বন্দরে অটোচালক মাসুদ হত্যা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বাদীকে হুমকি
Published: 25th, April 2025 GMT
প্রবাস ফেরৎ মাসুদ। বয়স ২৫ বছর। সপরিবার বসবাস করে বন্দর উপজেলার পাতাকাটা বৈরাঙ্গীরপাড়। প্রবাস থেকে দেশে ফিরে বসে না থেকে মাসুদ অটোগাড়ী চালাত।
তার ইনকামে তাদের সংসার ভালোমতো চলছিল। কিন্তু একটি তুচ্ছ বিষয় নিয়ে এক র্দূগটনায় গোটা পরিবারটিকে তছনছ করে দেয়। আজও মাসুদের জন্য কাঁদে তার পরিবার।
প্রবাস ফেরৎ অটো চালক মাসুদ হত্যা মামলা নিয়ে সিআইডি তেমন কোন তৎপরতা না থাকার কারনে ঘাতকচক্ররা জামিনে বের হয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
এদিকে মামলার প্রধান আসামী সুমনসহ তার সহযোগিরা মামলার বাদী দিনমজুর শফিউদ্দিনকে মামলা প্রত্যাহারের জন্য নানা ভাবে হুমকি দামকি অব্যহত রেখেছে।
বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ইং সালে ১০ আগস্ট প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসী হামলায় অটোচালক মাসুদ মারাত্মক ভাবে জখম হয়। পরে গত ১২ আগস্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অটোচালক মাসুদ মৃত্যুবরণ করে।
এ ঘটনায় নিহতের পিতা শফিউদ্দিন বাদী হয়ে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসী সুমন ও তার দুই ছেলে আব্দুর রহমান ও তারেক একই এলাকার মৃত লাল মিয়া মিস্ত্রী দুই ছেলে মোস্তাফা ও মোঃ হোসেনকে আসামী করে বন্দর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং- ২১(৮)২০২৩।
এর মধ্য মামলার ২নং এজাহরভূক্ত আসামী আব্দুর রহমান বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তির মূলক জবানবন্ধী প্রদান করেছে।
মামলার তথ্যসূত্রে আরো জানাগেছে, গত ২০২৩ ইং সালের ১০ আগস্ট সকাল ৬টায় মামলার বাদী বড় ছেলে মোঃ মাসুদ (২৫) অটোগাড়ী নিয়া কাজের উদ্দেশ্য বাসা হইতে বের হয়। ওই দিন সকাল ১০টায় অটো গাড়ীটি হঠাৎ নষ্ট হয়ে গেলে অটোচালক মাসুদ তার ছোট ভাই মাহবুব হাসান (২০) কে ফোন করে বাসা থেকে ১৫০০ টাকা নিয়া দাসেরগাঁও স্ট্যান্ডে আসতে বলে।
ওই সময় অটোচালক মাসুদ তার ছোট ভাই মাহবুবকে নাস্তা খাওয়ার জন্য ১নং আসামী সুমনের হোটেলে পাঠায়। সেখানে মাহবুব সিঙ্গারা খায়।
ওই সময় হোটেল মালিক সুমন অটো চালক মাসুদের ছোট ভাই মাহাবুব হাসানের সাথে খারাপ ব্যবহার করায় অটোচালক বড় ভাই মাসুদ হোটেল দোকানী সুমনকে এর কারন জিঙ্গাসাবাদ করিলে ওই সময় হোটেল মালিক সুমন ও তার ২ সন্ত্রাসী ছেলে আব্দুর রহমান ও তারেক একই এলাকার মৃত লাল মিয়া মিস্ত্রী দুই ছেলে মোস্তাফা ও মোঃ হোসেন ক্ষিপ্ত হয়ে অটো চালক মাসুদকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করিতে থাকে।
ওই সময় অটোচালক মাসুদ তাদের বাধা নিষেধ করলে ওই সময় উল্লেখিতরা ক্ষিপ্ত হয়ে হোটেল মালিক সুমনের হুকুমে তার ছেলে আব্দুর রহমান কাঠের ডাসা দিয়ে মাথায় আঘাত করলে মাসুদ রক্তাক্ত জখম হয়।
ওই সময় স্থানীয়রা আহতকে উদ্ধার করে বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢামেক হাসপাতালে প্রেরণ করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১২ আগস্ট অটোচালক মাসুদ মৃত্যুবরণ করে।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: হত য ন র য়ণগঞ জ র জন য আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
আসামি না হয়েও স্বেচ্ছায় কারাগারে যাওয়া সেই যুবক প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার
চট্টগ্রামে মাদকের একটি মামলায় আসামি সেজে আদালতে আত্মসমর্পণের পর কারাগারে যাওয়া এক যুবককে জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার (শ্যোন অ্যারেস্ট) দেখিয়েছেন আদালত। তাঁর নাম মো. রাকিব। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দিন মাহমুদ শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রকৃত আসামি মো. সুমনের হয়ে আদালতে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেন রাকিব। আদালতের আদেশে ১ জুলাই থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কারাগারে আটক রাকিবকে জালিয়াতি ও প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত তা মঞ্জুর করেন। আসামিকে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ৩১ আগস্ট নগরের আকবর শাহ থানার কৈবল্যধাম এলাকায় একটি পিকআপ ভ্যানে অভিযান চালিয়ে ৪০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে র্যাব, যার মূল্য ৪ লাখ টাকা। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় গাড়িচালক রাহাত ইসলামকে। পালিয়ে যান চালকের সহকারী (হেলপার) মো. সুমন। এ ঘটনায় র্যাব কর্মকর্তা বাদী হয়ে আকবর শাহ থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন। তদন্ত শেষে চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এতে রাহাত ইসলাম ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়।
আদালত পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করে পলাতক আসামি সুমনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এরই মধ্যে সুমনের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। বিষয়টি জানতে পেরে সুমন নিজেকে কারামুক্ত রাখতে তাঁর পরিবর্তে নোয়াখালীর রাকিবকে আদালতে আত্মসমর্পণ করায় ১ জুলাই। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তফা শুনানি শেষে আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। সুমনের হয়ে রাকিব আত্মসমর্পণের সময় তাঁর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ওয়াহিদ মুরাদ।
আদালতে একজনের পরিবর্তে আরেকজন আত্মসমর্পণের বিষয়টি ধরা না পড়লেও কারাগারে গিয়ে ধরা পড়ে। জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেজে (তথ্যভান্ডার) ভোটারদের আঙুলের ছাপ সংরক্ষিত আছে। এ পদ্ধতিকে বলা হয় ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইডেনটিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদ্ধতি ব্যবহার শুরু করে চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে আঙুলের ছাপে ধরা পড়েছে অনেক বন্দীর আসল পরিচয়। এসব ঘটনায় মামলাও হয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি মাসের জুলাই পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করে জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আসা ১৬ জনের আঙুলের ছাপে শনাক্ত করা হয়।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আদালত থেকে কারাগারে আসা প্রত্যেক নতুন আসামির আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়। সেখানে আসামির জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা আসল পরিচয় উঠে আসে। ইকবাল হোসেন আরও বলেন, ‘সুমনের হয়ে কারাগারে আসা রাকিব স্বীকার করেছেন তিনি মাদক মামলার প্রকৃত আসামি নন। ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি সুমন সেজেছেন। তাঁকে বলা হয়েছে, দ্রুত কারাগার থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া হবে। তাই তিনি রাজি হয়েছেন। বিষয়টি চিঠি দিয়ে আদালতকে জানানো হয়েছে।’
আরও পড়ুনচট্টগ্রামে ‘আয়নাবাজি’, ধরা পড়েছে আঙুলের ছাপে০৮ নভেম্বর ২০২৩কারাগার থেকে চিঠি পাওয়ার পর মামলা করার নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মিজানুর রহমান। একই সঙ্গে আসামিকে আত্মসমর্পণকারী আইনজীবী ওয়াহিদ মুরাদের কাছে কারণ ব্যাখ্যা চেয়েছেন আদালত। আদালতের প্রসিকিউশন শাখার আকবর শাহ থানার জিআরও সাইদুর রহমান বাদী হয়ে গত রোববার রাতে নগরের কোতোয়ালি থানায় প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় মো. রাকিব ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়। সুমন এখনো পলাতক।