‘পোলট্রি পল্লি’ গ্রামের বাড়িগুলো যেন একেকটি খামার
Published: 25th, April 2025 GMT
তখন মাত্র দশম শ্রেণিতে উঠেছেন আরিফুল। ক্লাসের দ্বিতীয় দিনে শ্রেণিশিক্ষক আবদুল হামিদ শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চান, কার কী হওয়ার স্বপ্ন। আরিফুল উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছার কথা বলেন। যা শুনে সহপাঠীরা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করেন। অপমান বোধ করে আরিফুল উদ্যোক্তাই হবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেন। ২৪ বছরের ব্যবধানে আরিফুল এখন একজন সফল উদ্যোক্তার নাম।
৩৯ বছর বয়সী আরিফুল ইসলাম সফল পোলট্রি খামারি হয়ে কেবল নিজের স্বপ্ন পূরণ করেই থামেননি, তরুণ-যুবাদের অনুপ্রেরণা-পরামর্শ দিয়ে রীতিমতো ‘উদ্যোক্তা তৈরির কারিগর’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। আরিফুলের বাড়ি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালী ইউনিয়নের হাজীপুর গ্রামে। নিজের আয়ে গ্রামেই করেছেন ডুপ্লেক্স বাড়ি। উদ্যোক্তা গড়তে তিনি নারী-পুরুষদের বিনা মূল্যে দিচ্ছেন প্রশিক্ষণ। আরিফুলের চেষ্টায় স্থানীয় দুই শতাধিক মানুষ মুরগির খামার গড়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন। আরিফুলের কল্যাণে এই গ্রামকে এখন ‘পোলট্রি পল্লি’ নামে চেনে লোকে।
আরিফুলের বাড়িতে ঢোকার রাস্তার দুই পাশে সারি সারি গাছ। সে বীথি পেরিয়ে তাঁর নান্দনিক ডুপ্লেক্স পাকা বাড়ি। আরিফুল তখন গ্রামের নারী-পুরুষদের মুরগি পালনের প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে চার একর জমিতে গড়ে তোলা মাছ, মুরগি ও গাভির খামার ঘুরিয়ে দেখান আরিফুল। এর ফাঁকে ফাঁকে নিজের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প শোনালেন।আরিফুলের খামারে একদিন
তারাগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে নিভৃত এক গ্রাম হাজীপুর। কাঁচা-পাকা পথ ধরে আরিফুল ইসলামের বাড়ি যাওয়ার সময় একের পর এক খামার চোখে পড়ে। প্রতিটি বাড়ির আনাচকানাচে সবজি চাষ করা হয়েছে। উঠানেও হাঁস-মুরগি, গোয়ালে গরু-ছাগল-ভেড়া। ঘরের চালা, আঙিনাজুড়ে চোখে পড়ে বিভিন্ন জাতের কবুতর। গ্রামের প্রতিটি বাড়ি যেন ছোট-বড় একেকটি খামার।
আরিফুলের বাড়িতে ঢোকার রাস্তার দুই পাশে সারি সারি গাছ। সে বীথি পেরিয়ে তাঁর নান্দনিক ডুপ্লেক্স পাকা বাড়ি। আরিফুল তখন গ্রামের নারী-পুরুষদের মুরগি পালনের প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে চার একর জমিতে গড়ে তোলা মাছ, মুরগি ও গাভির খামার ঘুরিয়ে দেখান আরিফুল। এর ফাঁকে ফাঁকে নিজের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প শোনালেন।
ডিম বিক্রির লাভের টাকায় আরিফুল আরও এক হাজার মুরগি আনেন খামারে। এভাবে একপর্যায়ে আয় বাড়ে, খামার বাড়ে; আরিফুল হয়ে ওঠেন সফল উদ্যোক্তা।আরিফুলের প্রতিজ্ঞা
আরিফুলের বাবা মোবারক হোসেন সম্ভ্রান্ত কৃষক। সচ্ছল পরিবারের ছেলে চাকরিবাকরি করবেন—গ্রামে এটাই রীতি; কিন্তু আরিফুল তা হননি। ২০০১ সালে স্থানীয় লালচাঁদপুর দাখিল মাদ্রাসায় দশম শ্রেণিতে পড়তেন তিনি। ক্লাসের দ্বিতীয় দিনেই এই উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নকে অপমানিত হতে দেখে তিনি স্বপ্নকে বাস্তব করে দেখিয়ে দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করে বসেন।
আরিফুল বলেন, উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছা তাঁকে সব সময় তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াত। ২০০৬ সালে ডিগ্রি পাসের পর তিনি মিঠাপুকুর উপজেলার শুকানের হাট গ্রামে আসাদুজ্জামানের খামার দেখতে যান। আসাদুজ্জামান ৫ হাজার মুরগি আর ২০টি গরুর খামার গড়ার গল্প শোনান, যা আরিফুলের ভাবনাকে নাড়া দেয়। ওই বছরের মে মাসে বাবার কাছ থেকে এক লাখ টাকা নিয়ে বাড়ির পাশে ঘর তুলে ৫০০ লেয়ার মুরগির বাচ্চা এনে খামার শুরু করেন। ৫ মাসের মধ্যে মুরগি ডিম দেওয়া শুরু করে। এক বছরে ডিম বিক্রি করে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা আয় আসে। বাবা মোবারক হোসেনও ছেলের সাফল্য দেখে আরিফুলের সঙ্গে লেগে পড়েন।
ডিম বিক্রির লাভের টাকায় আরিফুল আরও এক হাজার মুরগি আনেন খামারে। এভাবে একপর্যায়ে আয় বাড়ে, খামার বাড়ে; আরিফুল হয়ে ওঠেন সফল উদ্যোক্তা। এখন তাঁর ৮টি ঘরে ২৫ হাজার লেয়ার মুরগি আছে। ২০ জন শ্রমিক নিয়মিত খামারে কাজ করেন। মুরগির খামার থেকে মাসিক আয় তাঁর চার লাখ টাকা। শুধু মুরগি নয়, আরিফুল দুই একর জমিতে পুকুর খনন করে ১০ বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের মাছ চাষ করছেন। এতে তাঁর বার্ষিক আয় হচ্ছে তিন লাখ টাকা। খামারে বিদেশি গাভি রয়েছে ৬টি, দিনে গড়ে ২০ লিটার দুধ পান। গরুর খামার থেকে বছরে আয় হচ্ছে আরও কয়েক লাখ টাকা।
সময় পেলে খামারের ডিম নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। কোনো একটি স্কুলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ডিম উপহার দেন। তারপর উপদেশ দেন, কেবল চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হওয়ার।সংগঠক আরিফুল
নিজে উদ্যোক্তা হয়ে গ্রামের বেকার নারী-পুরুষের কথা ভুলে যাননি আরিফুল। ২০১৭ সালে মুরগি পালনকারী ১২৬ জনকে নিয়ে গঠন করে ‘ইকরচালী পোলট্রি উন্নয়ন সমিতি’। বর্তমানে তিনি সমিতির সভাপতি। মুরগি পালনকারীরা আসেন তাঁর কাছে পরামর্শ নিতে। তাঁদের উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করতে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। সময় পেলে খামারের ডিম নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। কোনো একটি স্কুলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ডিম উপহার দেন। তারপর উপদেশ দেন, কেবল চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হওয়ার।
বিভিন্ন স্থান থেকে মুরগির বাচ্চা, খাদ্য ও ওষুধ এনে খামারিদের মধ্যে সরবরাহ করছেন আরিফুল। ওই সব খামারের ডিম ও মুরগি দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিক্রিতেও সহায়তা করছেন তিনি। এসব খামারে কর্মসংস্থান হয়েছে তিন শতাধিক মানুষের।
একাব্বার হোসেন স্থানীয় শলেয়াশাহ দাখিল মাদ্রাসায় দশম শ্রেণিতে পড়ে। আরিফুল তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর বাকিতে বাচ্চা ও খাদ্য দিয়ে খামার গড়তে সহায়তা করেন। একাব্বার বলে, পড়াশোনার ব্যয় বহন করতে বাবা হিমশিম খেতেন। এখন তার পাশাপাশি ছোট বোন লায়লা আক্তারও স্কুলে যায়। দুটি গাভি কেনা হয়েছে। বাড়ির সামনে করা হয়েছে সবজির বাগান। কবুতর, হাঁস-মুরগি, ছাগল পালন করে মাসে আয় হচ্ছে ১৮ হাজার টাকা।
আট বছর আগে হাজীপুর গ্রামের মেহেদী হাসান ও আবদুর রহমান ছিলেন বেকার। দুজনের কাছে কোনো পুঁজি ছিল না। আরিফুল তাঁদের ডেকে নিয়ে মুরগি পালনের কৌশল শিখিয়ে দেন। বাকিতে খাদ্য ও মুরগির বাচ্চাও দেন। মেহেদী ও আব্দুর রহমান শুরু করেন খামার। এখন তাঁরা লেয়ার মুরগির খামার করে ২৫ হাজার টাকা মাসে আয় করছেন।
এসব খামারে অনেক লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। হাজীপুর গ্রামের গৃহবধূ সাহিদা বেগম বলেন, ‘দিনমজুর স্বামীর যে আয়, তা দিয়ে সংসার চালানো কষ্টকর ছিল। এখন খামারে কাজ করি, বাড়িতে ২০টি মুরগি, ১০টি হাঁস পালি। এসব দিয়েই তেল-সাবানের খরচ হয়ে যায়।’
লোকজন যখন ছেলের কাজের প্রশংসা করে, তখন বাবা হিসেবে গর্ব লাগে।আরিফুলের বাবা মোবারক হোসেনসবার অনুপ্রেরণা আরিফুল
২০১২ সালে একই গ্রামের তরুণী সুবর্ণা পারভিনকে বিয়ে করেন আরিফুল। তাঁদের তিন ছেলে-মেয়ে। স্ত্রী সুবর্ণাও আরিফুলের সঙ্গে খামার পরিচালনায় সহযোগিতা করেন। তিনি বলেন, তাঁর স্বামী এলাকার বেকারদের স্বাবলম্বী করে তাঁদের পরিবারের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন। এমন কাজ তো গর্বের।
আরিফুলের বাবা মোবারক হোসেন বলেন, ‘লোকজন যখন ছেলের কাজের প্রশংসা করে, তখন বাবা হিসেবে গর্ব লাগে।’ আরিফুলকে অনুকরণীয় উল্লেখ করে ইকরচালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী বলেন, চাকরি পেছনে না ছুটে খামার গড়ে আরিফুল যে সাফল্য এনেছেন, তা অবিশ্বাস্য। দেশে শিক্ষিত বেকার-যুবকদের জন্য আরিফুলের সাফল্য অবশ্যই অনুকরণীয়।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কে এম ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, ইচ্ছা থাকলে খামার করেও যে নিজের পাশাপাশি অন্যের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যায়, তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আরিফুল ইসলাম। প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে সব সময় তাঁকে সহযোগিতা করা হয় বলে জানান তিনি।
আরিফুল স্বপ্ন দেখেন, গ্রামের প্রতে৵কটি মানুষ যেন সচ্ছল হয়। সবাই যেন হাসিমুখে বাঁচেন। এক লাখ মুরগির খামার করার স্বপ্ন আরিফুলের। পুকুরের ওপর মাচা দিয়ে হাঁস-মুরগি পালনের ইচ্ছা আছে। এটি মাছ চাষে সহায়ক হতে পারে। তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘লেখাপড়া শেষ করে কেবল চাকরির পরীক্ষার জন্য যে সময় ব্যয় হয়, তা যদি নির্দিষ্ট কোনো কাজে ব্যয় করা যেত, তা হলে চাকরির থেকেও ভালো কিছু করা সম্ভব। শুধু চাকরির আশায় বসে না থেকে নিজে কিছু করার চেষ্টা করতে হবে। তবেই ব্যক্তি, সমাজ তথা দেশের উন্নয়ন হবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম রগ র খ ম র আর ফ ল র ব আর ফ ল ত খ ম র গড় ন আর ফ ল ল ইসল ম র ম রগ চ কর র করছ ন উপজ ল হওয় র
এছাড়াও পড়ুন:
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হই হই অবস্থা, প্রস্তুতি না নেওয়া আত্মঘাতী
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশেরও প্রস্তুতি নিয়ে রাখা দরকার বলে মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ‘এমন বিশ্বে আমরা বাস করি, প্রতিনিয়ত যুদ্ধের হুমকি আমাদের ঘিরে থাকে। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হই হই অবস্থার মধ্যে রয়ে গেছে। সকালের খবরে দেখলাম, হয়তো গুজব, যে আজকেই শুরু হয়ে যাবে যুদ্ধ। প্রস্তুতি না নেওয়াটা আত্মঘাতী। আধাআধি প্রস্তুতির কোনো জায়গা নাই।’
গতকাল বুধবার রাজধানীর বীরউত্তম এ কে খন্দকার ঘাঁটিতে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর অনুশীলন পর্যবেক্ষণ অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টা। খবর বিবিসি বাংলা ও বাসসের।
নিজেকে ‘যুদ্ধবিরোধী মানুষ’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে যুদ্ধ হোক– এটা আমরা কামনা করি না।’ যুদ্ধের প্রস্তুতি অনেক সময় যুদ্ধের দিকে নিয়ে যায়– এ রকম ধারণার বিষয়ে ঘোরতর আপত্তির কথা জানান ড. ইউনূস।
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার প্রতি যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সদা প্রস্তুত আধুনিক বিমানবাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’
দেশপ্রেম ও পেশাদারিত্ব আগামী দিনের নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার মূল ভিত্তি উল্লেখ করে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘বিমানবাহিনীর সব সদস্যের প্রতি যুগোপযোগী ক্ষমতা ও দক্ষতা অর্জন এবং পেশাগত ও কারিগরি সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রতি অব্যাহত মনোযোগ বজায় রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় আমরা একটা নিরাপদ, উন্নত ও শক্তিশালী বাংলাদেশ গড়ে তুলব।’
তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান, এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ার, রাডার সংযোজনের জন্য বিমানবাহিনীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করবে সরকার।’
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বের দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের গুরুত্ব অপরিসীম। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সদস্যরা নিয়মিতভাবে বহুমাত্রিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ও অনুশীলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জ্ঞান-দক্ষতাকে যুগোপযোগী করতে সদা সচেষ্ট রয়েছেন।’
তিনি দেশের বিমানবন্দরগুলোর সুষ্ঠু পরিচালনা ও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত বিমানবাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ জানান।
মহড়া কেবল একটি সাময়িক অনুশীলনই নয় উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এটি আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বিমানবাহিনীর পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার পরিচয় বহন করে। বাংলাদেশ বিমানবাহিনী সময়োপযোগী পরিকল্পনা ও দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং কার্যকর আকাশ প্রতিরক্ষার পাশাপাশি বিস্তীর্ণ সমুদ্র এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
এর আগে বিমানঘাঁটিতে এসে পৌঁছলে প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানান বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান। অনুষ্ঠানস্থলে বিমানবাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল তাঁকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর বিতরণ প্রধান উপদেষ্টার
গত বছরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিশেষ আবাসন প্রকল্পে নির্মিত ঘর বিতরণ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। গতকাল সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি গত বছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি জেলার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে এসব ঘর বিতরণ করেন।
ওই বন্যায় অনেক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। প্রাথমিকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম। অসংখ্য বাড়িঘর সম্পূর্ণরূপে ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নির্মাণের সামর্থ্য নেই, এ রকম তিনশ পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে ঘর পুনর্নির্মাণ করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে ফেনীতে ১১০টি, নোয়াখালীতে ৯০টি, কুমিল্লায় ৭০টি ও চট্টগ্রামে ৩০টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। দুটি কক্ষ, কমন স্পেস, শৌচাগার, রান্নাঘরসহ বারান্দা রয়েছে। ৪৯২ বর্গফুট আয়তনের ঘরে ৭ লাখ ২৫ হাজার ৬৯৪ টাকা এবং ৫০০ বর্গফুটের ঘরে প্রাক্কলিত ব্যয় ৭ লাখ ২৬ হাজার ৬৭৮ টাকা বরাদ্দ করা হয়। সেনাবাহিনী ঘরগুলো নির্মাণ করেছে।
অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান বক্তব্য দেন।
চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ ত্বরান্বিত করার নির্দেশ
চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ ত্বরান্বিত ও বিশ্বমানের সেবা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এ নির্দেশ দেন তিনি। গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বৈঠক হয়।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বন্দর ব্যবস্থাপনায় এমন অপারেটরদের সম্পৃক্ত করতে হবে, যাতে এগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা অর্জন করতে পারে।
বৈঠকে বিডা ও বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, ‘দেশের নৌবন্দরগুলোর বর্তমান হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি বছরে ১ দশমিক ৩৭ মিলিয়ন ইউনিট, যা সঠিক পরিকল্পনা ও কর্মপন্থার মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরে ৭ দশমিক ৮৬ মিলিয়ন ইউনিটে উন্নীত করা সম্ভব।’