প্রাণের ভেতরে প্রাণ
আরিফ মঈনুদ্দীন
কাপড় কাচার মতো করে সারারাত
অন্ধকার ধুয়েছি—নিজের ভেতরের অন্ধকার
আলোর ফেরিওয়ালার দিকে বাড়িয়ে দিয়েছি হাত—
সসম্মান অভিব্যক্তিতে তিনিও ধরেছেন হাত—
শক্ত করে ধরা হাতে অলৌকিক অভিজ্ঞান
চলার পথের পাথেয় তা
ভুল করে যদি নিতে না পারি তাহলে আমারই ব্যর্থতা
সকাল হওয়ার অপেক্ষায় থেকে থেকে হিসাব কষেছি—
কিছুই নেই ভান্ডারে জমা—অনেক ভুল করেছি,
মাশুলও নেই হাতে—প্রাণখোলা আবেগে প্রার্থনা ছাড়া
একটি শব্দের কাছে সমর্পণ সেরে গভীর আবেগে
উচ্চারণ করি, ক্ষমা চাই—ক্ষমা
নিশিজাগা প্রহরীর হাঁকডাকের মতন ক্ষণে ক্ষণে
কে যেন করে আহবান
অকস্মাৎ টের পাই ভেতরে এক আওয়াজ—
আমার বিরান জমিতে জেগে উঠেছে প্রাণের ভেতরে প্রাণ।
অভিমুখ
রাগীব হাসান
জলকণায় ভেসে রয়েছে কার চক্ষুদ্বয়
ভাসমান বাষ্পে ডুবে আছে কার ব্যক্তিগত বিমান–
বিষাদ ভেঙে কে জেগে ওঠে,
শাদা থামের চূড়োয় গান ঝরে পড়ে
রাত্রির যোনি ছিঁড়ে উড়ে যায় নিমপাতা, উপকূলের তাঁবু–
ওই ধূসর ঢেউ কম্পমান, আলো ছিটকে পড়ে
হিমশূন্য থেকে বের হয়ে আসে
তরমুজ ফলের মতো একটি নীলগ্রহ
যাত্রী ট্রেনের মতন ধ্বনি তোলে
সেই সব পাথরে ফুলের স্তবক, বিরহ ঝরে পড়ে অপরাহ্ণে
সৈনিকের পোশাকের আলো খসে পড়ে বিষাদরংরেখায়
এই সন্ধ্যা আপেলরঙের মতন জ্বলছে
ট্রাকচালকের দৃষ্টি কোন অভিমুখিতাকে পরমতায় ঢেকে দেয়?
প্রেমের অভিসম্পাত
রনি অধিকারী
প্রেমের অভিসম্পাতে আজ ফালাফালা হয়ে আছি .
প্রিয়মুখে হাসিমুখ খুঁজে নেবো শেষতম ছুতো
আঘাতের বদলে আঘাত চিহ্নের বদলে নেবো ক্ষত।
প্রেমের অভিসম্পাতে টুকরো টুকরো হয়ে আছি ...
অভিশাপের ঐ সূত্র ধরে যত মন্ত্র-তন্ত্র-শাস্ত্র জানি
তোমরা জানো না বুঝি, বদলে নিয়েছি দৈববাণী!
মায়াবী সময়ে ডেকে আনো আজি গুপ্ত খুনিদের
ক্রমশ প্রকাশ্যে খুলে যাবে নিবিড় চুম্বনরত ...
দগ্ধ-দুপুরে একান্ত ভাবি হে মানবী তুমি কি সম্মত!
গন্তব্য
স্নিগ্ধা বাউল
তোমাকে গন্তব্য জেনে যে বাতাস বইছে
তাকে জানালায় আটকে রাখলাম
থইথই মেঘ শূন্যে নেমে যাচ্ছে
আর বিবর্ণ হচ্ছে আমাদের পহেলা প্রেম
তোমাকে গন্তব্য জেনে যে চোখ স্বপ্ন দেখছে
তাকে চশমায় বিদ্ধ করলাম
গ্লুকোমায় ভরে গেছে দূরত্ব
আর তুমি নিংড়ে নিতে পারছো আয়োডিন
তোমায় গন্তব্য ভেবে যার কাছে গেলাম
সে তোমার টিউমার
স্ফীত সফল অথচ অপ্রয়োজন
প্রতিদিন বাড়ছে গন্তব্যের সংখ্যা…
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
প্রযুক্তি কি ডিমেনশিয়া বাড়িয়ে দিচ্ছে? ৫৭টি ভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে বিস্ময়কর তথ্য
প্রযুক্তির কল্যাণে হুটহাট বড় পরিবর্তন আসা নতুন কিছু নয়। করোনা মহামারির আগে বাসা থেকেও যে অফিস করা সম্ভব, সেটা মানতে চাইতেন না অনেকে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হোম অফিস হয়েছে স্বাভাবিক। একই ঘটনা ঘটেছে ডিজিটাল দুনিয়ায়। একসময় যেকোনো তথ্য খুঁজে বের করার জন্য শরণাপন্ন হতে হতো সার্চ ইঞ্জিনের; এআই সেই উত্তর সবিস্তারে দিয়ে দিচ্ছে মুহূর্তেই। ফলে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন শুধু জীবনকে সহজতর করছে না, বাঁচিয়ে দিচ্ছে সময় ও পরিশ্রমও। কিন্তু এই বেঁচে যাওয়া সময় ও পরিশ্রম মস্তিষ্কের ওপর ঠিক কীভাবে প্রভাব ফেলছে?
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস ও বেলোর ইউনিভার্সিটির এক যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, এত দিন প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে মানব মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমার যে গুঞ্জন ভেসে বেড়িয়েছে, তার কোনো সত্যতা নেই। ‘নেচার হিউম্যান বিহেভিয়ার’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ নামে যে হাইপোথিসিস আছে, তার কোনো প্রমাণ নেই গবেষকদের কাছে। বরং পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষদের স্মার্টফোন, কম্পিউটার কিংবা ইন্টারনেট ব্যবহার তাঁদের স্বাভাবিক স্মৃতিভ্রম অনেকটা স্তিমিত করে।
ডিজিটাল ডিমেনশিয়া কী২০১২ সালে প্রথম ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ তত্ত্ব নিয়ে হাজির হন জার্মান স্নায়ুবিজ্ঞানী ও মনোবিদ ম্যানফ্রেড স্পিৎজার। মূলত যে হারে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে এবং মানুষ যান্ত্রিক পর্দার সামনে প্রতিদিনের বেশির ভাগ সময় কাটাচ্ছে, তাতে প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে অনেকটাই। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় তথ্যগুলোও মনে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে অনেকে। যেমন ফোন নম্বর। একসময় প্রিয়জনের ফোন নম্বর আমাদের মুখস্থ থাকত। এখন ফোন নম্বর ঠাঁই পায় মুঠোফোনের কনটাক্ট লিস্টে। ফোন নম্বর মনে রাখার চেষ্টাই করে না কেউ। আবার অনেকক্ষণ যান্ত্রিক পর্দার সামনে থাকলেও সেখান থেকে শেখার ইচ্ছা থাকে না অনেকের। চোখের সামনে যা আসছে, স্ক্রল করে চলে যাচ্ছে পরের কোনো কনটেন্টে। এতে মনোযোগ হারিয়ে যায় দ্রুত। আর প্রযুক্তির এমন অতিব্যবহার যে স্মৃতিশক্তি কমিয়ে দিচ্ছে, একেই ধরা হয় ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ হিসেবে।
আরও পড়ুনডিজিটাল স্ক্রিন ব্যবহারের সময় ২০-২০-২০ নিয়ম মানাটা কেন জরুরি২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩গবেষণা যা বলছেপ্রায় ৪ লাখ ১১ হাজার পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষের ওপর চালানো ৫৭টি ভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে যে স্মৃতিভ্রম দেখা দেয়, তার অনেকটাই হ্রাস করে প্রযুক্তির ব্যবহার। প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের ফলে স্মৃতিশক্তি কমে আসার আশঙ্কা প্রায় ৫৮ শতাংশে নেমে আসে।
স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া বরং আরও কিছু সূচকের (যেমন সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পারিবারিক অবস্থা) ওপর নির্ভর করে। মজার ব্যাপার হলো, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার থেকেও বেশি কার্যকর প্রযুক্তির ব্যবহার।
তবে এর সবকিছুই নির্ভর করছে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের ওপর। পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিরা বেশির ভাগ সময়ই অনলাইনে কাটান ইউটিউব ভিডিও অথবা ফেসবুক স্ক্রল করে। এতে তাঁদের মস্তিষ্কের ব্যবহার হয় না বললেই চলে। মস্তিষ্ক সচল রাখতে পারে এমন কনটেন্টে তাঁদের মনোযোগ সরিয়ে নিতে পারলে আনন্দ যেমন পাবেন, তেমনই ডিজিটাল দুনিয়া সম্পর্কে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গিও পালটে যাবে। এ ছাড়া অনলাইনের হাজারো গুজব ও উসকানি থেকে মুক্ত থাকবেন তাঁরা।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট
আরও পড়ুনমাত্রাতিরিক্ত স্ক্রিনটাইম যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩