‘‘সম্বল বলতে ছিল অ্যাকুস্টিক গিটার আর হারমোনিয়াম; যা দেখে অনেকেই বলেছিল, এ দিয়ে কী গান হবে? আশ্বাস দিয়ে বলেছিলাম, এতেই হবে। গান গাওয়ার জন্য এই দুই বাদ্যযন্ত্রই বা কম কী? দেখি না শুরু করে, কী হয়। ব্যস, এরপর শুরু হয়ে গেল আমাদের প্র্যাকটিস পর্ব। সে সময় আমরা না ছিলাম বড় শিল্পী, না বড় মাপের মিউজিশিয়ান। তবু আমরা ছিলাম খুব সাহসী; যাদের উৎসাহ, উদ্দীপনায় এতটুকু কমতি ছিল না। জন বালা এক পাদ্রির কাছে গিটার শিখেছিল। যতটুকু শিখেছিল, তা শুনে আশার জাল বুনেছিলাম নতুন কিছু করার। এরপর সোহেল আজিজকে হারমোনিয়াম বাজাতে দেখে, দলের কি-বোর্ডিস্ট করে নেওয়ার পরিকল্পনা করি। একইভাবে আজম বাবু ড্রামস বাজানো শিখেছে জেনে টেনেহিঁচড়ে দলে নিয়ে আসি। তখন পর্যন্ত আমার সম্পর্কে সবার জানাশোনা এটুকু যে, চাইম ব্যান্ড ইংরেজি গান গায়। এখন সেই ব্যান্ড ছেড়ে দিয়েছি। বাংলা গান গাওয়ার নেশায় গড়তে চাইছি নতুন এক ব্যান্ড। আমাকে নিয়ে নতুন ব্যান্ড গড়ে তুলতে সব রকম সহযোগিতা করছে বড় ভাইয়ের বন্ধু মাসুদ। দলের প্রযোজনে সে মাসুদও রিদম গিটার বাজানো ছেড়ে বেস গিটার হাতে তুলে নিয়েছে। এসব শুনে আর অভিনব কিছু করার আশায় তুষার, সোহেল আলম, আহসানরা দলে ভিড়েছিল। যেহেতু গানের জগতে আমরা অনেকটা আনকোড়া, বড় কোনো পরিচয় নেই, তাই দলের নামকরণ করা হয় ‘অবসকিউর’। ৮ বছর পর যার নামের বানান বদলে করা হয় ‘অবসকিওর’। এই হলো ব্যান্ডের জন্মবৃত্তান্ত।’’
বললেন অবসকিওরের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও কণ্ঠশিল্পী সাঈদ হাসান টিপু।
গত চার দশক ধরে যিনি এখন ব্যান্ডের হাল ধরে আছেন। এই দীর্ঘ সময়ে পুরোনো সদস্যদের কেউ চলে গেছেন গানের ভুবন ছেড়ে, কেউ ভিন্ন দেশে, কেউ আবার চিরবিদায় নিয়েছেন পৃথিবী থেকে। তারপরও অবসকিওরের সংগীতযাত্রা থেমে থাকেনি। টিপুর নেতৃত্বে একে একে পেরিয়ে এসেছে চার দশকের পথ। ১৯৮৫ থেকে ২০২৫–এ পথপরিক্রমায় ‘অবসকিউর’, ‘অবসকিউর-২’, [প্রথম দুটি অ্যালবামে ব্যান্ডের নামের বানান ‘অবসকিউর’ ছিল; তৃতীয় অ্যালবাম থেকে নামের বানান বদলে ‘অবসকিওর’ লেখা শুরু হয়] ‘স্বপ্নচারিনী’, ‘ফেরাতে তোমায়’, ‘অবসকিওর আনপ্লাগড’, ‘অপেক্ষায় থেকো’, ‘ইচ্ছের ডাকাডাকি’, ‘ফেরা’, ‘অবসকিওর ও বাংলাদেশ’, ‘মাঝরাতে চাঁদ’, ‘ক্রাক প্ল্যাটুন’, ‘স্টপ জেনোসাইড’ ও ‘টিটোর স্বাধীনতা’ নামের অ্যালবাম প্রকাশের পাশাপাশি বেশ কিছু মিক্সড অ্যালবামে গান গেয়ে শ্রোতাদের ভালোবাসা কুড়িয়েছেন এ ব্যান্ড সদস্যরা। সে কারণে তাদের কাছে সব সময় নতুন কিছুর প্রত্যাশা ছিল শ্রোতাদের। বিশেষ করে যখন অনেকে জেনে গেছেন, এ বছর চার দশকের মাইলফলক স্পর্শ করছে ‘অবসকিওর’ তখন আরও বাড়তি কিছু পাওয়ার আশা করছেন অনুরাগীরা।
সে কারণে টিপুর কাছে প্রশ্ন ছিল, চার দশক পূর্তিতে নতুন, পুরোনো সদস্যদের নিয়ে ব্যান্ডের রি-ইউনিয়ন কনসার্ট, স্মারক অ্যালবাম প্রকাশ বা অন্য কিছু করার পরিকল্পনা আছে কিনা? এর জাবাবে একটু হতাশা নিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক কিছু তো করতে চাই। দেশের যে পরিস্থিতি তাতে করে কতটুকু কী করতে পারব বলা কঠিন। ব্যান্ডের রি-ইউনিয়ন করার ইচ্ছা থাকলেও স্পন্সর পাবো কি? এ প্রশ্ন বারবার মনে ঘুরপাক খায়। কারণ তৈলমর্দন, অনুরোধ, আবদার করে কিছু আদায় করা যে স্বভাবে নেই। এই যে আমরা এতগুলো ব্যান্ড অ্যালবাম প্রকাশ করেছি, তার বিনিময়ে যেটুকু পাওয়ার ছিল, তা কী পেয়েছি? পাইনি। চিরকাল ঠকেছি, তবু অভিযোগ তুলিনি। আমাদের গানগুলো শ্রোতার কাছে পৌঁছে দিতে পারার আনন্দকে বড় করে দেখেছি। তারপরও নিরাশাবাদী নই বলে রি-ইউনিয়নের পাশাপাশি গানের ভুবনের চিত্র বদলে যাবে– এ আশায় প্রহর গুণে যাচ্ছি।’
টিপুর এ কথা থেকে যা স্পষ্ট তাহলো, সময় এবং দেশের প্রেক্ষাপট বদলে গেলে, চমকপ্রদ কিছু করার পরিকল্পনা রয়েছে ব্যান্ড সদস্যদের। সেটি কবে? তার দিনক্ষণ এখনই নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না। এর মাঝেও একটি সুখবর দিয়েছেন তিনি। তাহলো, স্মারক অ্যালবামের প্রকাশনা। যেটি বছরের শেষ প্রান্তে ভিনাইল রেকর্ড হিসেবে প্রকাশিত হবে। তার আগে শ্রোতার জন্য উপহার হিসেবে অনলাইনে প্রকাশ হচ্ছে নতুন সংগীতায়োজনে রেকর্ড জনপ্রিয় ১০টি গানের অ্যালবাম ‘রিইনকার্নেশন’। টিপুর কথায় সংগীতের এই দীর্ঘ সফরে অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আসতে হয়েছে। যেখানে গানই ছিল আমাদের প্রধান চালিকা শক্তি। শ্রোতাদের ভালোবাসা ছিল শক্তি, সাহস ও প্রেরণার উৎস। চার দশকের মাইলফলক স্পর্শের মুহূর্তটি স্মরণীয় করে রাখতে চেয়েছি আমরা। সেই ভাবনা থেকে ‘রিইনকার্নেশন’ অ্যালবামের প্রকাশনা।
যাদের নিয়ে অবসকিওর
টিপু - কণ্ঠশিল্পী
শান্ত ও আবির - লিড গিটারিস্ট
নাদিম -বেস গিটারিস্ট
বিনোদ ও আকাশ - কি-বোর্ডিস্ট
রাব্বী - ড্রামার
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব য ন ড দল চ র দশক র সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার
অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় ওই চারজনের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বহিষ্কৃত সদস্যরা হলেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক ও তরফদার আবদুল মুকিত। তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আদালতের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ সমিতির নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে নন। বৃহস্পতিবার ওই চার সদস্যকে বহিষ্কারের বিষয়টি নোটিশ দিয়ে জানানো হবে।’
সমিতি সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সৈয়দ কবির হোসেনের (জনি) কাছে ৩৫ লাখ টাকায় শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকায় জমি বিক্রি করেন ইমরান হাসান। জমি রেজিস্ট্রির আগে সব টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সৈয়দ কবির হোসেন ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি ২৫ লাখ টাকা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। পরে তিনি আরও ১৭ লাখ টাকা দেন। বাকি ৮ লাখ টাকা চাইলে হুমকি দিতে থাকেন কবির হোসেন। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ইমরান হাসান আইনজীবী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে কবির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কবির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
এ বিষয়ে আইনজীবী কবির হোসেন বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে যে বিষয়ে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে অভিযুক্ত আমি নই। তারপরও আইনজীবী সমিতি আমার অভিভাবক; তারা যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’
অন্যদিকে অভয়নগরের নওয়াপাড়ার জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশন পাওনা টাকা আদায়ে আবদুর রাজ্জাককে মামলার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক আটটি চেকের মামলা পরিচালনা করেন। এসব মামলার রায় ও আপিল বাদীর অনুকূলে যাওয়ার পর আটটি চেকের ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন আবদুর রাজ্জাক। এ টাকা জয়েন্ট ট্রেডিং কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে তিনি ঘোরাতে থাকেন। চলতি বছরের ৪ জুন তিনি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় নগদায়ন করা যায়নি। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওহাব গত ২৮ জুলাই আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যশোর আইনজীবী সমিতি বরাবর অভিযোগ করেন।
এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুর রাজ্জাককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় যশোর আইনজীবী সমিতি। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আবদুর রাজ্জাককে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া রফিকুল ইসলাম রফিক তাঁর সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ ও মামলা করতে টাকা ও কাগজপত্র নিয়ে মামলা না করায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আইনজীবী তরফদার আবদুল মুকিতের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।