‘পোলট্রি পল্লি’ গ্রামের বাড়িগুলো যেন একেকটি খামার
Published: 25th, April 2025 GMT
তখন মাত্র দশম শ্রেণিতে উঠেছেন আরিফুল। ক্লাসের দ্বিতীয় দিনে শ্রেণিশিক্ষক আবদুল হামিদ শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চান, কার কী হওয়ার স্বপ্ন। আরিফুল উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছার কথা বলেন। যা শুনে সহপাঠীরা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করেন। অপমান বোধ করে আরিফুল উদ্যোক্তাই হবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেন। ২৪ বছরের ব্যবধানে আরিফুল এখন একজন সফল উদ্যোক্তার নাম।
৩৯ বছর বয়সী আরিফুল ইসলাম সফল পোলট্রি খামারি হয়ে কেবল নিজের স্বপ্ন পূরণ করেই থামেননি, তরুণ-যুবাদের অনুপ্রেরণা-পরামর্শ দিয়ে রীতিমতো ‘উদ্যোক্তা তৈরির কারিগর’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। আরিফুলের বাড়ি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালী ইউনিয়নের হাজীপুর গ্রামে। নিজের আয়ে গ্রামেই করেছেন ডুপ্লেক্স বাড়ি। উদ্যোক্তা গড়তে তিনি নারী-পুরুষদের বিনা মূল্যে দিচ্ছেন প্রশিক্ষণ। আরিফুলের চেষ্টায় স্থানীয় দুই শতাধিক মানুষ মুরগির খামার গড়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন। আরিফুলের কল্যাণে এই গ্রামকে এখন ‘পোলট্রি পল্লি’ নামে চেনে লোকে।
আরিফুলের বাড়িতে ঢোকার রাস্তার দুই পাশে সারি সারি গাছ। সে বীথি পেরিয়ে তাঁর নান্দনিক ডুপ্লেক্স পাকা বাড়ি। আরিফুল তখন গ্রামের নারী-পুরুষদের মুরগি পালনের প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে চার একর জমিতে গড়ে তোলা মাছ, মুরগি ও গাভির খামার ঘুরিয়ে দেখান আরিফুল। এর ফাঁকে ফাঁকে নিজের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প শোনালেন।আরিফুলের খামারে একদিন
তারাগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে নিভৃত এক গ্রাম হাজীপুর। কাঁচা-পাকা পথ ধরে আরিফুল ইসলামের বাড়ি যাওয়ার সময় একের পর এক খামার চোখে পড়ে। প্রতিটি বাড়ির আনাচকানাচে সবজি চাষ করা হয়েছে। উঠানেও হাঁস-মুরগি, গোয়ালে গরু-ছাগল-ভেড়া। ঘরের চালা, আঙিনাজুড়ে চোখে পড়ে বিভিন্ন জাতের কবুতর। গ্রামের প্রতিটি বাড়ি যেন ছোট-বড় একেকটি খামার।
আরিফুলের বাড়িতে ঢোকার রাস্তার দুই পাশে সারি সারি গাছ। সে বীথি পেরিয়ে তাঁর নান্দনিক ডুপ্লেক্স পাকা বাড়ি। আরিফুল তখন গ্রামের নারী-পুরুষদের মুরগি পালনের প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে চার একর জমিতে গড়ে তোলা মাছ, মুরগি ও গাভির খামার ঘুরিয়ে দেখান আরিফুল। এর ফাঁকে ফাঁকে নিজের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প শোনালেন।
ডিম বিক্রির লাভের টাকায় আরিফুল আরও এক হাজার মুরগি আনেন খামারে। এভাবে একপর্যায়ে আয় বাড়ে, খামার বাড়ে; আরিফুল হয়ে ওঠেন সফল উদ্যোক্তা।আরিফুলের প্রতিজ্ঞা
আরিফুলের বাবা মোবারক হোসেন সম্ভ্রান্ত কৃষক। সচ্ছল পরিবারের ছেলে চাকরিবাকরি করবেন—গ্রামে এটাই রীতি; কিন্তু আরিফুল তা হননি। ২০০১ সালে স্থানীয় লালচাঁদপুর দাখিল মাদ্রাসায় দশম শ্রেণিতে পড়তেন তিনি। ক্লাসের দ্বিতীয় দিনেই এই উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নকে অপমানিত হতে দেখে তিনি স্বপ্নকে বাস্তব করে দেখিয়ে দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করে বসেন।
আরিফুল বলেন, উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছা তাঁকে সব সময় তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াত। ২০০৬ সালে ডিগ্রি পাসের পর তিনি মিঠাপুকুর উপজেলার শুকানের হাট গ্রামে আসাদুজ্জামানের খামার দেখতে যান। আসাদুজ্জামান ৫ হাজার মুরগি আর ২০টি গরুর খামার গড়ার গল্প শোনান, যা আরিফুলের ভাবনাকে নাড়া দেয়। ওই বছরের মে মাসে বাবার কাছ থেকে এক লাখ টাকা নিয়ে বাড়ির পাশে ঘর তুলে ৫০০ লেয়ার মুরগির বাচ্চা এনে খামার শুরু করেন। ৫ মাসের মধ্যে মুরগি ডিম দেওয়া শুরু করে। এক বছরে ডিম বিক্রি করে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা আয় আসে। বাবা মোবারক হোসেনও ছেলের সাফল্য দেখে আরিফুলের সঙ্গে লেগে পড়েন।
ডিম বিক্রির লাভের টাকায় আরিফুল আরও এক হাজার মুরগি আনেন খামারে। এভাবে একপর্যায়ে আয় বাড়ে, খামার বাড়ে; আরিফুল হয়ে ওঠেন সফল উদ্যোক্তা। এখন তাঁর ৮টি ঘরে ২৫ হাজার লেয়ার মুরগি আছে। ২০ জন শ্রমিক নিয়মিত খামারে কাজ করেন। মুরগির খামার থেকে মাসিক আয় তাঁর চার লাখ টাকা। শুধু মুরগি নয়, আরিফুল দুই একর জমিতে পুকুর খনন করে ১০ বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের মাছ চাষ করছেন। এতে তাঁর বার্ষিক আয় হচ্ছে তিন লাখ টাকা। খামারে বিদেশি গাভি রয়েছে ৬টি, দিনে গড়ে ২০ লিটার দুধ পান। গরুর খামার থেকে বছরে আয় হচ্ছে আরও কয়েক লাখ টাকা।
সময় পেলে খামারের ডিম নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। কোনো একটি স্কুলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ডিম উপহার দেন। তারপর উপদেশ দেন, কেবল চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হওয়ার।সংগঠক আরিফুল
নিজে উদ্যোক্তা হয়ে গ্রামের বেকার নারী-পুরুষের কথা ভুলে যাননি আরিফুল। ২০১৭ সালে মুরগি পালনকারী ১২৬ জনকে নিয়ে গঠন করে ‘ইকরচালী পোলট্রি উন্নয়ন সমিতি’। বর্তমানে তিনি সমিতির সভাপতি। মুরগি পালনকারীরা আসেন তাঁর কাছে পরামর্শ নিতে। তাঁদের উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করতে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। সময় পেলে খামারের ডিম নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। কোনো একটি স্কুলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ডিম উপহার দেন। তারপর উপদেশ দেন, কেবল চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হওয়ার।
বিভিন্ন স্থান থেকে মুরগির বাচ্চা, খাদ্য ও ওষুধ এনে খামারিদের মধ্যে সরবরাহ করছেন আরিফুল। ওই সব খামারের ডিম ও মুরগি দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিক্রিতেও সহায়তা করছেন তিনি। এসব খামারে কর্মসংস্থান হয়েছে তিন শতাধিক মানুষের।
একাব্বার হোসেন স্থানীয় শলেয়াশাহ দাখিল মাদ্রাসায় দশম শ্রেণিতে পড়ে। আরিফুল তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর বাকিতে বাচ্চা ও খাদ্য দিয়ে খামার গড়তে সহায়তা করেন। একাব্বার বলে, পড়াশোনার ব্যয় বহন করতে বাবা হিমশিম খেতেন। এখন তার পাশাপাশি ছোট বোন লায়লা আক্তারও স্কুলে যায়। দুটি গাভি কেনা হয়েছে। বাড়ির সামনে করা হয়েছে সবজির বাগান। কবুতর, হাঁস-মুরগি, ছাগল পালন করে মাসে আয় হচ্ছে ১৮ হাজার টাকা।
আট বছর আগে হাজীপুর গ্রামের মেহেদী হাসান ও আবদুর রহমান ছিলেন বেকার। দুজনের কাছে কোনো পুঁজি ছিল না। আরিফুল তাঁদের ডেকে নিয়ে মুরগি পালনের কৌশল শিখিয়ে দেন। বাকিতে খাদ্য ও মুরগির বাচ্চাও দেন। মেহেদী ও আব্দুর রহমান শুরু করেন খামার। এখন তাঁরা লেয়ার মুরগির খামার করে ২৫ হাজার টাকা মাসে আয় করছেন।
এসব খামারে অনেক লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। হাজীপুর গ্রামের গৃহবধূ সাহিদা বেগম বলেন, ‘দিনমজুর স্বামীর যে আয়, তা দিয়ে সংসার চালানো কষ্টকর ছিল। এখন খামারে কাজ করি, বাড়িতে ২০টি মুরগি, ১০টি হাঁস পালি। এসব দিয়েই তেল-সাবানের খরচ হয়ে যায়।’
লোকজন যখন ছেলের কাজের প্রশংসা করে, তখন বাবা হিসেবে গর্ব লাগে।আরিফুলের বাবা মোবারক হোসেনসবার অনুপ্রেরণা আরিফুল
২০১২ সালে একই গ্রামের তরুণী সুবর্ণা পারভিনকে বিয়ে করেন আরিফুল। তাঁদের তিন ছেলে-মেয়ে। স্ত্রী সুবর্ণাও আরিফুলের সঙ্গে খামার পরিচালনায় সহযোগিতা করেন। তিনি বলেন, তাঁর স্বামী এলাকার বেকারদের স্বাবলম্বী করে তাঁদের পরিবারের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন। এমন কাজ তো গর্বের।
আরিফুলের বাবা মোবারক হোসেন বলেন, ‘লোকজন যখন ছেলের কাজের প্রশংসা করে, তখন বাবা হিসেবে গর্ব লাগে।’ আরিফুলকে অনুকরণীয় উল্লেখ করে ইকরচালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী বলেন, চাকরি পেছনে না ছুটে খামার গড়ে আরিফুল যে সাফল্য এনেছেন, তা অবিশ্বাস্য। দেশে শিক্ষিত বেকার-যুবকদের জন্য আরিফুলের সাফল্য অবশ্যই অনুকরণীয়।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কে এম ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, ইচ্ছা থাকলে খামার করেও যে নিজের পাশাপাশি অন্যের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যায়, তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আরিফুল ইসলাম। প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে সব সময় তাঁকে সহযোগিতা করা হয় বলে জানান তিনি।
আরিফুল স্বপ্ন দেখেন, গ্রামের প্রতে৵কটি মানুষ যেন সচ্ছল হয়। সবাই যেন হাসিমুখে বাঁচেন। এক লাখ মুরগির খামার করার স্বপ্ন আরিফুলের। পুকুরের ওপর মাচা দিয়ে হাঁস-মুরগি পালনের ইচ্ছা আছে। এটি মাছ চাষে সহায়ক হতে পারে। তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘লেখাপড়া শেষ করে কেবল চাকরির পরীক্ষার জন্য যে সময় ব্যয় হয়, তা যদি নির্দিষ্ট কোনো কাজে ব্যয় করা যেত, তা হলে চাকরির থেকেও ভালো কিছু করা সম্ভব। শুধু চাকরির আশায় বসে না থেকে নিজে কিছু করার চেষ্টা করতে হবে। তবেই ব্যক্তি, সমাজ তথা দেশের উন্নয়ন হবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম রগ র খ ম র আর ফ ল র ব আর ফ ল ত খ ম র গড় ন আর ফ ল ল ইসল ম র ম রগ চ কর র করছ ন উপজ ল হওয় র
এছাড়াও পড়ুন:
খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিএনপির নির্বাচনী যাত্রা শুরু
সব জল্পনার অবসান হলো—বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচন করছেন। তিনি ফেনী-১, বগুড়া-৭ ও দিনাজপুর-৩ আসনে প্রার্থী হবেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সোমবার বিএনপি ২৩৭ আসনে মনোনীত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। তাতে দলের দুই শীর্ষ নেতার নির্বাচন করা এবং তাঁদের নির্বাচনী আসনগুলো নিশ্চিত করা হয়। এ ছাড়া দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠাকুরগাঁও-১ আসনে নির্বাচন করবেন।
তারেক রহমান বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন, অনেক আগে থেকেই এমন আলোচনা আছে। তবে অসুস্থতার কারণে এবার খালেদা জিয়ার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংশয় ছিল। আবার তাঁর নিজেরও নির্বাচন করার ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহ ছিল না।
দলীয় সূত্র বলছে, নির্বাচন ঘিরে নানামুখী শঙ্কা, বিশেষ করে ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে নেতৃত্ব দিতে রাজি করানো হয়। শেষ পর্যন্ত তাঁর প্রার্থী হওয়ার ঘোষণায় নেতা-কর্মীরা আনন্দিত।
স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, সেলিমা রহমান ও নজরুল ইসলাম খান এবার নির্বাচন করছেন না। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা জমির উদ্দিন সরকারের পঞ্চগড়-১ আসনে তাঁর ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমিরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করছেন, নানা কারণে আসন্ন নির্বাচন বিএনপির জন্য খুব স্বস্তিদায়ক না-ও হতে পারে। খালেদা জিয়াকে নির্বাচন করতে রাজি করানোর মধ্য দিয়ে সার্বিকভাবে নির্বাচনের গুরুত্বটা আরও বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি নির্বাচন নিয়ে নতুন কোনো জটিলতার উদ্ভব হলে, সেটা মোকাবিলায়ও তাঁর ভোটে অংশগ্রহণ পরিস্থিতির ওপর একটা প্রভাব ফেলবে।
জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে সোমবার ২৩৭ আসনে মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। বাকি ৬৩টি আসনে প্রার্থিতা পরে ঘোষণা করা হবে।
বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, স্থগিত রাখা কিছু আসনে প্রার্থিতা নিয়ে অভ্যন্তরীণ সমস্যা আছে। আর কিছু আসন জোট ও সমমনা দলগুলোর প্রার্থীদের জন্য রাখা হয়েছে, যাদের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা হতে পারে।
ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী, বিএনপির চেয়ারপারসন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির ১২ জন সদস্য নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। অন্যরা হলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন (কুমিল্লা-১), মির্জা আব্বাস উদ্দিন আহমেদ (ঢাকা-৮), গয়েশ্বর চন্দ্র রায় (ঢাকা-৩), আবদুল মঈন খান (নরসিংদী-২), আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১০), ইকবাল হাসান মাহমুদ (সিরাজগঞ্জ-২), সালাহউদ্দিন আহমদ (কক্সবাজার-১), হাফিজ উদ্দিন আহমদ (ভোলা-৩) এবং এ জেড এম জাহিদ হোসেন (দিনাজপুর-১)।
স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, সেলিমা রহমান ও নজরুল ইসলাম খান এবার নির্বাচন করছেন না। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা জমির উদ্দিন সরকারের পঞ্চগড়-১ আসনে তাঁর ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমিরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৩৭ আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। তবে তিনি বলেছেন, এটি প্রাথমিক তালিকা। প্রয়োজন বোধ করলে স্থায়ী কমিটি প্রার্থিতা পরিবর্তন করতে পারবে।
সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে প্রার্থী ঘোষণার আগে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির জরুরি সভা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী সভা হয়। সেখানে জুলাই সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন নিয়ে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়েও আলোচনা হয়। পরে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। এ সময় বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকেরাও উপস্থিত ছিলেন।
এবারের প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। তাঁকে ফেনী-৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
আবদুল আউয়াল মিন্টু প্রথম আলোকে বলেন, ‘জীবনে প্রথম সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছি। দল আমার ওপর আস্থা রেখেছে, সে আস্থা রাখার জন্য ধন্যবাদ। আমি আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) সঙ্গে দেখা করব, সালাম জানাব।’
যে কারণে ঢাকার সাতটি আসন ফাঁকাঢাকার ২০টি আসনের মধ্যে ১৩টিতে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি সাতটি আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে। নেতা-কর্মীরা বলছেন, ঢাকায় প্রার্থিতা নিয়ে মারাত্মক পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নেই। তাঁদের ধারণা, নির্বাচনী সমঝোতার জন্য আসনগুলোতে প্রার্থিতা স্থগিত রাখা হয়েছে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সাতটি আসনের মধ্যে জাতীয় নাগরিক পাটির (এনসিপি) সঙ্গে সমঝোতা হলে তাদের জন্য অন্তত তিনটি আসন ছাড় দেওয়া হতে পারে। এ তালিকায় গণতন্ত্র মঞ্চ, বিজেপি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নামও আছে।
তবে এনসিপির নেতারা যেসব আসনে নির্বাচন করতে চান বলে আলোচনা আছে, সে আসনগুলোর একটি (ঢাকা-৯) ছাড়া বাকিগুলোতে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম (ঢাকা-১১), সদস্যসচিব আখতার হোসেন (রংপুর-৪), জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা (ঢাকা-৯), দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ (কুমিল্লা-৪), উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম (পঞ্চগড়-১) ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদের (নোয়াখালী-৬) স্ব স্ব আসনে তাঁদের কমবেশি তৎপরতা আছে।
ঢাকা-৯ আসন স্থগিত রাখা হলেও সেটা কার জন্য, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সেখানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবীব উন নবী খানকে (সোহেল) প্রার্থী করা হতে পারে বলে দলে আলোচনা আছে।
ঢাকা-১৪: মায়ের ডাক-এর সানজিদাঢাকা-১৪ আসনে এবার প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়লেন এস এ খালেকের ছেলে এস এ সিদ্দিক (সাজু)। সেখানে গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের ব্যক্তিদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর সংগঠক সানজিদা ইসলামকে (তুলি) প্রার্থী মনোনীত করেছে বিএনপি। এই আসনে ইতিমধ্যে জামায়াত প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুমের শিকার মীর আহমদ বিন কাসেমকে (আরমান)। তিনি আট বছর গুম ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর গোপন বন্দিশালা ‘আয়নাঘর’ থেকে মুক্তি পান।
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। এ লক্ষ্যে দলটি অভ্যন্তরীণ জরিপসহ সাংগঠনিক উপায়ে প্রার্থী বাছাই সম্পন্ন করেছে। সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের নাম প্রকাশ করে নির্বাচনের পথে যাত্রা শুরু করল বিএনপি।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বিগত ১৫-২০ বছর ভোট দিতে পারেনি। এখন জাতি উৎসাহিত হচ্ছে ভোটের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। তিনি বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা, সেটি পূরণ করার লক্ষ্যে বিএনপি প্রার্থী মনোনয়ন ঘোষণা করে একটা বড় পদক্ষেপ নিল। ইতিমধ্যে অনেকে মাঠে চলে গেছেন, এ ঘোষণার পর বাকিরাও মাঠে যাবেন। এর মাধ্যমে ভোটের একটা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হবে।
১০ নারী প্রার্থীঘোষিত ২৩৭ আসনের প্রার্থী তালিকায় নারী রয়েছেন দশজন। এর মধ্যে অন্যতম বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বাকিরা হলেন সিলেট-২ আসনে তাহসিনা রুশদীর, ফরিদপুর-২ আসনে শামা ওবায়েদ ইসলাম, ফরিদপুর-৩ আসনে নায়াব ইউসুফ আহমেদ, মানিকগঞ্জ-৩ আসনে আফরোজা খান রিতা, শেরপুর-১ আসনে সানসিলা জেবরিন, ঝালকাঠি-২ আসনে ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো, যশোর–২ আসনে সাবিরা সুলতানা, ঢাকা-১৪ আসনে সানজিদা ইসলাম ও নাটোর-১ আসনে ফারজানা শারমিন।
মনোনয়ন না পেয়ে দুই মহাসড়ক অবরোধমাদারীপুর-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করে কামাল জামান মোল্লাকে। এর প্রতিবাদে আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকীর অনুসারীরা রাত আটটার দিকে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন।
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তাঁর অনুসারীরা সন্ধ্যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।