর-২’, [প্রথম দুটি অ্যালবামে ব্যান্ডের নামের বানান ‘অবসকিউর’ ছিল; তৃতীয় অ্যালবাম থেকে নামের বানান বদলে ‘অবসকিওর’ লেখা শুরু হয়] ‘স্বপ্নচারিনী’, ‘ফেরাতে তোমায়’, ‘অবসকিওর আনপ্লাগড’, ‘অপেক্ষায় থেকো’, ‘ইচ্ছের ডাকাডাকি’, ‘ফেরা’, ‘অবসকিওর ও বাংলাদেশ’, ‘মাঝরাতে চাঁদ’, ‘ক্রাক প্ল্যাটুন’, ‘স্টপ জেনোসাইড’ ও ‘টিটোর স্বাধীনতা’ নামের অ্যালবাম প্রকাশের পাশাপাশি বেশ কিছু মিক্সড অ্যালবামে গান গেয়ে শ্রোতাদের ভালোবাসা কুড়িয়েছেন এ ব্যান্ড সদস্যরা। সে কারণে তাদের কাছে সব সময় নতুন কিছুর প্রত্যাশা ছিল শ্রোতাদের। বিশেষ করে যখন অনেকে জেনে গেছেন, এ বছর চার দশকের মাইলফলক স্পর্শ করছে ‘অবসকিওর’ তখন আরও বাড়তি কিছু পাওয়ার আশা করছেন অনুরাগীরা।

সে কারণে টিপুর কাছে প্রশ্ন ছিল, চার দশক পূর্তিতে নতুন, পুরোনো সদস্যদের নিয়ে ব্যান্ডের রি-ইউনিয়ন কনসার্ট, স্মারক অ্যালবাম প্রকাশ বা অন্য কিছু করার পরিকল্পনা আছে কিনা? এর জাবাবে একটু হতাশা নিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক কিছু তো করতে চাই। দেশের যে পরিস্থিতি তাতে করে কতটুকু কী করতে পারব বলা কঠিন। ব্যান্ডের রি-ইউনিয়ন করার ইচ্ছা থাকলেও স্পন্সর পাবো কি? এ প্রশ্ন বারবার মনে ঘুরপাক খায়। কারণ তৈলমর্দন, অনুরোধ, আবদার করে কিছু আদায় করা যে স্বভাবে নেই। এই যে আমরা এতগুলো ব্যান্ড অ্যালবাম প্রকাশ করেছি, তার বিনিময়ে যেটুকু পাওয়ার ছিল, তা কী পেয়েছি? পাইনি। চিরকাল ঠকেছি, তবু অভিযোগ তুলিনি। আমাদের গানগুলো শ্রোতার কাছে পৌঁছে দিতে পারার আনন্দকে বড় করে দেখেছি। তারপরও নিরাশাবাদী নই বলে রি-ইউনিয়নের পাশাপাশি গানের ভুবনের চিত্র বদলে যাবে– এ আশায় প্রহর গুণে যাচ্ছি।’

 টিপুর এ কথা থেকে যা স্পষ্ট তাহলো, সময় এবং দেশের প্রেক্ষাপট বদলে গেলে, চমকপ্রদ কিছু করার পরিকল্পনা রয়েছে ব্যান্ড সদস্যদের। সেটি কবে? তার দিনক্ষণ এখনই নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না। এর মাঝেও একটি সুখবর দিয়েছেন তিনি। তাহলো, স্মারক অ্যালবামের প্রকাশনা। যেটি বছরের শেষ প্রান্তে ভিনাইল রেকর্ড হিসেবে প্রকাশিত হবে। তার আগে শ্রোতার জন্য উপহার হিসেবে অনলাইনে প্রকাশ হচ্ছে নতুন সংগীতায়োজনে রেকর্ড জনপ্রিয় ১০টি গানের অ্যালবাম ‘রিইনকার্নেশন’। টিপুর কথায় সংগীতের এই দীর্ঘ সফরে অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আসতে হয়েছে। যেখানে গানই ছিল আমাদের প্রধান চালিকা শক্তি। শ্রোতাদের ভালোবাসা ছিল শক্তি, সাহস ও প্রেরণার উৎস। চার দশকের মাইলফলক স্পর্শের মুহূর্তটি স্মরণীয় করে রাখতে চেয়েছি আমরা। সেই ভাবনা থেকে ‘রিইনকার্নেশন’ অ্যালবামের প্রকাশনা।

যাদের নিয়ে অবসকিওর 
টিপু - কণ্ঠশিল্পী 
শান্ত ও আবির - লিড গিটারিস্ট
নাদিম -বেস গিটারিস্ট
বিনোদ ও আকাশ - কি-বোর্ডিস্ট
রাব্বী - ড্রামার

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব য ন ড দল চ র দশক র সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

শুল্ক কমেছে, বাংলাদেশে স্বস্তি

যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার পর বাংলাদেশের ওপর দেশটির আরোপ করা পাল্টা শুল্কের হার শেষ পর্যন্ত ২০ শতাংশ নির্ধারিত হয়েছে। নতুন শুল্কহার ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। গতকাল শুক্রবার হোয়াইট হাউসের এক ঘোষণায় এ কথা বলা হয়। বাণিজ্য বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুল্কহার কমে প্রতিযোগীদের কাছাকাছি অবস্থানে আসার ঘটনা বাংলাদেশের জন্য স্বস্তিদায়ক।

২৯ জুলাই থেকে তিন দিনের আলোচনা ও দর-কষাকষির শেষ দিন ৩১ জুলাই এ ঘোষণার আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে সই করেন। এতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৭০টি দেশের ওপর ১০ থেকে ৪১ শতাংশ পর্যন্ত পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা আসে।

পাল্টা শুল্কের হার ৩৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ নামিয়ে আনতে বাংলাদেশের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রকেও বেশ কিছু সুবিধা দিতে হয়েছে। একদিকে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে দেশটি থেকে আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বাংলাদেশে প্রবেশের ক্ষেত্রে শুল্কহার প্রায় শূন্য করে দেওয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো দায়িত্ব পান গত ২১ জানুয়ারি। এর দুই মাস পর গত ২ এপ্রিল হঠাৎ বিশ্বের ৭০ দেশের জন্য বিভিন্ন হারে পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন তিনি। অনেকেই ট্রাম্পের এ ঘোষণাকে একধরনের ‘বাণিজ্যযুদ্ধ’ বলে সমালোচনা করেছেন।

প্রথমে গত ২ এপ্রিল বাংলাদেশের ওপর আরোপ করা হয় ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক। মাঝখানে তিন মাস স্থগিত রাখার পর ৮ জুলাই তা কমিয়ে ট্রাম্প ৩৫ শতাংশ করেন। বর্তমানে গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ। নতুন পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশ করায় মোট শুল্কহার দাঁড়াবে এখন ৩৫ শতাংশে।

দর-কষাকষির মাধ্যমে ঘোষিত শুল্কহার কমিয়ে আনাকে ঐতিহাসিক চুক্তি আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশের আলোচকদের অভিনন্দন জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ‘এটি সুস্পষ্ট এক কূটনৈতিক সাফল্য।’

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) সঙ্গে আলোচনা করতে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন আলোচকদের মধ্যে আরও ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাউসার চৌধুরী।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বিবৃতিতে বলেছে, অনেক বিষয় জড়িত থাকায় শুল্ক আলোচনার প্রক্রিয়াটি ছিল জটিল ও সময়সাপেক্ষ। শুল্ক ছাড় পাওয়ার বিষয়টি শুধু শুল্ক কমানোর সঙ্গেই যুক্ত ছিল না; বরং অশুল্ক বাধা, বাণিজ্যঘাটতি ও নিরাপত্তা–সংক্রান্ত মার্কিন উদ্বেগও ছিল এর সঙ্গে। সমাধানের বিষয়টি নির্ভর করছিল একটি দেশের সদিচ্ছার ওপরও।

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তোজা গতকাল প্রথম আলোকে জানান, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘বাংলাদেশের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় আমরা প্রতিযোগিতামূলক অবস্থায় থাকব এবং যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই। তবে আমরা ২০ শতাংশের নিচে প্রত্যাশা করেছিলাম।’

প্রতিযোগী দেশগুলোর শুল্কহার

যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলোর উল্লেখযোগ্য হচ্ছে চীন, ভিয়েতনাম, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।

বাংলাদেশের সমান ২০ শতাংশ ভিয়েতনাম ও শ্রীলঙ্কা এবং ১৯ শতাংশ হার নিয়ে বাংলাদেশের চেয়ে সামান্য কম রয়েছে পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়া। মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনের হারও ১৯ শতাংশ। তাইওয়ানের ওপর ২০ শতাংশ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর ৩০ শতাংশ শুল্কারোপ করা হয়েছে।

যুক্তরাজ্য ও ব্রাজিলের ওপর ১০ শতাংশ; জাপান, ইসরায়েল, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং আফগানিস্তানের ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

সবচেয়ে বেশি, অর্থাৎ ৪১ শতাংশ শুল্কহার সিরিয়ার ওপর। বেশি হার আরোপ হওয়া দেশগুলোর মধ্যে লাওস ও মিয়ানমারের ওপর ৪০ শতাংশ; সুইজারল্যান্ডের ওপর ৩৯ শতাংশ; ইরাক ও সার্বিয়ার ওপর ৩৫ শতাংশ এবং লিবিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও আলজেরিয়ার ওপর ৩০ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্রকে কী দিচ্ছে বাংলাদেশ

সরকারি–বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানিতে শুল্কহার প্রায় শূন্য করে দেওয়া হয়েছে। আবার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কনভেশন পুরোপুরি মেনে চলারও অঙ্গীকার করেছে বাংলাদেশ।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি কমাতে দেশটি থেকে দাম বেশি দিয়ে হলেও বছরে সাত লাখ টন করে গম কেনা হবে পাঁচ বছর ধরে। ইতিমধ্যে ২ লাখ ২০ হাজার টন গম কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি।

দেশটি থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আগে থেকেই আমদানি করা হচ্ছে। তা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। আর যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক কোম্পানি বোয়িং থেকে উড়োজাহাজ কেনার সংখ্যা বাড়িয়ে ২৫ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ৯ থেকে ১১ জুলাই দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় সফল না হওয়ার পর থেকেই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে থাকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ যেসব পণ্য বেশি আমদানি করে, সেসব পণ্যের রপ্তানিকারকদের সঙ্গে ১৭ থেকে ২৩ জুলাই সপ্তাহব্যাপী অনলাইনে বৈঠক করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। দেশের সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়েই তিনি বৈঠকগুলো করেন।

গত ১৩ জুন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নন ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট (প্রকাশ না করার চুক্তি) করার কারণে সরকারি প্রতিনিধিদলে অন্য কাউকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে ভেতরে-ভেতরে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়।

সরকারের আহ্বানে সফরের এক সপ্তাহ আগে থেকেই ব্যবসায়ীরা যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য রপ্তানিকারকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল দফায় দফায় যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানিকারকদের সঙ্গে বৈঠক করে। এসব সভায় তাৎক্ষণিকভাবে ২৬ কোটি ৮০ লাখ ডলারের সয়াবিনবীজ ও তুলা আমদানির সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) করেন তাঁরা। বিপুল পরিমাণ পণ্য আমদানির প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।

ব্যবসায়ীদের সূত্রগুলো জানায়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রায় ৪ লাখ টন সয়াবিনবীজ আমদানির এমওইউ হয়েছে। মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল ১৩ কোটি ডলারে ৩ লাখ টন সয়াবিনবীজ আমদানির এমওইউ করেছেন।

ডেলটা অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক প্রায় ১০ কোটি ডলারের সয়াবিনবীজ আমদানির এমওইউ করেছেন।

এ ছাড়া ৩ কোটি ৮০ লাখ ডলারের ১৯ হাজার টন তুলা আমদানির সমঝোতার চুক্তি করেছে বস্ত্র খাতের তিনটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে কার্গিল ইনকরপোরেটের কাছ থেকে এশিয়া কম্পোজিট ১ কোটি ২০ লাখ ডলারে ৬ হাজার টন আমদানির এমওইউ করেছে। একই দরে একই পরিমাণ তুলা আমদানির এমওইউ করেছে সালমা গ্রুপও। এ ছাড়া মোশাররফ গ্রুপ মার্কিন লুইস ড্রেফাস গ্রুপ থেকে ১ কোটি ৪০ লাখ ডলারের ৭ হাজার টন তুলা আমদানির এমওইউ করেছে।

কিসের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ২০ শতাংশ শুল্কহার ঠিক করতে পেরেছে, এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি কমাতে বাংলাদেশ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে, এটাই হচ্ছে প্রধান কারণ।’

ট্রেড ইউনিয়ন, মজুরি, শ্রমিক নিপীড়ন, মামলা—এসব বিষয় আলোচনায় উঠেছিল কি না, জানতে চাইলে বাণিজ্যসচিব বলেন, ‘আলোচনা হয়েছে। শ্রম অধিকার সমুন্নত রাখতে জোর দিয়েছে তারা। আমরা আইএলও কনভেনশন মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। এ জন্য শ্রম আইন সংশোধনের কাজ চলছে।’

‘অত্যন্ত স্বস্তিকর ঘটনা’

ওয়াশিংটনে দর-কষাকষিতে অংশ নেওয়া বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পাল্টা শুল্ক কমার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন, তাতে বাংলাদেশ বড় ধরনের অনিশ্চয়তা থেকে রেহাই পেয়েছে। তিনি বলেন, ‘সময়সীমার মধ্যেই জটিল আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে পেরেছিলাম। নইলে ৩৫ শতাংশের গুরুভার বহন করে যেতে হতো।’

খলিলুর রহমান আরও বলেন, প্রধান প্রতিযোগী দেশগুলোর সমান অথবা যত্সামান্য বেশি এবং ভারতের চেয়ে ৫ শতাংশ কম হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য এখন প্রতিযোগিতামূলক থাকবে। তৈরি পোশাকশিল্প ও এর ওপর নির্ভরশীল লাখ লাখ মানুষের জন্য এটি অত্যন্ত স্বস্তিকর ঘটনা।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান গতকাল বাণিজ্য উপদেষ্টার উদ্দেশে ফেসবুকে এক পোস্টে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সফল শুল্ক আলোচনায় তিনি (শেখ বশিরউদ্দীন) সমালোচকদের হতাশ করে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন। আল্লাহ তাঁকে হায়াতে তাইয়্যেবা দান করুন, যাতে তিনি দেশকে সেবা দিতে পারেন, হোক তা সরকারে বা বেসরকারি খাতে।’

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কহার ২০ শতাংশে আনা রপ্তানি খাতের জন্য একটি ইতিবাচক ও স্বাগতযোগ্য পদক্ষেপ। তবে আশাব্যঞ্জক হলেও আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই, বরং এটি একটি সুযোগ এবং একই সঙ্গে সতর্কবার্তা। বাংলাদেশকে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে একটি বৈচিত্র্যময়, প্রতিযোগিতামূলক ও সহনশীল বাণিজ্যকৌশল প্রতিষ্ঠা করা যায়।

অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ জহির প্রথম আলোকে বলেন, একটি বিশ্বশক্তির চাপের মুখে এই সাফল্য অর্জনের জন্য সরকার ও আলোচক দলের প্রতি আন্তরিক অভিনন্দন। এটি সম্ভবত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সবচেয়ে কঠিন লড়াইগুলোর একটি ছিল, যা পরিপক্বতা ও দূরদর্শিতার সঙ্গে মোকাবিলা করেছেন তাঁরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ